স্টে থো স্কো প
Survivor— যে ব্যক্তি যৌন নিগ্রহের শিকার, অপমানিত ও আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও নিজে মতামত দিতে সক্ষম। এই শব্দটি এক্ষেত্রে যে বা যারা আক্রান্ত ব্যক্তিকে কোনো পরিষেবা দিতে আগ্রহী, তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে ঐ ব্যক্তির প্রচেষ্টাকে স্বীকার করে ও তাকে করুণা না করে বিশ্বাস করার দৃষ্টিভঙ্গি দেয়।
Victim— এই শব্দের অর্থ এক্ষেত্রে সেই ক্ষতিগ্রস্ত মানুষটি যার অসম্মতি থাকা সত্ত্বেও তার সঙ্গে যৌন সংসর্গ বা যৌন সঙ্গম ইত্যাদি করা হয়েছে। এই ক্ষেত্রে ব্যক্তিটি অবস্থার তাৎপর্য অনুধাবনে সক্ষম নয় অথবা সেই অবস্থায় নেই, এই শব্দ ব্যবহার তার ইঙ্গিত দেয়। সাধারণত তখন স্বাস্থ্যব্যবস্থা বা পুলিশ, তার হয়ে কোনো কোনো ক্ষেত্রে তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তের দায়িত্ব নেন। শব্দটি সেই ব্যক্তির প্রতি স্নেহ মমতা, মানসিক সহায়তা ও অন্যায় প্রতিপন্ন করায় সহমর্মিতার দাবী রাখে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-র সংজ্ঞা অনুসারে যৌন নিগ্রহ (Sexual Violence) মানে হল, যে কোনো যৌন ক্রিয়া বা যৌন ক্রিয়া সম্পাদানের চেষ্টা, অযাচিত যৌন মন্তব্য, কোনো যৌন ঘনিষ্ঠতার চেষ্টা বা তার ইঙ্গিত করা যা কারও যৌন সত্তাকে আক্রমণ করে, ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া বা বলপ্রয়োগ, যে কোনো ব্যক্তির দ্বারা, আক্রান্তের সঙ্গে সেই ব্যক্তির সম্পর্ক নির্বিশেষে, এবং স্থান কাল নির্বিশেষে, ঘরে বা কর্মস্থলে বা যে কোনো জায়গায় হতে পারে।
এর অন্তর্গত হল—
১। বিবাহিত জীবনে, বা সহবাসে (live in), বা ডেটে (dating ) ইচ্ছার বিরুদ্ধে যৌন সম্পর্ক।
২। অপরিচিত ব্যক্তির দ্বারা ধর্ষণ।
৩। পরিকল্পিত ধর্ষণ যা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে, বা যৌন দাসত্বের পরিস্থিতিতে হতে পারে।
৪। অযাচিত যৌন হেনস্থা, বা যৌন সংসর্গের আগ্রহ প্রকাশ ।
৫। শিশুদের যৌন হেনস্থা।
৬। মানসিক বা শারীরিক প্রতিবন্ধী মানুষের যৌন হেনস্থা।
৭। বাধ্যতামূলক যৌন কর্মী বা যৌন উদ্দেশ্যে নারীপাচার।
৮। বাল্য বিবাহ ও বলপূর্বক বিবাহ।
৯। পরিবার পরিকল্পনার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা, বা যৌন রোগের প্রতিষেধক ব্যবস্থা গ্রহণের পথে বাধা সৃষ্টি করা।
১০। বলপূর্বক ইচ্ছার বিরুদ্ধে গর্ভপাত বা গর্ভ নিরোধ।
১১। স্ত্রী যৌনাঙ্গ কেটে দেওয়া।
১২। কুমারীত্ব পরীক্ষা করা।
১৩। ইচ্ছার বিরুদ্ধে পর্নোগ্রাফী দেখানো।
১৪। বলপূর্বক কাউকে বিবস্ত্র করা বা উলঙ্গ অবস্থায় জনসমক্ষে হাজির করা।
Sexual Assault— ২০০৩ সালে প্রদত্ত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সংজ্ঞা অনুসারে, এটি বিশেষ ধরনের Sexual violence, যৌন নিগ্রহ যা ধর্ষণের তৎকালীন সংজ্ঞার সঙ্গে প্রায় সমার্থক হিসাবে ব্যবহৃত হয়। কিন্তু কারও শরীর তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে স্পর্শ করা থেকে বলপূর্বক যৌন সঙ্গম, শিশুর যৌন নিগ্রহ, তার শরীর যৌন উদ্দেশ্যে স্পর্শ করা, ধর্ষণের চেষ্টা করা এই পরিভাষার অন্তর্গত।
Criminal Law Amendment Act 2013 অনুসারে Rape অর্থাৎ ধর্ষণের সংজ্ঞা সমস্ত যৌন নিগ্রহ, যা মুখগহ্বর, পায়ু বা স্ত্রী যৌনাঙ্গে প্রবেশমূলক (penetrative ) এমনকী কোনো অস্ত্র, বস্তু, বা আঙুল প্রবেশ করানো, বা অপ্রবেশমূলক (nonpenitrative) স্পর্শ, বা নাড়াচাড়া করা এর অন্তর্গত। এর শিকার ব্যক্তির অধিকার হল সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা। এই চিকিৎসা না করা আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। এই চিকিৎসাকালীন ব্যক্তির পূর্ব যৌন জীবনের প্রসঙ্গ অবতারণা করাও আইনত অপরাধ হিসাবে স্বীকৃত।
