গু চ্ছ ক বি তা
আমাদের গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হলো–
টুকে রাখা ইতিহাস, কবিতার খাতা, হাট-বাজার,
ক্লাসরুম, চায়ের কাপ,
রাজনৈতিক শ্লোগান, জুয়ার আড্ডা, টিভির পর্দা আর–
সোনালী ফ্রেম থেকে। বহুযুগ নিরুদ্দেশ–
আমরা যারা হেসে উঠেছিলাম।
দিনের দেয়ালগুলো হতভম্ব, নগরে সন্ধে ঢুকে পড়ে
স্তব্ধতায়
ছুরির দিকে হাত বাড়িয়েছে প্রেম
আর রক্তের লোভে ছুটছে ছুরি
স্তব্ধতায়… আর তারপর
অন্ধের স্তুতি আর শ্যাওলা গজাচ্ছিল ফুলের টবে
শব্দের গুঁড়ো বিলাপমুখর দেওয়ালে বোবা
স্তব্ধতায়। শুধু স্তব্ধতা।
আমরা সেইজন্যই হেসে উঠেছিলাম।
উদাসীন অন্ধকার নিয়ে আসে প্রতিধ্বনি
সব বাড়িঘর থেকে,
সব শহরতলি থেকে,
সব কবর থেকে।
আর তুমি পড়ে গেলে তার মধ্যে। কয়েক হাজার বছর।
আমার চোখের কিনারে আমি দেখে ফেলি
রোদের টুকরোর মধ্যে হতবাক প্রজাপতির খেলা
তোমার প্রতিবিম্ব পুরনো লিভিংরুমে
অ্যালবামের পাতায় মিলিয়ে যাচ্ছে!
আমরা হেঁটে যাচ্ছিলাম অনেক বছর আগে
চমৎকার রূপালী বুলডোজারের মতো—
থুবড়ে পড়া অন্ধকারে।
অনেক রাত তখন
বাইরে ধোঁয়ার শহর, হিমজমাট আর
প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত ধর্মান্ধ নতুন আচরণবিধি,
খাড়াই বেয়ে উঠে গিয়েছিলাম তারাদের দিকে!
স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় ভোগা কোনো সময় ধরে—
হাজার বছর আমরা হেঁটে চলেছি
সন্ধের সব ফাটল থেকে
ইতিহাস ক্লাস পেরিয়ে নীল জিভের ওপর।
ভূগোল পাঠের আসকারা পেয়ে
দেশভাগের শরীর থেকে আমরা নিয়ে এসেছিলাম
আমাদের ক্ষয়ক্ষতির ফিসফিস আর ছেঁড়াফাটা জামা,
গেলাসে দাঁতের পাটি।
এইভাবেই আমরা একা, ল্যান্ডস্কেপহারা
হয়তো অন্ধকারের দানবীয় দেবদূতের
চেপে রাখা কান্নার সিন্ধু লিপি।
পৃথিবীর পথে—
ঘোড়ায় ছুটছেন রবি ঠাকুরের বীরপুরুষ
সামনে পা দাপাচ্ছে পিকাসোর ষাঁড়
ব্যাবিলনে মাকড়সা’র পায়ে কুচকাওয়াজ করছে দালির হাতি!
সিন্ধুতীরে গিয়ে মনে হলো
অনার্য বালিতে হ্যামলেটকে নিয়ে বসে আছে কারামাজোভ ভাইয়েরা
তারা পেরিয়ে এসেছে চান্দ্র-অভিযানের মিথ
মশালহীন যে অন্ধকার প্রস্তরযুগে মিশে গেছে
ইতিহাস লুকিয়ে সেই মশাল ছুটছে ইতিহাস ছাড়াই। কেননা—
মানুষ যেখানে শেষ, সেখানেই শিখা জ্বলে ওঠে।
গত জন্মের গভীরে যাও, আরো গহীনে
স্তব্ধতায় শোনো ভস্মকীটের অনুবাদ
শতকোটি মানুষ তাদের মুখ বুজে বোবা হয়ে গেছে।
শৈশবের নীচু আকাশের প্রান্তরগুলিতে শৈশব ছাড়া আর কিছুই নেই! জেনকিন্স স্কুল ফেরতা
পদচিহ্ন ও ধুলোয় শূন্য মরিচা পড়া, রাসমেলা মাঠের অবসরে কিছু নেই, জং ধরা অবসরের ওপাশেও কিছু নেই, সরল বন্ধুতাতেও কিছু নেই, বন্ধুতার পাশেও কিছু নেই, কিছু নেই ছুটির দিনের ছুটিছুটিতে, কিছু নেই মোগলি-তে, কিছু নেই আয়নায়, কিংবা আয়নার ওপাশে লেডিবার্ড সাইকেলে।
শুধু শৈশব ছাড়া।
কেননা
শৈশব হলো আকাশ আর দিগন্তের মাঝখানের নিঃসঙ্গতা, নামহীন যার কোনো গন্তব্য নেই।
ভবঘুরে মেঘের মতন আসলে আমরা খুঁজতে ভালবাসি আমাদের শৈশবকেই।