রূ প ক থা
মডেল ও কবি
মেকআপের অন্যতম প্রধান অংশ হল আই মেকআপ।সুন্দর ও আকর্ষণীয় আই মেকআপ চোখের সৌন্দর্যকে করে তোলে দ্বিগুণ । ক্লিওপেট্রার সাজে এলিজাবেথ টেইলরের চোখের সাজ তো নিঃসন্দেহে মন কেড়েছে সকলের । চোখের পাতার বাইরেও টেনে আইলাইনার লাগানোর চলকে আরও জনপ্রিয় করেন অড্রে হেপবার্ন। থিমভিত্তিক সাজে এ স্টাইল খুবই জনপ্রিয়তা পায় তখন। আবার বর্তমানে রোজকার জীবনে ন্যাচেরাল আই মেকআপ এর ডিমান্ড ও বেশি । একটা সুন্দর আই মেকআপ যেন পুরো লুকটাকেই চেঞ্জ করে দিতে পারে মুহূর্তের মধ্যে।আর মেকআপ লাভার-দের কিন্তু নিজেদের লুকে তারতম্য আনতে বিভিন্ন আই মেকআপ স্টাইল সম্পর্কে জ্ঞাত হওয়া অত্যন্ত জরুরি। একঘেয়ে হেভি মেক আপ লুক বার বার করার থেকে ভিন্ন ভিন্ন স্টাইল ট্রাই করলে, লুকে যেমন ভিন্নতা আসে তেমনি, ট্রেন্ডি-ও লাগে। আসলে, চোখের সাজ সুন্দর এবং পারফেক্ট-ভাবে করতে পারাটাই হচ্ছে মেইন চ্যালেঞ্জ।
আর আজ তাই বিউটিশিয়ান নিবেদিতা সরকারের ( লাবণ্য বিউটি ক্লিনিকের কর্ণধার) কাছ থেকে আমরা জেনে নেব বিভিন্ন ধরনের আই মেকআপ করার সহজ পদ্ধতি।
এই ধরনের আই মেকআপ এভরিডে বেসিস-এ করা হয়। যেমন- অফিস, কলেজ, ইউনিভারসিটি ইত্যাদিতে রেগ্যুলার বেসিসে চটজলদি এই আই মেকআপ করা যায়। নিউট্রাল বা ন্যাচারাল ধরনের আই মেকআপ করলে ১-২ টি আইশ্যাডো-এর প্রয়োজন হয়। তাছাড়া আজকাল বিভিন্ন পার্টিতে অনেকেই ন্যাচেরাল আই মেকআপ করে অনায়াসে তাক লাগিয়ে দিচ্ছেন সকলকে। এই ধরনের আই মেকআপের একটা মজা হল দেখে মনে হয় প্রায় নো মেকআপ কিন্তু এর উপস্থিতি যেকোনো লুককে করে তোলে ইউনিক ও আকর্ষণীয়।
প্রথমে একটি ফ্লাফি ব্লেন্ডিং ব্রাশের সাহায্যে পিচ, ব্রাউন, ডার্ক ব্রাউন, মভ ইত্যাদি কালার ক্রিজ-এ ব্লেন্ড করে নিতে হয়। অথবা কালার-টি পুরো আইলিড-এও লাগিয়ে নেওয়া যেতে পারে। চাইলে ক্রিজ-এর কালার-টি লোয়ার ল্যাশ লাইন-এও স্মাজ করে নেওয়া যেতে পারে এবং তারপর আইব্রো বোন, ইনার কর্নার হাইলাইট করতে হয়। এরপর লাইনার আর মাশকারা লাগিয়ে নিলেই আপনার লুক কমপ্লিট।
স্মোকি আই মেকআপ-এর কথা অনেকেই শুনে থাকবেন। স্মোকি আই দিন এবং রাতের বেলায় অর্থাৎ যে কোন সময় করা যায়। যেকোনো পার্টিতে দারুন মানিয়ে যায় এই আই মেকআপ। তবে, এই আই মেকআপ-এর মূল শর্ত হচ্ছে ব্লেন্ডিং। যত বেশি আইশ্যাডো ব্লেন্ড করবেন, আপনার আই লুক তত সুন্দরভাবে ফুটে উঠবে। প্রথমে প্রাইমার দিয়ে আই লিড প্রিপেয়ার করে নিয়ে আই লিডের নিচের অংশে ডার্ক কালারের একটা আইশ্যাডো বেইজ লাগিয়ে নিতে হবে। এটা ডার্ক কোনো কাজল বা জেল লাইনারও হতে পারে।।এরপর এটি ভালোভাবে স্মাজ করে নিতে হবে। এর উপর পছন্দ মত ডার্ক কালার লাগিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এরপর ডার্ক কালার -টির লাইন উপর দিকে যেখানে শেষ হয়েছে, সেখানে তার থেকে লাইট একটি কালার লাগিয়ে ব্লেন্ড করতে হবে। এভাবে ২-৪টি কালার লাগিয়ে ব্লেন্ড করে ক্রিজ পর্যন্ত চলে যেতে হবে। মূলত এটি ডার্ক থেকে লাইট কালারের দিকে যাবে। লোয়ার ল্যাশ লাইনেও সেইমতো কাজ করতে হবে এবং ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিতে হবে। চাইলে আইলিড-এ শিমারি কালার-ও লাগানো যেতে পারে । এরপর লাইনার, মাশকারা এবং আইল্যাশ লাগিয়ে নিলেই হয়ে যাবে পারফেক্ট স্মোকিং আইজ।
