Hello Testing

4th Year | 3rd Issue | June-July

৩০শে আষাঢ়, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 16th July, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

উ প ন্যা স । পর্ব ৫

ম ল য়   রা য় চৌ ধু রী র

জাদুবাস্তব উপন্যাস

malay_roy_choudhury

আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা

(গত সংখ্যার পর)

হাত ঝাঁকিয়ে স্লোগানচুড়ি বাজিয়ে বললি, তোমাকে লোকেট করা ছিল বেশ সিম্পল। প্রায়ভেট ডিটেকটিভ এজেন্সিকে বলেছিলুম, আঙ্কলবাপির অ্যাকাউন্টের ফিনানশিয়াল ট্রেইল ফলো করতে, কোথা থেকে টাকা আসত ওনার অ্যাকাউন্টে আর যেত আমার স্কুলে, এডুকেট এ গার্ল চাইল্ড সংস্হায়, যাদের আজও সাহায্য করে চলেছ। আর যিনি ফানডিং করতেন তাঁর নাম কি, এখন কোথায় থাকেন।  বাপির, আই মিন আঙ্কলবাপির, বড্ড বদভ্যাস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট অহরহ বন্ধ করা আর খোলা।  প্রতিটি অ্যাকাউন্ট নম্বর জানি।

               গত রবিবার তোমার লোকেশান জানতে পেরেছি, সঙ্গে সঙ্গে ফ্লাইট নিয়ে চলে এসেছি।

               তারপর তুই যা বললি, তা আরও আক্রমণাত্মক, বললি, তোমার বেডরুমটা কোথায়, জিনিসগুলো রাখি।

              বললুম, ওদিকে নয়, ওই রুমটা জিম, এক্সারসাইজ করি।

              ওউ-ওউ-ওউ-ওউ, জিম, রিয়ালি ? তাই এমন পেটা মাসকুলার বডি রেখেছ, ব্রোঞ্জপুরুষ, হি-ম্যান। ভালো, ট্রেডমিলও রেখেছ দেখছি, কাজে দেবে। ঘুষের টাকায় নয়তো ?

              জিমঘরটা আমার আগে যিনি এই বাংলোয় ছিলেন, তাঁর।

              জানি, তুমি ঘুষ নাও না, তবু জিগ্যেস করতে ভালো লাগল। তুমি তো জ্ঞানবৃক্ষ, বোধিবৃক্ষ, তাই না ? ফাঁসিবৃক্ষ বলা যাবে কি ? ঘুষ নিতে ভয় পাও ? না এথিকসে বাধে ? ঘুষ ছাড়া দিল্লি শহরে সৎ থাকা শুনেছি অলমোস্ট ইমপসিবল, টিকে আছ কেমন করে ? মন্ত্রীদের প্লিজ করতে হলে তো ঘুষ ছাড়া উপায় নেই ! ঘুষ নেয়া হল এ ফর্ম অফ আর্ট, দুর্বলহৃদয় মানুষ রপ্ত করতে পারে না, বিশেষ করে ডুগুডাররা। দিল্লিতে কতদিন আছো ? ট্রান্সফার অর্ডার এলো বলে, ঘুষ না খেলে আর তা শেয়ার না করলে ট্রান্সফার অনিবার্য, তাও তুমি আবার এজিএমইউ ক্যাডারের, পাঠাবে সিলভাসা, পোর্ট ব্লেয়ার বা পুডুচেরি ; অরুণাচল প্রদেশ বা সিকিমেও পাঠিয়ে দিতে পারে।

##

              শিশিরে কেউটের গন্ধ।  উতরোল কোলাহল।

              স্ফিংক্স, মরুভূমি, পিরামিড, মমি। চাউনির অতিশয়োক্তি।

              এর মতো, ওর মতো, তার মতো, কারো মতো নয়।

##

               আমি সুটকেসটা তুলে নিচ্ছিলাম, তুই নিজেই তুলে নিয়ে বললি, যথেষ্ট শক্তি আছে গায়ে, ড্যাডি ডিয়ারেস্ট, আই নিউ, সামওয়ান ওনস মি, অ্যান্ড ওয়াজ সিক্রেটলি ট্রাইং টু ডিজওন মি।

              এক পলকে দেখলাম, তোর সোনালি আর রুপালি স্লোগান-চুড়িগুলোতে গোলাপি রঙে লেখা লাভ ইউ, কিস ইউ, ইউ আর মাইন, ইংরেজিতে। দু-হাতে কনুই পর্যন্ত মেহেন্দির নকশা। আমেরিকায় মেহেন্দির ব্যবসা পৌঁছে গেছে, আশ্চর্য লাগল দেখে।

              বললাম, কি মাথামুণ্ডু বকছিস ! আমার গলায় শ্লেষ্মার বদলে অবাক হওয়ার শেষে অতিপরিচিতির স্ফূর্তি।

              এই তো, এই তো, তুমি থেকে তুইতে এলে তো ? তুই বললি।

              আমার কাছে এসে, নিঃশ্বাস ফেলা দূরত্বে দাঁড়িয়ে বললি, প্রায় ফিসফিস করে বললি, ফ্রম টুডে অনওয়ার্ডস, আই ওন ইউ ইন দ্য সেম ওয়ে অ্যাজ ইউ ওনড মি ওয়ান্স আপঅন এ টাইম। হ্যাঁ, তুমি আমার অস্তিত্বের মালিক ছিলে এতকাল, এখন আমি তোমার অস্তিত্বের মালিক, বা মালকিনি, হোয়াটএভার। অদৃশ্য রিমোট কন্ট্রোল এবার আমার মুঠোয়।

##

              এগোলুম বেডরুমের দিকে, তোর হাত থেকে সুটকেসটা কেড়ে নিয়ে, পেছন-পেছন তুই। আবৃত্তি করতে লাগলি, খোশমেজাজি কন্ঠস্বরে, কোনো পরিচিত গায়িকার মতন গলা, কার গলা যেন, কার গলা যেন :

               You do not do, you do not do

               Any more, black shoe

               In which I lived like a foot

               For thirty years, poor and white,

               Barely daring to breathe or Achoo

               #

                Daddy, I have had to kill you

                You died before I had time

                Marble-heavy, a bag full of God

                Ghastly statue with one gray toe

                Big as Frisco seal

                 #

                And a head in the freakish Atlantic

                Where it pours bean green over blue

                In the water of beautiful Nauset.

                I used to pray to recover you

                Ach, du

                #

                পেছন ফিরে জিগ্যেস করলাম, কার কবিতা ।

                তোর মুখেচোখে কেমন যেন পরিতৃপ্ত ব্যঙ্গের ছায়া।

                তুই বললি, জাস্ট দ্যাট ? কবিতাটা সম্পূর্ণ মুখস্হ ; আমার সবচেয়ে প্রিয় কবিতা। যিনি লিখেছেন তিনি বলেননি কি যে কবিতাটা একজন মেয়ের এলেকট্রা কমপ্লেক্স ? আর হলোকস্টের মেটাফরগুলো ? ভয় পাচ্ছ কেন?  শোনো না পুরোটা। তোমাকে তো আউশউইৎসে পাঠাচ্ছি না। আর হ্যাঁ, বইগুলো তুমিই বাপির, আই মিন আঙ্কলবাপির, ঠিকানায় আমার জন্য পাঠিয়েছিলে। মনে করো, মনে করো, মনে করো।

                ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর করেছি, কবিতাটা কার লেখা মনে করতে পারলাম না ; সিলেবাসে ছিল না, বোধহয়। এমিলি ডিকিনসন কি ? নাহ, অন্য কারোর। ক্রিস্টিনা রসেটি, এলিজাবেথ বিশপ, এডিথ সিটওয়েল? মনে আসছে না। এই কবির বই তো পাঠাইনি বলেই মনে হয়, কে জানে হয়তো ভুলে গিয়ে থাকব, আমি নিজে তো পাঠাইনি, জুনিয়ার অফিসারদের দিয়ে কিনিয়ে পাঠিয়ে দিতাম।

               অফিসের ফাইলের জগতে ঢুকে গিয়ে সাহিত্য উধাও হয়ে গেছে মগজ থেকে ; সরকারি ফাইলের আঁকশি হয়, অক্টোপাসের মতন।

##

                বাবলগাম ফুলিয়ে ফাটালি, বললি, নিও-ফ্রয়েড মনস্তত্ব, কার্ল গুস্তাভ ইয়ুং, মনে পড়ছে? তুমি তো ইংরেজিতে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্স্ট ক্লাস এম এ ! কবির নাম মনে পড়ছে না ? তোমার স্নাতকস্তরে সাইকোলজি ছিল, তাও জানি।  না, আমি পেনিস এনভির প্রসঙ্গ তুলছি না, ন্যাটালি অ্যানজিয়ার তো বলেই দিয়েছেন, পেনিস এনভি আবার কি, শটগান নিয়ে কী হবে, যখন মেয়েদের রয়েছে অটোম্যাটিক অস্ত্র।

                কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে, বোধহয় আমার উত্তরের প্রতীক্ষা করে, জবাব না পেয়ে, বললি, লিবিডোও নয়, জাস্ট ফ্যাসিস্ট ড্যাডি আর মহাকাব্যের এলেকট্রার সম্পর্কের প্রসঙ্গ, ইনসেস্ট, ইনসেস্ট, ইনসেস্ট।

               পেনিস শব্দটা এমনভাবে বললি, যেন প্রায়ই বলিস ; হতে পারে, আমেরিকানদের তো কথার আড় নেই। আর ইনসেস্ট ? রক্তচাপে শিবের তাণ্ডবনাচ শুনতে পাচ্ছি ; হলোকস্ট ? আউশউইৎস ? রগের দপদপ কানের ইয়ারড্রামে।

               কবিতাটা আবৃত্তি করে কী বলতে চাইছিস বুঝতে পারছি না, তবে তোর কন্ঠস্বর বেশ মধুর, বললাম, শুকনো গলায় খাঁকারি দিতে না হয়, তাই ঢোঁক গিলে।

               বেডরুমে ঢুকে তোর সুটকেস নামিয়ে রাখতে, তুই দেখলি সেন্টার টেবিলের ওপর ব্ল্যাক ডগ স্কচ আর একটা গেলাসে সামান্য মদ, কাল রাতে অর্ধেক খাইনি, কাজে মশগুল ছিলাম, বেঁচে গেছে কিছুটা।

               তুলে খেয়ে নিলি, এক চুমুকে, বললি, বড়ো ক্লান্ত হয়ে গেছি, জেট ল্যাগ, এত দীর্ঘ ফ্লাইট, কই আরেকটু দাও তো, গিলে বাকি অংশ শোনাই তোমায়। ভাবছ নাকি, যে ইলেকট্রনিক্স ইনজিনিয়ার কি করে কবিতা শোনাচ্ছে? তোমার দেয়া লিরিকাল ব্যধি। হ্যাঁ, তোমারই দেয়া, থরে-থরে বই, তাক-তাক বই, এনজয় করতুম, স্যাডনেস এনজয় করতুম, গ্রিফ এনজয় করতুম, তোমার অদৃশ্য বন্দিত্ব এনজয় করতুম, আর প্যাঁচ কষতুম, কে লোকটা, আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে চলেছে, আমার হাঁটবার রাস্তায় অ্যাসফাল্ট পেতে সুগম করে দিচ্ছে, জীবনে একবারও হুঁচট খেয়ে পড়তে দিল না।

               এক পেগ মতন ঢালার পর সোডার বোতল খুলতে যাচ্ছিলুম, বললি, নো, নো, মাতন লাগতে দাও, খাবো তবে তো মনের কথা বলতে পারব, কতকাল যাবত চেপে গুমরে উঠেছে কথাগুলো।

               এক চোঁয়ে খেয়ে, ফ্ল্যাপার ছুড়ে ফেলে দিলি দীর্ঘ ঢ্যাঙ নাচিয়ে, বিছানায় চিৎ শুয়ে-শুয়েই আবৃত্তি করতে লাগলি, চোখ বুজে :

               In the German tongue, in the Polish town

               Scraped flat by the roller

               Of wars, wars, wars.

               But the name of the town is common

               My Polack friend

               #

               Says there are a dozen or two

               So I never tell where you

               Put your foot, your root,

               I never could talk to you.

               The tongue stuck in my jaw.

               আবৃত্তি থামিয়ে, আরও বারোটা স্তবক আছে, বললি,  মনে রেখো আই ওন ইউ, আমি তোমার অস্তিত্বের সত্বাধিকারিণী। কবির নাম জানো না ? খুঁজো , খুঁজো, খুঁজো।

               আমি : ঘুমিয়ে পড়, ক্লান্ত হয়ে গেছিস, দেখাই যাচ্ছে, রেস্ট নিয়ে স্নান করে, লাঞ্চ সেরে তারপর কথা হবে।

               তুই : না, না, না, না, পালিও না, বসে থাকো, আমি ঘুমোবো আর তুমি এদিক ওদিক টেলিফোন ঘোরাবে, সেটি হচ্ছে না, মোবাইল কোথায়, অফ করে দাও বা সাইলেন্ট মোডে করে দাও। বসে থাকো, চুপটি করে বসে থাকো, আমি ঘুমোবার চেষ্টা করছি, ঘুম ভেঙে যেন তোমাকে বসে থাকতে দেখি। নয়তো, এতক্ষণে জেনে গিয়ে থাকবে আমার বিহেভিয়ার কেমন রাফ, আনকালচারড, মোটেই ভদ্রজনোচিত নয় , জাস্ট রিক্লাইন অন দ্যাট সোফা।

               বিছানা থেকে উঠে, সেন্টার টেবিলের ওপরে রাখা মোবাইল তুলে সুইচ অফ করে দিলি, ল্যাণ্ডলাইনের রিসিভারটা নামিয়ে রাখলি , আর চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লি আবার, চোখ বুজলি।

              তুই চোখ বুজতেই খুঁটিয়ে দেখতে লাগলাম তোকে।  তোর বারো ক্লাসের আইডেনটিটি কার্ডের ফোটোর সঙ্গে যৎসামান্য মিল আছে, ভরাট হয়ে উঠেছিস, ডেলিবারেটলি সেক্সি।

               তোর আদেশ শুনে আশ্রয়ের ভালোলাগায় পেয়ে বসল আমায়, অথচ অতিথি তো তুই। আমার শরীর থেকে ব্যুরোক্র্যাটের পার্সোনা ছিঁড়ে ফেলে দিলি যেন।

##

               প্রজাপতিদের ফ্রিল-দেয়া শালুকের কোঁচকানো ঢেউ। আমি ? পাগলের ওড়ানো ঘুড়ি।

               বুকে, বিজয়ের আহ্লাদে মিশেছে জয়ের আছাড়, স্বপ্ন দেখার জন্য গড়ে-নেয়া দ্যুতিময় অন্ধকার।

##

               এর মতো, ওর মতো, তার মতো, কারো মতো নয়।

               যেন এমন, যেন অমন, যেন তেমন নয়।

##

                প্রায় দুঘণ্টা বসেছিলাম সোফায় হেলান দিয়ে, চোখ লেগে গিয়ে গিয়েছিল। চোখ খুলতে দেখি তুই পাশে বসে, আমার মুখের কাছে মুখ এনে, ল্যাভেণ্ডার আইসক্রিমের গন্ধের দূরত্বে, গভীর কালো চোখ মেলে, আমাকে তারিয়ে দেখছিস,  হাতে স্মার্টফোন। এত কাছে একজন যুবতীর মুখ, সুগন্ধ পাচ্ছি হাঁ-মুখের, ল্যাভেণ্ডার মাউথ ফ্রেশেনার ইনহেল করে থাকবি।

                কি গভীর চোখজোড়া, আমার ভেতর পর্যন্ত তিরতিরিয়ে সেঁদিয়ে গেল। কোথা থেকে পেলি এরকম চোখ, চোখের পাতা? তোর মা তোকে আঁস্তাকুড়ে ফেলে দেবার সময়ে জানত কি যে  তুই এরকম সুশ্রী আর স্মার্ট যুবতী হয়ে উঠবি, সেক্সি অ্যাটিট্যুড ঝলকাবে !

                বললি, দেখছি, তোমার ভেতরের সোকল্ড ঈশ্বরের চেহারাটা কেমনতর, কত পার্সেন্ট হিউমান আর কত পার্সেন্ট গডলি, কিংবা কোনো গডজিলা বা কিংকং লুকিয়ে রয়েছে কিনা।

                গম্ভির হবার অভিনয় করলাম।

                তুই : ওউ-ওউ-ওউ-ওউ, দুচারগাছা পাকাচুলে রোমের গ্ল্যাডিয়েটারদের মতন দেখাচ্ছে তোমায় ; হেয়ার ডাই করা আমি একেবারে পছন্দ করতে পারি না। তোমার ঘুমন্ত পোজের গোটা দশেক ফোটো তুলে নিয়েছি, ইন্সটাগ্রাম, পিন্টারেস্ট, গুগল প্লাস আর আমার ফেসবুক পাতায় পোস্ট করে দিয়েছি, যাতে ফোটো তুলছি দেখে ডিলিট করার চেষ্টা না করো। একটা সেলফি তুলি, কি বলো, বলে আমার গলা বাঁহাতে জড়িয়ে সেলফি তুলে নিলি, বললি, এটা আপলোড করছি না, আপাতত করছি না, কখনও করব।

               তোকে প্রশ্রয় দিতে আমার ভালো লাগছিল। আর স্পর্শ ? অবর্ণনীয়। নবীকরণ, নবীকরণ, নবীকরণ।

                নারীশরীর, নারীশরীর, নারীশরীর। সুগন্ধ সুগন্ধ সুগন্ধ।

##

                স্পর্শের মর্মার্থ, মর্মার্থের রসায়ন, রসায়নের সম্পর্কে, রেণু, পরাগ, উড়াল, জীবন।

                শিশিরে কেউটের গন্ধ। উতরোল কোলাহল।

##

                তুই ফ্রেশ হয়ে নিয়েছিলি, আমি যখন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, পারফিউম মেখেছিস, সিল্কের নাইটগাউন পরে নিয়েছিস, হালকা গোলাপি লিপ্সটিক লাগিয়েছিস, কাঁধ পর্যন্ত কোঁকড়া চুলে হয়ে উঠেছিস আকর্ষক, বললুম, ব্রেকফাস্ট করে নিয়েছিস ?

