উ প ন্যা স । শেষ পর্ব
(গত সংখ্যার পর)
পৌঢ়া স্তম্ভিত। ঠোঁটের ওপর বেশ কয়েকবার জিভ বুলিয়ে বললে, আপনি আমার বোন? তুমি আমার ছোটো বোন? সবচেয়ে ছোটো বোন? বাবা ভেবেছেল তুমি ছেলে হবে, যখন মেয়ে হয়ে জন্মালে তখন অষ্টম গর্ভের দোহাই দিয়ে, মাকে ভুজুংভাজুং বুঝিয়ে, ফেলে এলো কলকাতার আঁস্তাকুড়ে, গোলোকধাঁধায়।
প্রৌঢ়াকে তুই জড়িয়ে ধরতে, উনি কাঁদতে লাগলেন, বলতে আরম্ভ করলেন, আমাদের সবকটা বোনকে ফেলে আসতে পারত কলকাতার জঞ্জালে, কলকাতায় তো ভাগাড়ের অভাব নেই, তাহলে আমরা কেউই এই দুঃখের দিন দেখতুম না, বোনরা সোয়ামি পুত্তুর নিয়ে গা ঢাকা দিয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়াত না। বাবা-মায়েরা ছেলেমেয়ের জীবনকে তালগোল পাকিয়ে অগোছাল করে ফ্যালে, এর কোনো নিদান নেই গো, কাচের বাসনের মতন ভেঙে এমন টুকরো করে দ্যায় যে জুড়লেও ফাটলের দাগ রয়ে যায়, জল খেতে গেলে চুয়ে পড়ে, খাবার খেতে বসলে হাত কেটে যায়।
তুই বললি, তবুও তো বাবা-মাকে ভালো না বেসে পারা যায় না।
যা মনে রাখার প্রয়োজন নেই, তাকেই কেন মনে রাখা ? হয়ত মনে রাখার আনন্দের দুর্ভোগ রসিয়ে উপভোগ করতে ভালো লাগে, অতীতের সেই মুহূর্তগুলো বর্তমান হয়ে টিকে থাকে, অতীত হয় না, ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যায়। অন্যের স্মৃতিতে বেঁচে থাকতে চায় মানুষ, ভুগতে চায় স্মৃতির যাতনার টিমটিমে আনন্দে, অদ্ভুত।
##
স্পর্শের মর্মার্থ, মর্মার্থের রসায়ন, রসায়নের সম্পর্কে, রেণু, পরাগ, উড়াল, জীবন।
চাউনির কোলাহল, উতরোল শ্বাস।
মনে রাখার মন। ভুলে যেতেও তো মন। স্মৃতি কোথায় থাকে ? কোন রঙে ? রক্তের লাল রঙে ?
খসে পড়ে হলুদ পাতারা, খসে পড়ে পাকা হিমসাগর, ঝড়ে খসে পড়ে কচি-কচি আম।
গাছের স্মৃতিতে কে থেকে যায় ? দূরের ওই ফলবণিক ? দূরের ওই কাঠুরে ?
##
কাঁদবেন না, তুই বললি, আপনার এক বোনকে তো দেখতে পেলেন যে সে ভালো আছে।
সে ভালো আচে ; বাপের ফাটা থালায় খেয়ে সে রক্ত ঝরায়নে। যাঁরা তোমায় মানুষ করেচেন, নিশ্চই খুব ভালোবাসেন তোমায়, দেখেই বুঝতে পারচি ; বরও তো ভালো পেয়েচ। তা তোমার নাম তো বললে না ?
আমার নামটা একটু অন্যরকম ; আমার নাম এলেকট্রা।
বেশ ভালো নাম রেকেচেন যাঁরা তোমায় পোষ্য করেচেন, বড় করেচেন। আমাদের ক্ষয়ে ন্যাতাজোবড়া হয়ে যাওয়া একঘেয়ে নামের চেয়ে অনেক ভালো।
প্লাসটিকের থলেটা এগিয়ে দিয়ে তুই বললি, আমার বোনেদের জন্য শাড়ি এনেছিলুম, আপনি নেবেন যেগুলো আপনার পছন্দ, যদি অন্য বোনেরা কখনও আসেন, আমার কথা বলবেন, তাঁদের দেবেন। আর কিছু মিষ্টি, খাবেন যখন ইচ্ছা হবে।
প্রৌঢ়া বললে, একটা চিরুনি আনতে পারতে গা, কতকাল যে চুল আঁচড়াইনে।
শুনে, তুই হেয়ার ব্রাশ বের করে দিতে গেলি, তোর দিদির প্রতিক্রিয়ায় অপ্রস্তুত হলি, বললি, দিন আমি আঁচড়ে দিচ্ছি আপনার চুল।
তোর ইশারায় ফোটো তুলে নিলাম, দিদির চুল বেঁধে দিচ্ছিস।
আপনার ঘরের ভেতরটা তো দেখা হল না, চলুন না দেখি, কোথায় থাকতেন আপনার বাবা-মা।
চলো। তুই প্রৌঢ়ার হাত ধরে সাহায্য করলি উঠে দাঁড়াতে, আমার দিকে মুখ করে বললি, আই অ্যাম গিভিং হার এ লিটল মানি টু ক্যারি অন ফর সাম টাইম।
কাঁধে ব্যাগ নিয়ে ভেতরে ঢুকলি, ঝোপের আড়ালে গিয়ে হিসি করে এসে বসে রইলাম বেশ কিছুক্ষণ।
অনন্তর পাত্তা নেই।
আমার বাবা-মায়ের অনুপস্হিতি মাঝে-মাঝে আমায় নিঃসঙ্গ করে, অথচ জীবনে একটা এমন সময় এসেছে যখন নিজের অজান্তে বাবা-মাকে ছলনা করেছি, সেই স্বরূপের সঙ্গে পরিচয়ে অবাক আর পরাজিত লাগে, নিজেকে বিশ্বাসঘাতক মনে হয়, তাঁদের কাছে আমি যেন আগন্তুক।
ছোটো চুবড়ি করে পানিফল নিয়ে এলেন প্রৌঢ়া, বললেন, তোমাদের খাওয়াবার মতন কিচুই নেই গো, এইগুলো খাও পেট ভরে যাবে, অতটা রাস্তা, সন্ধে হয়ে যাবে, খিদে পেয়ে যাবে।
প্রৌঢ়ার পেছনে তুই, শাড়ি-ব্লাউজ, দেখেই বুঝলুম, খুলে দিয়ে দিয়েছিস, এই পরিকল্পনা করেই এসেছিলিস তাহলে, ব্যাগের ভেতরে একটা নীল টপ নিয়ে আর শাড়ির তলায় ডেনিম জিনস পরে।
শায়া নেই, কি করব, শাড়ির তলায় এটাই পরে এসেছিলুম, বললি। তারপর যোগ করলি, দেয়ার ইজ নো টয়লেট, শি অ্যালাউড মি টু ইউজ দি কর্নার অফ এ রুম শি ইউজেস ডিউরিং নাইট।
প্রৌঢ়াকে জিগ্যেস করলি, আঁতুড়ঘরটা কোথায়, যেখানে আমি জন্মেছিলুম ?
