Hello Testing

4th Year | 3rd Issue | June-July

৩০শে আষাঢ়, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 16th July, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

গু চ্ছ  ক বি তা

হা সি বু ল  আ ল ম

hasibul

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব

ধরো,

কোথাও একটা দিয়ে তোমার শোবার ঘরে ঢুকে 

পড়েছে— অস্বস্তি। তোমার বালিশের পাশে চোখ

বড়ো বড়ো করে খেমটা নাচ নাচছে— মহাপৃথিবী।

কিংবা মিমস।

হয়তো ভাবছো— আফ্রিকার কোনো খেতে না

পেয়ে শুকিয়ে যাওয়া প্রেমিকার কথা। কিংবা

লাস ভেগাসও ভাবা যায়।

প্রলুব্ধ ডলারের ভেতর থেকে একটা চিরকালীন 

সাদা-কালো’র 

জর্জ ওয়াশিংটন হয়ে তুমি বন্দি— ছটফট করছো।

ছটফট করছো। 

তোমার কাছ থেকে প্রতিদিন একটু একটু করে

ঘুম হারিয়ে হেঁটে হেঁটে চলে যাচ্ছে অন্য কোনো

প্যারালাল ইউনিভার্সে— যেখানে যাবার বাহন

বিলুপ্ত হবার পরেই মানুষেরা আবিষ্কার করেছে

স্পেসশিপ।

তুমি ভাবছো— একবিংশ শতাব্দীতে কেউ ঘুমায় না।

কারও বন্ধুও হয় না।

তোমার জীবনের সমস্ত অর্জন অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্টের

কৌটোবন্দি হয়ে টাইম লাইনে ঘুরছে।

তুমি স্ক্রল করে করে তোমার গ্রামের বাড়িটা খুঁজছো।

খুঁজে চলেছো— একটা নিরালা নদী। 

অক্রূর ভাঁটফুল।

 

ধরো, তুমি বেঁচে আছো। ধরো, তুমি মরে গেছো—

তিনশ’ বছর আগে…

 

সংসারের গান

পৃথিবীর এই পাশে— এই বাঁকে— জ্যোতির্বিজ্ঞানের এক

ঘুপচিতে বসে তোমার সাথে দেখা।

কিছুদূর

এগিয়ে গেলেই নিঃসঙ্গতার দোকান হাতের

ডানে রেখে, একটা গলি ছিল— আশ্চর্যের।

মিস করে গেছি।

ধাক্কা খেতে খেতে দেখেছি শোরুম— আনন্দের।

ফুটপাতের দু’পারে

ছড়িয়ে ছিল— বিস্তীর্ণ হুল্লোড়, হৈচৈ, রকমারি বিজ্ঞাপন—

মানবিক সংকট। হাহাকার।

বিভিন্ন রঙে ঝলমল করতো— হাসি বিপণন কেন্দ্র।

বাহারি দাঁত। দাঁতের মাজন।

গরম গরম পরিবেশন করা হতো— প্রত্যাশা,

প্রত্যাখ্যান আর যুদ্ধ।

মানুষেরা হুমড়ি খেয়ে পড়তো— মূল্যহ্রাসের কৌতুকে।

দু’পয়সায় বিক্রি হতো এক লাঠি সুখ-লজেন্স। কিস্তিতে কেনা

যেতো— ঘুম।

অল্প কিছু সুদে এখানে সব কিছু ভাড়া দেওয়া হতো—

এই পৃথিবীতেই।

 

সব কিছু ফেলে পৃথিবীর এই পাশে— এই বাঁকে— আমি তোমার

কাছে এলাম। মহাজাগতিক দিনপঞ্জিতে অল্প কয়েকটা দিন

তোমার সাথে সঙ সাজবো বলে;

অথচ রাজনৈতিক বক্তব্যের মতোই

কোটি কোটি বছরের এই চক্রে— তুমিও সামান্য এক ‘সময়-নষ্ট’।

 

তুলনামূলক বিজ্ঞান 

ঘাস। সবুজ ঘাস। 

ঘাসের ওপর বসলেই মানুষেরা 

ঘাস ছেঁড়ে দু’হাতে। 

আচ্ছা,

ঘাসেদেরও কি কখনো

ইচ্ছে হয় না দু-একটা মানুষ ছিঁড়ে দেখতে? 

মানুষের ভেতরে মানুষ কতটুকু ঘাস?

কতখানি বদমাশ?  

 

শান্তি কাকা এবং ভোগবাদ বিষয়ক

শান্তি কাকা। আমাদের শান্তি কাকা।

সেই কোন ছোটবেলায় তাঁকে দেখেছিলাম—

মনে নেই ঠিকঠাক।

পিঠে একটা কালো দাগ ছিল— ডানপাশে।

কিংবা বামপাশেও হতে পারে।

কাকা বলতেন, এ হচ্ছে জন্মদাগ;

পৃথিবীতে নাকি আসতে চাননি তিনি।

জোর করে পাঠানো হয়েছিল তাঁকে।

শাস্তিস্বরূপ সেই দাগ বয়ে বেড়াচ্ছেন এই জন্মে।

 

সারারাত সমুদ্রে মাছ ধরে সকালে 

ডাঙায় ফিরতেন তিনি।

ডাঙায় তাঁর ভাড়া করা ঘর। সমুদ্রে ছিল বাড়ি।

আমাদের সাথে গল্প করতেন, তাঁর বাড়ির গল্প।

বাড়িতে অন্ধকার। রাক্ষুসে বাতাস। 

সেখানে ‘সুদিন’ দুইদিন থাকতো, তো দশদিন 

থাকতো না। 

তথাপি তিনি সুখী ছিলেন।

এমনকি রূপচাঁদার সাথে পিরানহার বিয়েতে

আমাদেরও নিয়ে যাবেন বলে কথা দিয়েছিলেন!

