Hello Testing

4th Year | 3rd Issue | June-July

৩০শে আষাঢ়, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 16th July, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

সি নে  দু নি য়া

অ র্পি তা   স র কা র

arpita

তরঙ্গ… the wave of life

পাশাপাশি ঘর দুটো। দুটো জানলা। নির্বাক। ওম্হারা। চায়ের কাপের আরাম নিছকই ভান… এমনই নিস্তরঙ্গ ফ্রেম ডিঙিয়ে ঢুকতে হলো ‘তরঙ্গ… the wave of life…’ ছবিতে। সোহাগ থাকে একটা ঘরে।  অভিজিৎ আর একটা ঘরে। আগর গাছের বুক ছিঁড়ে গন্ধ নিঙড়ে নেয় অভিজিৎ। অসুস্থ সে। মারণ রোগ। সোহাগকে দিতে পারেনি সন্তানও। কলকাতা থেকে দূরে পুরুলিয়ায় চাকরি নিয়ে এসে সোহাগ জীবনটাকে টিকিয়ে রাখতে চায়। বাঁচাতে চায় যাপনটাকে। সোহাগের বন্ধু রাজীব হাত বাড়িয়েছে। নিজের কোম্পানিতে চাকরিটা রাজীবই করিয়ে দিয়েছে। কৃতজ্ঞ সোহাগ।  কৃতজ্ঞতার ঘাস ছুঁয়ে ছুঁয়ে অনন্ত একটা প্রান্তরও বোধহয় ডাকবে কিছু পরে। অতএব চেনা চেনা গল্পের আদলে ছবি হাঁটতে থাকে। বাধ সাধে অভিজিৎ। একদিন ডিমের তরকারি রান্না করে অপেক্ষা করতে থাকে সোহাগের জন্য। সোহাগ খেতে ভালোবাসে। সে তরকারি সোহাগ খেল নাকি খেল না সেটা বুঝতে বুঝতে মনটা দ্রব হয় রাজীবের নরম চোখদুটো দেখে… সোহাগ মাখতে চায় ওইচোখ। তাই বলে পুরুলিয়ার মুখোশ শিল্পীদের ন্যায্য পাওনা পাইয়ে দিতে চাকরি ছাড়তে পিছপা হয় না সোহাগ। রাজীবের কোম্পানিতো ঠকাচ্ছে মুখোশ শিল্পীদের। শিল্পী হয়ে এই অন্যায় সোহাগ মানবে কেন! ক্রমশ আপোষে অনীহা জমাচ্ছে যে তার জীবনেও, জীবিকাতেও। আপোষে আপত্তি অভিজিতেরও। চিকিৎসা আর চিকিৎসকের সঙ্গে আপোষ করতে চায় না। কারণ কেমো নিলে  সে অসুন্দর কুদর্শন হয়ে যাবে সে। সুন্দরকে সে আদরে আতরে রাখতে চায়। পারফিউম এর কোম্পানি ডুবে গেলেও তাই সুগন্ধী বানানোর নেশায় অভিজিৎ ডুবেই থাকে। গন্ধ খোঁজে। পরাণের। পায়ও হয়তো। তাই হারিয়ে যাওয়ার আগে এবং পরেও সুগন্ধী আঙুলে ছুঁয়ে থাকে তার সোহাগী জীবনকে। আর জীবন ছুঁয়ে থাকে সোহাগকে। নতুন ব্যবসা আর নবীন স্বপ্নের গা ঘেঁষে ভেসে আসে আলতো রঙের পাঞ্জাবীর ইশারা। সোহাগের ইচ্ছে ছিল রাজীবকে পাঞ্জাবীতে দেখার। দেখল…

