Hello Testing

4th Year | 2nd Issue

৩১শে বৈশাখ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 15th May, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

স্টে থো স্কো প

সং হি তা   ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়

sanhita

ভাগের মা

এক দম্পতির সন্তান হয় না। সুখী পরিবারে বিষাদের ছায়া নামে। প্রথমে ডাক্তার, তারপর তাবিজ কবচ, তারপর দত্তকের সম্ভাব্য আলোচনা। শাশুড়ি বলেন, “কার না কার রক্ত! পর কখনো নিজের হয়না!” ইত্যাদি। বন্ধু-প্রতিবেশী সবাই বলে অমুকের তমুক নিয়েছিল হোম থেকে। অনেক সমস্যা। নিজের মতো হয় না বড় হলেও। আসলে জিন তো নিজের নয়! দেখতে আলাদা! সমাজে-স্কুলে প্রশ্ন ওঠে।

অতঃপর গায়নোকোলজিস্ট  পরীক্ষা করে বিধান দেন এ আর টি— আর্টিফিশিয়াল রিপ্রোডাকটিভ টেকনলজি। অর্থাৎ, কৃত্রিম প্রযুক্তিগত প্রজনন ব্যবস্থার সহায়তা নেওয়া। কী এই প্রযুক্তি? স্ত্রী বা পুরুষ যে কোনো একজনের শারীরিক অপারগতা বা অসুস্থতার কারণেই প্রজননে অক্ষমতা হতে পারে। কিন্তু আজ সে আলোচনায় যাবো না। এই অসুস্থতা বা খামতির কারণ অনুয়ায়ী কৃত্রিম প্রজনন ব্যবস্থা নির্ধারণ করা হয়, প্রত্যেক দম্পতির ক্ষেত্রে যা তাদের পরিস্থিতিতে উপযুক্ত। এই ব্যবস্থায় উপলব্ধ পদ্ধতি কী কী তা দেখে নেওয়া যাক। এর মধ্যে রয়েছে, ইন ভিট্রো ফার্টিলাইজেশান বা আই ভি এফ। ইনট্রাসাইটোপ্লাসমিক স্পার্ম ইনজেকশান বা আই সি এস আই। ক্রায়োপ্রিজারভেশান অফ গ্যামেট বা এমব্রায়ো এবং প্রজননজনিত চিকিৎসা। সংক্ষেপে দেখে নেওয়া যাক এগুলির মূল পদ্ধতি কীরকম।

আই ভি এফ পদ্ধতিতে পুরুষ ও নারীর শরীরের বাইরে কৃত্রিম ব্যবস্থাপনায় শুক্রাণু ডিম্বাণুর মিলনে সৃষ্ট ভ্রুণ প্রতিস্থাপন হতে পারে। এর জন্য নারীর ডিম্বশয় থেকে কৃত্রিম উপায়ে ডিম্বাণু সংগ্রহ, আবার এক বা একাধিক ভ্রুণ নারীর জরায়ুতে প্রতিস্থাপন, বা জোনাল হ্যাচিং-এর মাধ্যমে ডিম্বাণুর বাইরের স্তর ভেঙ্গে ভ্রুণ প্রতিস্থাপন সহজতর করা ইত্যাদি প্রক্রিয়া ব্যবহার করা হয়।

আই সি এস আই পদ্ধতিতে পুরুষের শুক্রাণু নারীর ডিম্বাণুর মধ্যে ইঞ্জেকশানের মাধ্যমে ঢুকিয়ে দিয়ে ভ্রুণটি নারীর শরীরে স্থাপন করা হয়। এক্ষেত্রে একটি শুক্রাণু যথেষ্ট। পুরুষের প্রজনন ক্ষমতার অভাব বা যৌন সংসর্গে অক্ষমতা, অথবা নারীর নিজস্ব সিদ্ধান্তে যৌন মিলন ছাড়া বিশেষ কোনো পুরুষের সন্তান ধারণের সিদ্ধান্ত এভাবে কার্যকরী হতে পারে।

ক্রায়ো প্রিসারভেশান পদ্ধতিতে নারীর ডিম্বাণু বা পুরুষের শুক্রাণু বা কৃত্রিম মিলনজাত ভ্রুণ সংরক্ষণ করে রাখা হয় আই ভি এফ অসফল হলে ব্যবহার করার জন্য। নারী বা পুরুষ নির্বিশেষে, বন্ধ্যাত্ব সত্ত্বেও সন্তান ধারণ সম্ভব করা ছাড়াও, জিনগত অসুস্থতা ভ্রুণ অবস্থায় প্রতিস্থাপনের আগে নির্ণয় করে সেই সন্তান গ্রহণের সিদ্ধান্তের সুযোগ করে দেয়। সন্তানের শুক্রাণু দাতার জিন অনুযায়ী তার চারিত্রিক গুণমান সন্তানের মধ্যে নির্বাচনের সম্ভাবনা রাখে এবং সারোগেসির সুযোগ দেয়। স্বভাবতই প্রশ্ন আসে সারোগেসি কী ও কেন। সাধারণভাবে সারোগেসি, যা এযাবৎ গল্প উপন্যাসের বিষয়, সারোগেট মায়ের উদ্ভুত মাতৃত্ববোধ, বা নিম্ন মধ্যবিত্ত মেয়ের সংসার চালানোর জীবিকা, এমনকি সারোগেট মায়ের প্রতি শুক্রাণু দাতা পিতার মানসিক সংযোগ গড়ে ওঠা ইত্যাদি মিথের সাহিত্যিক ও চলচ্চিত্রগত ভিত্তিভূমিকে আজ আমরা বৈজ্ঞানিক ও আইনগত দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখবো।