                 তুই জানালি ফ্রিজ থেকে ব্রেড নিয়ে টোস্টারে টোস্ট করে খেয়েছিস, কিচেনে গিয়ে দুমুঠো অ্যাসর্টেড বাদাম খেয়েছিস।

                 তুই : হ্যাজেলনাট দেখলুম, ইনডিয়ায় আজকাল সবই পাওয়া যায় দেখছি, বললি।

                 আবার ব্যঙ্গের পরিতৃপ্তি তোর কথায় ঝরল, বললি, তোমার প্যানিকড হবার প্রয়োজন নেই, ওয়াচম্যান না কি সেন্ট্রি, তাকে বলে দিয়েছি কেউ এলে বলে দিতে যে আজ সাহেব কারোর সঙ্গে দেখা করবেন না, ওনার এক আত্মীয় এসেছেন বিদেশ থেকে, সদর দরোজা বন্ধ করে এসেছি, এই ঘরের পর্দাও টেনে দিয়েছি, আর তুমি যা চাইছিলে, আমাকে অন্য ঘরে স্হানান্তরিত করতে, পাশের ঘরে আমার বিলংগিংস রেখে এসেছি, দেখলুম ঘরটাতে অ্যাটাচড বাথ রয়েছে, টিশ্যু পেপারের রোলও রয়েছে, আমার এখন রোল ইউজ করার অভ্যাস হয়ে গেছে। ডেস্কটপটা ইউজ করে নিলুম, বেশ কয়েকটা ই-মেল লেখা জরুরি ছিল। একটা শাঁখ দেখে ভাবলুম বাজাই জোরে আর তোমার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাই, তারপর মনে হল, নাঃ, বেচারা ব্যুরোক্র্যাট, সরকারি চেস্টিটি বেল্ট পরে বসে আরাম করছে।

##

                স্মার্টফোনটা বিছানার ওপর ছুঁড়ে ফেলে , তুই আমার কাঁধের ওপর দিয়ে দুটো হাত বাড়িয়ে আমাকে কাছে টেনে নিয়ে বললি, আই লাভ ইউ, আমি তোমায় ভালোবাসি, ইউ আর মাই লাভার, আই অ্যাম ইওর বিলাভেড, ওই ব্যুরোক্র্যাটিক চেস্টিটি বেল্ট খুলে ফ্যালো, আর স্বচরিত্রে এসো।

                আমি : কী বলছিস কি, আবোল তাবোল, বললুম।

                তুই : ডোন্ট ট্রাই টু বিহেভ লাইক অ্যান ওল্ড বাবা। বাবা সাজার চেষ্টা কোরো না, আমি সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করি বাবা অভিনয়কারীদের।

                আমি : আবার মদ খেলি ?

                তুই : হ্যাঁ, মেরে দিলুম এক পেগ তুমি ঘুমোচ্ছ দেখে, কিছু করার নেই, মদের খোঁয়ারিতে তোমাকেই দেখছি কতক্ষণ হয়ে গেল, তোমাকে দেখার মাদকতার সঙ্গে ব্ল্যাক ডগের নেশা, আইডিয়াল। কতকাল তোমাকে দেখার কথা ভেবেছি, কেমন দেখতে ভেবেছি, দেখা পেলে কতগুলো টুকরো করব ভেবেছি, কোন টুকরোটা আগে খাবো ভেবেছি। বিছানায় রুবিক কিউব রয়েছে দেখলুম, ও আমি চেষ্টা করেও পারি না, আমার বোন অবশ্য এক মিনিটে করে ফেলতে পারে।

                আমি : ছাড় দিকি, গলা ছাড়।

                তুই : আবার অ্যান ওল্ড বাবা সাজার চেষ্টা করছ, ভুলে যেওনা মিস্টার প্রভঞ্জন প্রধান, আমার নাম ইতি প্রধান নয়, আমার নাম নেতি ব্যানার্জি। তারপর নাকে নাক ঠেকিয়ে, চোখে চোখ রেখে বললি, বলিউডি ফিল্মে যেমন দেখায়, সেই কাঁথাটা রাখোনি, যেটায় আমাকে মুড়ে ডাস্টবিনে ফেলে দিয়ে গিয়েছিল আমার রেপিস্ট বাবা আর ভিতু মা। রেপিস্ট ছিল নিশ্চয়ই, দেখছ তো আমি কতো ওয়েল বিল্ট লম্বা চওড়া, বায়োলজিকাল বাবা গায়ের জোর খাটিয়ে রেপ করেছিল বায়োলজিকাল মাকে, মা হয়ত কাজের বউ ছিল কিংবা চাষি বউ বা পরিচারিকা বা হোয়াটএভার, হু কেয়ার্স।

                আমি : ঠিক আছে, গলা ছাড়।

                তুই : মিস্টার প্রভঞ্জন প্রধান, গলা ছাড়ব বলে অত দূর থেকে উড়ে আসিনি। থাকব এখন, একমাস, দুমাস, তিনমাস, যত দিন না আমার উদ্দেশ্যপূরণ হয়। ছাড়াবার চেষ্টা কোরো না, আমার গায়ে তোমার চেয়ে বেশি জোর আছে বলে মনে হচ্ছে, তোমার হাইটের সমান আমি, হাতও তোমার চেয়ে দীর্ঘ।

               তোর চোখের আইল্যাশ কি নকল, এত বড়ো দেখাচ্ছে ? এড়াতে চাইলাম।

               আমার কিচ্ছু নকল নয়, বলে, উঠে দাঁড়ালি তুই, ফাঁস খুলে গাউনটা ফেলে দিলি কার্পেটের ওপর, নগ্ন, জড়িয়ে ধরলি আমাকে, বললি, দেখে নাও, আগাপাশতলা খাঁটি।

               কী করছিস কি ! আমি চড় কষিয়ে দিলাম তোর গালে।

                তুই আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলি, ঠোঁটের ওপর ঠোঁটের আলতো ঠোক্কোর মেরে মেরে বলতে লাগলি, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ, আই লাভ ইউ।  

              আচমকা দুহাত দিয়ে আমার পাঞ্জাবির বোতামের জায়গায় টান দিয়ে ছিঁড়ে ফেললি, মুখ গুঁজে দিলি আমার বুকে, ঠোঁট ঘষতে লাগলি, বলতে লাগলি, আমি এখনও ভার্জিন, তোমার জন্য, তোমার জন্য, তোমার জন্য, কবে থেকে খুঁজছি তোমায়, সেই ক্লাস এইট থেকে, আমি তোমাকে ভালোবাসি। শুইয়ে দিলি সোফার ওপরে, টান মেরে খুলে দিলি আমার লুঙ্গি, বললি, তবে, ইউ আর গেটিং ইনটু ফর্ম, নাউ মেক লাভ, আমাকে টেনে নামিয়ে দিলি কার্পেটের ওপর, মেক লাভ, প্রভঞ্জন, তোমার অদৃশ্য ব্যুরোক্র্যাটিক চেস্টিটি বেল্ট খুলে ফ্যালো।

##

               শিশিরে কেউটের গন্ধ। উতরোল কোলাহল।

               স্ফিংক্স, মরুভূমি, পিরামিড, মমি। চাউনির অতিশয়োক্তি।

               স্পর্শের মর্মার্থ, মর্মার্থের রসায়ন, রসায়নের সম্পর্কে, রেণু, পরাগ, উড়াল, জীবন।

##

               আমি উঠে বসে আরেকবার চড় মেরে বললাম, স্টপ দিস।

               চড় মেরে ফিলগুড অনুভূতি হাতের তালু বেয়ে ছড়িয়ে পড়ল শিরা-উপশিরায়, নেমে গেল বুক-পেট-জানু হয়ে পায়ের দিকে, শিউরে-ওঠা কাঁপুনির  এক ভালো লাগা।

