Hello Testing

4th Year | 3rd Issue | June-July

৩০শে আষাঢ়, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 16th July, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

স্টে থো স্কো প

সং হি তা   ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়

sanhita

সুখের অসুখ

চমকে উঠলেন তো? অসুখের বিপ্রতীপে দাঁড়িয়ে সুখ যদি নিজেই তার কারণ হয়ে ওঠে কেমন হয়? অনেকটা যেন আয়নার মানুষের সঙ্গে শত্রুতা হওয়ার মতো, কিম্বা ডঃ জ্যাকল আর মিঃ হাইড ও বলা যায় ।

একটু খোলসা করে বলি। 2018 সালের পরিসংখ্যান অনুসারে পৃথিবীর স্বাস্থ্য ব্যবস্থার মান নির্ধারণের মাপকাঠির মধ্যে বেশ কিছু অসংক্রামক অসুখ তখনি অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে আবার বিভিন্ন রকম ক্যানসারের পরিসংখ্যান পরিমাপক অন্যতম। কিছু রিস্ক ফ্যাক্টার অসুস্থতার সম্ভাবনার কারণ স্বরূপ মাপকাঠিতে ঢুকেছে, পনেরো বছরের ঊর্ধে মাদক দ্রব্য পানের পার ক্যাপিটা পরিসংখ্যান, তামাক জাতীয় দ্রব্য ব্যবহারের পরিসংখ্যান, উচ্চ রক্তচাপ, ওবেসিটি বা শারীরিক স্থূলতা ,মধুমেহ বা ডায়াবেটিস এবং প্রয়োজনের তুলনায় কম কায়িক পরিশ্রম প্রবণ যাপন চিত্র এর অন্যতম। অসুখ গুলিকে বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা নাম দিয়েছেন লাইফ স্টাইল ডিসিসেস বা জীবন যাপন জনিত অসুখ। অসংক্রামক এই অসুখগুলি বেশীর ভাগই দীর্ঘমেয়াদি, ডাক্তারি ভাষায় ক্রনিক, অর্থাৎ হয় স্থায়ী, নয় নিরাময়ের পর কোন পরিণতিগত অসুস্থতার কারণ, এবং দীর্ঘ সময় এর চিকিৎসা ও নিয়মিত যত্নের প্রয়োজন আছে। এই অসংক্রামক রোগের তালিকায় হৃদরোগ ও স্নায়ুর অসুখ, মানসিক রোগ, বাত বা আর্থারাইটিস, হাঁপানি, ব্রোঙ্কাইটিস, এমনকি, অন্ধত্ব, বার্ধক্য জনিত উপসর্গ, ও অবশেষে সংক্রামক কোভিড ইত্যাদি অসুখের ফলশ্রুতি স্বরূপ কোন অসুখ সবই অন্তর্ভুক্ত। এর মধ্যে সারা পৃথিবীতে হৃদ যন্ত্রের অসুখ ও ক্যানসার উন্নত দেশগুলিতে মৃত্যুর প্রধান কারণ। এই পরিসংখ্যান বাকি দেশগুলিতেওবেড়েই চলেছে। এর অন্যতম কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে, মানুষের জন্মকালীন সম্ভাব্য আয়ুর পরিমাপ, অর্থাৎ লাইফ এক্সপেক্টেন্সি, যেমন বেড়েছে বার্ধক্যে জীবিত থাকা মানুষের মধ্যে এই সব রোগের সম্ভাবনাও বেড়েছে। এ ছাড়া আর একটি প্রধান কারণ হলো সময়ের সঙ্গে জীবন যাপনের আচরণ ও পদ্ধতি গত পরিবর্তন। অর্থাৎ লাইফ স্টাইলের পরিবর্তন। ভারতবর্ষের মত উন্নয়নশীল দেশ গুলিকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এই অসংক্রামক রোগগুলির সম্ভাব্য আসন্ন মহামারি সম্পর্কে সতর্ক করেছে। কয়েকটি পরিসংখ্যান বিষয়টির গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করবে। 2016 সালে পৃথিবীতে মোট 57 মিলিয়ান মানুষের বিভিন্ন কারণে মৃত্যু ঘটে। এর মধ্যে 41 মিলিয়ান মূত্যু ছিল অসংক্রামক এই জীবন যাপন জনিত অসুখে। এর তিন চতুর্থাংশ ঘটে নিম্ন ও মধ্যমানের অর্থনৈতিক ক্ষমতা সম্পন্ন দেশ গুলিতে। 2000 সালে এই মৃত্যুর পরিসংখ্যান বেড়ে শুধু এই দেশগুলিতেই 31 মিলিয়ানে দাঁড়িয়েছে। 2016 তে এই মৃত্যুর মূল কারণ ছিল হৃদজনিত অসুখ ও ক্যানসার। ভারতবর্ষ দ্রুত অসংক্রামক রোগের ক্রমবর্ধমান পরিসংখ্যনের ফলে এই সব রোগজনিত মৃত্যুর সম্মুখীন হতে চলেছে। 35 থেকে 64 বছরের কর্মক্ষম বয়সের জনগণের এক সিংহভাগ তাঁদের জীবনের সক্রিয়তার ও সক্ষমতার সময় হারাতে চলেছেন। আমাদের দেশ দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে অসংক্রামক রোগে মৃত্যুর দুই তৃতীয়াংশ বহন করে। পাশাপাশি ডায়াবেটিস জনিত জটিলতাও এই সব মৃত্যুর অন্যতম কারণ। উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল, মাদক সেবন, ডায়াবেটিস ইত্যাদি অসুখ এই মৃত্যুর সম্ভাবনা সৃষ্টি করে। একজন তিরিশ থেকে সত্তর বছরের মানুষের হার্টের অসুখ, ক্যানসার, ফুসফুস জনিত রোগ বা ডায়াবেটিসের কারণে মৃত্যুর সম্ভাবনা বর্তমানে এ দেশে মোট 23 %। যদিও পুরুষের ক্ষেত্রে এই সম্ভাবনা 27% নারীর মধ্যে তা 20% ।