খুব গর্জিয়াস ও গ্ল্যামারাস লুক যারা পছন্দ করেন, তাদের জন্য গ্লিটারি আই মেকআপ পারফেক্ট। রাতের বেলা যে কোনো পার্টির জন্যই এটি মানানসই। কিন্তু দিনের বেলায় গ্লিটারি আই মেকআপ না করাই ভালো।প্রথমে নরমাল আই মেকআপ এর মতই সব কিছু করে নিতে হবে। যেমন- ট্রানজিশন কালার, ক্রিজ ডিফাইন, লিড-এ আইশ্যাডো, ব্রো বোন এবং ইনার কর্নার হাইলাইট ইত্যাদি। আইলিড-এর যে অংশে আপনি গ্লিটার লাগাতে চান সেখানে গ্লিটার গ্লু লাগিয়ে এর উপর লুজ গ্লিটার লাগিয়ে নিতে পারেন। অথবা, গ্লিটার লাইনার নিয়ে যে অংশে গ্লিটার লাগাতে চান, সে অংশে লাগিয়ে নিতে পারেন। ক্রিজের উপর চিকন করে ক্রিজ লাইন টেনে গ্লিটার লাইনার লাগানোটা এখনকার মোস্ট পপুলার ট্রেন্ড। দেখতে বেশ ভালো লাগবে।
যাদের চোখ ছোট তারা এই আই মেকআপ-টি ট্রাই করতে পারেন। এছাড়া বিভিন্ন পার্টিতে এই আই লুকটি বেশ মানানসই।প্রথমে আইলিড প্রিপেয়ার করে, ক্রিজের একটু উপরে ট্রানজিশন কালার লাগিয়ে নিতে হবে। এরপর ক্রিজ-টা ডিফাইন করে নিয়ে একটা ডার্ক কালার নিয়ে পুরো আইলিড-এই লাগাতে হবেশুধুমাত্র আইলিডের মাঝের অংশটুকু বাদ দিয়ে। এরপর কালার-টা ব্লেন্ড করে নিতে হবে। এরপর মাঝখানের খালি অংশে শিমারি, গ্লিটারি, মেটালিক আইশ্যাডো লাগিয়ে ডার্ক কালার-টির সাথে ব্লেন্ড করে নিতে হবে মাঝের কালার-টা লাইট হলে বেশ ভালো ফুটবে।
বিভিন্ন ধরনের আই মেকআপের মধ্যে স্পটলাইট আই মেকআপ বেশ জনপ্রিয়। পারফেক্ট-ভাবে করতে পারলে আপনি এর প্রশংসা পাবেনই। তবে, এটা করা একটু ট্রিকি। হ্যালো আই মেকআপ-এর মতই প্রথমটুকু করে নিতে হবে। আইলিড-এর মাঝখান বাদে পুরো আইলিড-এ ডার্ক একটা ম্যাট কালার লাগিয়ে নিতে হবে। এরপর একটা পাতলা ব্রাশ-এ কনসিলার লাগিয়ে ক্রিজের মাঝের অংশে ক্রিজ-টাকে ফলো করেই ইউ শেইপ এঁকে নিতে হবে এবং কনসিলার-টা নিচের দিকে নিয়ে এসে ব্লেন্ড করতে হবে। কনসিলার-টা সাবধানে পাউডার দিয়ে সেট করে নিতে হবে। এবার একটা লাইট শিমারি কালার যেমন- গোল্ডেন, শ্যাম্পেইন, রোজ গোল্ড, কোরাল ইত্যাদি কালার নিয়ে কনসিলার যেখানে লাগানো হয়েছে, ঠিক সেই খানে সাবধানে লাগিয়ে নিতে হবে। এবার, ডার্ক কালার এবং শিমারি কালার-এর দুই পাশের গ্যাপে দুই কালার-এর মাঝামাঝি ধরনের একটা কালার নিয়ে ব্লেন্ড করে নিতে হবে।এই কালার-গুলো ব্লেন্ড করার কারনে আই মেকআপ-এ একটা স্পটলাইট এফেক্ট আসবে। চাইলে ক্রিজের লাইনের উপর গ্লিটার লাইনার লাগানো যেতে পারে।
মেকআপ- বিউটিশিয়ান নিবেদিতা সরকার ( লাবণ্য বিউটি ক্লিনিকের কর্ণধার)
ফোটোগ্রাফি- দীপা বর্মন
মডেল- অনুক্তা ঘোষাল, সৃজা বিশ্বাস
বিউটিশিয়ান ও ‘লাবণ্য বিউটি ক্লিনিকে’র কর্ণধার