বাং লা দে শে র ক বি তা
মানুষ স্বভাবতই একা
মায়ের গর্ভে, কবরে কিংবা চিতায়
মানুষ একা- বড্ড একা
কবি যেমন থাকে তাঁর অপ্রকাশিত কবিতায়।
কাম ও ঘামের প্রবল তাণ্ডবলীলা শেষে
পাশ ফিরে শুয়ে থাকা প্রিয়তম সেই মুখের মতো- মানুষ একা
তুমুল ঝড় শেষে বিধ্বস্ত ঠোঁটের মতো- মানুষ একা!
এবং আমার মতো মানুষগুলো ভীষণ একা।
মানুষে গিজগিজ করা শহরে চাকরিপ্রার্থী সেই তরুণের মতো
প্রেমিকের হাতে হাত গুঁজে বসে থাকা সেই প্রেমিকার মতো
আহা! মানুষগুলো ভেতরে ভেতরে কত্তো একা।
মিছিলে ঢেউ তোলা সেই স্লোগানের মতো;
সমাজতন্ত্রের জন্য মুখিয়ে থাকা সেই বিপ্লবীর মতো— মানুষ একা।
মেট্রোরেল, সিটি বাস, লক্কর ঝক্কর লেগুনা ও গণপরিবহনে
শত-শত যাত্রীকে টেনে নেয়ে সেই চালকের মতো মানুষ একা।
শহুরে রাজপথ, এভিনিউ, রমনা পার্ক, শিখা চিরন্তনী কিংবা
সড়কে দাঁড়ানো রাজু ভাস্কর্যের মতো মানুষ একা; বড্ড একা।
অভাবের ভেতর ফুটন্ত ফুলের মতো আমাদের সংসদ ভবন
মানিক মিঁয়া এভিনিউ, ভাসানী হকি স্টেডিয়াম, স্মৃতিসৌধের মতো
মানুষ একা; প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে— মানুষ বড্ড একা।
প্রেমের ও অপ্রেমের মতো কিংবা মায়া ও ঘৃণার মতো
মানুষ বড্ড একা, একা এবং একা।
আমাকে খুন করার জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের প্রয়োজন নেই
এমন কী প্রয়োজন নেই ধারালো ছোরা
কিংবা নীল বিষের পেয়ালা…
এমন কালো মেঘের বুক ঠেলে বের হয়ে আসা চাঁদ
রূপোলী আলোর বিচ্ছুরণ
এবং হাতের তালুতে হাত রেখে
আচমকা আমার বাম গালের ওপর
তোমার হন্তারক ঠোঁটের সশস্ত্র হামলা…
ব্যস- হয়ে গেল…
জন্মান্তরীণ গলে যাওয়া এই আমার ইতিহাস!
তুমি চলে যাওয়ার পর
আমি আলোর জন্য কখনো প্রার্থনায় বসিনি
নিগূঢ় অন্ধকারে বেদনাগুলো কেবলই নেড়েচেড়ে দেখেছি
এইসব বেদনায় আমার কোনো মালিকানা নেই
আমার কোনো অস্তিত্বও নেই।
একদিন এক টিকটিকি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল,
তাহলে এই গৃহপালিত দুঃখ ও হৃষ্টপুষ্ট বেদনাগুলো কার?
তখন আমারও টনক নড়েছিল
তাহলে আমি কার চুলে বেদনার নীল ফিতা বাঁধি
কার চুলে মিহি দাঁতের চিরুনি চালাই;
সুসৌম্য কষ্টের কর্ষিত জমিন ভেবে?
দুঃখের শীতল তেলে ভিজিয়ে দেই কার অমন ঘন কেশ?
আহা! আমার রাতগুলো কেবলই দীর্ঘতর হয়ে যায়।
এইসব অমীমাংসিত বেদনার মালিকানা বুঝে নিতে
আসে না আর কেউ!