সি নে দু নি য়া
প্রথমেই সানাইয়ের সুরে ছুঁয়ে যায় একটা ফ্রেমে-বাঁধা নববধূর ছবি ও পরমুহূর্তেই তাকে দেখা যায় সন্তানসহ সুখের নৌকোয়। এই ধারাবাহিকতা অবিচ্ছেদ্যভাবে একটা সময় পেরোনোর গল্পে এসে ক্যামেরা স্থির হয় এক দম্পতির পারস্পরিক দূরত্বটুকু নিখুঁতভাবে লেন্সবন্দি করে। একটা অদৃশ্য পাঁচিলের দু’পাশে শুয়েই একজন আরেকজনের ‘প্রেসার’-এর খোঁজ নেয় তো অন্যজন ‘থায়রয়েড’-এর। এবং স্ত্রী যখন স্বামীর প্রেসারের খবর জানতে চায়, আর অন্যমনস্ক স্বামী ‘কার’ প্রশ্নটি ছোড়ে, তখন ঘাড় ঘুরিয়ে স্ত্রীর ‘তোমার’ বলার অসাধারণ ভঙ্গিতেই বিরহের ভিতরেও প্রকৃত আনন্দ ও শোকের সন্ধান পায় দর্শক। তার পরেই নিজেদের ‘ছাড়াছাড়ি’-র পরিকল্পনাটা বাবা বা শ্বশুরকে না জানানো নিয়ে ক্রমাগতই ঘরের অমোঘ নির্জনতা ভাঙতে শুরু করে। এবং দর্শকদের এই ভাঙন থেকে গড়ে ওঠা পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়। মাঝে অনেক টানাপোড়েন। বাবা তথা শ্বশুরের স্ত্রী বিয়োগ এবং তার নিঃসঙ্গতার সঙ্গী হয়ে ওঠা গাছ যেন ফ্রেমের পর ফ্রেম পেরিয়ে, ছোটো ছোটো অন্য কিছু দৃশ্যে, অল্পকথায় এক বিশাল ক্যানভাস তৈরি করে দেয়। আর সবশেষে, নানা দুর্দৈবের মধ্যেও অতি-সত্য ও বাস্তবতার জোড় খুলতে শুরু করে। সত্যি কথা বলতে, এই পারিপার্শ্বিকতা ও জীবনকে খুবই নিপুণ ভঙ্গিমায় প্রতিষ্ঠা পেতে দেখি। কোনো আমোদ বা মনোরঞ্জনের ভাষায় নয়। সবই সম্ভব হয়েছে নির্দেশক অনুরাধা কুন্ডা, যিনি কবি, গল্পলেখক ও একজন নাট্যকর্মী হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত— তাঁরই সুপরিকল্পিত গভীর ভাবনার দরুন।
শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতা থেকে খুবই যত্ন ও মায়াময়তায় ‘বিরহ যদি’ শব্দবন্ধটি তুলে ছবিটির শরীরে জলছবির মতন এঁকে দেওয়া হয়েছে। আবার আশ্চর্য সুতোয় বাঁধা শঙ্খ ঘোষের কবিতাও।
তিনটি চরিত্রই অভিনয়ের গুণে জীবন্ত হয়ে উঠেছে। বরুণ চন্দ ও অর্ক খুবই বলিষ্ঠ ভাবে তার প্রমাণ রেখেছেন। আর মিতুল, ওই যে প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘তোমার’ শব্দটি বলার ধরনেই যেন সর্বস্বতায় চরিত্র হয়ে ওঠা তাঁর। অসাধারণ। আরও ভালো লাগছে এই ভেবে যে দুই কবি নির্দেশক ও অভিনেতা হিসাবে যথাক্রমে অনুরাধা ও মিতুল চলচ্চিত্র উৎসব থেকে পুরস্কার ছিনিয়ে নিয়ে এসেছে। যা নিঃসন্দেহে অভিনন্দনযোগ্য।