                তুই : স্টপ ? তোমার শরীর তো রেসপণ্ড করছে, লুকোচ্ছ কেন যে তুমিও আমাকে ভালোবাসো। বাবাগিরি ফলিও না, যথেষ্ট বাবাগিরি ফলিয়েছ, এবার প্রভঞ্জনে এসো মিস্টার প্রধান, আমি নেতি ব্যানার্জি, এসো, আমার চোখের দিকে স্পষ্ট করে তাকাও। তাকাও, চোখের পাতা ফেলবে না, তাকাও, আমার মুখের দিকে তাকাও। তুমি যে আমার সো কল্ড বাবা নও, ভুলে যাচ্ছ কেন ? আর হলেই বা বাবা, সম্পর্ক পাতাও, ইনসেস্টের সম্পর্ক, প্রিহিসটরিক যুগে যেমন মেয়েদের সঙ্গে বাবাদের সম্পর্ক হতো, যেমন বাঘ সিংহ হাতি ঘোড়ার হয়। 

               বলতে লাগলি আই ওয়ান্ট ইওর বেবি, আমি তোমার বাচ্চা কনসিভ করতে চাই, ডোন্ট রেজিস্ট, তোমার মুখে আঁচড়ে-কামড়ে বাইরে বেরোনো বন্ধ করে দেবো কয়েক দিনের জন্য। নখ দেখেছ, যৎসামান্য ছুঁচালো ; দাঁতও ব্যবহার করতে পারি। আমার সেক্সের চাহিদা নেই ; আমি বাচ্চা চাই।

                দুহাতের চেটো দেখিয়ে বললি, এই দ্যাখো, মেহেন্দির নকশায়  ডান হাতে লেখা রয়েছে ড্যাড আর বাঁহাতে ব্রো-প্রো ; আমার উদ্দেশ্য পরিষ্কার।

##

                 প্রলোভনের সমস্যা চিরকাল এই যে জীবনের তাৎক্ষণিক সুযোগ আর পাওয়া যায় না।

                 ছেড়ে দিলাম শরীরকে তোর হাতে, টেনে তোকে বিছানায় নিয়ে যেতেই বুঝতে পারলাম যে  তোকে এই ভাবেই পেতে চেয়েছি, বড়ো করে তুলেছি, অপেক্ষায় থেকেছি যে একদিন না একদিন তুই আসবি ; নেতি ব্যানার্জি আমার, আমিই তাকে আঁস্তাকুড় থেকে তুলে আনার পর নারীত্বে প্রতিষ্ঠা দিয়েছি।

                আমাকে জড়িয়ে তুই নিজের ওপর তুলে নিলি । তোর বুকে মুখ গুঁজলুম, কী তপ্ত তোর বুক। উত্তেজনায় জড়িয়ে ধরলুম তোকে।

              বললুম, আমিও ভার্জিন রে, সেক্স করিনি এখনও। দুবছর আগে পর্যন্ত আমার নাইট ফল হতো, স্বপ্নে তোকে পেয়ে, চটকে-মটকে । ইউরোলজিস্টকে কনসাল্ট করেছিলাম, সে বললে ম্যাস্টারবেট করে বের করে দিতে। কম বয়সে করতাম, তোর মুখ মনে করেই করতাম, কিন্তু এত বয়সে কেউ কি ম্যাস্টারবেট করে ; ইচ্ছে করেছে, কিন্তু করিনি, কেমন নোংরা মনে হতো, ওই যে তুই চেস্টিটি বেল্টের কথা বলছিস।

               আমিও করিনি, ইন দ্যাট সেন্স করিনি, তোমাকে ইম্যাজিন করে ডিজিটালি যতটুকু  আনন্দ পাওয়া যায় ; ননডিজিটালি করলে নাকি ভার্জিন থাকা যায় না, জাঠনি বাড়ির ভিতু মেয়ে বলতে পারো। এই তো তোমার বেডশিটে দ্যাখো, ব্লাড। চাদরটা তুলে দিতে হবে, আমি এই অংশটা কেটে নেবো, মেমেন্টো হিসাবে, নয়তো তোমার সারভেন্ট সকালে এসে সন্দেহ করবে।

                মগজে প্রশ্ন উঠল, কত স্বাভাবিক বোধ করছি এখন, কেন, এই দৈহিক সম্পর্ক ঘটে গেল বলে ? আড়ষ্ট লাগছে না তো ! আমাদের দেখা হয়নি কত বছর, অথচ দুজনেই দুজনের অতিপরিচিত ছিলাম।

                 বললাম, তুলে দিস, অনেক চাদর আছে, কালারড প্রিন্টেড চাদরও আছে। জাঠদের সংস্কৃতি থেকে পেয়েছিস নাকি এই বিদকুটে প্রদর্শনী ?

               তুই : হতে পারে, অভিভাবক মা যখন জাঠনি, কিছু তো পাবো। যাকগে, এবার এলেকট্রা বলে ডাকো।

                আমি : এলেকট্রা, মাই ডিয়ার চাইল্ড, জানি তুই নিও টেরেস্ট্রিয়াল।

               তুই :  জানলে কি করে ?

               আমি : আন্দাজে, নেটি যখন, তার মানে নিও টেরেস্ট্রিয়াল। আমি মনে মনে তোকে ইতি নাম দিয়েছি।

              তুই :না, তুমি হলে ইটি,  এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল। মঙ্গলগ্রহের সরকার তোমায় চেস্টিটি বেল্ট পরে পাঠিয়েছে।

              আমি : কিন্তু তুই আনওয়েড মাদার হয়ে সমাজে থাকবি কী করে ?

              তুই : ধ্যুৎ, আমি আমেরিকায় থাকি। তুমি কি আমাকে রিচুয়ালি বিয়ে করতে চাও ?

              আমি :  হ্যাঁ।

              তুই : আমি কনসিভ করতে চাই, বিয়ে-ফিয়ে আবার কি ? এক পাকেই বাঁধতে চাই না নিজেকে তো সাত পাকে। তোমার রিমোট কন্ট্রোল যথেষ্ট প্রয়োগ করেছ, এবার আমার পালা, ড্যাডি ডিয়ারেস্ট। বাট আই উড  থিংক ওভার ইয়র প্রোপোজাল।

              আমি : কি করে জানলি যে বাচ্চা পেতে হলে এই সব করতে হয় ?

               তুই : আঁস্তাকুড়ে শুয়ে শুয়ে শিখে ফেলেছি ; তুমি কি করে শিখলে ?       

              আমি : শরীরের জিপিএস কাজ করল ; উ উ উ উ উ উ করছিলিস কেন ? অরগ্যাজমের উত্তেজনা রিলিজ করার জন্য ?

              তুই :হাঃ, এতক্ষণ তোমাকে কবিতা শোনালুম, রাইমিং মার্ক করোনি ? উ উ উ উ ? মহাকাব্যের এলেকট্রার স্বপ্নপূরণ হল বলে মনে হচ্ছে।

              আমি : না, মার্ক করিনি, টেন্সড আপ ছিলাম, তুই হঠাৎ এসে পড়েছিলিস, কী করব ভেবে পাচ্ছিলাম না, লস্ট ফিল করতে আরম্ভ করেছিলাম।

              তুই বললি, লস্ট ? নিজের মধ্যে নয়, আরেকজনের মধ্যে হারিয়ে যেতে হয়, ইতস্তত করতে নেই, সব সীমা মানুষের বানানো, ভাঙো যেদিন যখন চাও, নেভার গেট লস্ট । তারপর আরম্ভ করলি তোর গায়িকাসুলভ  কন্ঠস্বরে :

                It struck me a barbed wire snare

                Ich, ich, ich, ich,

                I could hardly speak

                I thought every German was you

                And the language obscene

                #

                An engine, an engine

                Chuffing me off like a Jew.

                A Jew to Dachau, Auschwitz, Belsen.

                I began to talk like a Jew.

                আমি : আমাকে শোনাবি বলে মুখস্হ করে রেখেছিস ? কার কবিতা বললি না তো ?

                তুই : খুঁজো, খুঁজো। হ্যাঁ, আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আবৃত্তি করেছি, কল্পনা করেছি তোমাকে কেমন দেখতে।

                আমি : কেমন ? ফানুসনাভি ব্যাঙ-থপথপে শুশুকমাথা আমলা, চোখে-চোখে শেকল আঁকা ভিড়ের মধ্যে এঁদো বিভাগের কেঁদো ?

                তুই : হা হা, সেল্ফডেপ্রিকেট করছ কেন, লেডিজ টয়লেটের দেয়ালে আঁকা ড্রইংয়ের মতন। কোরো না, শিরদাঁড়া ঘিরে তালের আঁটির মতন শুকিয়ে যাবে।

                 আমি :কত কথা বলতে শিখে গেছিস।

                  তুই : থ্যাংকস ফর দি কমপ্লিমেন্ট, সবই মোর অর লেস বরোড ফ্রম বাঙালি ক্লাসমেটস ।

                  আমি : তাহলে কি করব ? পোলকাফোঁটা পুঁইফুলে দুভাঁজ করা হেঁইয়োরত বাতাস হয়ে উড়ব?

