ধা রা বা হি ক । পর্ব ১২
বৈশাখের দ্বিতীয় দিনের সকাল কী সুন্দর! এখনো নির্জন চারিধার, পাখি ডাকছে, মৃদু রোদ, মৃদু ফেসবুক – মানুষ এখনো শান্ত হয়ে দুয়ারে জল দিচ্ছে, উঠোনে ঝাড়ু দিচ্ছে।এখনো কোনো তরুণ বিপ্লবের নামে অকারণ কাউকে ভাষা দিয়ে আক্রমণে নামেনি। ছোড়েনি অপমানের বোমা। সে হয়তো এখনো ঘুম থেকে ওঠে নি। নিষ্পাপ ঘুমোচ্ছে সে। ঘুম এক শুয়ে থাকা কবিতা।
আরেকটু বাদে ঢাকেশ্বরী মিষ্টান্ন ভান্ডারে গরম জিলিপি ও কচুরি ভাজা হবে। আমি মনে মনে কচুরির গন্ধ উপভোগ করি, কচুরির প্রতি লোভ ও লালসা জন্মায়।
আমাদের রাজীবপুরে সত্তর একাত্তর সালে বৈশাখের দুপুর ছিল গনগনে ও শান্ত। আমবাগানে পাখিরা বিশ্রাম নিত, পুকুরে হুস করে নেমে আসত পাখি নিজেকে শীতল করবে বলে, খর দুপুরে পোস্টাপিসের খগেনদা (ফর্সা) ফ্যাকাশে ছাতা মাথায় পায়ে হেঁটে মার স্কুলের মাইনে দিয়ে যেত, বাষট্টি টাকা। মা সই করে বাষট্টি টাকা নিত, সঙ্গে বৈশাখের দুপুরকেও নিত সই করে, একটা ছোট বৈশাখী আনন্দ আমাদের মনে খেলে বেড়াত, আমবাগানে শীতল গাছের নিচে তখন হয়তো বিশ্রাম নিতে এসেছে শান্ত চন্দ্রবোড়া।
চারিদিকে বৈশাখ আর বৈশাখ থৈ থৈ করছে। একটা শান্ত ও ভালোবাসার জেদ যেন বৈশাখের রোদে নিজেকে সুরে সুরে তাতিয়ে নিচ্ছে। পুকুরের জল গরম, ডুব দিলে নিচের জল ঠান্ডা। আমি আর সেই বালিকা আর তার ভাই ডুব সাঁতার দিয়ে দিয়ে বৈশাখ থেকে আষাঢ়ের দিকে যেতাম – রোদ থেকে বৃষ্টির দিকে।
এখন এই সকাল বড় শান্ত, বড় নির্মোহ, কোনো কুস্তি কোনো প্রতিযোগিতা নেই এখন।
সবাই বৈশাখ সাথে বেঁধে বেঁধে হাঁটছে, জল দিচ্ছে দুয়ারে, রুমি ফুল তুলছে ঠাকুরের…
ক্রমশ