সেসব আর কিচুই নেই গো, যেটুকু ছিল তাও আয়লার ঝড়ে খেয়ে ফেলেচে, ওই দেকচ মাটির ঢিবি, ওইটে ছিল আঁতুড়ঘরের দক্ষিণদিকের দেয়াল, ওই ঘরে আমার মা মারা গেসলো, তোমার পরের বাচ্চাটা বিয়োবার সময়ে ; উচিত শিক্ষে পেয়েছিল বাবা, ছেলে হয়েছিল, মরা, মাও মরে গেল তার সঙ্গে, সেই বাচ্চাটা মাকে নিতেই এস্ছিল। তারপর বাবা ভেউভেউ করে কাঁদত আর মদ খেতো, ধেনো মদে ঝাঁঝরা হয়ে মরল দশাসই লোকটা, অ্যাগবারে দড়িদঙ্কা।
তুই বললি, দিদির সঙ্গে আর এই বাড়ির ব্যাকগ্রাউণ্ডে কয়েকটা ফোটো তুলে দাও তো, ধুলোয় মেশা আঁতুড়ঘরেরও, তুলে দিলাম।
স্মার্টফোন হাতে নিয়ে বললি, নাঃ, এখানে টাওয়ার নেই, এক্ষুনি আপলোড করা যাবে না।
ভারচুয়াল জগতের মাধ্যমে তুই আত্মীয়তা গড়তে চাইছিস, দেখাতে চাইছিস যে তোরও শেকড় রয়েছে পশ্চিমবাংলার মাটিতে। কখনও কি ভেবে দেখেছিস, যারা চোদ্দোপুরুষের শেকড় বেয়ে ডালে-ডালে দোল খাচ্ছে, অসময়ে খসে পড়ছে, তাদের কোনো পরোয়া নেই।
তোর দিদি তোর হাতে গুঁজে দিলে রুপোর টাকা, বললে এটা আমার জন্মের সময়ে মুখদেখানি দিয়েছেল আমার বাপের বাপ গৌরহরি সরদার, কাকেই বা দেব যত্ন করে রাখতে, তোমায় দিলুম। তুই পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করলি, জাঠদের মতন হাঁটু ছুঁয়ে নয়।
হাতের তালুতে রাখা টাকাটা দেখালি আমায়, ভিক্টোরিয়ার মুখ। চেঁচিয়ে উঠলি, দু হাত উঁচু করে, ইইইইএএএএ, তোর দিদির মুখে হাসি ফুটল, আমরা আসার পর প্রথম।
খিদে পেলে আমরা পথে কোথাও খেয়ে নেব, অনন্তর কন্ঠস্বর শোনা গেল।
পেলে কাউকে ?
শালার ছেলেবউরা ছিল, তারা তো আমায় প্রথম দেখল। কলকাতায় প্রায়ই সবজি নিয়ে যায়, মাছের ব্যবসা আর করে না, মাছ নিয়ে বড্ড দলাদলি ইদিকে। বলেছি এবার এলে আমার বাসায় আসতে। ওদের অবস্হাও বিশেষ ভালো নয়, কে যে কোথায় সুখে আছে তা-ই তো বুঝিনে।
পানিফলগুলো তুই তোর কাঁধের ব্যাগে পুরে নিলি। আরেকবার প্রণাম করলি তোর দিদিকে। তোর দিদি আরেকবার তোকে জড়িয়ে কাঁদতে লাগল, তোরা দুজনেই জানিস আর কখনও দেখা হবে না। না হওয়াই ভালো, তুই গাড়িতে বসে বলেছিলি, এই স্মৃতি অনেক দামি, একে নষ্ট করতে দিতে চাস না, স্মৃতিকে গন্ধের মতন ছড়িয়ে দিতে চাস ।
##
জোনাকিরা চলে গেছে ফিনফিনে এনডোসালফিনে।
সন্ধ্যাকে আলোময় করে তুলছে অন্ধকারের ধুলোট সোঁদা অভিপ্রায়।
##
গাড়িতে সকলেই বহুক্ষণ চুপচাপ, অনন্ত বলল, মনটা বেশ খারাপ হয়ে গেল কুটুমের বাড়ি এসে, আপনাদের মনও তো ভার হয়ে রয়েছে, দিদি, আপনি একটা গান ধরুন না, যাতে পথটা কেটে যায়।
গান ? তুই বোধহয় অন্য চিন্তায় ছিলি, দিদির কি হবে, অন্য বোনেদের সঙ্গে দেখা হল না, এইসবই ভেবে চলেছিস হয়তো।
গুনগুন করে, মনের ভেতরে গেয়ে নিয়ে, আরম্ভ করলি, আমার দিকে তাকিয়ে বললি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, আই অ্যাম সিংগিং ফর ইউ, সাতরঙা ফ্ল্যাপার খুলে খালি পায়ে আমার জুতোর ওপর পা রেখে, হাতের কবজি ধরে তালের সঙ্গে চাপ দিয়ে, ইশারা করতে লাগলি:
##
তোরা যে যা বলিস ভাই, আমার সোনার হরিণ চাই।
মনোহরণ চপলচরণ সোনার হরিণ চাই।।
সে যে চমকে বেড়ায় দৃষ্টি এড়ায়, যায় না তারে বাঁধা।
সে যে নাগাল পেলে পালায় ফেলে, লাগায় চোখে ধাঁদা।
আমি ছুটব পিছে মিছে মিছে পাই বা নাহি পাই–
আমি আপন মনে মাঠে বনে উধাও হয়ে ধাই।।
তোরা পাবার জিনিস হাতে কিনিস, রাখিস ঘরে ভরে–
যারে যায় না পাওয়া তারি হাওয়া লাগল কেন মোরে।
আমার যা ছিল তার গেল ঘুচে যা নেই তার ঝোঁকে–
আমার ফুরোয় পুঁজি, ভাবিস বুঝি মরি তারি শোকে ?