                  তুই : হ্যাঁ, হেঁইয়ো করাতেও তো পাল তুলতে হল আমাকেই।

                 আমি : এখন দ্যাখ, চিংড়িদাড়া আঙুল দিয়ে খুলছি বসে জটপাকানো মুচকি-ঠোঁটের হাসি।

                 তুই : ইয়েস, বেটার দ্যান আই এক্সপেক্টেড ; আমি ভেবেছিলুম তুমি সত্যিই ড্যাডি টাইপের হবে, পেট মোটা, আনস্মার্ট, লেথারজিক, বুকে চুল নেই, বগলে চুল নেই, কুঁচকিতে চুল নেই।

                আমি : কী করতিস অমন হলে।

                তুই : এখন যা করলুম, তা-ই করতুম, তোমাকে কেমন দেখতে ওটা ইররেলিভ্যান্ট।

                 আমি : আমি তো আরোহী-ফেলা পুংঘোড়ার লাগাম-ছেঁড়া হ্রেষা।

                তুই : হ্যাঁ, আই ওয়ান্টেড ইউ, দি পার্সন হু ওনড মি। নাউ আই ওয়ান্ট দি সোয়েটিং স্ট্যালিয়ন, প্রত্যেকদিন , অফিস থেকে ফিরতে দেরি করবে না, আর, আমি সকালেও তোমাকে চাই, দি মর্নিং গ্লোরি। আমার কাছে সেক্স অত গুরুত্বপূর্ণ নয়, আমি তোমাকে আমার জীবনে কখনও অতীত হতে দিতে চাই না, তাই আমার বেবি চাই, সম্পর্ককে যে বাচ্চা অতীত হতে দেবে না, যতদিন সে বেঁচে থাকবে ততদিন, আর তারপর তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্ককে নিজের ছেলেমেয়ের মাধ্যমে বর্তমান থেকে ভবিষ্যতের দিকে বয়ে নিয়ে যাবে। ক্যারি অন অ্যাণ্ড অন অ্যাণ্ড অন ইনটু ইটারনিটি, ইনটু নিউ সানরাইজ এভরি ডে।

                 তোকে বললুম, এত ফ্যাক-ফ্যাক করে কনভেন্টি ইংলিশ বলিসনি, দিল্লিতে এখন হিন্দিঅলাদের রাজত্ব শুরু হয়েছে, ওপরে উঠতে হলে হিন্দির বাঁশের মই বেয়ে উঠতে হবে, নেহেরুভিয়ান অক্সব্রিজ বাবু-মন্ত্রীদের যুগ ফুরিয়েছে। মোগল সম্রাট আকবরের বংশধররাও ক্যারি অন করে পোঁছেছিল ক্যাবলা বাহাদুর শাহ জাফরে, যত ক্যারি অন হয় তত ফিকে হতে থাকে ভবিষ্যত। মোতিলাল নেহেরু পৌঁছেচে রাহুল আর বরুণ গান্ধিতে।

                 তুই : ভালো বলেছ, ফাক-ফাক হিন্দির বাঁশ; এ হল অকলোক্র্যাসি বা টির‌্যানি অফ দি মেজরিটি, মেজরিটি সেক্টের পুরুষরা পাকিস্তানে কি করছে দেখতেই পাচ্ছ, তুই খিলখিলিয়ে বললি। যোগ করলি, কাঁধ শ্রাগ করে, হিন্দি সাবজেক্টেও প্রতিটি ক্লাসে সবচেয়ে বেশি মার্কস পেতুম, সো আই ডোন্ট কেয়ার ; আই ওন ইউ ইন অল দি ইনডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজেস। আমার জিভে আছে তোমার অস্তিত্বের মালিকানা।

##     

 

                 এর মতো, ওর মতো, তার মতো, কারো মতো নয়।

                 যেন এমন, যেন অমন, যেন তেমন নয়।

##

                 আমি : আই ডিডন্ট ওন ইউ ; তুই তোর নিজের মালিক, কেউ কাউকে ওন করে না।

                 তুই : করে, সম্পর্ক হল অন্যের আত্মার মালিকানা। তুমি আমার আত্মার মালিক, আমি তোমার।

                 আমি : আত্মা ? হয় নাকি সেরকম কিছু ?

                 তুই : কেন হবে না ! না হলে কী করে তোমাকে খুঁজে বের করলুম, কাঠঠোকরা যেমন গাছের বাকলে ঠোঁটের ঠোক্কোর মেরে মেরে পোকা বের করে আনে।

                 আমি : পোকা ?

                 তুই : ওউ-ওউ-ওউ-ওউ, দি মেল অরগ্যান লুকস লাইক এ বিগ ক্যাটারপিলার, উত্তুঙ্গ গুটিপোকা, প্রজাপতির নয়, টাইগার মথের। টু বি ফ্র্যাংক, আজকেই আমি স্পষ্ট করে দেখলুম প্রত্যঙ্গখানা কতটা আর্টিস্টিকালি বিল্ট। তোমার প্রত্যঙ্গখানা বোধহয় গ্রিসে বা রোমে তৈরি, খাজুরাহোয় নয়।

##

                   আমি : চণ্ডীগড়ে, জগদীশের বাড়িতে আগে যাওয়া উচিত ছিল তোর।

                  তুই : দুটো কারণে যাইনি ; উনি তোমাকে ইনফর্ম করে দিতেন আর তুমি নির্ঘাত লুকিয়ে পড়তে, আমার পরিকল্পনা, জীবন নিয়ে ভাবনা, তোমাকে আগাপাশতলা খেয়ে ফেলার ইচ্ছে, সব গোলমাল হয়ে যেত।

                  আমি : আর দ্বিতীয় ?

                  তুই : বৈদেহী ওর বরকে ডিভোর্স দিয়েছে, বরটা গে, নেশাভাঙ করে, বাস্টার্ড, কোনো গে ছেলেকে বিয়ে করলেই পারত, কোর্ট তো অ্যালাউ করে দিয়েছে। স্কাউন্ড্রেলটা বৈদেহীকে কামড়ে দিয়েছিল, হাতে, কাঁধে। ওর বিধবা শাশুড়ি আর ওর বর দুজনে মিলে এক রাতে, তখন রাত দুটো, বৈদেহীকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিল, ওর মোবাইল কেড়ে নিয়ে, হায়দ্রাবাদের  রাস্তায় ভেবে দ্যাখো ; সাইবারাবাদ আইটি ইনডাস্ট্রির এক এমপ্লয়ি  স্কুটারে  ফিরছিল, তাকে থামিয়ে বাড়িতে ফোন করতে বাপি, আই মিন আঙ্কলবাপি, ওনার আইএস বন্ধুকে জানায়, তিনি বৈদেহীকে নিজের বাড়ি নিয়ে গিয়ে রাখেন, আর পুলিসে এফ আই আর করেন।

                 আমি : জানি, আমাকে আবার কি বলছিস, আমিই তো পরিচিত একজন আন্ডার সেক্রেটারিকে বলে বৈদেহীর চণ্ডীগড় ফেরার ব্যবস্হা করেছিলাম। জগদীশের তো শুনেই ব্লাড প্রেশার লো হয়ে গিয়েছিল ; সারাজীবন হরিয়ানায় কাটাল, বাইরের ক্যাডারের অফিসারদের সঙ্গে ওর যোগাযোগ প্রায় নেই।

                 তুই : ওউ-ওউ-ওউ-ওউ, তুমি ? তুমি ? তুমি ? তোমার ভূমিকা, অ্যাজ ইউজুয়াল, ওনারা চেপে গিয়েছিলেন, বলেননি আমাকে। বলতে পারতেন, আমি তো আর তক্ষুণি আমেরিকা থেকে উড়ে তোমায় কবজা করতে আসতুম না।

                তুই : আরিয়ানও আঙ্কলবাবা আর মাকে, আই মিন আন্টিমাকে, না জানিয়ে বিয়ে করে চলে গেছে ছত্তিশগড়ের রায়পুরে। ওনারা যথেষ্ট ডিপ্রেসড, আই অ্যাম শিওর। যাবো না ওনাদের বাড়ি, জানতে দিতেও চাই না যে আমি ইনডিয়ায় এসেছি।

                  আমি : জানি, আমি জগদীশকে বলেছিলাম যে বৈদেহীর পাত্র বিশেষ সুবিধার বলে মনে হচ্ছে না, একটা পুলিশ এনকোয়ারি করিয়ে নিই, তা ওর আর অমরিন্দরের টাকাকড়ি সম্পর্কে এমন লোভ যে কানে হিরের টপ-পরা পাত্রের বানজারা হিলসের বাড়ি, বিএমডাবলিউ গাড়ি  আর ব্যবসার সাইনবোর্ড দেখে ভিরমি খেয়ে গিয়েছিল, শেষে এই বিপদ ডেকে এনেছে।

                 তুই আচমকা বললি, আমি তো শুনেছিলুম, বৈদেহী অব্রাহ্মণ কাউকে পছন্দ করত, তার বয়স নাকি ওর চেয়ে চোদ্দো-পনেরো বছর বেশি, ওনারা তাতে রাজি হননি, সেই লোকটি সুদর্শন, ওয়েল বিল্ট, আইএএস, তোমার মতো এজিএমইউ ক্যাডারের।

                আমি : তা জানি না, ওরা বলেনি কখনও এ-ব্যাপারে, বললে মধ্যস্হতা করতাম।

                তুই : করতে ? আর ইউ শিয়র ?

