Hello Testing

4th Year | 3rd Issue | June-July

৩০শে আষাঢ়, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 16th July, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

ক বি তা

সো হ ম   চ ক্র ব র্তী

ম্যানহাটন

 

হঠাৎ-ই একচিলতে রবিবারে

মেঘ করেছে, আলতো মতো শীত…

আমরা ক’টি বন্ধুজনে মিলে

সকালবেলা, এন্-জে ট্রানজিট্ –

 

আধঘণ্টা দূরেই নেওয়ার্ক

স্টেশনে ট্রেন পাল্টে পাঁচজন

ছুটির দিনে ভিড়ে ভিড়াক্কার

ছুটেছে পাথ্, উপরে হাডসন

 

ব’য়ে চলেছে নদীটি তিরতির –

বুকের মাঝে সাবওয়েটি পেতে…

টার্মিনাসে নেমে পড়ছে লোক

ওয়ার্ল্ড ট্রেড্ সেন্টারেতে –

 

গ্রিনিচ্ স্ট্রীট্, নাইন-ইলেভেন –

বাইরে গাছে মায়াহলুদ রং…

মনকেমনে যে শহরের বাড়ি,

আমরা তাকে ডাকি ম্যানহাটন!

 

ব্যাটারি আইল্যান্ড কিছু দূরে

ক্রুজের সারি, ফেরিঘাটের নাও…

আকাশ মেঘে কাজল ক’রে এলে

ও মন, তুমি লিবার্টিতে যাও –

 

সজলকালো শীতল মৃদুবায়,

স্টিমারছাদে লোকের কোলাহল –

সীগালপাখি পাগলপারা ওড়ে…

ঢেউ ছুটেছে ছলাৎ ছলোছল –

 

এমন দিনে বৃষ্টি ঝিরঝির,

এমন দিনে আমরা ভিজে স্নান –

উঠেছি যেই স্ট্যাচু পেডেস্টালে,

বাজল বুকে বেলাফন্টে, গান…

 

ডাউন দ্য ওয়ে ওয়াল স্ট্রীট্ ধ’রে

আমরা খুঁজে নিচ্ছি ফুড্-স্টল্ –

পথের পাশে একলা ব’সে, একা

ছবি আঁকছে ছেলের দঙ্গল…

 

পথের পাশে একলা ব’সে, একা

গৃহহীনের বিষাদে ভায়োলিন

বেজে চলেছে, এখন বেলা কম…

আলোয় আলো ও ব্রিজ ব্রুকলিন –

 

বিকেল হ’তে ফেরিঘাটের নেয়ে

থামল পাড়ে, ও ইস্ট-হাডসন…

চেয়ার পাতে রুজভেল্ট দ্বীপ,

গগনতলে ট্রামের জংশন –

 

নীচে শহর তারার মতো জ্বলে,

রাস্তা জুড়ে ছোটে তারার জেট –

ছোট্ট ক্যাফে, বড়ো লাইব্রেরী,

ব্রায়ান্টে ঐ ছোট আইসস্কেট…

 

গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টপেজ থেকে

কুইন্সে যে সাবওয়েটি যায়,

উঠেই তাতে চমকে উঠে দেখি

হরফ লেখা রয়েছে বাংলায়!

 

ডিনারে যাই বাঙালি রেস্তোরাঁ,

রুইমাছের ঝোলে গরম ভাত –

পাশে দোকান – আহা, মিষ্টি দই…

এ জ্যাকসনে বাংলাদেশের স্বাদ!

 

তারপরেতে রাত্রি হ’য়ে এলে

ফিরতি পথে এন্-জে ট্রানজিট্ –

ম্যানহাটনে ঘুমিয়ে পড়ে দিন,

ম্যানহাটনে চাদর পাতে শীত…

 

এমনই সব চিলতে রবিবারে

মনকেমনে মায়াহলুদ রং…

এই পৃথিবী ম্যাজিক যদি জানে,

আমরা তাকে ব’লি ম্যানহাটন!

 

 

আমার ছোট শহর থেকে ট্রেন চ’লে যায়

আমার ছোট শহর থেকে ঘণ্টাখানেক –

সে ট্রেন থেকে নেমেই দেখো, পৌঁছে গেছি;

সন্ধে হ’য়ে আসছে তখন পেন্ স্টেশনে।

 

সন্ধে হ’য়ে আসছে তখন টাইমস্ স্কোয়ার

উঠছে জ্ব’লে আগুন হ’য়ে একঝলকে –

সাবওয়ে-পথ পার ক’রে ফের একটুখানি

গেলেই বঁধু কোন্ আলো আজ লাগবে চোখে…

 

সেই সে আলো নিভিয়ে দিয়ে সেন্ট্রাল পার্ক

গাছের তলায় একটা-দু’টো বেঞ্চি পাতে –

ইচ্ছে করে তোমার পাশে চুপটি ব’সি,

ইচ্ছে করে হাত ছুঁয়ে দি’ তোমার হাতে।

 

হাতের উপর হাত রাখা খুব সহজ কথাই,

তুমিই শুধু বুঝলে না – থাক্, ওসব ছাড়ো –

তোমার-আমার মাঝখানে শীত, বরফকুচি…

ক্রিসমাসে গাছ একলা সাজায় রকফেলারও।

 

ক্রিসমাসে গাছ সাজিয়ে দেবে সেন্ট প্যাট্রিকস্,

ট্রিনিটি চার্চ… আরেকটু দূর ওয়াল স্ট্রীটে

নাড়বে কড়া মুহুর্মুহু নতুন বছর –

তোমার কাছে আমার চিঠি পৌঁছে দিতে।

 

বলবে তুমি – একটু কফি, একটু কুকিজ্…

পড়বে খেয়াল, আমারও বেশ পাচ্ছে খিদে –

একচিলতে দোকান স্টারবাকসের, তোমায় নিয়ে

পথ পেরোব একলা আপার ইস্টসাইডে।

 

ক্যাপুচিনোয় অল্প ধোঁয়া, গল্প বেশি –

সেই ধোঁয়াটিই পাক খেয়ে ফের ঢাকবে আকাশ,

স্টারি নাইটস্ – নিভলে বাতি মিউজিয়ামের

নাইট শো-তে কাটাই আছে ব্রডওয়ে পাস্।

 

কালকে যাব নয়-এগারোর শহিদবেদি;

আজকে বরং এম্পায়ার স্টেট্, একশো তলা –

স্কাইলাইনে তারার মতো জ্বলছে শহর,

হাইরাইজে তারার মতো রক্তপলাশ…

 

ওই তো দ্যাখো আগুন-মশাল, লিবার্টি-দ্বীপ;

ইস্ট নদীতে আমার সুরের রসিক নেয়ে –

ওই তো দ্যাখো ব্রিজ পেরোতেই কুইন্স্-ব্রুকলিন…

এমন শহর তোমায় লিখে দিচ্ছি, মেয়ে।

 

মিথ্যে বাঁচি, মিথ্যে এসব স্বপ্ন ভাঙে –

আমার ছোট শহর থেকে ঘণ্টাখানেক

ট্রেন চ’লে যায়; স্বপ্নে দেখি আমরা দু’জন

একফালি এক ঘর বেঁধেছি ম্যানহাটনে।

আরও পড়ুন...