আমি আছি সুখে হাস্যমুখে, দুঃখ আমার নাই।
আমি আপন মনে মাঠে বনে উধাও হয়ে ধাই……
##
অনন্ত নেমে গেল গড়িয়ায়, বলল, মাছের দরকার হলে বলবেন, আবার এলে, ওই বাজারেই দেখা হবে দিদি।
হোটেলের লিফ্টের ভেতরে তুই আর আমি একা, লিফ্টম্যান নেই, চুমু খেলুম তোকে, বললুম, এই গান আগেও অনেকবার শুনেছি, কিন্তু গানটায় তোর মতন কেউ সেনশুয়ালিটি আনতে পারেননি ; রবীন্দ্রনাথও নিশ্চয়ই আঁচ করেননি যে এই গানে যৌনতার সঞ্চার করা যেতে পারে ; ইউ আর ইনক্রেডিবল।
যাবার ছিল সেকেন্ড ফ্লোর, ডান হাতে আমার কোমর জড়িয়ে, বাঁহাতে তুই টপ ফ্লোরের বোতাম টিপে বললি, ওউ- ওউ-ওউ-ওউ, ড্যাড, থ্যাংকস, লিফ্টে সিসিটিভির ক্যামেরা আছে। ইইইইইইএএএএএ।
##
এর মতো, ওর মতো, তার মতো, কারো মতো নয়।
যেন এমন, যেমন অমন, যেন তেমন নয়।
চার
ইলেকট্রিক ? ঠিক শুনেছিস ? এলেকট্রা বলেছেন বোধহয়।
হ্যাঁ হ্যাঁ স্যার, এলেকট্রা নামই বললেন , কিন্তু ইনি আগের ম্যাডাম নন , চাপরাশি নানকু প্রসাদ জানাল, ওর অনুসন্ধিৎসা স্বপ্রকাশ।
##
কিন্তু নেতি, মহাকাব্যের এলেকট্রা, তো চলে গেছে, মেসেজ করেছিল, ফ্র্যাংকফুর্টের পথে, ওখানে ফ্লাইট চেঞ্জ করে আমেরিকার প্লেন ধরবে। আমি তখন অফিসে, সকালেও জানতে দেয়নি যে সেইদিনকেই ও চলে যাচ্ছে, যেমন উদয় হয়েছিল হঠাৎ, তেমনই উধাও হয়ে গেল।
আমি মেসেজ করেছিলুম, পৌঁছে জানাস, দেখাল পেনডিং , আজ সকালে এলো ডেলিভার্ড।
ওর মেসেজ পেলাম, খুঁজো আমাকে ; তোমার জন্য ব্যবস্হা করে এসেছি।
ব্যবস্হা ? তুই তো রাতে চাইতিস ব্রাউন স্ট্যালিয়ন আর ভোর বেলা মরনিং গ্লোরি।
আমি বলেছিলাম, তুই এভাবে আমার জীবনে ঢুকে সব নয়ছয় করে দিলি, সিম্পল লাইফ লিড করছিলুম, রুটিন, সেক্সের আর্জ বলতে গেলে, তেমন হতই না, অফিসে কাজ, বাড়িতেও কাজ এনে সকাল-রাত ফাইল ক্লিয়ার করতাম, ড্রিংক করতাম, বাংলা-হিন্দি-ইংরেজি নিউজ চ্যানেল দেখতাম, চারটে নিউজপেপারে চোখ বোলাতাম, চলছিল এইভাবে; চাকরিতে যোগ দেবার পর যেখানেই পোস্টিং হয়েছে, পোর্ট ব্লেয়ার, সিলভাসা, দমন, পুডুচেরি, লাক্ষাদীপের কারাভাত্তি আর এখন দিল্লিতে, রুটিন, রুটিন, রুটিন, রুটিন, সকাল-অফিস-বিকেল-সন্ধ্যা-রাত।
এজিএমইউ ক্যাডারের, তাই অমন পোস্টিং, ভালোই তো ছিলাম।
তোর তো বেবি চাই, আমাকে যে সঙ্গদানের অভ্যাস করে দিয়ে গেলি, প্রতিদিনের অভ্যাসে অভ্যস্হ প্রাণী বানিয়ে দিলি, প্রতিদিনের, কেননা, তুই যেদিন এসেছিলি তার কুড়ি দিন পরের প্রেগনেন্সি টেসটিং কিট দেখিয়ে খিলখিলিয়ে বলেছিলি, অ্যাচিভড, গন্তব্যে পৌঁছে গেছি, এখন একমাস পর আবার টেস্ট করাব, ইইইইইএএএএ।
আমার কর্মচারীদের তুই কখনও টের পেতে দিসনি যে আমরা রাতে একসঙ্গে শুই ; অ্যালার্ম দিয়ে মরনিং গ্লোরি নিয়ে তুই বলতিস, এবার যাও, ঘুমিয়ে নাও ঘণ্টা দুয়েক।
##
মাংসে বুনে-দেয়া মৌনভাঁজের উল্লাস ; তাপের অদৃশ্য শিখা।
ষাঁড় হয়ে ওঠার মনোবাঞ্ছা। খুরের দ্রুততায় ছুটন্তের নির্বাণধ্বনি।
গর্তের ভেতরে পোকাদের গানের প্রতিধ্বনি; খোলোসের সঙ্গে সাপ ব্যথা ফেলে যায় না !
##
একদিন কেবল শাঁখ বাজিয়ে ঘুম ভাঙিয়েছিলি ; আমার মায়ের শাঁখ।
বাজাতে পারিস ?
বাড়িতে পুজোটুজো থাকলে বাজাতে হয়, মা, মানে আন্টিমা, একনাগাড়ে বাজাতে পারেন না, হাঁপান।
তুই চলে গেলে আমি কি করব ?
