Hello Testing

4th Year | 3rd Issue | June-July

৩০শে আষাঢ়, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 16th July, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

কা ব্য  না ট ক

তৃ ণা   চ ক্র ব র্তী

সূত্র খুঁজতে খুঁজতে

ঝাউপাতার মধ্যে দিয়ে দ্রুত বয়ে যাওয়া অবিরল হাওয়ার শব্দ। আকাশে অল্প মেঘ। ঠিক বিকেল নয়, তবে বিকেলের মতো যেন সবকিছু। এখানে এই একটাই সময়, একটাই ঋতু, একইরকম হাওয়া ও তাপমাত্রা। একটু দূরে কিছু শব্দতরঙ্গ ধরা যাচ্ছে। হয়ত ওরা নারী এবং পুরুষ, অথবা দু’জন পুরুষ অথবা দু’জন নারী। আবার এমন হতে পারে যে ওরা দু’জন দুটো ফ্যাক্টর, ‘শূন্য’ এবং ‘এক’ অথবা হয়ত ওরা দুটো অবস্থান। এই নির্জন জায়গায় কী কথা বলছে ওরা? আসুন, শোনা যাক… কিন্তু পরিচয়হীন দুটো কণ্ঠস্বরকে কীভাবে চিহ্নিত করব! ধরা যাক, একটি কণ্ঠস্বরের নাম সংকেত আর অন্য কণ্ঠস্বরের নাম দূরত্ব…

সংকেতঃ      আচ্ছা, এই জায়গাটায় কি আগে এসেছি? আমরা কি সত্যিই কথা বলছি আবার!

 

দুরত্বঃ        উঁহু… নাহ্‌!

 

সংকেতঃ      তাহলে কম্যুনিকেশন হচ্ছে কীভাবে!

 

দূরত্বঃ        যেভাবে আসলে হওয়া সম্ভব…

 

সংকেতঃ      কী জানি, আমার সবকিছু কেমন দুর্বোধ্য লাগছে

 

দূরত্বঃ        কিন্তু তুমিই তো বারবার যোগাযোগ করতে চেয়েছিলে

              বিচ্ছিন্ন যা কিছু, জোড়া দেওয়া যায় না

              তারই সূত্র খুঁজতে চেয়েছিলে

 

সংকেতঃ      নিশ্চয়ই চেয়েছিলাম

              আন্তরিকভাবে চেয়েছিলাম বন্ধুত্ব

              বারবার তাই ধাক্কা দিয়েছি বন্ধ দরজায়

              কিন্তু আজ কি সত্যিই খুলে গিয়েছে তা

              সেই অসম্ভব বাধার প্রাচীর কি সত্যিই ভেঙেছে তবে

              কিন্তু যাকে দেখছি, সেই তোমাকে, আমার অচেনা মনে হচ্ছে কেন!

 

দূরত্বঃ        সত্যিই, এত দিন চাঁদে থাকার পরেও তোমার ভাবনা চিন্তা খুব একটা বিস্তৃত

              হতে পারে নি

 

সংকেতঃ      চাঁদে সবকিছু সুন্দর, সহজ, ফেয়ারি টেইলস্‌-এর মতো

              রঙিন ফোয়ারার মতো জীবন সেখানে

 

দূরত্বঃ        সেই সুন্দরের মধ্যে, সহজের মধ্যে থেকেও এই জটিল দরজায় ধাক্কা দিতে

              কেন বারবার ভেবে দেখেছ কখনো?

 

সংকেতঃ      ঠিক জানি না

              থেকে থেকেই একটা তীব্র কিছু তছনছ করত আমাকে ভেতরে ভেতরে

 

দূরত্বঃ        কী মনে হয় তোমার

              এই তীব্র কিছুর আকার বা বিন্যাস সম্বন্ধে কোন ধারণা?

 

সংকেতঃ      তাগিদ, পৌঁছনোর তাগিদ

 

দূরত্বঃ        কোথায় পৌঁছবে

              মানুষ কোথায় যে পৌঁছতে চায় শেষমেশ!

 

সংকেতঃ      তোমার কাছে পৌঁছনোর তাগিদ

              আমি জানতাম একদিন ঠিক দেখা হয়ে যাবে আমাদের

 

দূরত্বঃ        তুমি কি ঠিক জানো?