শারীরবৃত্তিয়ভাবে এটি হলো যৌন সংসর্গ ছাড়া গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব। চিকিৎসা বিজ্ঞানে সারোগেসি দুই প্রকার। প্রথম হলো ট্রাডিশনাল বা প্রথাগত, যেখানে পুরুষ পিতার শুক্রাণু কৃত্রিম উপায়ে সারোগেট মায়ের জরায়ুতে প্রবেশ করিয়ে ঐ নারীর ডিম্বাণুর সঙ্গে মিলনে তার শরীরে ভ্রুণ সৃষ্টি করা হয়। দ্বিতীয়টি জেসটেশনাল অর্থাৎ ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর শরীর বহির্ভূত কৃত্রিম মিলনে সৃষ্ট ভ্রুণ সারোগেট মায়ের শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়।

অর্থনৈতিক দিক থেকে আবার এর দুই প্রকার। কমার্শিয়াল বা অর্থকরী, যেখানে সারোগেসির জন্য মা গর্ভ ভাড়া দেন অর্থের বিনিময়ে। অন্যটি অলটুরিস্টিক বা দাতব্য অর্থাৎ মা তাঁর গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন যত্ন ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার বাইরে কোনো লেনদেন স্বীকার করেন না। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, ইতিহাস বলে, অন্যের সন্তান স্বেচ্ছায় ধারণের প্রথা মানব সমাজে বহু প্রাচীন ব্যবস্থা। ব্যাবিলনে এই প্রথা আইনত সিদ্ধ ছিল। মহাভারতে কুন্তীর সন্তান ধারণ বা কৃষ্ণের জন্ম বৃত্তান্তেও এর উল্লেখ আছে। প্রভু যীশুর জন্মের কাহিনিও কিছুটা অনুরূপ।

যাই হোক, সারোগেসি ব্যবস্থার অপব্যবহার রুখতে, 2021 সালের 25 শে ডিসেম্বর ভারত সরকারের গেজেট নোটিফিকেশানে বেশ কিছু বিষয় উল্লেখ করা হয়। এ আর টি ক্লিনিক এবং এ আর টি শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর ব্যাঙ্কগুলির নথিভুক্তকরণ ও সরকারি লাইসেন্স প্রাপ্তি বাধ্যতামূলক হতে হবে। সারোগেসিতে ইচ্ছুক দম্পতিকে জেলা স্তরে মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দপ্তরে আবেদন পত্র জমা দিতে হবে ও এই মর্মে গঠিত বোর্ডের সিদ্ধান্তে অনুমতি পেতে হবে। এই বোর্ড আইন অনুসারে নির্ধারণ করে ঐ দম্পতি সারোগেসির যোগ্য কিনা। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক এর চেয়ারম্যান। এই বোর্ডের মেম্বার হিসেবে গাইনি ও শিশুরোগ বিশেষজ্ঞও থাকেন। যে কোনো ক্লিনিকের চিকিৎসা সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র পর্যালোচনা করে এই বোর্ড প্রত্যয়পত্র বা সার্টিফিকেট দেয় সারোগেসির অনুমতি স্বরূপ। এর পরই সেই দম্পতি সারোগেসির জন্য সংশ্লিষ্ট ক্লিনিকে যেতে পারে। এই বিষয়ে ক্লিনিক স্থাপনের জন্য রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তরের অনুরূপ বোর্ডে আবেদন করতে হয়। এই বোর্ডে উত্তীর্ণ হওয়ার প্রাথমিক শর্তগুলি এখানে উল্লেখযোগ্য।

পদম্পতির পুরুষটির বয়স ছাব্বিশ থেকে পঞ্চান্নর মধ্যে এবং নারীর তেইশ থেকে পঞ্চাশের মধ্যে হতে হবে। যদি আগে কোনো সন্তান থাকে যে মানসিক বা শারীরিক ভাবে গুরুতর অসুস্থ, বা স্বল্পায়ু, বা কোনো মারণ রোগের শিকার, সে ক্ষেত্রে বোর্ড অনুমতি দিতে পারে। পঁয়ত্রিশ থেকে পঁয়তাল্লিশ বছর বয়স্ক বিধবা বা অবিবাহিত বা ডিভোর্সি নারী সারোগেসির মাধ্যমে মা হতে পারবেন কিন্তু অনুরূপ অবস্থার পুরুষকে এই অধিকার আইন দেয় না। জেলা বোর্ডের সার্টিফিকেট-সহ এবং শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার মেডিক্যাল সার্টিফিকেট-সহ, সারোগেট মায়ের ইচ্ছাপত্র এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় এফিডেভিট ইত্যাদি-সহ নির্দিষ্ট রাজ্য বোর্ডে আবেদন করতে হবে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য। সারোগেট মা হওয়ার শর্ত হলো বয়স পঁচিশ থেকে পঁয়ত্রিশ বছর হতে হবে। বর্তমান আইনে কোনো নারী নিজের ডিম্বাণু দিয়ে সারোগেট মা হতে পারবেন না।

জীবনে একবারই সারোগেট মাতৃত্বের অনুমতি পাওয়া যাবে। ভ্রুণ প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া একবারে না হলে তিন বার পর্যন্ত চেষ্টা করা যাবে। এ প্রসঙ্গে প্রয়োজনীয় তথ্য মিলবে জাতীয় সারোগেসি বোর্ডের নিউ দিল্লি অফিসে, রাজ্যের সল্টলেক স্বাস্থ্য ভবনের অফিসে এবং সব জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের দপ্তরে।

আরও পড়ুন...