                আমি : আরিয়ানের পছন্দ করা মেয়েটাকে অ্যাকসেপ্ট করে নিতে বলেছিলাম, করল না, ট্রাইবাল ফ্যামিলির বলে। আরিয়ান হল অ্যানথ্রপলজিস্ট, যে মেয়েটিকে বিয়ে করল তাদের সমাজে ঢুকে বিস্তারিত জেনে নিতে চাইছে, তাতে দোষের কি? শুনতে ট্রাইবাল, আমি ফোনে কথা বলেছি মেয়েটির সঙ্গে, স্কুলে পড়ায়, প্রেসিডেন্সি কলেজের ছাত্রী ছিল। জগদীশ ভাবল যে ওর ভবিষ্যৎ প্রজেনির ব্রিড নষ্ট হয়ে গেল। ব্রিড বলে কিছু হয় নাকি, তোকে দেখে শেখা উচিত ছিল ওদের, তোর ব্রিড কেউ জানে ? আজ কোথায় পৌঁছে গেছিস।

##

                 লোকে বলে, বলেরে, ঘরবাড়ি ভালা নয় আমার….

                 মাটির পিঞ্জিরার মাঝে বন্দি হইয়ারে…..

                 কানাই তুমি খেইর খেলাও কেনে….

                 নিশা লাগিল রে, নিশা লাগিল রে, নিশা লাগিল রে….

##

                  তুই : ধ্যুৎ, এইসব প্রসঙ্গ তুলছ কেন ! আমার তো অ্যাপ্রিহেনসান ছিল, আতঙ্কও বলতে পারো, এসে দেখব, একজন হাড়গিলে টাকমাথা চশমাচোখ বুড়ো অন দি ভার্জ অফ রিটায়ারমেন্ট। আমার ডিটেকটিভ এজেন্সি প্রচুর সময় নষ্ট করে দিলে তোমায় লোকেট করতে, আমিই ওদের আঙ্কলবাপি আর মা, আই মিন আন্টিমায়ের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর দিয়ে বললুম ফাইনানশিয়াল ট্রইল ধরে এগোতে। আঙ্কলবাপি তো এতো ঘুষ খায় যে ওরা ডাইভার্টেড হয়ে যাচ্ছিল ; তখন ওদের বললুম পুরোনো ট্রেইল ধরে এগোতে, যখন আমি আইআইটিতে  পড়তুম, আর আমার অ্যানুয়াল ফিস এটসেটরা পে হচ্ছে, সেই সময়ের ট্রেইল।

                 আমি : বুড়ো হলে কি করতিস।

                 তুই : সুইসাইড, জোক করছিনা, বুড়ো হলে তার কোঁচড় থেকে ফুলঝুরির বদলে কুয়াশা উড়ত। কুয়াশায় বাচ্চা হয় না।

                  আমি : ইশারার সাহায্যে বেশ পোয়েটিক কথাবার্তা বলতে শিখেছিস দেখছি।

                 তুই : বাঙালি ব্যাচমেটদের কনট্রিবিউশান। প্রচুর বাংলা গালাগাল জানি। বলব ? হিন্দিও জানি, গিগলিং টাইপ। হরিয়ানভি গালাগাল কিন্তু বেশি ইউজার-ফ্রেণ্ডলি।

                 আমি : না না, বলতে হবে না। বুড়োর বদলে কি পেলি ?

                 তুই : কোঁচড় থেকে বকুল ফুলের ঝরণা ঝরাতে পারে এমন মাসকুলার স্ট্যালিয়ন। এসো, বুলশার্ক, আরেকবার হয়ে যাক।

                নিজেকে নিঃশব্দে বলতে শুনলাম, প্রভঞ্জন, তুমি কতোকাল নেতির জন্য অপেক্ষা করেছ, আর লজ্জায় বিব্রত বোধ কোরো না, নিয়ে নাও, যতো পারো নিয়ে  নাও, একেই যদি প্রেম বলে তাহলে চুটিয়ে ভালোবেসে নাও, প্রেমকে গোপন রেখো না, একেই তো চাইতে তুমি, নিজেকে এই মেয়েটির বাবা বলে মনে কোরো না।

               এতকাল যুবক-যুবতীদের পারস্পরিক সান্নিধ্য আর প্রেমের প্রদর্শনী দেখে হিংসে করতাম, আড়চোখে,   ভুলেই গিয়েছিলাম যে আমি প্রভঞ্জন প্রধান, নিজেকে নিজে ভাবতে আড়ষ্ট বোধ করতাম, ভয়ও পেতাম, মনে মনে তোকে ধন্যবাদ দিলাম, নিজেকে প্রভঞ্জন প্রধান হিসাবে নিজের কাছে তুলে ধরার যোগ্য করে তোলার জন্য, আমার ভেতর থেকে আমাকে প্রসব করার উপযুক্ত করে তোলার জন্য, বুঝতে পারলাম রে, যে আমি কোনও স্হাবর-স্হির বস্তুপিণ্ড নই, তোর শিশুকাল থেকে আমিও তোর পাশাপাশি গড়ে উঠেছি, তুই না এলে আমার অতীত থেকে যেত একেবারে ফাঁকা , ব্যথার মোড়ক খুলে আরেক ব্যথার সাথে মেশানো হয়ে উঠত না।

                বললাম, হোক, উ উ উ উ করিসনি, প্লিজ।

               তুই : ওউ-ওউ-ওউ-ওউ, তুমি এক্টিভ হও, আমি তোমাকে কবিতাটার একটা রেলিভ্যান্ট প্যারা শোনাচ্ছি, বেশ মজার হবে, না ? কবি কখনও ভাবতেও পারেননি যে ওনার কবিতা এইভাবে কাজে লাগানো হবে, স্টার্ট।

               No God but a swastika

               So black no sky could squeak through

               Every woman adores a Fascist,

               The boot in the face, the brute

               Brute heart of a brute like you

               পাশে শুয়ে পড়লাম, বললাম, আমাকে ফ্যাসিস্ট বলছিস, ব্রুট বলছিস, অতদূর থেকে উড়ে এই কথা বলতে এলি ?

                তুই : ব্রুট ফ্যাসিস্ট ছাড়া আর কি ? আমার জীবনকে একেবারে আয়রন গ্রিপে রেখেছিলে, গেস্টাপো কেজিবি সিআইএর মতন নজর রেখেছো সদাসর্বদা। আমি ভিতু টাইপের নই, তুমি যদি বিদ্রোহ না করো তাহলে ভালোবাসা পাবে না, ভালোবাসতে গেলে গায়ে আঁচড়-কামড়ের রক্ত ঝরবে, ভালোবাসায় মাংসের সঙ্গে মাংসের জখমগুলো খুবই সুন্দর, এমনকি মধুময় বলা যেতে পারে, প্যাশনে রক্ত গরম হয়ে উঠবে, তবেই তো ভালোবাসার আমেজ নিতে পারবে। ভয়ও যদি করে, ঝাঁপাতে হবেই।

                 আমি : এলি কেন তাহলে ?

                 তুই : আমি ঝাঁপিয়ে পড়লুম। তোমার গ্লোরি দখল করে তোমার প্রথম রক্ত প্রথম স্পার্ম নেবো বলে ; এখন তোমার মাথার পেছন থেকে হ্যালো ঝরিয়ে দিয়েছি, তোমার রক্ত পালটে দিয়েছি, তোমার যিশুখ্রিস্টগিরি শেষ করে দিয়েছি। তুমি আর আগের প্রভঞ্জন প্রধান নও, না ব্রো-প্রো ?

                 আমি : জানিস ব্রো-প্রো ?

