Hello Testing

4th Year | 3rd Issue | June-July

৩০শে আষাঢ়, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 16th July, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

ধা রা বা হি ক । পর্ব ১৩

রা ণা   রা য় চৌ ধু রী

আবার রাণার কথা

rana2

এসো বসন্তকাল

ওহো বসন্তকাল, তুমি এলেই আমার শরীর খারাপ হবে, সিওর। আর মাথায় কবিতা আসবে, এটাও সিওর।

আর বসন্তকাল এলে আমার প্রবল প্রেম প্রেম ভাব জাগে, মন অন্যমনস্ক হবে, মনের প্রবল খিদে জাগবে। মনে শোকও জাগে, মনখারাপ মনখারাপ। মনখারাপের কারখানা চলে ভিতরে কোথাও।

বসন্তকালের ট্রেনগুলোও খুব আনমনা হয়। আমি লক্ষ্য করে দেখেছি। আমাদের বাড়ির পিছনেই রেললাইন। আমি বসন্তের সকালে দুপুরে-রাতে লক্ষ্য করে দেখেছি ট্রেনগুলো একগাদা অন্যমনস্কতা নিয়ে খুব ধীরে কোথাও যায়। কোথায় যায় উহারা! উহাদের কোনো গন্তব্য থাকে না এই বসন্তের দিনে, দিনগুলিতে।

আমি ভাবি এই বসন্তকাল কোথা থেকে আসে! ট্রেনে আসে নাকি, পাখির ডানায় ভর করে আসে। না কি কারো আনমনা মনের পাটাতনে চুরুট খেতে খেতে সে আসে। আমি তার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি, গায়ে দখিনাবাতাসের পাঞ্জাবি তার। এলোমেলো মন নিয়ে সে ঘোরে আমার ভিতর। এই বসন্তকাল নারী না পুরুষ। আমার তাকে পুরুষই মনে হয়। সে অনেকটা বাঙালি তরুণ কবির মতো দেখতে। যে সবসময় অন্যমনস্ক, এবং প্রবল প্রেমিক। যে দখিনা বাতাসে সাঁতার কেটে তার কল্পনার তরুণীটির দিকে ধায়।

বসন্তকাল সবার জন্যে। গরীব বড়লোক সবার। ধার্মিক অধার্মিক সবার সে। তার মনে খুব মায়া। বাতাসে তাকে অনুভব করা যায়। ফাগুন চৈত্রের রোদের দিকে তাকালে তাকে বোঝা যায়, যে তার মন সবসময় মায়ায় ভরে আছে। ভালোবাসায় ভরে আছে তার হৃদয়। সবার জন্যে মন খোলা, মনের দ্বার খোলা।    

আমাদের বাড়ির পাশের বস্তিতে যেমন – আবার বিরাট বিরাট অট্টালিকাতেও – তাকে বরণ করার আয়োজন হয়েছে আজ। আজ কাল পরশু পুরো ফাগুন চোতমাস ধরে আমরা তাকে ভালোবাসব। সেও উজার করে দেবে তার সুর দিয়ে আর তার অন্যমনস্কতা দিয়ে। আমাদের বাড়িতে শান্তি, সুস্থতা আনন্দ জলের রেখার মতো নিঃশব্দে বয়ে যাবে। এই শান্তি যেন চির বাতাসের মতো মনকে আমাদের ভালোবাসতে শেখাবে। মানুষে মানুষে প্রেম, প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা, পশুর জন্য মানুষের নিবেদিত প্রাণ ও মায়া এইসবেরই বসন্তকালের আয়োজন। তাই তাকে আমরা খুব ভালোবাসি।

ধীরে ধীরে সে আসে। পথভোলা পথিকের মতো হঠাৎ আমাদের সংসারে আমাদের পাড়ায় তার আগমন। সে বেশিদিন থাকতে আসেনি, সে শুধু দখিনাবাতাসটুকু কিছুদিনের জন্য আমাদের দিয়ে, আমাদের সব অশান্তি সব অপ্রেম সব বিদ্বেষ সব ক্রোধের অবসান ঘটিয়ে সে চলে যাবে।

তবু, সে চলে গেলেও, সে বসন্ত থেকে যায় আমার মনের ভিতর। সারা বছরই কোকিল কোকেইন কোকেইন বলে ডেকে ওঠে আমার ভিতর। কোকিল – আবির – রং – দক্ষিণের বাতাস – বন্ধুর মতো রোদ – এইসবই আমার বসন্ত হয়ে আমার ভিতর থাকে সারা বছর। বর্ষা এলেও বসন্ত আমার পাশে বসে বসন্ত কেবিনে চা খায়। শীত এলেও বসন্ত আমার সঙ্গে হাসপাতালে যায় আমাদের প্রিয় বন্ধুকে দেখতে। প্রবল গ্রীষ্মের দিনেও সে বসন্ত হয়ে আমার বইয়ের র‍্যাক থেকে কোনো তরুণ কবির কবিতার বই হয়তো নামিয়ে পড়বে। তরুণ কবির কবিতা নিয়ে আলোচনা করবে, তারপর হঠাত আপন মনে দখিন জানলা দিয়ে মিলিয়ে যাবে বাতাস হয়ে, হাওয়া হয়ে।

বসন্তকাল আসলে কালিকাপ্রসাদের গান, দোহারের দলবদ্ধ গানের ব্যথিত আয়োজন। বসন্তকাল আসলে কথা দিয়েও শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে না আসা সেই তরুণী যে ভালো করে গান গাইতে আজো শেখেনি। বসন্তকাল আসলে, সেই দলবদ্ধ শব বাহকের দল, যারা শ্মশানে না গিয়ে চলে যায় দাবিদাওয়ার মিছিলে, আন্দোলনে।

বসন্তকাল এসেছে, পোস্টকার্ডে জানালো, পুরুলিয়া। পুরুলিয়ার দিক থেকে আমাদের আত্মীয় বসন্তকাল আসছে একগুচ্ছ কবিতা হাতে, একগুচ্ছ ভালোবাসা হাতে, তার জন্য আসন পাতো। তার জন্য চা বসাও, তার জন্য গানের আয়োজন করো সবাইমিলে…

ক্রমশ

আরও পড়ুন...