তার ব্যবস্হাও হয়ে যাবে।
অমন ব্যবস্হা আবার হয় নাকি ; ওসব কল গার্লের পেছনে পড়ার হলে আমি কয়েকজন কলিগের নাইটগ্রুপে কবেই ঢুকে যেতাম, প্রতিটি ইউনিয়ান টেরিটরিতে অমন গিভ-অ্যাণ্ড-টেক ব্যবস্হা আছে, ঠিকাদাররা সবসময়েই খুশি করার জন্য মুখিয়ে।
তুই বলেছিলি, চিন্তা কোরো না ; অনেক কিছু যোগাযোগের ফলে ঘটে যায়, তোমার ক্ষেত্রেও তাই হবে, কে বলতে পারে ? তুমি আমাকে চাইতে, কিন্তু যোগাযোগ করতে ভয় পেতে। আমি যাবার পর তোমার সেক্সের প্রয়োজন হবে, কেউ হয়ত উদয় হবে।
হতে পারে, হয়তো হতে পারে, সে তো আর এলেকট্রা হবে না, তোর মতন উড়ন্ত জাজিম হবে না, ওউ-ওউ-ওউ-ওউ করে ঠোঁটে ইশারা খেলাবে না ।
মহাকাব্যে হয়ত একজন এলেকট্রা ছিল। এলেকট্রা কমপ্লেক্সে ভোগার মেয়ে তো কেবল একজন নয়, নিও ফ্রয়েডিয়ান ইয়ুংগিয়ান কমপ্লেক্স নিয়ে কেউ হয়তো দেখা দেবে, তখন অবাক হয়ে আমার ভবিষ্যবাণীর কথাটা মনে কোরো, অন্য ইশারে খেলাবে, প্রতিটি যুবতীর জাদুবাক্সে অমন হামিংবার্ড থাকেই।
এ তো বিশ্বাসঘাতকতা করলি।
বিশ্বাসঘাতকতার কথা বলছ কেন, আমি তো প্রথম থেকেই বলেছি তোমাকে, আমি তোমার কাছে কি চাই।
তুই যা চাইছিলি, তা পেয়ে গেলি ; আমি যা চাইছিলাম, তা এই কয়দিনের জন্য নয়, দিনের পর দিন রাতের পর রাতের জন্য, ছুটির দিনে দুপুরের জন্য, সারাজীবনের, দুজনে একসঙ্গে বুড়ো-বুড়ি হবার।
আমি চলে গেলে দেখবে সব ব্যবস্হা হয়ে যাবে।
তুই এইসব কথা বলতিস। জানতাম না যে তোর আইডেনটিটিকার্ডগুলো, স্কুলের রিপোর্ট, ইনটারভিউ, তোর যত স্মৃতি আমি যত্ন করে তুলে রেখেছিলাম, সব তুই নিজের সঙ্গে নিয়ে চলে গেছিস।
তুই চলে যাবার পর এত মনখারাপ হয়ে গিয়েছিল যে আলমারি খুলে দেখি কিছুই নেই, ব্যবহৃত তিনটে প্রেগনেন্সি টেস্টিং কিট আর গায়নাকলোজিস্টের রিপোর্টও সঙ্গে নিয়ে গেছিস , ওগুলো দেখিয়েছিলি স্তোক দেবার জন্য যে আমি তোর বাচ্চার বাবা হতে চলেছি।
রয়ে গেছে আমার মোবাইলে তোর খোলা-বুকের ফোটো ; তাতে আরও মনখারাপ হয়। কেবল বুক, নিজেই তুলেছিলিস বুকের সেলফি, তোর মুখ নেই।
তুই বলেছিলি তোর বেবিকে গিটার বাজিয়ে শোনাতে। নিজে ড্রাইভ করে ছুটির দিনে তোকে নিয়ে গিয়েছিলাম কুতুব মিনারের চত্বরে, শুনিয়েছিলাম গিটার, ওঃ কতদিন পর বাজিয়েছিলাম , তোর দেয়া আঙটি পরেই বাজিয়েছিলাম।
আমাকে গিটার বাজাতে দেখে জেএনইউয়ের কয়েকজন যুবকযুবতী, যারা গিটার নিয়ে যুৎসই জায়গা খুঁজছিল, এসে বসে পড়ল আমাদের ঘিরে, আর তখনই তুই আরম্ভ করলি এমন এক গান, যা আমার মনে হল, আঁস্তাকুড়ে পড়েছিলেস বলে খুঁজে চলেছিস, তুই কে, তুই কে, তুই কে ? ওরাও অবশ্য যোগ দিল তোর গানে, আমার গিটারে :
#
বুল্লা কি জানা ম্যায় কওন
না ম্যায় মোমন ভিচ মাসিতা
না ম্যায় ভিচ কুফর দিয়া রীতাঁ
না ম্যায় পালন ভিচ পাকিতাঁ
বুল্লা কি জানা ম্যায় কওন
#
না ম্যায় অন্দর বেদকিতাবাঁ
না ম্যায় রেহেন্দা ফাঙ শরাবাঁ
না ম্যায় রহন্দা মস্ত খারাবাঁ
বুল্লা কি জানা ম্যায় কওন
#
না ম্যায় শাদি না ঘমনাকি
না ম্যায় ভিচ পলিতাঁ পাকিঁ
না ম্যায় আবি না ম্যায় খাকি
না ম্যায় আতিশ না ম্যায় পওন
বুল্লা কি জানা ম্যায় কওন
#
না ম্যায় আরবি না লাহোরি
না ম্যায় হিন্দি শেহর নাগোরি
না হিন্দু না তুর্ক পাশাওরি
বুল্লা কি জানা ম্যায় কওন
#
না ম্যায় ভেত মজহব দে পায়া
না ম্যায় আদম হব্বা যায়া
না কোই অপনা নাম ধরায়া
বুল্লা কি জানা ম্যায় কওন
#
অওয়ল আখর আপনু জানা
না কোই দুজা হোর পছানা
ম্যায় তো না কোই হোর সেয়ানা
বুল্লে শাহ খড়া হ্যায় কোন
বুল্লা কি জানা ম্যায় কওন
#
না ম্যায় মুসা না ফারাওয়া
না ম্যায় জগন না ভিজ সওন
না ম্যায় আতিশ না ম্যায় পওন
না ম্যায় রহান্দা ভিচ নাদাওন
না ম্যায় বৈঠা না ভিচ ভাওন
বুল্লে শাহ খড়া হ্যায় কওন
বুল্লা কি জানা ম্যায় কওন
#
গানের শেষে ছেলেমেয়েগুলো দাঁড়িয়ে নাচতে লাগল, তুইও দুহাত তুলে যোগ দিলি তাদের সঙ্গে। গানটা শুনে আমার তো মনখারাপ হয়ে গিয়েছিল ; অথচ তোর প্রকৃত আবেগ ধরতে পারলাম না, কেনই বা হঠাৎ এই গানই গাইবার ইচ্ছা হল তোর ! বুল্লে শাহের বেশি প্রচলিত গান তো দমাদম মস্ত কলন্দর।
আমি এই নই, আমি ওই নই, আমি সেই নই। আমি কে ? আমি এই নই, আমি ওই নই, আমি সেই নই। আমি কে ? আমি এই নই, আমি ওই নই, আমি সেই নই। আমি কে ? সত্যিই তো, তুই কে ? মহাকাব্যের এলেকট্রা !
কেন এই প্রশ্ন তোকে ঘিরে ধরল কুতুবুদ্দিন আইবেক আর ফিরোজ শাহ তুঘলকের তৈরি এই মিনার চত্বরে ! অন্তর্দ্বন্দ্বের সঙ্গে শীতযুদ্ধ ? কেন ? দ্রুতির হাতিয়ার চালিয়ে যা আয়ত্ব করতে চাইছিলি, তা করলি। তাহলে ? মস্তিষ্কে লুকিয়ে থাকা প্রশ্নদের লাই দিলেই ঝামেলা, আমার চেয়ে তুই তা ভালো করে জানিস, তোর সমবেত নাচ দেখতে-দেখতে মনে হল।
অনিশ্চয়তার উত্তর হয় না, না রে ? অনিশ্চয়তাকে সবাই গোপনে ভালোবাসে, এরকম মনে হচ্ছিল ; প্রেমের মতন অনিশ্চয়তা আর নেই।
এই কখন, এই কখন, এই কখন, এই কখন ! যাঃ।
অনিশ্চয়তার সুস্বাদু বিষ জিভে লেগে থাকুক সবসময়, এরকমই ভাবিস কি ?
টিভিতে রাব্বি শের গিলকে গাইতে শুনেছি গানটা, তখন বেশ ভালো লাগত। যত বয়স বাড়ে তত অনিশ্চয়তার মাত্রা বৃদ্ধি পায়, তার প্রকৃতিতে রদবদল ঘটে।
জীবনযাপনের নিত্যকর্মপদ্ধতি হয় না, যতই না কেন দিনযাপনের রুটিন থাকুক !