              এই যে বিকেলের আলো এসে পড়েছে আমাদের মাঝে

              তাতে একটা দরজা খুলে গেছে

              আমরা কম্যুনিকেট করতে পারছি

              কিন্তু এটা সাময়িক

              তোমার সেই তাগিদটাও আসলে তাগিদ নয় হয়ত

              সাময়িক অনুভূতি

 

সংকেতঃ      অনেকদিন পরে এলে বোধহয় এমন হয়

              এখানকার রোদ, জল, কথা, চাতুর্য

              কোন কিছুই সঠিকভাবে ধরতে পারছি না

 

দূরত্বঃ        সেটা তোমার সীমাবদ্ধতা

              আগেও ছিল

              এই শান্ত হাওয়ার ভিতর

              আর যাই থাকুক, চাতুর্য নেই

              আগেও ছিল না

 

সংকেতঃ      আমি কেন মেনে নেব, তুমি যা বলছ তাই ঠিক!

              আমরা কি আবার সেই আগের অবস্থানে ফিরে যাব

              দোষারোপ করব একে অপরকে?

 

দূরত্বঃ        একেবারেই নয়

              খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমাকে ফিরে যেতে হবে

              আগেই বলেছি, এই হঠাৎ খুলে যাওয়া দরজা কিন্তু সাময়িক

              হাতে সময় খুব কম

 

সংকেতঃ      চাঁদে চলে যাওয়ার সময় ভেবেছিলাম, আর ফিরব না

              কিন্তু ওখানে থেকেও বারবার মনে হয়েছে তোমার কথা

              আর ফিরে আসবার পর মনে হয়েছে

              অন্তত একবার, দেখা হোক তোমার সঙ্গে

 

দূরত্বঃ        সেইজন্যই আজকের এই বিকেল, পূর্ব পরিকল্পনা মতো

 

সংকেতঃ      কিন্তু তুমি আলাদা, যেন অন্য কেউ

              তীব্রতার দিনে যাকে পেয়েছি, সে অন্য আর একজন

 

দূরত্বঃ        চাঁদে কীরকম কাটত সময়?

              তোমার সঙ্গিনী সেখানে বেশি খুশি ছিল

              নাকি ফিরে এসে?

 

সংকেতঃ      আমি তো কখনো গোপন করি নি

              তুমি তো জানতে

              এখন কি অস্বীকার করবে সে কথা?

 

দূরত্বঃ        চাঁদের দিনগুলো কীভাবে প্রভাবিত করত তোমাদের?

              সমূহ আনন্দ কীভাবে উজ্জ্বল করে দিত সময়

              নাকি একমাত্রিক মনে হত?

 

সংকেতঃ      একমাত্রিক নয়, তবে দূরের…

 

দূরত্বঃ        কীসের থেকে দূরে!

              আমরা তো দূরেই যেতে চেয়েছিলাম!

 

সংকেতঃ      আমি দূর থেকেও বন্ধুত্ব চেয়েছিলাম

              কাছ থেকেও তাই চাইছি

              সামান্য বুঝে নেওয়া, সম্ভব নয় কি?

 

দূরত্বঃ        তোমরা আসলে বন্ধুত্ব শব্দটাকে হাতিয়ার বানিয়ে ফেলেছ

              নিজেদের ইচ্ছেমত বদলে নিয়ে কখনো বিঁধিয়ে দিচ্ছ ঘাড়ে, বুকে, পিঠে

              এবং অতর্কিতে

              বন্ধুত্ব এখন এক রাজনৈতিক শব্দ

              ঘোরালো, জটিল, অস্পষ্ট

              যেন দাবার ছকের রহস্য

 

সংকেতঃ      তুমি কি আগেও এভাবেই ভাবতে!

              আশ্চর্য হচ্ছি খুব!

 

দূরত্বঃ        আমার মনে হয়, তুমি শুরু থেকেই একটা জিনিস ভুল করছ

              আগের আর এই মুহূর্তের কথাবার্তার তুলনা করার চেষ্টা

              সেটা আসলে ভুলই

              এতে আমারা মূল বিষয়ের থেকে সরে যাচ্ছি বারবার

              সময় কিন্তু ফুরিয়ে আসছে দ্রুত

 

সংকেতঃ      এই সময়ের বিষয়টা সন্ত্রস্ত করে দিচ্ছে

              অথচ কী নিবিড় বিকেল

              এসো, আমরা সব ছক বদলে দিই, আবার সহজ হয়ে উঠি

 

দূরত্বঃ        তারপর?

 

সংকেতঃ      তারপর স্রোত ফিরে আসবে

              ফিরে আসবে জলের নিজস্ব ভঙ্গি

              খুব কি অসম্ভব?