এই অসুখগুলি হওয়ার সম্ভাবনার কারণের মধ্যে তামাক সেবন অন্যতম প্রধান কারণ। প্রত্যেক বছর দেশে 7 মিলিয়ন মানুষ তামাক সেবন জনিত কারণে মৃত্যুর শিকার হন। এর মধ্যে সরাসরি তামাক জাতীয় নেশা ধুমপান এবং প্যাসিভ স্মোকিং অর্থাৎ ধুমপায়ী ব্যক্তির ধুমপানকালীন নিসৃত ধোঁয়ার কারণে ধুমপানের শিকার মানুষও অন্তর্ভুক্ত। জানলে অবাক লাগবে, প্রত্যেক বছর আমাদের দেশে ছয় লক্ষ মানুষ এই প্যসিভ স্মোকিং বা পারিপার্শিক ধুমপানে মারা যান আর এর মধ্যে এক লক্ষ সত্তর হাজার হলো শিশু ও কিশোর বয়সী। ধুমপান 71% ফুসফুসের ক্যানসারের কারণ শুধু নয়, 42% শ্বাসকষ্ট জনিত অসুখ এবং 10% হৃদরোগেরও কারণ। চোখে ছানী এবং পাকস্থলীতে গ্যাস্ট্রাইটিস, পায়ে পেশীর যন্ত্রনা এবং বার্জার ডিসিস নামক রোগও ধুমপানের কারণে হতে পারে।

অসংক্রামক রোগের পরবর্তী যে কারণের কথা বলবো তা হলো কায়িক পরিশ্রমের অভাব। এই কারণে মৃত্যু হয় বছরে 1.6 মিলিয়ান জনের। নিয়মিত কায়িক শ্রম, মানুষের হৃদরোগ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ছাড়াও অবসাদ ও কিছু কিছু ক্যানসার, যেমন স্তন বা বৃহদান্ত্রের ক্যানসারের সম্ভাবনা কমায় বলে বিজ্ঞান দাবী করে।

অতিরিক্ত মদ্যপানের প্রভাবে নানা রোগে মারা যান প্রত্যেক বছর 3.3মিলিয়ান জন। এ ছাড়া অনুপযুক্ত খাদ্যাভ্যাস, ফল ও সবজী কম খাওয়া, হৃদ রোগ ও বৃহদান্ত্রের ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ায়। অতিরিক্ত নুন খাওয়ার প্রবণতা উচ্চ রক্তচাপের পক্ষে ক্ষতিকারক এবং হৃদরোগের প্রাদুর্ভাব বর্ধক ও বটে। অতিরিক্ত শারীরিক ওজন, বছরে 2.8 জনের মৃত্যুর অপ্রত্যক্ষ্,বা প্রত্যক্ষ কারণ এবং ডায়াবেটিসের কারণও বটে। বি এম আই বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই সব রোগের সম্ভাবনা বাড়ে। উচ্চ রক্তচাপ ও রক্তে কোলেস্টেরল বৃদ্ধি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান কারণ। পরিশেষে বলি ক্যানসারের কথা।। ভারতবর্ষ বিশ্বের ক্যানসারের 18% দায়ভার একাই বহন করে। এর অন্যতম কারণ হলো কয়েকটি বিশেষ সংক্রমণ যা ক্যানসারের সম্ভাবনা বাড়ায়। যেমন, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, হেপাটাইটিস বি ও সি বা হেলিকো ব্যাকটর পাইলোরি। এগুলির সংক্রমণ সম্পর্কে সাবধান হলে, এবং হেপাটাইটিসের টিকা নিলে এই সম্ভাবনা কমবে। এসব ছাড়াও পরিবেশ গত কিছু বিষয়, দূষণ, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশের প্রভাব এই সব অসংক্রামক অসুখের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে তুলেছে।

সহজেই অনুমেয়, অসংক্রামক অসুখ ও তার রিস্ক ফাক্টার আমরা স্বেচ্ছায়, জীবন যাত্রার তথাকথিত সুখ সমৃদ্ধি ও আরাম প্রিয়তা এবং অসংযত যাপনের দ্বারা ডেকে এনেছি। তথাকথিত ভালো থাকার মুখোশের আড়ালে রয়েছে অন্ধকার অসুস্থ মানুষের মুখ ! অথচ, নিয়মিত পরিশ্রম, সুস্থ খাদ্যাভ্যাস, অনাবশ্যক স্ট্রেস থেকে বিরত থাকা, তামাক সেবন ও অপর্যাপ্ত মদ্যপান না করা, সর্বোপরি রক্তচাপ ডায়াবেটিস ইত্যাদির জন্য নিয়মিত চিকিৎসাধীন থাকা শুধুমাত্র এটুকুই আজকের পৃথিবীতে জীবন যাপনের প্রেক্ষিতে সুস্থতার প্রয়োজনীয় উপায়। তথাকথিত সুখের মধ্যে অসুখের আয়োজন করে লাভ কি?

আরও পড়ুন...