তুই চলে যাবার পর খুলে রেখে দিয়েছি আঙটি। সৎ সৎ সৎ সৎ বলার আড়ালে বোধহয় বলেছিস বোকা বোকা বোকা বোকা।
আমার পুরোনো আমিকে এখন কি করে ফিরে পাবো , রক্তমাংসের যান্ত্রিক আমি ? তুই আমাকে বিধ্বস্ত করে চলে গেছিস, ধ্বংস করে, চুরমার করে।
সিনিয়ার-জুনিয়ার কলিগরা ভেবেছিল যে মালদার পোস্টিঙের জন্য তর্জনীতে পোখরাজের আঙটি পরেছি। হ্যাঁ, তোর দেয়া আঙটি পরে সেরকম উন্নতি হয়েছে আমার, ঘুষের রাজত্বের অংশীদার হয়েছি। অভ্যাস নেই বলে বিভ্রান্ত বোধ করছি।
মিস করছি তোর রাঁধা মেক্সিকান কোচিনিতা পিবিলি, শুয়োরের মাংসও তোর হাতে ছোঁয়া পেয়ে ভিনচরিত্র পায়, আমি তো আগে শুয়োর তেমন রেলিশ করতুম না, অ্যালবোনডিগা মিট বল, ভেড়ার মাংসের বার্বাকোয়া, কালদে দ্য পোলো মুর্গির স্যুপ ; টার্কিশ বিরিয়ানি এতলি পিলাফ, টোমাটো পিলাফ ; থাই এঁচোড়ের ডালনা কায়েং কানুন।
কুকটা কত চেষ্টা করল, তোর মতন রাঁধতেই পারেনি ; ও বলছে তুই মশলাগুলো সিক্রেট রেখেছিলি। তোর কি সবই সিক্রেট ?
##
পিওনকে বললাম, পাঠিয়ে দাও।
তোর মতনই হাতে লাল রঙের স্যুটকেস, কাঁধে হলুদ ব্যাগ, ফেডেড জিন্স, লাল ঢিলেঢালা ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডের জার্সি, তার ওপর সাদা ব্লেজার, পায়ে রঙিন ফ্ল্যাপার, ডান হাতে গোটা-পাঁচেক স্লোগানচুড়ি, কানে চুড়ির মাপের লাল রঙের মাকড়ি, হাতের আর পায়ের নখে ব্রাউন-লাল নখপালিশ, হাতের নখ ততো বড় নয়, কাঁধ পর্যন্ত কোঁকড়া চুল, তোর সমান ঢ্যাঙা।
আমার চাউনি তোতলাতে থাকে, মগজের ভেতরে লুডোর ঘুটি পড়ার শব্দ, বুকময় স্টেথোস্কোপের স্মৃতি।
##
সেই নারঙ্গঠোঁট কুচকুচে হাঁস। মাছেদের দেখা স্বপ্নে ভারাতুর নদীতে।
ঘাসে-ঘাসে তাঁবু ফেলেছে ফড়িঙেরা। সবুজ পৃথিবীকে মৌমাছিদের প্রণাম।
##
কি করে সম্ভব ! যেন তোর পোশাক আর অ্যাকসেসরিজ পরে চলে এসেছে মেয়েটি, কেবল মুখ আলাদা। সুস্পষ্ট ফিচার্স, বেশ সুশ্রী।
আমি :তুমি এলেকট্রা ?
যুবতী : হ্যাঁ স্যার, আমি আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা। আমিই আঁস্তাকুড়ের প্রকৃত এলেকট্রা, যে নিজেকে এলেকট্রা বলে আপনার বাড়ি এসে আপনার জীবনে ঢুকে পড়েছিল, সে মহাকাব্যের এলেকট্রা, তাকে আমি আমার স্বপ্ন প্রায় সম্পূর্ণ দান করে দিয়েছি।
আমি :কি বলছ তুমি ? স্পষ্ট করে বলো , হেঁয়ালি কোরো না, আমি বেশ ডিসটার্বড।
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : স্যার আপনার পিওন বা সার্ভেন্টদের বলুন আমার স্যুটকেস এটসেটরা পোর্টিকো থেকে নিয়ে আসতে।
আমি : বিলংগিংস নিয়ে চলে এসেছ ? আই অ্যাম ব্যাফলড , চলো, ভেতরে চলো, ডিসটার্বড মনে হচ্ছে তোমাকেও, ড্রিংক করো, তাহলে একটু ড্রিংক করে নাও, কিংবা যদি ট্র্যাংকুলাইজার চাও, আছে আমার কাছে।
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : না, আমি ঠিকই আছি, জিনিসগুলো বাইরে থেকে আনিয়ে নিন আর ভেতরে চলুন।
আমি : তোমার বাড়ির লোক জানে ?
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : বাড়ির লোক কয়েকবছর থেকে জানে যে আমরা দুজনেই আপনাকে ভালোবাসি, কিন্তু দুজনের ভালোবাসায় যথেষ্ট পার্থক্য আছে।
আমি : কি বলছ কি বোকার মতন, নেতি নাম তো আমিই নেতিকে দিয়েছিলাম।
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : সেই নেতি, যে নেতিকে আপনি এতদিন নেতি মনে করে ভালোবাসলেন, সে নেতি নয় স্যার। আমি আছি নেতিতে।
আমি : দুজন ? স্ট্রেঞ্জ, মেলাতে পারছি না। স্বপ্নদান ? বুঝিয়ে বলো, বুঝিয়ে বলো। ভেতরের ঘরে বসবে চলো।
মনের ভেতরে সমান্তরাল চিন্তার স্রোত বইছিল, আমি কি তাহলে আমার দেয়া নামকেই ভালোবেসে গেছি, সেই নামের বাস্তব যুবতীটিকে নয় ? নামের প্রচণ্ড ক্ষমতা হয়, জানি, ভয় উদ্রেক করা নাম, এড়িয়ে যাবার নাম, রাখা যায় না এমন নাম, কিন্তু ভালোবাসবার নাম ?
