ক বি তা
ফুটপাতে ল্যাপটা খেয়ে বসে আছে লোকটি
রোদ এসে পড়েছে তার চুলে
এই সব কত দিনের স্নান না করা চুল, মাথা ভর্তি জটা, জটায় উকুন তার
গায়ে নোংরা ছেঁড়া একটা জামা, লুঙ্গিটাও ছিঁড়ে গেছে;
কোনও রকমে পরে থাকা শুধু।
মুখ ভর্তি ময়লা দাড়ি গোঁফে মুখ তার দেখা যায় না আর!
কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকার পর ঝাঁকুনি দিয়ে সে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলল রোদ
তারপর সদ্য তৈরি হওয়া ছায়া খোদাই করে
সে বানাতে লাগল হারিয়ে যাওয়া তার সন্তানের মুখ।
বউটা তার মরেছে কবেই!
একটা মেয়েকে ভালোবেসে কুড়ি বাইশ বছরের তরুণ ছেলেটি
কোথায় হারাতে পারে?
লোকটি সূর্যের আলোতে খুঁজেছে তার হারানো সন্তানের মুখ
লোকটি চাঁদের অন্ধকারে খুঁজেছে তার হারানো সন্তানের মুখ।
কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে সে এসে দাঁড়াল বাস স্টপে
এখন অফিস যাওয়ার সময়, চারদিকে শুধু ভীষণ ব্যস্ততা
বাস স্টপে যাত্রী অনেক, লোকটি খাবার চায় যাত্রীদের কাছে—
মা, একটু খই কিনে দেবে, মা? তিনদিন কিছু খাইনি! বাবা, একটু খই কিনে দেবে?
এই ব্যস্ত সময়ে এসবে লোকে বিরক্ত হয় ; মহিলারা ভয় পায় খুব,
কামড়ে দেবে না তো!
তিন চার দিন কোথাও দেখা যায় না লোকটিকে
আজ দেখলাম রাস্তা জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে খই।
লোকটি রাতে শ্মশানে ঘুমোয়
আর দুপুর বেলাটা সে কাটিয়ে আসে কবরখানায়, গাছের ছায়ায়।
তার বাড়ি নেই, ঘর নেই, খাবারও জোটে না দুই বেলা।
তবে এ অঞ্চলে সে পরিচিত
সবাই তাকে পাগল বলে জানে।
পাগলামি সে সত্যিই করে
জিভে আঙুল ঠেকিয়ে সেই আঙুল নিজের কপালে মুছে রাখে
নিজের ভাগ্যকে সে থুতু দেয় রোজ।
তখন বিকেল হতে যায়, কবরখানার মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে সে দেখল
অন্যদিনের মতো ফুল ফোটেনি আজ
আজ গোরস্থানে ফুটেছে শুধু একটাই ফুল – একটাই শ্মশান চাঁপা!
সে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল ফুলটার দিকে, মুখে তার ফুটে উঠল হাসি
তারপর সে আনন্দে দু’হাত তুলে ছুটতে থাকল এদিক ওদিক
যেন ধর্মান্ধ মানুষদেরকে সে করুণা করতে চায়।
একটু পরে স্বাভাবিক হয়ে সে আবার এসে দাঁড়াল ফুলটার সামনে।
তারপর সে ভেবে দেখল কিছুক্ষণ…
হয়তো সে সত্যিই পাগল কিন্তু ধর্মান্ধ নয়
এও তো অনেক কৃপা অদৃষ্টের!
এই প্রথম নিজেকে তার ভাগ্যবান মনে হল।