                 তুই :  জানিতো, আঙ্কলবাপি আর আন্টিমা ওই নামেই তো উল্লেখ করেন তোমায়, তুমি সামনে কোনোদিন না এলেও আমি অনুমান করেছিলুম যে এই ব্রো-প্রো লোকটাই আমাকে কনট্রোল করছে, দি ব্লাডি ফ্যাসিস্ট ড্যাডি, দি ডিকটেটরিয়াল পালক পিতা, অ্যাবরিভিয়েট করলে হয় পাপি। তোমার ব্যাচমেটরা আর পরের আগের ব্যাচের সবাই তোমাকে ব্রো-প্রো মানে ব্রাদার প্রভঞ্জন বলে ডাকে, জানি।

                আমি : বিয়ের মেহেন্দি-নকশা কোথায় করালি ?

               তুই :  হোটেলে রিসেপশানিস্ট কে বলতেই ও পাঠিয়ে দিলে ঘরে ; লাগিয়ে বসে রইলুম চার ঘণ্টা, তোমার প্রতি ডিভোটেড, একা-একা আমার মেহেন্দি সেরিমনি, পরে দুজনে মিলে সঙ্গীত সেরিমনি করব।

##

 

                স্পর্শের মর্মার্থ, মর্মার্থের রসায়ন, রসায়নের সম্পর্কে, রেণু, পরাগ, উড়াল জীবন।

                 চাউনির কোলাহল, উতরোল শ্বাস।

##

                 এর মতো, এর মতো, তার মতো, কারো মতো নয়।

                 যেন এমন, যেন অমন, যেন তেমন নয়।

##

 

                আমি : ওই স্টিলের আলমারিটা খোল, বাঁদিকে একটা সেফ আছে, সেটাও খোল, চাবি সামনের ড্রয়ারে আছে।

               তুই : কী আছে সেফে ? আমার গয়না-ফয়না টাকাকড়ি সম্পত্তি-ফম্পত্তি চাই না।

                আমি : খুলে তো দ্যাখ, যা আছে নিয়ে আয় বিছানার ওপর।

                তুই সম্পূর্ণ নগ্ন,  ড্রয়ার থেকে চাবি নিয়ে আলমারি খুলে সেফ থেকে কাগজপত্র বের করে প্রায়-স্তম্ভিত হয়ে গেলি, বললি, এতো আমার স্কুলের আইডেনটিটি কার্ডগুলো, ফাইনালের রেজাল্টগুলো, আর এটা, আরে, মাই গড, এতে তো আমার ইনটারভিউ বেরিয়েছিল, সিসটার অ্যানে নিয়েছিলেন, আর এটা, এটা তুমি ?

                আমি : হ্যাঁ, আমি, তোকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি, তুই তখন এক বছরের।

                তুই : তুমি তো দারুন দেখতে ছিলে গো , পালক পিতা হের হিটলার, ওয়ান হু ওনস মি। ফোটোতে তোমার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে, পুরো সূর্যের গুঁড়ো মুখে মেখে হাসছ। ডানহাতে ওটা তোমার কনট্র্যাক্ট, তাই না, আমার লাইফ লং এডুকেশান স্পনসর করার ?

                আমি : দুটো কনট্র্যাক্ট রে, একটা তোর স্বনির্ভর না হওয়া পর্যন্ত এডুকেশান স্পনসর করার, আরেকটা তোকে অ্যাডপ্ট করার ? তোর পদবির এফিডেভিট জগদীশের কাছে ছিল, তোর স্কুল লিভিং সার্টিফিকেট পাবার পর হয়তো ডেসট্রয় করে দিয়েছে।

                তুই : মাই গড, তুমি অ্যাডপ্ট করেছিলে ? আমি ভাবতুম বাপি, মানে আঙ্কলবাপি, করেছিল, আমার নামে তোমার পদবির বদলে তাহলে আঙ্কলবাপির পদবি জুড়লে কেন ? অ্যাডপ্ট করেও ডিজওন করতে চাইলে, আমি তোমার কনট্র্যাকচুয়াল ডটার বলে ?

                 আমি : না, আমি তো মোড়লচাষার ছেলে, প্রধানরা মাহিষ্য হয় ; তোকে ব্রাহ্মণ করার জন্যে জগদীশকে দিয়ে এফিডেভিট করিয়ে তোর পদবি ব্যানার্জি করিয়ে নিয়েছিলাম।

                 তুই : ধ্যুৎ, আমার ওবিসি হবার সুযোগটাই কেড়ে নিয়েছিলে, কত সুযোগ-সুবিধা পেতুম, তা নয়, বামুন, শ্যাঃ। অবশ্য একদিক থেকে ভালো যে আমি তোমার মেয়ে নই, জাস্ট অ্যান অ্যাডপ্টেড বেবি, এলেকট্রা অফ দি এলেকট্রা কমপ্লেক্স লাস্ট। দি ইনফেমাস এলেকট্রা, বুকের মধ্যে পুষে রাখা ইনসেসচুয়াস ব্যাটলক্রাইয়ের এলেকট্রা, ফসটার ফাদারের  প্রতিষ্ঠিত সন্তান। ইইইইইএএএএএ।

                আমি : সিচুয়েশান ভিলিফাই করছিস কেন ?

                তুই :  তোমার সংগ্রহের কাগজপত্রগুলো দেখব পরে সময় করে।

                আমি : হ্যাঁ, পরে সময় করে বসে বসে দেখিস, যখন অফিস চলে যাব। একটা পেপার কাটিং আছে, দেখতে পারিস, তুই যে ডাস্টবিনে পড়েছিলিস, তার সংবাদ।

               তুই :  তোমার বাঁহাতের কাটা দাগটা সেই বালি মাফিয়াদের আক্রমণে পাওয়া, না ?

               আমি : তুই কি করে জানলি ? ও তো অনেককাল আগের ঘটনা। হ্যাঁ, বেআইনিভাবে নদীর বালি তুলে নিয়ে গিয়ে বেচত বালিমাফিয়ারা, তাদের ট্রাক ক্রেন লোডার সিজ করার অর্ডার দিয়েছিলাম, তারই পরিণতি।

              তুই : জানি, তার পরের দিনই তোমার বদলি হয়ে গেলে।

              আমি : আর টিভিতে দেখালো মাফিয়াকর্তা জেল থেকে বেরিয়ে দু-আঙুলে ভি এঁকে হাসছেন ; সাঙ্গোপাঙ্গোরা তার জয়ধ্বনি করছে।

 

              প্রদাহ, যন্ত্রণা, আশঙ্কা, আতঙ্ক, উদ্বেগ, মুখের ভিতরে জিভে।

              তোর মতো, তোর মতো, তোর মতো, তোর মতো  ঐশিতা, উপলব্ধি, সান্ত্বনা, অনুবোধ।

 

               তুই : আমি তোমাকে তিনটে চিঠি লিখেছিলুম, জানো ?

              আমি : চিঠি ? কই পাইনি তো ? স্কুল কি সেন্সর করে দিয়েছিল ? নাকি জগদীশ-অমরিন্দর ?

              তুই : ধ্যুৎ, সেসব চিঠি পাঠাই-ইনি তোমায়; তুমি তো ইনভিজিবল ডুগুডার, জাস্ট অ্যান্টিসিপেট করে যে তুমি আমার জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছ, আমি দশ, এগারো আর বারো ক্লাসে তোমায় চিঠিগুলো লিখেছিলুম।

                আমি : রেখে দিতে পারতিস তো ! পড়তাম।

               তুই : তোমাকে প্রেমিকড্যাডি মনে করে লিখেছিলুম।

               আমি : ডেসট্রয় করে দিলি কেন ?

               করিনি, আমার সঙ্গেই এনেছি।

               তুই : কই, দে দে দে, কেউ তো কোনো কালে আমাকে চিঠিই লেখেনি, প্রেমপত্র তো বাদ দে।

               আমি : ওই তো টেবিলের ওপরে রাখা খামে আছে, চাইলডিশ যদিও, পড়ে দ্যাখো। বাংলায় লিখেছি, তার কারণ স্কুলে সিসটার আর ওয়ার্ডেনরা বাংলা জানতেন না।

              আমি : কার কাছে শিখলি বাংলা ?

