ক বি তা
উপবনে আলো মরে এলে শোকাহত সারসের দেশে শান্তি নামে।
রবাহুত শ্রোতাদের ভিড় থেকে শোনা যায়
প্রবুদ্ধ-জাতক,
যেন দিনলিপি একে একে আরশিদীপ্ত,
সাক্ষ্য পেতে চায়। দু’চোখে গভীর ক্ষত। মহাকাল বিশ্রামে বসে,
বিদেহীর আচমনে তুষ্টি তার হবে কি আদৌ? তাই দেহের সন্ধানে—
গুহা থেকে গুহাতীত আশ্রয়ের খোঁজ,
যেখানে প্রাণের থেকে প্রাণের প্রবাহ নিরন্তর,
যক্ষিনীর কামনার মতো,
আযৌবন প্রতীক্ষায়, প্রতিবিম্ব ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে আসে।
সেখানে জলঙ্গী তীরে সারসেরা ফিরেছে আবার।
মেঘাতুরা শ্রোতাদের কেউ কেউ প্রশ্ন করে গ্রহণের আগে—
“আরো কত সাক্ষ্য পেলে তবে, কবিতা সম্পূর্ণ হবে?”
কবি নিরুত্তর,
শ্রান্তি নামে শোকাহত সারসের দেশে।
ঘুম নেই এতটুকু। রাত্রি ডুবেছে ঢেরদিন।
ডুবিয়েছে ইতস্তত পরাগের মতো।
ক্লান্তিহীন, স্থির, ক্লীব পক্ষীরাজ যেন,
আঘাতে আঘাতে দ্রুতি— প্রাণের স্পন্দন
ছিল কোনকালে বুঝি অসুখের মতো,
ক্ষয়ক্ষতি যা কিছু হয়নি, সেসবে আক্ষেপ রাখি।
আর কিছু বেহিসাবী পেয়ালার নীচে—
চিরকুট ছিঁড়ে ছিঁড়ে লুকিয়ে রেখেছি।
যাত্রীহীন ছোটছোট কেবিনের ফাঁকে
আদমশুমারি হবে এই মর্মে বিজ্ঞাপন টাঙানোর আগে
ক্ষতের হিসাবে ভুল হয়েছে আবারও,
অনেক অসুখ ছিল, ওদের সকলের হয়;
আমি তো মলম এনে কবেই তা হারিয়ে ফেলেছি!
এমনটা প্রতিদিন দুইবার হয়, আর হয় বারবার রাত্রি ফিরে এলে…
ওদের জাহাজ ফাঁকা। আমার যে অনেক লাগেজ,
খালাসি ডেকেছি। তারা এইমাত্র বিশ্রাম নেবে।
সমুদ্র ক্ষয়ে গেলে মরুর কি মেরামতি হবে?
অবাধ্য নাবিকও তাই দুরবীনে চোখ স্থির রাখে।
আমিও রেখেছি চোখ- নোঙরের একপ্রান্ত ছুঁয়ে;
যতক্ষণ তীরে আছি, আছি আমি জাহাজের কাছে—
এমন সান্ত্বনাটুকু রোজ ধীরে ধীরে
আমার দুরবীনস্থির চোখ ডুবিয়েছে।