বাং লা দে শে র ক বি তা
আমি তো গণিতের সমাধান বের করি
কিন্তু গণিতবিদরা আমাকেই একটি সমস্যা মনে করেন।
কারণ যখন খাতা হাজির করা হয়, আমি হাজির করি জীবন!
বলা হয়, যোগ করো! আমি যোগ করি আত্মশক্তিকে।
বলা হয়, বিয়োগ করো! আমি বিয়োগ করি পরাজয়কে।
বলা হয় গুণ করো! আমি গুণ করি ভালোবাসাকে।
বলা হয়, ভাগ করো! আমি ভাগ করি দুঃখকে।
বলা হয় সমীকরণ দাও! আমি দিই নিজের মধ্যে সবাইকে।
বলা হয় মান প্রকাশ করো! আমি প্রকাশ করি সফলতাকে।
তারা বলে, এটি আদৌ কোনো গণিত হয়নি,
তুমি অঙ্কের ব্যাকরণ জানো না!
আমি বলি, এটিই মহোত্তম অঙ্ক এবং
এ জন্য ব্যাকরণ লঙ্ঘণ করে আমিই হয়ে উঠি নতুন ব্যাকরণ!
আমি যখন আল মাহমুদের দিকে তাকালাম, হোমারকে দেখতে পেলাম। অন্ধ। কিন্তু দেখেন দৃষ্টির অতিরিক্ত মহাকাশ।
চাঁদের চেহারা থেকে ছিনিয়ে আনা আয়শার মতো জ্যোৎস্না মুখে ছড়িয়ে আল মাহমুদ বললেন,আমি তো কানা মামুদ, কানা…
বললাম, আমার চোখ নিয়ে নিন আপনি, আপনার কানা চোখের ভেতরে যে ইন্দ্রজাল, সেটা আমাকে দিয়ে দিন।
আল মাহমুদ খুব হিসেবি। তিতাসের কই মাছের ঝোলের স্বাদ উগরে দিয়ে তিনি হাসলেন।
বললেন, ‘কবিদের চোখের হাড়িতে আজকাল কর্ণফুলীর ব্যঙ! কিন্তু কানা মামুদের চোখের ভেতরে কী আছে এমন, যা তোমার চাই?’
বললাম, সেই জ্যোতি, যা দিয়ে তৈরী হয় ত্রিকালজ্ঞ চোখ! যা দৃশ্যের ভেতর- বাহিরকে দেখেই থামে না, শিকার করে নেয় ইতিহাসের নদীতে সময়ের জলপানের শব্দও!
আমার চোখ দিয়ে আল মাহমুদের কোনো কাজ নেই। কারণ আমি জানি, যখন সত্যটা দেখি, দৃশ্যমান চোখ দিয়ে দেখি না। প্রকৃত দর্শক আমি আসলে অন্ধ।
কারণ চোখ বন্ধ না করলে আমি দেখি না আকাশের সাথে আমার গোপন চুক্তিনামা, দেখি না মহাজাগতিক সংবাদ শিরোনাম! দেখি না মানুষের শরীরের ভেতরে গর্তে মলত্যাগরত বুনো শুয়রের মুখ!
আমি কিছুক্ষণের জন্য চোখ বন্ধ করলাম আসল দৃষ্টির প্রয়োজনে।
তোমরা তখন বলতে থাকলে— এই দেখো আরেক অন্ধ। যেভাবে জ্বলন্ত তারার মতো দৃষ্টিবান আল মাহমুদকে বলা হতো অন্ধ। কেননা দৃশ্যের অতিরিক্ত দৃশ্যে ডুব দিতে তিনি একদা বন্ধ করেছিলেন দৃশ্যমান চোখ!