Hello Testing

3rd Year | 10th Issue

৩০শে ফাল্গুন, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ | 15th March, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

প ছ ন্দে র  ব ই

সো ম   রা য় চৌ ধু রী

som2

সে এক আশ্চর্য বাড়ি

গানবাঁধানো বাড়ি

সুদীপ্ত মাজি

কখনো কখনো গোটা কবিতার বই একটা বাড়ি হয়ে ওঠে, বাড়ির নাম চৈত্রপবন। সে এক আশ্চর্য বাড়ি, আলো আর অন্ধকার, ‘তুমুল জ্যোৎস্না’ আর ‘সোনালী রৌদ্র’ তার আনোখা পড়শী। অনন্ত আনন্দের মাঝে অসংখ্য যতিচিহ্নের মত বিষণ্ণতা খেলা করে চৌকাঠে। ‘ডাকনামের ওপরে ধুলো জমে প্রচুর’, কখনো ‘মনকেমন শিস দিয়ে উঠতে চায় আবার’, এত মৃদু, ইন্দ্রিয়ঘন, লাজুক এই বাড়ির উচ্চারণ অনেকটা তারকোভস্কি বা এ্যন্জেলোপোলুস-এর চলচ্চিত্র ভাষার মতো চিত্ররূপময়, সংবেদনশীল এবং মায়াবী যে এই বাড়ির মালিককে কবি না জানলেও আমাদের ভীষণ মায়াচ্ছন্ন লাগে, ভালোবাসায় ভাঁড়ার ভরে ওঠে।

 

‘আমাদের অন্ধকারে আমরা এগোতে পারিনি এক পা-ও’; এই বোধের পাশে রাখি ‘স্তব্ধতার ভেতরে একটা স্বপ্নের উপনিবেশ গড়ে উঠছে’,  পাশে থাকুক ‘পায়ে বাঁধা শেকল আর রুকস্যাক’, যে বাড়ির নাম চৈত্রপবন, সেই বাড়ির ‘দরজার সামনে এসে ডাকনাম ধরে ডাকতে ইচ্ছে করে বারবার’।

 

আমরাও কি পিঠে বাঁধতে চাইনি রুকস্যাক, আমরাও কি ডিপ্রেশন ভুলে ডাকনামে ফিরতে চাইনি, ছোটবেলা! জন্মের ভেতর আরো জন্ম, এই অনন্ত জার্নিপথ ,অতীতপ্রবণতা…

 

 ‘ধুলো, যাকে আমরা ভালোবেসে ডাকতাম –আঁধি’ লিখতেই খোয়াই-এ পশ্চিম জুড়ে জমে মেঘ আর বৃষ্টির পরেও ‘আবছা জমে থাকা মেঘে এখনো তোমার সাধ অচরিতার্থ জেগে থাকে’।

বাড়ির নাম চৈত্রপবন হলেও সব ঋতুর এই বাড়িতে অবাধ যাতায়াত। এই বাড়ির ‘ভেতরঘরে আস্ত একটা সমুদ্র ঢুকে গিয়েছিল একযুগ আগে’। এই বাড়ির ভেতরে স্বচ্ছন্দে স্বপ্ন আর স্বপ্নহীনতা, না লেখা আশা আর জীবনের আপাত সামান্য অথচ প্রাচুর্যময় আয়োজন-এর সহবাস। 

 

বাড়ির অন্দরমহল জুড়ে থাকে পাহাড়, তরাই বা ডুয়ার্স। পাইন, ফার এইসব সরল গাছের পাতার ভেতরে হাওয়া বইতে থাকে, কুয়াশা আর মেঘ খোলা জানলা দিয়ে ঢুকে পড়ে পাতার ভেতর, চরাচর জুড়ে বৃষ্টি পড়ে আর বই খুললেই কোন পাতায় ফুটে থাকে ‘মৃদু নার্সিসাস’, কোন স্তবকে ‘কৌণিক উড়াল দিল অচেনা পাখির দল…’ আর পরের পাতায় এসেই কি আশ্চর্য –‘পাখিদের স্বরবিতান থেকে শিখে নিলাম বাইশে শ্রাবণ’।

 

চৈত্রপবন আমাদের সবার বাড়ি, আমরা সবাই এই বাড়িতে হামেশাই চলাচল করি, ফেলে আসা স্মৃতি, কুড়োনো অপমান, ভিজে যাওয়া বেকুব বেলা, পাতার ধীর খসে পড়া, স্রোতের উচ্ছ্বাস, গড়ে ওঠা বালির নির্মাণ, সূর্যের দিকে ফুলের ক্রমশ ফুটে ওঠা, স্বপ্নাহত এবং স্বপ্নতাড়িত, সংসার ও সন্ন্যাস, বিবাহ ও শ্মশান, প্রবণ ও জঙ্গম সব কিছু আত্মস্হ করে এই বাড়ি অনন্তে প্রবাহিত।

আরও পড়ুন...