ধা রা বা হি ক । পর্ব ১১
তোমার কথা মনে পড়ে। বিয়ে হয়ে গেছে এতদিনে নিশ্চয়। ছেলেমেয়ে? তাদেরও নিশ্চয় বিয়েশাদী হয়ে গেছে।
তুমি আমার চেয়ে এক ক্লাস নিচে পড়তে।
তুমি সবুজ হয়েছিলে আমার সমস্ত কৈশোর জুরে।
একদিন স্কুল থেকে এসে ছিপ নিয়ে দৌড়েছি, মাছ ধরব বলে, (তখন মাছ ধরার সে কি নেশা!) দেখি তুমি সাপ হয়ে ঘাটের রানারে জল থেকে উঠে দাঁড়িয়ে আছো! বুকে দাঁড়িয়ে আমাকে দেখছো।
তুমি জল, সাপ হয়ে আমার সামনে।
আমি আমার বাল্যের যাবতীয় কৌতূহল-মেশানো সাঁতার শিখেছি তোমার শরীরেই। আমার কৈশোরের আবছা যৌন-অযৌন সাঁতার তুমিই শিখিয়েছিলে আমায়।
তখন দিনগুলো কেমন আবছা আবছা ছিল। মা বাবা পাঠ্যবই বোন স্কুলের স্যার ও বন্ধুরা এইই ছিল আমার আবছা অস্পষ্ট আকাশ, আর তুমি। তোমার ধারে ধারে তীরে তীরে ঘুরে বেড়াতাম। তুমিই ছিলে আমার কঠিন পাটীগণিত, তুমিই ছিলে আমার সহজ ইতিহাস, তুমিই মোঘল সাম্রাজ্য, তুমিই মনকেমন করা রাজলক্ষী-শ্রীকান্ত!
হয়তো একটু বেলা অব্দি ঘুমোবে ভেবেছো। কারণ কাল সারারাত ঘুমোওনি। জেলেরা জাল টেনেছে সারারাত, তোমার শরীর জুড়ে, তন্নতন্ন জাল টেনেছে। ভোরে তুমি ক্লান্ত!
আমিও এক অবুঝ — ঘুম থেকে উঠেই দৌড়ে গেলাম তোমার পারে, দিলাম এক ঝাপ। তখন বৈশাখ। তুমি নড়ে উঠলে শ্যাওলা সমেত, ঘুম সমেত। ঢেউ স্রোত তরঙ্গ তোমার অবচেতন জুড়ে। কি সহ্যই না করেছ তখন।
এইসব ভেবেছিলাম লিখে জানাবো তোমায়। আমার না পাঠানো চিঠি। তোমাকে স্বপ্নে দেখি। আনন্দে দেখি। শান্তিতে দেখি। দুঃখিত ছায়ায় দেখি।
আমার চিঠি তোমার বুকে কাগজের নৌকা হয়ে ভাসুক। তুমি ঐ চিঠির কাগজনৌকোয় তোমার কথাও, তোমার আজীবন আমার জন্য ভেসে থাকার কথাও লিখো, জানিও।
তোমার দুই পারে সুখী বাতাস। তোমার গভীরে (মাঝ পুকুরের মাটি তোলার সময় শুনেছি সে গান) রাজেশ্বরী দত্তর গান, তুমি তুমি আজো সাপ হয়ে, লতা হয়ে, জল হয়ে, চাঁদের আয়না হয়ে আছো —- আমার, আমার ভিতর। ভালো থেকো, আমার প্রিয় জল, আমার চিৎ সাঁতার, আমার খুব ডুব সাঁতার, আমার মাছ ধরার অঙ্ক বই, ভালো থেকো তুমি।
ক্রমশ