নেতি বলেছিল একদিন স্নানের সময়, সাইক্লোনের নাম মেয়েদের নামে হয়, তা কি ওর ইঙ্গিত ছিল ? মেয়েদের নাম, কই, বিয়োগিনী রাখা হয় না তো ! ভালোবাসবার আগে শোনা নামের সঙ্গে ভালোবাসবার পরে শোনা নামের তফাত আছে নাকি ! মানুষটা বাস্তব না তার নাম ! গুলিয়ে ফেলছি সবকিছু।
নানকু প্রসাদকে বললাম মেয়েটির জিনিসপত্র বাইরে থেকে নিয়ে আসতে।
যুবতীটি বলল, স্যার আপনি দিল্লিতে এসেছেন বহুকাল পরে, যখন প্রথমবার আপনার পোস্টিং দিল্লিতে হয়েছিল, ইয়াং ছিলেন,আমার দিদি, যে এতদিন রইল আপনার সঙ্গে, তার ক্রাশ হয়েছিল আপনার সম্পর্কে, মনে করে দেখুন, আপনি কোনো দুর্গাপুজোয় অভিনয় প্রতিযোগীতার বিচারক ছিলেন, তারপর ও আপনাকে দূর থেকে যখনই দেখেছে, ততো আকৃষ্ট হয়েছে, আপনি তো আমাদের পরিবারের দৃষ্টি এড়িয়ে যেতেন, ও কিন্তু ঠিক লক্ষ্য রাখত আপনার ওপর, ও আপনার ব্যক্তিত্ব, ম্যাগনানিমিটি আর সততার প্রেমে পড়ে গেল। আঙ্কলবাপি-আণ্টিমা আপনার পোস্টিঙের শহরে ছুটি কাটাতে গেলে, অবভিয়াসলি, আমাদের নিয়ে যেতেন না, কিন্তু অসংখ্য ফোটো তুলে আনতেন ; সেই ফোটোগুলো থেকে আপনার মহাকাব্যের এলেকট্রা, যাকে নেতি মনে করে সঙ্গ দিলেন, সে আপনার ফোটোগুলো বেছে নিয়ে পার্সোনাল অ্যালবাম তৈরি করেছে।
আমি : বসো, বসো, ওই সোফাতে বসে বলো। তুমি কে ?
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : বসছি স্যার। আমি নেতি, আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা। যে এসেছিল সেও এলেকট্রা, এলেকট্রা কমপ্লেক্সের মেয়ে, মহাকাব্যের নায়িকা । পার্থক্য এই যে আমি আপনাকে ঐশ্বরিক বলে মনে করি ; আপনাকে ভীষণ ভালোবাসি, আপনি আমার জীবনে না থাকলে যেখানে আমি আজ পৌঁছেছি, সেখানে পৌঁছোতে পারতুম না। আপনি গিফ্টপ্যাকের মতো করে গড়ে দিয়েছেন আমার জীবন।
আমি : মানে ?
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : আমাকেই আমার বাবা আঁস্তাকুড়ে ফেলে চলে গিয়েছিলেন। আমি কোনো দিন ওই আঁস্তাকুড় দেখতে যাবো না, আমি জীবনে কখনও কোনো আঁস্তাকুড়ে শুয়ে সেলফি তুলব না, আমি কখনও সেই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করতে যাবো না, যারা আমাকে আঁস্তাকুড়ে ফেলে দিয়েছিল, আমি কখনও সেই আঁতুড়ঘর দেখতে যাবো না, যেখানে আমি জন্মেছিলুম। আমি ওই গ্লানি থেকে মুক্ত করে নিয়েছি নিজেকে, আর পিছন ফিরে তাকাতে চাই না।
আমি : তুমি বলতে চাইছ যে তুমিই নেতি ?
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : বললুম তো, আমিই নেতি ব্যানার্জি, আমিই সিলিকন ভ্যালিতে অ্যাডভান্সড মাইক্রো সিস্টেমসে চাকরি করি, আজকে রাতের ফ্লাইটে ফিরে যাচ্ছি, যাবার আগে আপনার সঙ্গে আমার যে সম্পর্ক তাকে স্হায়ীত্ব দেওয়া আমার কর্তব্য। বিশ্বাস না হয়, এই দেখুন স্যার, আমার পাসপোর্ট আর ওয়ানওয়ে এয়ার টিকেট।
যুবতীর পাসপোর্ট দেখলাম, নেতি ব্যানার্জির নামে, গুড়গাঁওয়ের বাড়ির ঠিকানা, বাবার নাম জগদীশ ব্যানার্জি, ফোটোও এই মেয়েটির, এইচ ওয়ান বি ভিসা । নেতি ব্যানার্জির নামে এয়ার টিকেট, আজ রাতের।
টেবলের ওপরে রাখা ব্ল্যাক ডগের গ্লাস থেকে এক ঢোঁক খেয়ে বললাম, আমি এখনও কনফিউজড, পাজলড।
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : আপনি কনফিউজড এই জন্য যে আপনি কখনও জগদীশ ব্যানার্জির বাড়িতে যাননি, তাঁর ছেলেমেয়েদের এড়িয়ে গেছেন, বইপত্র পাঠিয়ে খোঁজ নেননি যে সেগুলো কে পড়ছে, কার কিসে আগ্রহ। আমি বিজ্ঞানের ছাত্রী, বিজ্ঞানের বই আপনি পাঠাতেন না, ইংরেজি আর বাংলা সাহিত্য, রাজনীতি, দর্শন, ভারত আর বিশ্বের ইতিহাস বিষয়ে বই পাঠিয়েছেন। এই বইগুলো পড়েছে বৈদেহী আর আরিয়ান। বৈদেহীও ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্রী ছিল। জামিয়া মিলিয়াতে অধ্যাপনা করত বিয়ের আগে।
আমি : কেন জানি না মনে হচ্ছে আমাকে ডেলিবারেটলি আঘাত দিয়ে কনফিউজ করতে এসেছো।
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : ছি ছি, আপনার জ্বর হয়েছে বা শরীর খারাপের সংবাদে আমরা বিপর্যস্ত বোধ করেছি। কিন্তু আপনার নিষেধাজ্ঞার জন্য দেখা করতে আসা বা সেবা করা সম্ভব হয়নি।
আমি : স্পষ্ট করে বলছই না। যে এসেছিল, মনে হচ্ছে তার পোশাক পরেই এসেছ, এমন জটিলতায় ফেলেছ যে সমাধান করতে পারছি না, যেমন রহস্যময়ী তুমি, তেমনই নেতি, আমাকে একা ফেলে চলে গেল।