 

দূরত্বঃ        আসলে, এই যে পারছ না অতিক্রম করতে

              এতে তুমি পরাজিত বোধ করছ

 

সংকেতঃ      কী পারছি না!

 

দূরত্বঃ        এই নৈঃশব্দকে অতিক্রম করতে

              যা একসময় ছিল অধিগত

              যে উচ্ছাসের নির্জন ছিল তোমারই জন্য

              যাকে ইচ্ছেমত চেয়েছ এবং উপেক্ষা করে গেছ

              সেই সময় পেরিয়ে গিয়েছে তোমাকে

              উপরন্তু এই নৈঃশব্দের প্রাচীর

              সব মিলিয়ে, পরাজয় ও কৌতূহল

              আর কিছু নয়

 

সংকেতঃ      না তা নয়

              আমি চেয়েছি অবিনশ্বর বন্ধুত্ব

 

দূরত্বঃ        এ চাওয়া উদ্বৃত্ত

              এমন কিছু নয়, যা শ্বাসরোধকারী, যা না হলেই নয়

              বরং এমন এক অভাব, যা থাকলে পূর্ণতা আরও সম্পূর্ণ হয়

              এই চাওয়াটুকুই স্বয়ংসম্পূর্ণ

 

সংকেতঃ      এতো তোমার বিশ্লেষণ

              অথচ জীবন, সে তো আমার

 

দূরত্বঃ        তাই তুমি বেছে নিয়েছ

              আমার পথ কক্ষান্তরে

              এই দুই বিপ্রতীপকে মেলানো যায় না

 

সংকেতঃ      তাহলে আজই বা এই বিকেলের আয়োজন কেন?

              কিছুটা না হয় অজানাই থাকত

 

দূরত্বঃ        আমি চাইলেই প্রাচীরের ওপারেই থাকতে পারতাম

              তোমাকে রাখতে পারতাম নৈঃশব্দের অন্ধকারে

 

সংকেতঃ      রাখলে না কেন!

              তাহলে তো অন্তত একটা সম্ভাবনা থেকে যেত

              ভাবতাম অন্য কিছু ঘটবে একদিন

 

দূরত্বঃ        ঘটেনি কি?

              এই যে ইল্যুশন ভেঙে গেল তোমার

 

সংকেতঃ      ইল্যুশন ছাড়া মানুষ বাঁচবে কী নিয়ে !

              এই জীবন, সেটা ইল্যুশন ছাড়া আর কী !

 

দূরত্বঃ        বাঁচবে , যে ভাবে এক একটা অবস্থান বেঁচে থাকে

              দাঁড়িয়ে থাকে স্থির

              একটা বিস্তৃত আয়নার সামনে

              যে সমগ্রে কোনও ইল্যুশন নেই

 

সংকেতঃ      খুব কি প্রয়োজন ছিল তার

              সম্ভাবনা হারিয়ে গেলে কী পড়ে থাকে

              অবস্থান কি স্থির কোনও বিন্দু !

              আসলে অবস্থানও বদলে বদলে যায় আমাদের

              প্রতি মুহূর্তে বদলাচ্ছে সময়ের পরিভাষা

              এই বদল প্রয়োজনীয়, মনে কর না কি তুমিও !

              তুমি কি শুনতে পাচ্ছ ? পাচ্ছ কি ?

শুধু একজনেরই কণ্ঠস্বর শোনা যায় কিছুক্ষণ, তাও থেমে যায় একসময়। এক অন্ধ সময় পড়ে থাকে শুধু, যার কথাগুলো বলা হয়ে গেছে।  

 

[ঝড় উঠছে, ঝড় থেমে যাচ্ছে এক সময়। আমাদের ইল্যুশন ভেঙে যাচ্ছে প্রতি মুহূর্তে, আবার পরক্ষণেই গড়ে উঠছে অন্য কোনও ইল্যুশন। অবস্থান বদলে যাচ্ছে আমাদের। যোগাযোগের দরজা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কোথাও, আবার খুলে যাচ্ছে নতুন কোনও দিক। কিন্তু সেটা এখানে বিষয় নয়, এখানে ধরা থাক এক অব্যর্থ মুহূর্তের সত্যি, দূরত্বের ধ্রুবক, শুধু এখানে থেমে থাক এক অনন্ত বিকেল আর ঝাউয়ের পাতার আড়ালে সমুদ্র-হাওয়ার শব্দ।]

আরও পড়ুন...