ক বি তা
১
হঠাৎ-ই একচিলতে রবিবারে
মেঘ করেছে, আলতো মতো শীত…
আমরা ক’টি বন্ধুজনে মিলে
সকালবেলা, এন্-জে ট্রানজিট্ –
আধঘণ্টা দূরেই নেওয়ার্ক
স্টেশনে ট্রেন পাল্টে পাঁচজন
ছুটির দিনে ভিড়ে ভিড়াক্কার
ছুটেছে পাথ্, উপরে হাডসন
ব’য়ে চলেছে নদীটি তিরতির –
বুকের মাঝে সাবওয়েটি পেতে…
টার্মিনাসে নেমে পড়ছে লোক
ওয়ার্ল্ড ট্রেড্ সেন্টারেতে –
গ্রিনিচ্ স্ট্রীট্, নাইন-ইলেভেন –
বাইরে গাছে মায়াহলুদ রং…
মনকেমনে যে শহরের বাড়ি,
আমরা তাকে ডাকি ম্যানহাটন!
ব্যাটারি আইল্যান্ড কিছু দূরে
ক্রুজের সারি, ফেরিঘাটের নাও…
আকাশ মেঘে কাজল ক’রে এলে
ও মন, তুমি লিবার্টিতে যাও –
সজলকালো শীতল মৃদুবায়,
স্টিমারছাদে লোকের কোলাহল –
সীগালপাখি পাগলপারা ওড়ে…
ঢেউ ছুটেছে ছলাৎ ছলোছল –
এমন দিনে বৃষ্টি ঝিরঝির,
এমন দিনে আমরা ভিজে স্নান –
উঠেছি যেই স্ট্যাচু পেডেস্টালে,
বাজল বুকে বেলাফন্টে, গান…
ডাউন দ্য ওয়ে ওয়াল স্ট্রীট্ ধ’রে
আমরা খুঁজে নিচ্ছি ফুড্-স্টল্ –
পথের পাশে একলা ব’সে, একা
ছবি আঁকছে ছেলের দঙ্গল…
পথের পাশে একলা ব’সে, একা
গৃহহীনের বিষাদে ভায়োলিন
বেজে চলেছে, এখন বেলা কম…
আলোয় আলো ও ব্রিজ ব্রুকলিন –
বিকেল হ’তে ফেরিঘাটের নেয়ে
থামল পাড়ে, ও ইস্ট-হাডসন…
চেয়ার পাতে রুজভেল্ট দ্বীপ,
গগনতলে ট্রামের জংশন –
নীচে শহর তারার মতো জ্বলে,
রাস্তা জুড়ে ছোটে তারার জেট –
ছোট্ট ক্যাফে, বড়ো লাইব্রেরী,
ব্রায়ান্টে ঐ ছোট আইসস্কেট…
গ্র্যান্ড সেন্ট্রাল স্টপেজ থেকে
কুইন্সে যে সাবওয়েটি যায়,
উঠেই তাতে চমকে উঠে দেখি
হরফ লেখা রয়েছে বাংলায়!
ডিনারে যাই বাঙালি রেস্তোরাঁ,
রুইমাছের ঝোলে গরম ভাত –
পাশে দোকান – আহা, মিষ্টি দই…
এ জ্যাকসনে বাংলাদেশের স্বাদ!
তারপরেতে রাত্রি হ’য়ে এলে
ফিরতি পথে এন্-জে ট্রানজিট্ –
ম্যানহাটনে ঘুমিয়ে পড়ে দিন,
ম্যানহাটনে চাদর পাতে শীত…
এমনই সব চিলতে রবিবারে
মনকেমনে মায়াহলুদ রং…
এই পৃথিবী ম্যাজিক যদি জানে,
আমরা তাকে ব’লি ম্যানহাটন!
২
আমার ছোট শহর থেকে ট্রেন চ’লে যায়
আমার ছোট শহর থেকে ঘণ্টাখানেক –
সে ট্রেন থেকে নেমেই দেখো, পৌঁছে গেছি;
সন্ধে হ’য়ে আসছে তখন পেন্ স্টেশনে।
সন্ধে হ’য়ে আসছে তখন টাইমস্ স্কোয়ার
উঠছে জ্ব’লে আগুন হ’য়ে একঝলকে –
সাবওয়ে-পথ পার ক’রে ফের একটুখানি
গেলেই বঁধু কোন্ আলো আজ লাগবে চোখে…
সেই সে আলো নিভিয়ে দিয়ে সেন্ট্রাল পার্ক
গাছের তলায় একটা-দু’টো বেঞ্চি পাতে –
ইচ্ছে করে তোমার পাশে চুপটি ব’সি,
ইচ্ছে করে হাত ছুঁয়ে দি’ তোমার হাতে।
হাতের উপর হাত রাখা খুব সহজ কথাই,
তুমিই শুধু বুঝলে না – থাক্, ওসব ছাড়ো –
তোমার-আমার মাঝখানে শীত, বরফকুচি…
ক্রিসমাসে গাছ একলা সাজায় রকফেলারও।
ক্রিসমাসে গাছ সাজিয়ে দেবে সেন্ট প্যাট্রিকস্,
ট্রিনিটি চার্চ… আরেকটু দূর ওয়াল স্ট্রীটে
নাড়বে কড়া মুহুর্মুহু নতুন বছর –
তোমার কাছে আমার চিঠি পৌঁছে দিতে।
বলবে তুমি – একটু কফি, একটু কুকিজ্…
পড়বে খেয়াল, আমারও বেশ পাচ্ছে খিদে –
একচিলতে দোকান স্টারবাকসের, তোমায় নিয়ে
পথ পেরোব একলা আপার ইস্টসাইডে।
ক্যাপুচিনোয় অল্প ধোঁয়া, গল্প বেশি –
সেই ধোঁয়াটিই পাক খেয়ে ফের ঢাকবে আকাশ,
স্টারি নাইটস্ – নিভলে বাতি মিউজিয়ামের
নাইট শো-তে কাটাই আছে ব্রডওয়ে পাস্।
কালকে যাব নয়-এগারোর শহিদবেদি;
আজকে বরং এম্পায়ার স্টেট্, একশো তলা –
স্কাইলাইনে তারার মতো জ্বলছে শহর,
হাইরাইজে তারার মতো রক্তপলাশ…
ওই তো দ্যাখো আগুন-মশাল, লিবার্টি-দ্বীপ;
ইস্ট নদীতে আমার সুরের রসিক নেয়ে –
ওই তো দ্যাখো ব্রিজ পেরোতেই কুইন্স্-ব্রুকলিন…
এমন শহর তোমায় লিখে দিচ্ছি, মেয়ে।
মিথ্যে বাঁচি, মিথ্যে এসব স্বপ্ন ভাঙে –
আমার ছোট শহর থেকে ঘণ্টাখানেক
ট্রেন চ’লে যায়; স্বপ্নে দেখি আমরা দু’জন
একফালি এক ঘর বেঁধেছি ম্যানহাটনে।