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : না, স্যার, এই পোশাকটা আমারই, দিয়েছিলুম বৈদেহীকে। আমি তখন থেকে বৈদেহীর কথাই বলছি, ওর ক্রাশ ছিল আপনার সম্পর্কে, আপনি ছয় বছর আগে দিল্লি সরকারি কর্মচারি ম্যারাথনে প্রথম হয়েছিলেন, টিশার্ট খুলে বিজয় পালন করেছিলেন, তখন আরও কয়েকজনের সঙ্গে বৈদেহীও ফুলের তোড়া দিয়েছিল আপনাকে, বেশ কাছ থেকে দেখেছিল আপনাকে। সেই থেকে ও বিয়ে করতে চেয়েছে আপনাকে, আঙ্কলবাপি আর আন্টিমা বলেছিলেন আপনি ওনাদের চেয়ে নিচু জাতের, তা যে কি করে হয় আপনিই বলুন, আন্টিমা তো নিজে জাঠ পরিবারের ; তাছাড়া ওনারা আপত্তি করেছিলেন আপনাদের দুজনের মধ্যে বয়সের পার্থক্যের কারণে, বেশি তো পার্থক্য নয়, কুড়ি বছর বোধহয়, আর তৃতীয় আপত্তি ছিল আপনি অত্যন্ত সৎ বলে আপনার স্ট্যাণ্ডার্ড অফ লিভিং ওনাদের তুলনায় ভালো নয়, আপনি ঘুষ নেন না, নেন না বলে আপনাকে ইউনিয়ান টেরিটরির যেখানে-সেখানে শর্ট নোটিসে পাঠিয়ে দেয়া হয়, অবসর নেবার পর থাকার জন্য ফ্ল্যাটও কিনে রাখেননি।
আমি : বৈদেহীই এসেছিল ? সেই জন্যই কি জগদীশ আর অমরিন্দর আগের মতো তেমন যোগাযোগ রাখে না, মনে হতো যেন অ্যাভয়েড করে, কারণ বুঝতে পারিনি এতকাল।
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : হ্যাঁ, বৈদেহী যখন জোরাজুরি করছিল আপনাকে বিয়ে করার জন্য তখন ওনারা ওকে কয়েকদিন ঘরে বন্ধ করে রেখেছিলেন, তারপর পঞ্চাশ লাখ টাকা আর দু-কিলো সোনার গয়না যৌতুক দিয়ে, এক সমকামী নেশাখোরের সঙ্গে বিয়ে দিলেন। যখন ডিভোর্স নিয়ে ফিরে এলো তখন ওনারা বিপদে পড়লেন। ডিভোর্সিকে বিয়ে করার পাত্র, প্রচুর যৌতুক দিতে রাজি থাকলেও, পাচ্ছেন না ওনারা, সবায়েরই ভার্জিন মেয়ে চাই। পাত্রপক্ষরা বিশ্বাস করতে চায় না যে বৈদেহী ভার্জিন, ওর বর ওর সঙ্গে শুতেই চায়নি কখনও। ও যখন বরের সঙ্গে বিয়ে কনজিউমেট করার জন্য প্রেশার দেয়া আরম্ভ করল, তখন শাশুড়ি আর স্বামী দুজনে মিলে বৈদেহীকে দৈহিক যাতনা দিতে লাগলেন।
বললাম, জানি।
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : তবে ! কী হত ওর জীবন, বলুন স্যার ? যদি আপনি ওকে অমনভাবে ভালো না বাসতেন ! আমিই ওকে পাঠিয়েছিলুম আপনার কাছে, জোর করে, আমার ড্রেস ওকে পরিয়ে, হাতে মেহেন্দি লাগিয়ে , যা ও চায় তা যদি বাবা-মা না চান, তাহলে, এত বয়সে কেন মেনে নেবে মেয়ে, কেন বিদ্রোহ করবে না, কেন জীবন নষ্ট হয়ে যেতে দেবে, বলুন? বৈদেহী এখানে গুড়গাঁওয়ের বাড়িতে একা, আঙ্কলবাপি আর আন্টিমা চণ্ডীগড়ে, কতদিন চলতে পারে এভাবে ?
এরপর মেয়েটি যে কথাগুলো বলল, তাকে স্টানিং বললেও কম বলা হবে।
মেয়েটি বলল, সকলেই সমাজবিপ্লবের কথা বলে, তারাই আবার একজন তরুণীর ব্যক্তিগত বিদ্রোহকে খারাপ মনে করে ; বৈদেহী নিজে যা হতে চায় সেটা কি জরুরি নয় ? কেন সারাজীবন মুখোশ পরে কাটাবে ? নিজের ভেতরের নাচকে অমন বেড়ি পরিয়ে রাখার চেয়ে আত্মহত্যা করা শ্রেয়। নিজের জীবনে বিদ্রোহ করব না, অথচ সামাজিক বিদ্রোহের ঢাকঢোল পেটাব, এটা তো নিছক জোচ্চুরি।
আমি তখনও স্মৃতির হাজতে, বললাম, তাহলে স্কুলের আইডেনটিটিকার্ড ?
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : কার্ডগুলো আমার কিন্তু তাতে বৈদেহীর ফোটো লাগানো আছে, তাই তো স্ট্যাণ্ডার্ড সেভেন্হ থেকে কার্ডগুলো, যেগুলো দেখে আপনি চিনতে পারেননি যে কার্ডে আমার মুখ না বৈদেহীর মুখ।
আমি : তিনটে ক্লাসের প্রেমপত্র ? ওগুলো তোমার নয় ? তুমিই তো স্বাক্ষর করেছ !
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : না, স্যার, তিনটে চিঠিই বৈদেহীর লেখা, আপনাকে ইমপ্রেস করার জন্য, দ্যাখেননি কি একই রকম হাতের লেখা, তার কারণ ও একই দিনে বসে লিখেছিল ওগুলো।
আমি : আর ইনটারভিউ ?
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : ওটা আমার।
আমি : তো ও আমাকে ছেড়ে চলে গেল কেন ? মিথ্যা কথা বলে গেল কেন ?
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : ও আপনাকে ছেড়ে যায়নি স্যার। ও বাড়ি ফিরে গেছে আঙ্কলবাপি আর আন্টিমাকে শেষ পর্যন্ত বাধ্য করার জন্য। প্রেগন্যান্ট হয়েছে জানার পরই ও ফিরেছে। বৈদেহী বাড়িতে বলে এসেছিল যে ও আপনার সঙ্গে লিভটুগেদার করতে যাচ্ছে। আমিই বৈদেহীকে ফোর্স করেছিলুম, আপনার কাছে সরাসরি পৌঁছে আপনাকে দখল করতে, আমি জানি আমার ফাইনানশিয়াল ফাদার হিসাবে আমার প্রতি আপনার সমর্পিত অধিকারবোধ আছে, নয়তো প্রতি ক্লাসের প্রতি বছরের ফিস, অমন রেগুলার বইপত্র, দুর্গা পুজোর পোশাক পাঠাতেন না আপনি। আমি সেকারণেই বলেছি যে আমি ওকে আমার স্বপ্ন প্রায় সম্পূর্ণ দান করে দিয়েছি। আপনার বাড়িতে আমিই বৈদেহীকে আমাদের গাড়িতে করে পৌঁছে দিয়েছিলুম। আজকে আমাকে পৌঁছে দিয়ে গুড়গাঁও ফিরে গেল বৈদেহী।
আমি : বৈদেহীকে ফোন করছি এক্ষুনি চলে আসার জন্য, ওর অভাবে আমি বেশ ডিপ্রেশানে আছি। এখন খেয়াল হচ্ছে, বৈদেহী মাঝে-মাঝে আঙ্কলবাপির বদলে বাপি আর আণ্টিমার বদলে মা বলে ফেলত। একদিন রাতে ঘুমের ঘোরে বলেছিল যে ও অভিনয় করছে না, ও জেনুইন।
