Hello Testing

4th Year | 3rd Issue | June-July

৩০শে আষাঢ়, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 16th July, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

স্ম র ণ ।  পি না কী  ঠা কু র

অ রু ণা ভ   রা হা রা য়

arunava2

ভিড়ের মধ্যে পিনাকীদা ছিলেন অন্যরকম

কবি পিনাকী ঠাকুরের সঙ্গে কবে আলাপ হয়েছিল মনে নেই। তবে তাঁর মিষ্টি হাসিটি এখনও মনে আছে। চোখদুটো মোটা কালো চশমার ফ্রেম দিয়ে ঢাকা। ২০০৪ সালে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় সম্পাদিত কৃত্তিবাস পত্রিকায় প্রথম পিনাকীদার কবিতা পড়ি। লেখাটি এখনও মনে আছে– “তাকাচ্ছে হাস্যমুখ সেভেন সি লেডিস সিট/ ডাকব না খুব দেমাক আচ্ছা বেশ চাকরি পাই।” খুবই দোলা দিয়েছিল আমার ওই বয়সে। পরে যখন কলকাতায় এলাম কবি পিনাকী ঠাকুরের সঙ্গে পরিচয় হল। কখনও পঁচিশে বৈশাখের রবীন্দ্র সদনে দেখা হয়েছে আবার কখনও মধুবাবুর পানশালায়!

তিনি আমাকে এসএমস করে রডওন স্ট্রিটের কৃত্তিবাসের আড্ডায় যেতে বলতেন। বহুবার সেখানে গিয়েছি। মধ্যমণি হয়ে বসে থাকতেন স্বয়ং সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। বিনায়কদা, সেবন্তী, পাপড়িদি, চিরঞ্জীবদা, রূপকদা এবং পিনাকীদার কবিতাপাঠ শুনেছিলাম ওই আড্ডাতেই। অনেকক্ষণ ধরে কবিতা পড়েছিলেন তারা। ২০১১ সালে আইসিসিয়ারে কৃত্তিবাস পত্রিকার পক্ষ থেকেই একটি বড় অনুষ্ঠান হয়েছিল। তখনও আমাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তিনি।

মাঝেমধ্যে গড়িয়াহাটে কৃত্তিবাসের দফতরে যেতাম তাঁর সঙ্গে আড্ডা দিতে। অনেক দুপুরবেলায় আমরা আড্ডা মেরেছি, চা খেয়েছি। একটা বিড়ি বারবার ধরিরে খেতেন তিনি। সেই সময় আমি কলেজ পড়ুয়া। বঙ্গবাসী ইভিনিং কলেজে পড়তাম। আর পিনাকীদাও পড়েছেন এ কলেজেই। এ কথা তাঁর মুখেই শোনা। চুম্বনের ক্ষত, রূপ লাগি আঁখি ঝুরে, মৌসুম ধীরে ধীরে পড়ে ফেলি আমি। একবার বাংলা আকাদেমিতে কবির সঙ্গে দেখা অনুষ্ঠানে কবিতাপাঠ করেছিলেন পিনাকীদা। আমি সেই অনুষ্ঠানও শুনতে গিয়েছিলাম। কবি নিত্য মালাকারও সেদিন কবিতাপাঠে অংশ নিয়েছিলেন মাথাভাঙ্গা থেকে কলকাতায় গিয়ে।

যেবার পিনাকীদা আনন্দ পুরস্কার পেলেন খুব আনন্দ হয়েছিল। আমি মেসেজ করে অভিনন্দন জানিয়েছিলাম। সেবার গিয়েছিলাম গ্র্যান্ড হোটেলে তাঁর আনন্দ পুরস্কার গ্রহণের মুহূর্ত দেখতে। সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের হাত থেকে পুরস্কার নিয়েছিলেন আমাদের পিনাকীদা। ২০১৩ সালে আমি ভ্রমণ বিষয়ক পত্রিকা লংজার্নি সম্পাদনার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। লেখা চাইলে পিনাকীদা দিয়েছিলেন এই কবিতাটি:

জয়গাঁ থাকেই ফিরছি, আমার বিদেশভ্রমণ কপালে নেই
ফুন্টশোলিং
ভুটান মানেই বিদেশ
সঙ্গে এক যুবক শ্রমণ ঝোলায় তাঁর প্রজ্ঞাপারমিতা

বিদেশভ্রমণ কপালে নেই, হাত থেকে হাত, প্রান্তসীমারেখা
পেরিয়ে যাওয়া
নো ম্যানস ল্যান্ড
ঠোঁট দুটো যে বিদেশ!
সবুজ কাঠের গেস্ট হাউস, হায়নার ডাক হাতির আওয়াজ

কী অপূর্ব! এখনও মনে আছে। আমার লেখালিখির ব্যাপারেও তিনি সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন। নানা সময় লেখা চেয়েছেন কৃত্তিবাসের জন্য। এমন কি তাঁর তরুণ বন্ধুরা বাঁশবেড়িয়া থেকে একটি কাগজ করত ‘ছন্নছাড়া’, তাঁদেরকেও আমার নম্বর দিয়েছিলেন লেখা চাওয়ার জন্য। এ ঘটনা আমাকে খুবই উৎসাহ দিয়েছিল ওই সময়। ২০১৭ সালের বইমেলার মঞ্চে আমি উড়ালপুল পুরস্কার পেয়েছিলাম। মনে আছে, খবরটি যেদিন ঘোষণা হল পিনাকীদা মাঝরাতে আমাকে এসএমএস করে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, যা আমি কোনও দিন ভুলতে পারব না। এ জন্যই আমার মনে হয় এই ভিড়ের মধ্যে পিনাকীদা ছিলেন অন্যরকম মানুষ।

আরও পড়ুন...