ক্যারাম খেলে অভিজিৎ। একা একা। নিজের দান, তারপর প্রতিপক্ষের দানও দিয়ে দেয়। আসলে বোধয় কথা বলে একা একা। দুয়ে মিলে এক হওয়া হয়নি তাই নিজেকে টুকরো করেছে। ছেঁড়া ছেঁড়া কোলাজ কোলাজ দিন কাটে তার। খাটে শুয়ে থাকে দিনের বেশি সময়ে। খাটখানা ছোট। অভিজিতের পা বেরিয়ে থাকে খাটটা থেকে। আশ্রয় অকুলান। সেও যে পারেনি ছায়ার ঠাঁইটুকু পেতে দিতে। সোহাগের চোখের পাতায় তাই শীত লেগে থাকে। শীত লেগেছিল এগ্রামের শিল্পীদের বুকেও, তাই তো আগুনের খোঁজ জারি ছিল। কানা কড়ি মূল্যের শিল্পী বিপ্লবের  ছটফটানিতেও এই খোঁজ ধরা পড়ে যায়। এমনই ফিকে গাঢ় রেখায় হৃদয়ের অবয়ব আঁকা হয়ে যায়। এঁকে দেন পরিচালক পলাশ।

ছবিটির দেওয়াল পুরুলিয়া। বৃষ্টি ধোয়া পুরুলিয়ার সবুজ আকাঙ্খা গড়িয়ে নেমেছে একের পর এক দৃশ্যে। কখনও দৃশ্য ডুব দিয়েছে শান্ত জলের মতো প্রকৃতির অতলে।

কাহিনি, দৃশ্য আর প্রকৃতি একে অন্যের অন্দরে অন্তরে যাওয়া আসা করেছে বারবার। কি সাবলীল সে চলন! সে চলন মৌতাত লিখেছে, লিখেছে হাতছানি। তরঙ্গের ডাক…।

ডাক অমোঘ হয়েছে সুরে, আবহসঙ্গীতে। এ ছবির গান যেন অনেক দিনের পরে মেঘ পেয়েছে বুকের কাছে। তার সোঁদা গন্ধে পায়ের পাতা ভিজিয়ে চলতে চলতে পৌঁছনো যায় মনের কাছে। মন মাঝির কাছে। তারপর তো আকুতি অশেষ। সঙ্গীত পরিচালক দেবজ্যোতি মিশ্রকে শ্রদ্ধা জানাই।

Dialogue মনোগ্রাহী। অকারণ বাক্যের ভিড়ে হারিয়ে যায়নি কথারা। শ্বাস নিশ্বাসের শব্দরাও তাই ভাষা বুনেছে কত! গাভীর চোখের মতো কথারা বেঁধে রাখেনি মন, বেঁধে বেঁধে রেখেছে মুহূর্তদের। মুহূর্তরা মুখ আর মুখোশের রঙ বিনিময় করেছে অনায়াসে। তাতেই চরিত্ররা জন্মের মতো মৃত্যুর মতো জেগেছে নিভেছে আবার জেগেছে। সোহিনী, বাদশা,  রণজয়, অমিত সাহা, পাপিয়া ঘোষ, সুকান্ত গুহরায়, বিশ্বজিৎ রায় কি আদৌ চরিত্রে অভিনয় করেছেন নাকি চরিত্র যাপন করেছেন?

Make up বিহীন তাদের মুখগুলোতে কি অনায়াসে উড়ে গেছে মাছরাঙা, ভেসেছে মৃত তারাদের কবিতা।

গভীরতা মন্থর করে। তাই ছবিটির গতি ধীর। গর্ভে শস্যের গন্ধ নিয়ে সময় যেমন চলে আরকি… প্রতীক্ষায় ঘন। ক্ষতি নেই।  ক্ষতরা আরাম পায় বরং।

Main stream ছবি নয়! প্রতিকূলতার অভাব নেই। স্বার্থের অর্থ বা অর্থের স্বার্থ এখানে নগণ্য। কেবল সৃষ্টির উদগ্র নেশাতেই এই ধরনের ছবি জন্মায়।  আসলে জন্মায় স্বপ্নকামী ঢেউগুলো…তরঙ্গ… the wave of life।

আরও পড়ুন...