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : আপনি দুদিন অপেক্ষা করুন, বৈদেহীকে সঙ্গে নিয়ে আঙ্কলবাপি আর আন্টিমা সোমবার নিজেরাই আসবেন, আমি ওনাদের ইনফর্ম করে দিয়েছি। বৈদেহী আমাদের গুড়গাঁওয়ের বাড়িতে, আঙ্কলবাপি আর আন্টিমা চণ্ডীগড়ের কোয়ার্টারে।
আমি : তোমার ভূমিকায় ও তো দারুণ অভিনয় করে গেল তাহলে।
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : আমার ভূমিকায় নয় স্যার, ও ওইরকমই, আগল নেই বলতে যা বোঝায়, অ্যাগ্রেসিভ, আনইনহিবিটেড, হ্যাঁ, দিল্লিতে ইংরেজি আর বাংলা নাটকে অভিনয় করত, ছাত্র ইউনিয়ান করত। আমাকে দেখছেন তো, আমি ওর বিপরীত, রিজার্ভড, ইনহিবিটেড, কম কথা বলি, বিশেষ মিশি না, হইচই ভালো লাগে না, ড্রিংক করি না। আপনাকে লোকেট করার আইডিয়াটা আমার ; আমি আর বৈদেহী দুজনেই এডুকেট এ গার্ল চাইল্ড সংস্হায় গিয়েছিলুম।
আমি : তোমরা দুজনেই দাবি করছ কেন যে তোমরা এলেকট্রা।
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : ও এলেকট্রা কমপ্লেক্সের এলেকট্রা, মহাকাব্যের নায়িকা ; আপনাকে সিলভিয়া প্লাথের ড্যাডি কবিতাটা শুনিয়েছে তো, বলেছে আমায় ; অনেকদিন ধরে ও মুখস্হ করেছে দীর্ঘ কবিতাটা, স্রেফ আপনার জন্য, জীবনানন্দ দাশের কবিতাও বেশ কয়েকটা মুখস্হ করেছে, আপনাকে শোনাবে বলে। ও পশ্চিমবাংলাকে ভালোবাসে, নিজেই তার পরিচয় পেয়েছেন। ওর প্রেমকে রুদ্ধ করে রাখা হয়েছিল, হয়তো আপনার প্রতি ওর উন্মাদ ভালোবাসাও ওকে বেপরোয়া করে থাকবে, ওর পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয় যে আপনি অন্য কাউকে জীবনসঙ্গিনী করুন।
আমি : জীবনানন্দ দাশের কবিতা ? তো উনি বাংলার মানুষ হয়ে জন্মাতে চাননি কেন ?
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : উনি জীবনে কাউকেই বিশ্বাসযোগ্য পাননি, আইআইটিতে শুনেছি বন্ধুদের কাছে, ট্রামের ঘণ্টির ছন্দে বিভোর হয়ে মারা গিয়েছিলেন, ট্রামলাইনে শালিক, কাক, পায়রা, শঙ্খচিল বসেছিল, উড়তে চায়নি।
আমি : তুমি ?
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : আমি আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা, ড্যাডিজ লিটল গার্ল। আমার নাম নেতি রাখার জন্য, আর জন্মদিন পয়লা জানুয়ারি করার জন্য আমি কৃতজ্ঞ স্যার, নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে আমার জন্মের ইতিহাস, আর বছরের প্রথম দিনে তা আমায় আমার জন্মের কথা মনে করিয়ে দ্যায়। আমি পশ্চিমবাংলাকে বৈদেহীর মতন ততো ভালোবাসি না। আমার সমস্ত আপনাতে কেন্দ্রিত।
পরাজিত বোধ করছি মনে হল।
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : আমি আজ চলে যাচ্ছি স্যার, আর কখনও ফিরব কিনা জানি না। আপনার সঙ্গে অন্তত একবার দেখা করা জরুরি ছিল। আপনি চেয়েছিলেন নৈনিতালের বোর্ডিং স্কুলে পড়ি, পড়েছি। আপনি চেয়েছিলেন সায়েন্স স্ট্রিম নিয়ে পড়ি, পড়েছি। আপনি চেয়েছিলেন আইআইটির জন্য প্রতিযোগীতা করি, করেছি আর পড়েছি। আপনি চেয়েছিলেন ইলেকট্রনিক্স পড়ি, পড়েছি। আপনি চেয়েছিলেন ভালো চাকরি করি, করছি। আপনার প্রতিটি নির্দেশ পালন করেছি। আপনার পছন্দ বলে চিরকাল টোমাটোরেড লাল রঙের পোশাক পরেছি। প্রতিদান হিসাবে আমি কি আপনার একঘণ্টা সময় পেতে পারি ?
আমি : হ্যাঁ, হ্যাঁ, বসেই তো আছ, রেস্ট নিয়ে নাও, বহুক্ষণের জার্নি।
আঁস্তাকুড়ের এলেকট্রা : না, স্যার। আপনি আমার প্রতিষ্ঠাতা, আপনার শরীরের ওপর আমার তেমনই অধিকার আছে, যেমন আমার অস্তিত্বের ওপর আপনার ; আমি যাবার আগে আপনার সঙ্গে একবার মনের মতন যৌনসম্পর্ক পাতিয়ে যেতে চাই, আমি মহাকাব্যের এলেকট্রার সঙ্গে প্রতিযোগীতা করছি না, আমার বাচ্চা চাই না, কেবল এক ঘণ্টা আপনাকে সেক্সুয়ালি পেতে চাই, আর তার জন্য এই নিন রানি ভিক্টোরিয়ার সময়ের রূপোর টাকা, আমার দিদি বৈদেহীকে আমি মনে করে দিয়েছিলেন। আপনার সঙ্গে সম্পর্কের গোটা বেডশিটই মেমেন্টো হিসাবে নিজের কাছে রাখব আমি, সারাজীবন।
##
শিশিরে কেউটের গন্ধ। উতরোল কোলাহল। গাছে-গাছে না-খোলা কাঁচা দরোজার আড়াল।
স্ফিংক্স, মরুভূমি, পিরামিড, মমি। চাউনির অতিশয়োক্তি। জলের গভীরে রুপালি মৃগেলতন্বী।
পদশব্দ থেকে মুক্ত হয়ে যায় পায়ের পাতা।
কৃষ্ণবিবরের অচিন্ত্যনীয় ভর, আলোকেও হয়তো শেষাবধি আটক করে নিয়েছিল।
##
আরেকটা কথা স্যার, বৈদেহী আপনারই মেয়ে; আপনি যখন দমন-এ পোস্টেড ছিলেন, তখন আপনার কোয়ার্টারে গিয়েছিলেন আন্টিমা আর আঙ্কলবাপি, হানিমুন আর অফুরন্ত মদ খাবার লোভে। আন্টিমার সঙ্গে পর-পর কয়েকরাত আপনার দৈহিক সম্পর্ক হয়েছিল। আন্টিমা নিজে আমাকে বলেছিলেন, একদিন কান্নামেশা মাতাল অবস্হায়, আপনিই ওনার ভার্জিনিটি ডিফ্লাওয়ার করেছিলেন। সো লেট আস গো ইউ অ্যাণ্ড আই, লাইক টু পেশেন্টস ইথারাইজড আপঅন এ বেড…
সমাপ্ত