গু চ্ছ ক বি তা
১
নিজেকে অবলীলায় এতটাই
ছোটো করে ফেলতে পারো যে বিন্দুও লজ্জা পেয়ে যায়
সংকীর্ণ সড়ক মাড়িয়ে যেতে যেতে খাদই হয়ে উঠলো শেষতম আশ্রয়
২
অভাব কখনোই পারেনি স্বভাব নষ্ট করতে
তলে তলে সুসজ্জিত অন্ধকার আড়াল করেছো বহুদিন
বিচিত্র পাতার দেশ থেকে চেয়ে আছো
সমুদ্রের নিষ্পাপ নীলে
৩
চোখে চোখ রেখে মিথ্যা আওড়ানোর কলা আয়ত্ত করেছো
মুখ ঢেকে রাখা আশ্চর্য এক অভিশাপ
নগ্ন করে চলেছে অহরহ
গুহার ভেতর শুধু জলের হাহাকার
৪
যন্ত্রণার ভাস্কর্য দেখেছো
বিরহের অভ্রস্পর্শী স্থাপত্যকলা
জীবিত কঙ্কালগুলি জেনে গেছে ধ্বংস হয়ে যাবে
৫
ভেসে যাওয়া স্মৃতির উঠোনে জেগে আছে
লক্ষ লক্ষ তারা
পাতার মর্মর ধ্বনি বুকে নিয়ে আশ্চর্য স্তব্ধ
এক পথ বয়ে চলেছে জিজ্ঞাসার পার্শ্বরেখা ধরে
৬
হে প্রণম্য অগ্নি
আলিঙ্গন করো
বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি বহুকাল
চেনার আনন্দে ভালো থাকি যেন চিরকাল
৭
ব্যাঙটিকে চিমটি দিয়ে বাইরে আনলাম
কুনো অন্ধকারের প্রহর শেষ হল
শীতল রক্তে আলোর গান জাগুক
৮
উপশমহীন বেদনার ভেতর জেগে ওঠে গোধূলির সংরাগ
পাতিলেবু ছায়ার অন্ধকারে
মায়াময় জোনাকির আলো
৯
ভ্রমের ভেতর হেঁটে যাই
খড়কুটো স্পর্শ করে জ্যোৎস্নার গন্ধ পাই
মেঘের আদর গায়ে মেখে
দিনবদলের হাওয়া টের পাই
১০
রাতের এঁটোবাসনের মতো
ফার্স্ট পিরিয়ডের ব্ল্যাকবোর্ড দেখলে কঁকিয়ে উঠি
ভেতরে ভেতরে
রোল কলের আগে মুছে মুছে ফর্সা করলে তবে
ভরসা পাই ক্লাস শুরু করার
বহুব্রীহি পল্লবিত পদ্মনাভিতে
১১
কান্নাভেজা পাহাড় আমার মা
রক্তসোঁদা নদী আমার বোন
দাঙ্গা ক্ষত টিলা আমার ভাই
দুঃখ আমার অসুখবিসুখরা
রাত-বিরেতে শরীর যাচ্ছে পুড়ে…
১২
সকাল থেকেই তুমি ঝিমিয়ে আছো
রান্নাঘর থেকে শোবার ঘরে ঢুকে পড়ছো মাঝে মাঝে
তাও হাত পুড়িয়ে দশটার ভাতসহ তিনখানা ব্যঞ্জন বেড়ে দিলে
হিক্কা হিক্কা বমি, গা গুলিয়ে অস্থির ভাব
নভেম্বরের শেষ দিন এলো
তবু শীত এলো না
১৩
সবুজ গুহার দিকে
আমরা এক আশ্চর্য আরোহী
বানমোছা গ্রামগুলি দাঁড়িয়ে রয়েছে খালপাড়ে
অঘ্রানের তপোবনে মাঠে মাঠে
ঝরা নূপুরের নিক্কণ
১৪
ঝুঁকির ভেলায় বছর সাঁতরে চলেছো
গন্তব্য অন্তহীন ব্রহ্মাণ্ডের আলোক সরণি
মধ্যবিত্ত উঠোনের পায়রা
ধ্বনি তুলছে অঘ্রাণের ভোরে
তেঁতুলপাতার দেশ ছায়াঘন অশোকের শিলা
১৫
প্রতিদিনই লিফট চড়ে মহিলা বিভাগে যাচ্ছি
কোনোদিনই বাদ পড়ছে না
নীল সাদা সুপার স্পেশ্যালিটি তোমাকে প্রণাম
চাকাওলা বিছানার পিছু পিছু হেঁটে যাচ্ছি
মর্গ বাঁদিকে রেখে হেঁটে যাচ্ছি
স্বজন হারানো কান্না শুনতে শুনতে নেমে আসছে রাত
টলমল করছে মাতাল সন্ধ্যার রাস্তাঘাট
১৬
ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে রোগীদের ব্যবহার্য
কাপড় চোপড় ব্যাগভর্তি থালা বাটি গ্লাস
স্যালাইন বোতল বেডপ্যান
মৃতের জুতো বেল্ট প্যান্ট হাতের মাদুলি তাগা
আশ্চর্য একা একা শীতের শিশির মাখছে
সিস্টারদের নখ ছুঁয়ে ভুলে গেছে পুনর্জন্ম
আয়াদের পদভার টের পেয়েছিল ঢের আগে
১৭
একটি স্বপ্নের বাড়ি নির্মাণ করেছি
বাড়িলগ্ন সবুজ ঘাসের চত্বরে ক্যাম্প চেয়ার পেতেছি একা
এখানে পড়ার ঘর ওখানে ঠাকুর ঘর সাজিয়ে তুলেছি নিরালায়
আসলে দেড় যুগ আগে থেকে আবাস যোজনার লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছি