Hello Testing

4th Year | 3rd Issue | June-July

৩০শে আষাঢ়, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 16th July, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

কে তা বি  ক থা

অ মৃ তা ভ  দে

amritava

এই অসুখের সময় 'শ্রাবণ এক ইচ্ছেমতী' ব্যাকুল জার্নির কথা শোনায়...

শ্রাবণ এক ইচ্ছেমতী

অর্পিতা সরকার

প্রকাশক: ধানসিঁড়ি

১০০ টাকা

“কাঙ্ক্ষিত  স্বপ্ন শান্তি ভালোবাসাটুকুর অনুসন্ধান‌ও অবিশ্রাম। কিন্তু স্বার্থপর বাস্তব ভেঙে চুরমার করে বাসনার মডেলটিকে। আশ্রয় খোঁজে মন। হারায় প্রাণপণ। এমন সময় কবিতাই খড়কুটো হয় কোনো কোনো লড়াকুর। কবিতাই যন্ত্রণা, কবিতাই উপশম, কবিতা‌ই রোদ্দুর, কবিতাই পিপাসা, কবিতাই প্রতিবাদ। প্রতিটি স্বপ্নের বৃন্তে ধ্রুবপদ লিখে রাখার সাহস কবিতা। কবিতায় ছড়িয়ে থাকে মেঘের মতো। বৃষ্টি নামে বর্ণ শব্দ স্তবকের গা বেয়ে। কবি বলেছেন। আমরাও…। এমনই এক ব্যাকুল জার্নি ‘শ্রাবণ এক ইচ্ছেমতী’। প্রকৃতির যার পথ, বুকের শব্দরা পাথেয় আর ঈশ্বর যার দোসর।”

বন্ধু অর্পিতার প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘শ্রাবণ এক ইচ্ছেমতী’র ব্লার্বে এই কথাগুলো লেখা আছে। ‘ধানসিড়ি’ প্রকাশনা প্রকাশিত এই ব‌ইটি হাতে পেতেই একরাশ মুগ্ধতায় ভরে গিয়েছিল মন। অর্পিতার জন্ম পূর্ব মেদিনীপুরের এক প্রত্যন্ত গ্রামে ১৯৮২-তে। অর্পিতা একেবারেই আমার সমবয়সী। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আলাপ। আমি প্রেসিডেন্সি, ও যাদবপুর। ও তখন আমার স্কুলের বন্ধু বুদ্ধর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। যাদবপুরে যাওয়া হতো মাঝেমধ্যে। প্রেসিডেন্সিতে আমার সহপাঠী ছিল অর্পিতার স্কুলের বেশ কিছু বান্ধবী। অর্পিতা পড়তো আলিপুর মাল্টিপারপাস গভঃ হাইস্কুলে। অসাধারণ আবৃত্তি করে,গান,নাচেও যথেষ্ট পারদর্শী।ওর সাথে কথা বলার মধ্যেই একটা তৃপ্তি আছে। বর্তমানে কলকাতার বাসিন্দা। যদিও বিবাহসূত্রে কৃষ্ণনাগরিক। অর্পিতার প্রথম কাব্যগ্রন্থ এটি। বইটির উৎসর্গ-পাতায় লেখা আছে-

“যে নাম দগদগে ঘায়ে মেঘ এঁকে দেয় মায়ের মতো একমুঠো প্রাণ/মন্থন শেষে ঠোঁটের প্রান্তে যে নাম অমিয় অহংকার থাকে…/ তাকে।” 

চমৎকার।৫৬টি কবিতা। অপূর্ব নির্মাণ। মায়াময় ভাষা।অমৃত চায় অর্পিতা,দেবত্বেই ওর উত্তরাধিকার। অর্পিতা মনে করে ‘মনের কিন্তু শরীর নেই, আঙুল কিংবা ঠোঁট‌ও নেই’। খুব ক্লান্ত যখন সে, তখন সে বলে— 

“কচি আমপাতার মতো নরম অন্ধকার পেলে/ ডুবসাঁতারে পৌঁছে যাব প্রিয় হাতের পাতায়/ পারিজাতের সুখে।”

অশ্বত্থের বিষণ্ন নিঃশ্বাসের মতো নরম সন্ধ্যা ওর কাঁধে মাথা রেখে সংজ্ঞাহীন হতে চায়। তৃষ্ণার্থ গাছের তলায় শুয়ে থাকে সে। ভিজে পাতার গন্ধ মেখে নেয়, ফুল ফোটাবার স্বাদ মেখে নেয়। তার ঠান্ডা শরীরের দাওয়ায় এঁকে দিতে বলে পুনর্জন্মের গান। আবার এই অর্পিতাই চায় ‘অন্তিম নির্যাসে বিষাক্ত সেই অমৃতের সন্ধান’। সদ্য ফাগুনের গন্ধ তার চায় না, পুজোর ফুলের মতো প্রথম সূর্য মেখে নিতে আহ্লাদি নয় সে। শেষ নিঃশ্বাস হাতড়ায় প্রাণপণ, এক জীবনের সীমানা ডিঙোতে রাজি সে। প্রত্যেক সূর্যের প্রান্তে সে ভিখারি হতে রাজি। ‘খোয়াইশ’ কবিতায় সে লেখে-

“কুঁড়ি ভিজিয়ে গড়িয়ে নামছে চাঁদ/ শিকড়ে সেঁধিয়ে খুঁজবে জন্মের প্রকৃত ইতিহাস,জানি/মাটিময় বৃষ্টির গন্ধ খুব প্রিয় বলে তুমি মাটিতেই চোখ বুজে/ ঘুমের স্বপ্ন দেখো,/ কোজাগরি রাত মেখে প্রতিটি পূর্ণ জ্যোৎস্নায় জারজ স্বপ্ন লালনে/ আমাকেও শুতে দাও পাশে।”

মৃত্যুর কথা আছে কবিতার পাতায়। কিন্তু ভরন্ত শস্যের মাঠে জন্ম নিতে চায় বারবার কবি, নতুন ধানের স্বপ্ন বোনে উন্মুখ প্রাণ। আস্ত সূর্য ধারণ করবে সে তার গর্ভে, ডুবসাঁতারে পাড়ি দেবে সাত সমুদ্র, তেরো নদী। ‘সুইসাইড নোট’-এ কি লেখেন অর্পিতা?

“অনেকটা কৃষ্ণচুরা মাখলাম রাতভেজা শার্শিতে/ অনেকটা ধুলোয় পা ডুবিয়ে শুষে নিলাম পথ,/ অনেকটা মাটি খুঁড়ে তুলে আনলাম লুকিয়ে রাখা মেঘ/ তোমার জন্য/ বিশ্বাস করো,শুধু তোমার জন্য‌ই/ দশ-দশটা দিশার পর ছিঁড়ে ফেললাম শিরাও।”

অর্পিতার কবিতার ভাষা ‘পানকৌড়ির ভিজে ঠোঁটে লেগে থাকা শ্রাবণের রোদের মতো’। অর্পিতার কাছে কবিতা ‘জলের বুকে কলমিফুলের ছায়ার মতো নরম দুপুর আর একলা মেঘে ধরা দেওয়া অনিবার্য আকাশের মতো’। ‘পণ’, ‘মুঠো’, ‘অভিশাপ’, ‘ধ্রুবপদ’, ‘ক্যানভাস’, ‘গর্ভধারণ’, ‘একটা শ্রাবণ’, ‘কম্পাসের বড্ড অসুখ’, ‘স্পর্শ’ প্রভৃতি কবিতাগুলি পড়তে পড়তে মনে হয় আমার উঠোন জুড়ে সবুজ রঙের গল্প লেখা হয়েছে। এই অসুখের সময় চৈত্রের পড়ন্ত রোদে  ঈশ্বরকে খুঁজে চলেছি আমরা। একফালি চাঁদের অপেক্ষায় আমরা সবাই। বর্ণমালাতে আমরাও রোপণ করতে চাই অনন্ত রূপকথা। যাবতীয় যুদ্ধের শেষে গরম ভাতের ঐশী গন্ধ মেখে নেব।

আরও পড়ুন...