ধা রা বা হি ক । পর্ব ১০
ক
ভোরবেলা পাখি দেখি। ঐ পাখির নাম জানি না। ঐ পাখি আমার বসন্তের বসন্তকাল। এ ডাল ও ডাল। পাতার আড়াল। সংসারের আড়াল। সংখ্যার আড়াল। আমি আর দেখতে পাচ্ছি না। কোথায় গেল? এজিথ্রোমাইসিন ফাইভ হান্ড্রেডের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে। জাতীয় সঙ্গীতের আড়ালে লুকিয়ে পড়েছে। লাইফ সাপোর্টের নিচে চাপা পড়ে গেছে। ঐ আবার পেয়ারার ডালে, ঐ আবার আদাবাটা-জিড়েবাটা মেখে … গায়ে সেন্ট মেখে নিমের নিয়মভরা ডালে লাফাচ্ছে ঝাপাচ্ছে …
পাখি। ভোরবেলার পাখি। আমার সকাল শুরু হল, দিন শুরু হল আরো একটা… পাখির সঙ্গে… আমি পালকের মতো হালকা বাদ্যযন্ত্রে ভর করে এগোতে থাকি, এগোতেই থাকি, পিছনে তাকাবো না বলে।
খ
বার্ধক্য আমার জীবনে কোনদিন আসবে না। অল্প বার্ধক্য, বেশি বার্ধক্য এইসব অপ্রয়োজনীয় আমার জীবনে। বার্ধক্য আসার আগে আমি লাফ মেরে এইট্টি ফাইভ বাসে চেপে ক্লাস থ্রি-ফোরে পৌঁছে যাবো।
বার্ধক্য তবুও কোনো কলঙ্ক নয়। বার্ধক্যে তুমিও পৌঁছে একদিন হঠাৎ ছাদে গিয়ে ঘুড়ির প্যাঁচ খেলা দেখে শিশুর মতো হাততালি দেবে, দেবেই। বার্ধক্যেই আবার একজন মা-কে তোমার প্রয়োজন।
আসলে ওটাও একটি জীবনের ভঙ্গি, একটা অনুষ্ঠান, একটা অভ্যাস বা অন্যরকম বাদ্যযন্ত্র।
আমি দূর থেকে সেই অভিমানী অভ্যাসকে, সেই বাদ্যযন্ত্রকে, সেই অনুষ্ঠানকে দেখতে পাচ্ছি, চশমা ছাড়াই।
একটা পাতলা সিলেবাস নতুন বাতাসের মতো উড়ছে এখন এই মুহূর্তে আমার পথে আমার জীবনে।
গ
‘দোষ’ সংসারের একটি অঙ্গ, সে আমাদের নিত্য-সংসারেই বসবাস করে। সকলেরই দোষ আছে, আমারও আছে। দোষ ধরাও আছে। কেউ কেউ খুব সুন্দর, অদ্ভুত দক্ষতায় অপরাহ্নে ও ঊষালগ্নে অপরের দোষ ধরে। দোষ ধরা একটা পুলিশি কায়দা। এর জন্য লাগে একটা সুন্দর কুচুটে মন, যাতে কোনোদিন জোৎস্নার আলো পড়েনি, পড়েনি খোলা জানালার রোদ বা আলো, সেখানে স্যাঁতস্যাঁতে ড্যাম্পধরা একটা হৃদয় নিজের কষ্টে নিজে নিজেই অসুস্থ হয়ে আছে।
তবু দোষ বিনা গুনের বিকাশ সম্ভব নয়। গুনের অধিকারী সেই, যার ভিতর অল্পস্বল্প দোষ বেসুরো বাজে।
একটা দিগন্তব্যাপী নীল সমুদ্রের দিকে তাকালে এই দোষগুনের জগৎ-সংসারকে মনে হয় একটা ছোট্ট সামুদ্রিক পাখি, যে অনন্তকাল উড়ছে তো উড়ছেই।
কার দিকে তাকিয়ে আমার এই প্রার্থনার হারমোনিয়ামটি বাজাবো? উত্তর এলো: সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে। বিশাল সমুদ্রের সামনে বসে দোষ আর গুন যখন পাশাপাশি বসে শুধু তাকিয়ে আছে আদিগন্ত সমুদ্রের দিকে, গাইছে তারা একসঙ্গে, তখন তার ব্যাপ্তি আরো ব্যাপক-বিশাল। দূরে এদেশ ওদেশ, দূরে এই আমি ওই আমির জাহাজ চলেছে কালকে ভেঙে, মহাকালের দিকে।
ক্রমশ