 

শান্তি কাকা কখনো মাছ খেতেন না।

বলতেন, মাছেরা তাঁর সন্তান;

সন্তানদের বিক্রি করে খাওয়ার অপরাধবোধে

কাকা আমৃত্যু মৎস্য পূজারী ছিলেন;

আর প্রাণপণ ঘৃণা করে গিয়েছেন— নিজের জিভকে। 

 

পাগল বিষয়ক কর্মশালা

মাঝে মাঝে রাতে পাগল হয়ে যেতাম আমরা।

হয়তো সেদিন শুক্লা দ্বাদশীর রাত কিংবা মাথার ওপরে একা পঞ্চমীর চাঁদ।

আমরা স্রেফ পাগল হয়ে যেতাম। আমরা মানে, আমি আর আমার বন্ধুরা।

এ-ওর দিকে তাকাতাম। এ-ওকে দেখতো।

আর প্রচণ্ড হাসাহাসি করতাম আমরা নিজেদেরকে নিয়ে। 

 

কে কতোটা চোখে কম দেখে আজকাল? 

কারা কারা উচ্চতায় সবচেয়ে সবুজ? 

কার মাথার চুল নিয়মিত উড়ে যাচ্ছে আকাশে?

কাকে দেখতে কতোটা শুকনো লঙ্কা দেখায়? 

কে সবচেয়ে বেশি হাসে আমাদের মধ্যে? 

গতরাতে ঘুমোতে গিয়েও সারারাত ঘুমায়নি কে? 

 

নিজেরা নিজেদের দিকে আঙুল তুলে তুলে এসব বলতাম আর 

হাসাহাসি করতাম আমরা— আমাদেরকে নিয়ে মাঝেমাঝেই। 

এবং

চেয়ে চেয়ে দেখতাম— অসুখ ভর্তি মাথা নিয়ে এক-একজন 

উঠে যাচ্ছি ওপরে।  

 

পাগল হওয়া দরকার। আসলেই দরকার। 

মাঝেমাঝে পাগল হওয়া— জীবনের জন্য বেশ চমৎকার।

 

অক্রূর ভাঁটফুল 

তোমার ঠোঁটে বাতাস, জীবন জোগাচ্ছে— সামান্য অক্সিজেন, 

বেঁচে থাকা এরকমই, যেরকমভাবে থার্মোমিটারে, পারদে; 

মানুষ— রেখা টানা জ্বরে, জিনতাত্ত্বিক চিত্রে, 

সম্পাদ্যে-উপপাদ্যে, কেমন অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে, পিথাগোরাস, 

মেন্ডেল, কোপার্নিকাস, পাতাল কিংবা মহাকাশ,

এক পাতা অ্যাসপিরিন খেয়ে, ঝিম মেরে থাকে; 

জোড়ে-বিজোড়ে-সজোরে, কাকে কতোটুকু, সকালে-আকালে, 

কাছে পাওয়া যাবে? মৃত্যু তোমার, দুই কাঁধে থাকে, আমাকে 

ছোঁবে না, টাঙানো সাইনবোর্ড, মানুষের চোখ— ওদিকেই 

বেশি টানে; ধূমপানই স্বাস্থ্যকর, কেউ কি জানে? ধোঁয়ারা 

কতোটা— যত্নসহকারে, দুঃখগুলোকে, নির্মাণাধীন মানুষের 

ভেতরে, ধামা চাপা দিয়ে, হেঁটে যেতে বলে; হাঁটতে-হাঁটতে, 

কাঁদতে-কাঁদতে, সন্ধ্যা ৭টায়, ভূগোল বইয়ের ৫৭ পাতায়, 

ইথিওপিয়ায় তুমি; গৃহযুদ্ধ দেখবে, প্রেতরা সেখানে—

যুদ্ধ করে, যুদ্ধ করে, যুদ্ধ করে; হাতির দাঁতের অলংকার, 

অবগোলাপ, সাবমেরিন, ইথিওপিয়া কিংবা ঢাকায় তুমি,

সন্ধ্যা ৭ টায়— মানুষ মরে, মানুষ মরে, মানুষ মরে; গাড়িচাপা, 

ছুরিকাঘাত, আত্মহত্যা; তোমার ঠোঁটে বাতাস, 

মানুষ হাঁপাচ্ছে, এখন দরকার— অক্সিজেন, কিংবা ভাঁটফুল, 

সামান্য ভাঁটফুল, অক্রূর ভাঁটফুল।

আরও পড়ুন...