              তুই : কেন , আঙ্কলবাপির কাছে, উনি ভিষণভাবে বেঙ্গলি, দেখছ না আন্টিমাকে কত তাড়াতাড়ি বাঙালি বানিয়ে দিয়েছিলেন, আণ্টিমাও বাংলা পড়তে-লিখতে পারেন, তাই স্কুলের পর্ব শেষ হলে গুড়গাঁওয়ের বাড়িতে চিঠিগুলো লুকিয়ে রেখেছিলুম, তারপর নিজের সঙ্গেই রেখেছি। তোমার খবর পেতেই সঙ্গে করে নিয়ে এসেছি, যাতে আমার ফিলিংস বুঝতে পারো, চিঠিগুলোর এমোশান দেখেই বুঝতে পারবে কত পুরোনো আনুগত্য আর ডিপরুটেড ফিলিংস।

              তোর চিঠি আমি এক -এক করে পড়া আরম্ভ করলাম, পড়তে-পড়তে তোর মুখের দিকে তাকিয়ে প্রতিক্রিয়া দেখছিলাম, বুঝতে পারছিলাম বিব্রত বোধ করছিস, আবার আহ্লাদিতও হচ্ছিস, ঠোঁট বন্ধ রেখে গিগল করছিস।

##

 

ক্লাস টেন ( ২৫ ডিসেম্বর )

ডারলিং ড্যাড,

তুমি সান্টাক্লজের মোজায় লুকিয়ে চলে এসো, আমি স্লেজগাড়ি পাঠাচ্ছি। আমরা দুজনে শীতের এই ঠাণ্ডায় মোজার ভেতরে ঢুকে বেশ মজা করব। আমি তোমার পোশাক খুলে মোজার বাইরে ফেলে দেব আর বলব, ড্যাড, এই দ্যাখো, তোমার বুকে মিথ্যা কথা বলার জন্য লোহা গরম করে ডেভিল তোমায় নরকে পাঠাবার বন্দোবস্ত করে দিয়েছে। তুমি কেমন লোক ড্যাড, আমার জন্যে তোমার একটুও মনকেমন করে না ? কেন তুমি লুকিয়ে আমাকে নিয়ন্ত্রণ করছ ? যদি নিয়ন্ত্রণ করছই, তাহলে আমার সামনে আসার তোমার সাহস নেই কেন ? আমি তোমাকে ভালোবাসি ড্যাড, তুমি মনে কোরো না যে তুমি দূর থেকে আমাকে নিয়ন্ত্রণ করে চিরকাল আড়ালে থেকে যাবে। আমি তোমাকে একদিন নিশ্চিত খুঁজে বের করব। আর যেদিন তোমায় খুঁজে পাবো, সেদিন তোমায় আমি খুন করে চিবিয়ে খেয়ে ফেলব। ইয়েস, আই উইল কিল ইউ অ্যাণ্ড ইট ইউ। সামনে এসো, দেখা দাও, প্রক্সি দিও না। তুমি কি বুড়ো, ফোকলা দাঁতে হাসো, গুটকা খাও, ছাতা মাথায় অফিস যাও ? তোমার কি বিয়ে হয়ে গেছে, ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছ ? তোমার নাতি-নাতনি কয়টা ? যতই যাই হোক, তোমাকে আমি ছাড়ছি না, ছাতা উড়িয়ে তোমায় টেনে নিয়ে আসব ঝাঁঝা রোদ্দুরে, কাদা-জমা বৃষ্টিতে, মনে রেখো, হুশিয়ারি দিয়ে রাখছি। পুরাণের ঋষিমুনিরা তো বুড়ো হয়েও কত কি করতেন, যেখানে সেখানে সিমেন ফেলতেন, সেই সিমেন থেকে শিশুরা জন্মাত, যা ঋষিমুনিরা জানতেও পারতেন না। পুরাণ অনুযায়ী ওল্ড এজ ইজ নট এ ফ্যাক্টর ইন ইমমরাল লাভ অ্যান্ড ইনহিউম্যান ওয়ার। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের কথা চিন্তা করেছ কখনও, কিংবা হেলেন অফ ট্রয়ের জন্য যুদ্ধ ? এপিকগুলোয় বুড়োরাই যুদ্ধ করেছে, চিরকাল। এপিক লেখা তাঁমাদি হয়ে গেলেই বা, আমি আর তুমি তো আছি, আমাদের এপিক প্রোপোরশানের সম্পর্ক তো আছে, ইন পারপেচুইটি ? আরেকটা কথা। তুমি গোপন থাকতে চাও কেন ? তোমার গোপন জীবন আমি একদিন ঘা মেরে আখরোটের মতন দুফাঁক করে দেবো। তবে গোপনীয়তা তোমাকে বেশ রহস্যময় করে তুলেছে ; তোমার কি মনে হয় না যে গোপনীয়তাও একরকমের ভার, যা অত্যন্ত বিপজ্জনক, তাকে রিলিজ করার পথ করে না দিলে উন্মাদ হয়ে যাবে? ইনসেস্টকে অস্বাভাবিক মনে কোরো না। তোমার সন্মোহনপ্রবৃত্তিকে এবার ক্ষান্ত দাও।

তোমার মেয়ে ও প্রেমিকা

নেতি ( দি আগলি নেম ইউ গেভ মি )

##

 

ক্লাস ইলেভন ( দুর্গাপুজো, বিজয়া দশমী )

ডিয়ার ড্যাড দি মহিষাসুর

আমার আগের বছরের চিঠি তুমি পাওনি বলেই মনে হচ্ছে, তুমি এই এক বছরে নিজেকে অসুর হিসাবে প্রমাণ করেছ ; বৈভবী আর আরিয়ানের জন্য কমদামের পোশাক , আর আমার জন্য দামি পোশাক। আমার তা একেবারে পছন্দ নয়। জানি তুমি পাঠাওনি,  আন্টিমা কিনেছেন, কিন্তু আন্টিমা এই কাজ করে ফাঁস করে দিলেন যে তুমি আছ কোথাও। এরকম করার উদ্দেশ্য ? তুমি কি আমাকে এনটাইস করার চেষ্টা করছ ? সিডিউস করতে চাইছ? করো, করো, যতো পারো করো। তুমি অমন না করলেও আমি তোমাকে ভালোবাসি। আগের চিঠিতে লিখেছিলুম যে আমি তোমার প্রেমিকা। তুমি কি জানো প্রেমিকা কাকে বলে ? জীবনে কখনও প্রেম করেছ ? নাকি এরকম আড়ালে থেকেই মদনের শর চালিয়েছ। মদনের কথা কার কাছে জানলুম। আন্টিমায়ের কাছে। উনি পুরানের গল্প আমাকে শোনান যাতে আমি বাইবেলের কাহিনিতে নিজেকে গুলিয়ে না ফেলি। আমি কিন্তু মেরির চেয়ে বেশি ভার্জিন। তোমাকে ছাড়া আর কাউকে চাইনি, চাইবো না কোনোদিন, দেখে নিও। আগের চিঠিতে তোমার ফ্যামিলির কথা জানতে চেয়েছিলুম, বললে না তো কিছু, তুমি এরকম ভিতু কেন ? ফ্যামিলি থাকলেই বা, তুমি যদি কাউকে বিয়েও করে থাকো, তবু আমি তোমার সঙ্গে প্রেম করব, আর প্রেম করার পর পুরুষ মাকড়সাকে যেমন প্রেমিকা মাকড়নি মেরে ফ্যালে, তেমন করে কুচিয়ে মেরে ফেলব। তোমাকে কিন্তু বলে রাখলুম, আমি সবকয়টা ঋতু তোমার কাছ থেকে চাই, শুধু বসন্তকাল নয়। তুমি আমার শরীরের সঙ্গে কথা বলে দ্যাখো, ও তোমাকে খাঁটি সত্য কথা বলবে ; আমার ঠোঁট, জিভ, মুখের ভিতরটা তোমার। চিঠি লিখো। লিখে না পাঠালেও আমি পেয়ে যাব। গুড নাইট ডিয়ার ব্রহ্মা, ইট ইজ পদ্মা হেয়ার ফ্রম হেভেন। তুমি আমার নাম নেতি কেন রেখেছ, আমি জানি। কারণ ইমমরাল প্রেমের মতন স্বর্গীয় সুষমা আর নেই ; প্রেমে ইমমরাল না হওয়া হল নৈতিক শূন্যতা, ব্যানালিটি। আমাদের বয়স প্রতি বছর বাড়ে কেন ? যাতে আমরা ক্রমশ ইমমরাল হতে পারি, প্রেমকে মেনে নিতে পারি। হাঃ হাঃ হাঃ হাঃ। তুমি আমার ইনটারভিউটা কি করে পড়লে। নিশ্চয়ই পড়েছ। ছুটিতে বাড়ি ফিরে দেখলুম, আঙ্কলবাপি দেখালেন, আমার আলমারিতে নতুন বই, বাংলা কবিতার, ইংরেজি কবিতার। ঘরে ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের জার্সি ঝুলছে। আন্টিমাকে জিগ্যেস করতে উনি বললেন, ফার্স্ট হয়েছি বলে গিফ্ট এসেছে। কার গিফ্ট, তা উনি জানেন না, যে পাঠিয়েছে সে ঠিকানা লেখেনি। তুমি কেমন পাগল গো ? ধ্যুৎ, এত এত বই আমি পড়তে পারব না, বড় হলে পড়ব। রিমাইন্ড করিয়ে দিই, ইনসেস্টকে অনৈতিক মনে কোরো না।

ফাক ইউ অ্যান্ড লাভ ইউ।

তোমার নেতি ( ইওর এলেকট্রা অফ দি ম্যাজিকাল এপিক )

ক্রমশ

আরও পড়ুন...