খে লা ই ডো স্কো প
আমাদের দেশে কিছু আদিবাসী আছে যাদের বলা হয় Particularly Vulnerable Tribal Group (পার্টিকুলারলি
ভুলনেরব্যে ট্রাইবাল গ্রুপ)। পশ্চিমবঙ্গে তিনটি সেরকম গোষ্ঠী আছে, যাদের মধ্যে একটি টোটো। আলিপুরদুয়ার জেলার ভুটান সংলগ্ন মাদারিহাটের টোটোপাড়ায় এদের বাস। পাহাড়ি অঞ্চলে চাষবাস নির্ভর এদের জীবন। এক সময় ভুটান থেকে বিভিন্ন সামগ্রী ডুয়ার্সে আনার কাজ করতো টোটোরা।
টোটোদের মধ্যে একটি প্রচলিত খেলা ‘গেল্লা ছুট’। এই খেলা হয় দুটি দলের মধ্যে। দুই দলেই সাত আট জন সদস্য থাকে। একটি ভেতরের দল আর একটি বাইরের দল। ছেলে ও মেয়ে উভয় এই খেলায় অংশগ্রহণ করে।ভেতরের দলে একজন রাজা থাকে, যে দলের অন্যান্য সদস্যদের থেকে ২০ -২৫ মিটার দূরে অবস্থান করে। রাজা ছাড়া সবাই থাকে ঘরে। খেলার নিয়ম অনুযায়ী রাজাকে পৌঁছতে হবে তার দলের ঘরে, বাইরের দলটির কোনো সদস্য যাতে তাকে ছুঁয়ে না দেয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। ভেতরের দলের সদস্যরা একটি চেন তৈরি করে রাজাকে রক্ষা করে। তারা ‘কুত কুত’ বা অন্য কোনো শব্দ বলতে বলে দৌড়াবে আর ছুঁয়ে দেওয়ার চেষ্টা করবে বাইরের দলের সদস্যদের। ছুঁয়ে দিলে তারা মৃত সৈন্য অর্থাৎ আর খেলতে পারবেনা। রাজা সুযোগ বুঝে তার দলের ঘরে যাওয়ার চেষ্টা করবে, পৌঁছে গেলে নিজেদের দলের জয়। রাজাকে ধরে ফেলতে পারলে বাইরের দলটির ভূমিকা পাল্টে যাবে। সে দলের রাজা হবে কেউ।
এক সময় টোটোদের প্রধান ছিলেন মণ্ডল, কাজী বা সুব্বা। তার দ্বারা পরিচালিত পরিষদের ওপর নির্ভর করতো টোটোদের শাসন ব্যবস্থা। সুতরাং কাজীকে রক্ষা করা ছিল সমগ্র জনগোষ্ঠীর কর্তব্য। সম্ভবত সেরকম ঐতিহ্য থেকে এই খেলার সূত্রপাত। টোটোদের বিয়ের সময় একটি খেলা প্রচলিত ‘লোটা খেলা’। নদীর ধারে পাত্র ও পাত্রী পক্ষের মধ্যে এই খেলা হয় একটি লোটা বা কলসি নিয়ে। দুই দলের মধ্যে দূরত্ব থাকে ৬ থেকে ৮ ফুট। দুই দলের মধ্যে দূরত্ব থাকে ৬ থেকে ৮ ফুট। এক দল লোটা লুকিয়ে রাখবে আর এক দোল কে খুঁজতে হবে। যে দল বেশি বার খুঁজে পাবে সেই দল জিতবে। ‘পাথর ছোড়া’ টোটোদের একটি মজার খেলা। বিশেষ করে ছেলেদের। এই খেলায় অনেকেই অংশ গ্রহণ করতে পারে, কারণ এটি একটি প্রতিযোগিতা মূলক খেলা। সবার হাতে একটি করে পাথর থাকে। মাঠে বা যেখানে খেলা হবে সেখানে একটি বৃত্ত আঁকা হয়। এই বৃত্তের ভেতর দাঁড়িয়ে খেলোয়াড়দের পাথর ছুড়তে হয় ৬ থেকে ৮ ফুট দূরত্বের চিহ্নিত কোনো জায়গায়। প্রথম প্রতিযোগীর ছোড়া পাথর স্পর্শ করতে হবে দ্বিতীয় প্রতিযোগীকে। এরপর প্রথম প্রতিযোগী পাথরটি সরিয়ে নেবে। পরবর্তী পর্যায় দ্বিতীয় খেলোয়াড়ের পাথরটি স্পর্শ করবে তৃতীয় জন। এভাবে খেলা এগিয়ে যাবে। এছাড়া টোটোদের মধ্যে ডাঙ গুলি খেলা আর তীর ধনুক খেলার প্রচলন আছে। টোটোদের জনসংখ্যা খুবই কম। ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে তাদের সংস্কৃতি, তাদের খেলা।
তথ্যসূত্র: Das, M and Chatterjee, K. 2014. Traditional games and sports of special hilly tribe called
toto community. Asian Journal of Science and Technology Vol. 5, Issue 2, pp. 129-132.