উ ই ন্ডো সি ট
খুব ভোর, এই ধরুন চারটে। আঁধার বাঁচিয়ে চলেছি, একটি দূরপাল্লার ট্রেন ধরব বলে, অতো ভোরের ট্রেনকে মনে হয় হাউই জাহাজ। যদিও এ পোড়া কপালে সেটুকুও চড়ার সৌভাগ্য ঘটেনি… এলাম হাওড়া স্টেশন, সেখান থেকে সময় বাঁচিয়ে ঐ ব্রিজের আলো দেখার বড় সাধ এ মফস্বলীয় চোখে…
দূরপাল্লার ট্রেন চলেছে, একটু একটু করে আলো ফুটছে ঠিক যেন পাখির ডিম ফুটে ছানা বেরোয়। স্টেশনগুলো তখনও আধাঘুমন্ত, স্টেশন ছেড়ে কত ধানখেত, বনবাদাড় পিছনের দিকে ছুটে যাচ্ছে। তবু চোখ কাউকে হারাতে চায় না।
আমাদের সবার একটা বেপরোয়া জীবন আছে, যার পাসওয়ার্ড কেউ জানে না। মাঝে মাঝে বাঁচার ইচ্ছে তীব্র করতে বেপরোয়া হওয়া দরকার, এ জীবন কেবল জল-বাতাসা দিয়ে সকাল সন্ধে পুজোআচ্চা নয়। ট্রেন থামলে নতুন নতুন জায়গার ঘ্রাণ পাই, কানে কানে বাতাস এসে সেলস মার্কেটিং-এর পুরুষদের মতো কতো অফার দেয়। ব্যাগপত্তর নিয়ে সস্তার দিন কয়েকের মাথা গোঁজার আশ্রয় খুঁজি। যেখানে দুপুর, রাতে খোপ খোপ থালায় উপচানো খাবারের শেষে একটু টকঝাল আচার রাখে, এই জীবনে ঐটুকু উপরি পাওনার মতো। হাতে খুচরো পয়সা রেখে দিই নতুন জায়গায় দেবদেবীর মন্দিরে প্রণামী বাক্সে ফেলবো বলে। কী জানি, ভিনভাষী ঈশ্বর কতোটা মন দিয়ে শোনেন সে কথা।
সমুদ্রের পাশে বসলে নোনা হাওয়া এলোমেলো করে নেশা ধরিয়ে দেয়, মনে পড়ে পুরনো প্রেম, চুমু, অসফল একটা জীবন। এসব জায়গায় খুব সহজে বিয়ার মেলে, গলায় বিয়ার পড়লে, চাঁদকে আরো সুন্দর লাগে। ফুরফুরে মন। সমুদ্র থেকে উঠে আসে একটি পথহারা নাবিক। সে কতো প্রেমের গান শোনায় খানিক বুঝি, আবার বুঝিও না। কে যেন হাত ধরে হোটেলের বিছানায় এনে শুইয়ে দেয় আর মাঝরাতে বমির দমকে ভেসে যায় কলঘর, নিজেকে চড় মারতে ইচ্ছে হয়, গুনতি পয়সা ছিলো কাছে, তার থেকে বাড়ির জন্য জলশঙ্খ, ঠাকুরের বাসন, প্রদীপ, দরজায় টাঙানো ঝিনুকের বাহারি পর্দা, আরো কতো জিনিসের ফর্দ; সেই ফর্দে কেবল নিজের জন্য জীবনটাই ছিল না…