স্ম র ণ । পি না কী ঠা কু র
আলাপ
বইমেলা। ধূলো ভীড় পেরিয়ে চলেছি এদিক ওদিক। বিভিন্ন স্টলে ঢুকে পাতার পর পাতা উল্টে পাল্টে খুঁজে চলা সেইসব কবিতা। একটা স্টল, ‘বিজল্প’। একটা বইয়ে পাতায় আটকে যাচ্ছে আঙুল। বইয়ের নাম, ‘আমরা রইলাম’। বইটা সংগ্রহ করার পর যখন রশিদ কাটা চলছে এমন সময় একজন এসে আমাকে বলল, ‘এই যে ভাই, আপনি বইটা নিলেন ?’
‘হ্যাঁ’
‘আমার বই। আমার নাম পিনাকী ঠাকুর। কী নাম আপনার ভাই, একটু লিখে দি’
ততদিনে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় পড়ে চলেছি এনার লেখা। আর চমকে উঠেছি। শব্দ ব্যবহার। রাজনীতি বোধ। প্রেম-যৌনতার দৃষ্টিভঙ্গি। ইনি পিনাকী ঠাকুর !আমি খুব বেশি আলাপ জমাতে পারি না। ফলে, অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করলেও কোনো কথাই সেসময় বলতে পারিনি। শুধু মনে হচ্ছিল ‘আমরা রইলাম’ বইটা আমার সঙ্গে থেতে যাবে। আমরাও রইলাম।
আড্ডা
নতুন পর্যায়ে কৃত্তিবাস প্রকাশ হবে । কিছু তরুণ কবির বই প্রকাশ করবে কৃত্তিবাস। দু-একজন অগ্রজ কবি আমাকে প্রশ্রয় দিয়েই বললো পাণ্ডুলিপি জমা দিতে। দিলাম। আমার প্রথম অগোছালো পান্ডুলিপি ‘আমি কিন্তু পারি স্বপ্ন’।
সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় পান্ডুলিপি মনোনীত করবেন। ফলে, দুরুদুরু একটা ব্যাপার তো ছিলই। পিনাকী ঠাকুর ততদিনে পিনাকীদা। একদিন পিনাকীদা ডাকলেন গড়িয়াহাটে কৃত্তিবাসের অফিসে। আমাকে জানালেন, আমার পান্ডুলিপি মনোনীত করেছেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়। আর আমার হাতে পিনাকীদা গুজে দিলেন ছোট চিঠি। পান্ডুলিপির উদ্দেশ্যে লেখা সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের কিছু উপহার। যত্নে রেখো , পিনাকীদা বলল। যদিও বিভিন্ন কারণে সেই বই আমার তখন প্রকাশ হয়নি। কিন্তু পিনাকীদা সঙ্গে রয়ে গেল। দেখলেই কেন কেমন একা লাগে পিনাকীদাকে? যখন তার লেখা পড়ছি, নতুন বই, সেইসব শব্দের গতি একইসঙ্গে স্থির। কি প্রবল ভাবে কনট্রাস্ট। পিনাকী ঠাকুরের কবিতা প্রথম লাইনের পর কিছুতেই যেন পাঠক নিজের মত করে দ্বিতীয় লাইনে না যেতে পারে। দুরন্ত বুনন। আটকে দেওয়া পথ। সেখান থেকে আরেক গলি। সেই গলিতে কোন কামুক পুরুষ। তৃতীয় গলির মাথায় আবার স্বজন হারা কোন জন। বাড়ির ঠিকানা, পাশে লতিয়ে ওঠা একটা গাছ। একটা গল্প। সেখানে বাঁশবেড়িয়া গড়িয়াহাট ভিয়েতনাম একাকার…
একা
যতবার কথা হয়েছে, দ্যাখা হয়েছে সেই সামান্য হাসির একলা এক কবিকে টের পেয়েছি। পিনাকী ঠাকুর এবং শিবাশিস মুখোপাধ্যায়ের সম্পাদনায় ‘কাহ্ন’ পত্রিকায় নিজের কবিতা প্রকাশ তখন এক ভালো লাগার বিষয়।
খেয়াল করেছি বিভিন্ন কবিতা লেখক পিনাকীদাকে মান্য করলেও চলমান কবিতা হাততালির বাইরে চলা পিনাকী ঠাকুরের আশ্চর্য নিজস্বতা সহ্য করতে পারতেন না। এটা অবশ্য চিরকালীন অভ্যাস । স্রোতের বাইরে হাঁটাকে কজনই-বা সোজা চোখে দ্যাখে। পিনাকী ঠাকুর নিজের ফর্ম কোলাজ স্টাইল বুনে গেছেন কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে। আমরা যারা পাঠক তারা ঠিক খুঁজে নিই নতুন স্বর নয়া উচ্চারণ…