যৌন নিগ্রহের শিকার মানুষের স্বাস্থ্য এবং তাঁদের স্বাস্থ্য পরিষেবার অধিকার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আশ্চর্য হল, ভারতবর্ষে স্বাস্থ্যের অধিকার কিন্তু মৌলিক অধিকার হিসাবে স্বীকৃত নয়। তাই এইক্ষেত্রে, সুপ্রীম কোর্ট এই অধিকারকে জীবনের অধিকারের অন্তর্গত হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। স্বাস্থ্যের অধিকার কিন্তু ভারতবর্ষের দ্বারা ratified কিছু আন্তর্জাতিক instruments দ্বারা স্বীকৃত যেমন, International Covenant on Economic, Social, Cultural Rights (ICESCR), The Convention on Elimination of Discrimination against women, (CEDAW), The Convention of the Rights of the Child (CRC), Convention on the Rights of Persons with Disabilities (CRPD).
স্বাস্থ্য পরিষেবার অধিকারের ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের দায়িত্ব বর্তায় উপযুক্ত শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবার প্রয়োজন উপলব্ধি করা এবং সমভাবে তা সহজে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। এই ব্যবস্থা গ্রহণযোগ্য ও উচ্চমানের যাতে হয় তা দেখা।
শারীরিক আঘাতের চিকিৎসা, সম্ভাব্য রোগের প্রতিষেধক ব্যবস্থা, যৌন রোগের জন্য প্রামাণ্য পরীক্ষা করা, আপৎকালীন জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা এবং মানসিক সহায়তা প্রদান সবই এই ব্যবস্থার অন্তর্গত হওয়া উচিৎ। এক্ষেত্রে নিগৃহীত ব্যক্তিকে ডাক্তারি পরীক্ষা করতে হলে তাকে বিষয়টি বলে তার লিখিত সম্মতি আগে নিতে হবে। সব পরীক্ষা বা আলোচনা ওই ব্যক্তির ব্যক্তিসত্তাকে সম্মান দিয়ে গোপনীয়তা রক্ষা করে করতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মী বা চিকিৎসকরা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ভুমিকা পালন করবেন।
এই অবস্থায় ব্যক্তিকে স্বাস্থ্য পরিষেবা না দেওয়া বা দিতে রাজি না হওয়া ভারতীয় দণ্ডবিধি SECTION 166B OF INDIAN PENAL CODE, WITH SECTION 357 C OF THE CODE OF CRIMINAL PROCEDURE-এর দ্বারা অপরাধ হিসাবে পরিগণিত হয় ।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ দপ্তর, জুডিসিয়ারি, পুলিশ এবং CWC মিলিত ভাবে যে protocol তৈরি করেছে তাতে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি গুরুত্ব পেয়েছে :
১। নিগ্রিহিতকে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদান।
২। তাকে ও প্রয়োজনে তার প্রিয়জনদের সাহস ও মানসিক শক্তি জোগানো এবং মানসিক চিকিৎসক এবং মনোবিদের সাহায্য নিতে বলা।
৩। আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে তাকে সহায়তা করা এবং পুলিশ ও আইন বিভাগের সঙ্গে সহায়তা করা।
৪। যে মহিলারা বা মেয়েরা নিজের বা সন্তানের চিকিৎসার জন্য আসেন তাদের এই আইনি ব্যবস্থা সম্পর্কে অবগত করা এবং তার জীবনে অনুরূপ সমস্যা থাকলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সহায়তা নিতে তাকে সাহস দেওয়া।
৫। এ ছাড়া নির্দিষ্ট ব্যবস্থা চালু করা— এই ব্যক্তিদের বিশেষ যত্ন, চিকিৎসা ও সমাজে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য।
ক্রমশ