Hello Testing

3rd Year | 10th Issue

৩০শে ফাল্গুন, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ | 15th March, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

প ছ ন্দে র  ব ই

অ মি ত   স র কা র

amit2

হেঁটে যাচ্ছি কবিতা লেখার পথে পথে

অভয়মুদ্রা

অরিজিৎ চক্রবর্তী

আবহমান

‘কবিতা লেখার পথে

বাবার বাড়ি ফেরা মিশে থাকে…

 

মা আমার ধরে ফেলে সুর !

কবিতার মাথুর মাথুর !’  (অভিকর্ষ)

 

কিছু কিছু উচ্চারণ কখনো কখনো কবির অজ্ঞাতেই একান্ত ব্যক্তিগত হয়ে ওঠে। আমরা তো জানিই, জীবনবৃত্তগুলি তাদের দীর্ঘ দীর্ঘতম ছায়া মেলে ঢেকে রাখে আমাদের শাশ্বত, ভাষালিপি, প্রেম, শোক, বিচ্ছেদ, ব্যর্থতা ও অন্যান্য অনেক পাতা ঝরা। জানি এই  ইন্টারপ্রিটেশনের কোনও শুশ্রূষা হয় না, হয় না উজ্জ্বল সমাধান। তাই একজন অরিজিৎ চক্রবর্তীকে তাঁরনিজস্ব ‘অভয়মুদ্রা’ উৎসর্গ করতে হয় বাবা ও মাকে। যিনি ‘পৃথিবীর উপরে ফেলে আসা জন্ম খুঁজে পিতৃত্ব  লাভ’ করেন (গুটিপোকা)। তিনিই আবার সহজিয়া অবলোকনে ‘কবিতার অভিশাপ আমাকে যতটা আচ্ছন্ন করেছে তাকে চুম্বনের সাথে তুলনা করা ছাড়া উপায় ছিল না’ (দেখা) এই দৃশ্যে জিনগত অভ্যাস খুঁজে পান।

 

তাঁর সাম্প্রতিকতম কবিতাবই ‘অভয়মুদ্রা’ এই মুহূর্তে আমার মুগ্ধ টেবিলে। আমি আত্মীকরণ করার চেষ্টা করছি তাঁর পরাজয় ও উল্লাসের পরাববৃত্তক, তাঁর প্রতিহিংসা ও হাপুগান, তাঁর সার্কাস ও আততায়ী।তাঁর এই কবিতাবইটি মোট চুয়ান্নটি ব্যক্তিগত কবিতার সমাহার, যেখানে কবিতাগুলিকে তিনি কোনও নির্দিষ্ট সিকোয়েন্স বা অভিমুখে সাজিয়ে তোলেন নি। একটি কবিতাবইকে যদি আমরা কোনও নির্দিষ্ট রাগের সঙ্গে তুলনা করি তাহলে তার আরোহ অবরোহ আমাদের অবশ্যই একটি পথরেখার স্বাচ্ছন্দ্য দেয়। এখানে সেটি সচেতনভাবেই অনুপস্থিত। তার সপক্ষে কবির যুক্তি, ‘যেকোনো ভাবনাই কবিতা হতে পারতো। তুমি দেখা করবে বলেও দেখা করতে না। আমি মিথ্যে বলবো না ভেবেও মিথ্যে বলতাম’ ( বিবাহ)। অভিজ্ঞতা জেনেছে কবিতাকে সত্যের আলোয় পৌঁছে দেবার জন্যে একজন কবিকে অনেককিছুকেই ভাঙতে হয়।সবচেয়ে বেশি যেটা ভাঙতে হয় সেটা হল সমাজেরপরিচিত ও আরোপিত কোড আরনির্মিত ভাষার সিগনিফায়ার।তাই একজন সৎ কবির কোনোভাবেই সমাজনির্দিষ্ট স্রোতের অনুকূলে ভাসা উচিৎ নয়, তাঁকে সাঁতরাতে হয় উল্টোস্রোতে। তাঁকে বিনির্মাণ করতে হয় নিজস্ব উচ্চারণ ও ভাষা বিনিময়।অরিজিৎ এই কবিতাবইটিতে সেই নির্মাণে অনিবার্য ও সিদ্ধ। তাঁর কিছু কিছু উচ্চারণ অতি গভীর ও ধ্রুপদী। (ব্যক্তিগতভাবে জানাই ধ্রুপদী শব্দ ব্যবহার আমার সাহিত্যরুচিকে আরাম দেয়। কিন্তুকয়জন পাঠক এই মুহূর্তে আমার এই বিনির্মাণে একমত হবেন, তা নিয়ে নিজেরই ঘোর সন্দেহ আছে। ‘গেহপথ’, ‘নিরূপধিক’, ‘অবিমৃশ্য’, ‘বীক্ষণ’ ইত্যাদি বেশ কিছু প্রয়োগ বাংলা কবিতায় তাঁর হাত ধরে ফিরে আসতে দেখছি। আর লুই আরাঁগ তো সেই কবেই বলে গেছেন, ‘কবিতার ইতিহাস আসলে তার টেকনিকের ইতিহাস মাত্র’।আমি শ্রেয় বোধ করব এই স্থানাংক বিন্দুতেই তাঁর রিয়েল টাইম পারসোনা বা সমকালীন অস্তিত্বের কেন্দ্রকে বোঝাতে।)

 

তেমনই বেশ কিছু কবিতা আছে যাদেরকে শুধুমাত্র তাঁর ভাবনাবিশ্বের জার্নাল বলে নির্দ্বিধায় চিহ্নিত করা যেতেই পারে। অধিক উদাহরণ স্পয়লার বিবেচিত হতে পারে। এই টানা ও পোড়েন নিয়েই অভয়মুদ্রার মুগ্ধ হেঁটে চলা, বাংলা কবিতার   পথে পথে। প্রবেশক যাকে বলছে, ‘পথটি পরমাগতি।/ পথটি তো শিরোমণিপুর।’  

 

অরিজিৎ এই  টানা ও পোড়েনের পথে নিজেকে বিনির্মিত করুন বারবার। বাংলা কবিতা তাঁর সঙ্গে হেঁটে যাবার অপেক্ষায়… ।

আরও পড়ুন...