ধা রা বা হি ক । পর্ব ১৪
ভুল করা, আর ভুলে যাওয়া, দুটোয় তফাৎ আছে। আমি ভুলে যাই, লঙ্কা আনতে, মুড়ি কিনতে, তবে সেটা রেয়ার। ঘুমোতে ভুলি না। স্নান ভুলি না। আর খাওয়া তো ভোলার প্রশ্নই নেই।
খেতেই এসেছি।
জন্মগ্রহণ করতেও ভুলে যাইনি। ঠিক সময়ে, ঘড়ি ধরে, টুক করে নেমে এসেছি মায়ের কোলে। মায়ের কোলে না আসলে আমার মা নামক বধূটি কাঁদতো, যদি মৃত জন্মাতাম, আমি জ্যান্ত জন্মানোতে মা খুশি, যেহেতু সেই নারী প্রথম মা হলো আমার মধ্যে দিয়ে, ফলত ঐ ক্ষেত্রে জন্মগ্রহণে ভুল হলে সেটা অন্যায় হতো।
কিন্তু ভুলে যাওয়া এক জিনিস, আর ভুল করা আরেক।
আমার ভুলের অন্ত নেই।
অঙ্ক ভুল করে আসতাম পরীক্ষার খাতায়।
ফুটবল খেলার সময়, গোলে বল না ঠেলে, ভুল কিকে বল বাইরে পাঠাতাম।
অজস্র ভুল করেছি জীবনে। বোকারা বেশি ভুল করে, এরকম এখন মনে হয়।
সব ভুল ঠিক করে নতুন করে শুরুর চান্স আর নেই।
মাঝেমাঝে মনে হয় ঐ ভুলগুলোই প্রকৃত জীবন।
ঐ ভুলগুলোর মধ্যেই রক্তের প্রবাহ আছে। ব্যর্থতার সফলতাও আছে।
ভুল করে, ভুল করে রাস্তা হারানোর মজাই আলাদা।
আজ যেমন ভুল করে আমি আপের জায়গায়, ডাউন ট্রেনে উঠে পড়েছি
**
আমি সাইকেলে বেল খুব দরকার ছাড়া দিই না। কাউকে বিরক্ত না করে এগোতে চাই, মৃদু।
বেল না বাজিয়ে, ঠিক কাটিয়ে কাটিয়ে, কাউকে বিন্দুমাত্র ধাক্কা বা টাচ না করে বেরিয়ে যাই।
তবু থামব না, সাইকেল চালাবোই, এগোবোই। এখন অবশ্য স্পিড কমে গেছে। তবু টুকটুক করে যাচ্ছি, কোথায় যাচ্ছি জানিনা, কিন্তু যাচ্ছি।
যতদিন রাস্তা থাকবে আমি যাবো। সাইকেল চালাবো, বিনা বেলে, বিনা ক্রিংক্রিঙে, নিঃশব্দে।
ভাবি, যদি কোনোদিন রাস্তাই না থাকে, তবে?
আমি তো মুণিঋষি নই যে জলের ওপর সাইকেল চালিয়ে ওপারে চলে যাবো?
আমার বিশ্বাস রাস্তা থাকবে। গলি রাজপথ থাকবে। ভাঙাচোরা হলেও থাকবে, আর আমি বা আমরা চুপে সাইকেলে, হেঁটে, টোটোতে, অটোতে ঠিক একটু একটু করে এগোতে পারবো।
**
‘দোষ’ সংসারের একটি অঙ্গ, সে আমাদের নিত্য-সংসারেই বসবাস করে। সকলেরই দোষ আছে, আমারও আছে। দোষ ধরাও আছে। কেউ কেউ খুব সুন্দর, অদ্ভুত দক্ষতায় অপরাহ্নে ও ঊষালগ্নে অপরের দোষ ধরে। দোষ ধরা একটা পুলিশি কায়দা। এর জন্য লাগে একটা সুন্দর কুচুটে মন, যাতে কোনোদিন জোৎস্নার আলো পড়েনি, পড়েনি খোলা জানালার রোদ বা আলো, সেখানে স্যাঁতস্যাঁতে ড্যাম্পধরা একটা হৃদয় নিজের কষ্টে নিজে নিজেই অসুস্থ হয়ে আছে।
তবু দোষ বিনা গুনের বিকাশ সম্ভব নয়। গুনের অধিকারী সেই, যার ভিতর অল্পস্বল্প দোষ বেসুরো বাজে।
একটা দিগন্তব্যাপী নীল সমুদ্রের দিকে তাকালে এই দোষগুনের জগৎ-সংসারকে মনে হয় একটা ছোট্ট সামুদ্রিক পাখি, যে অনন্তকাল উড়ছে তো উড়ছেই।
কার দিকে তাকিয়ে আমার এই প্রার্থনার হারমোনিয়ামটি বাজাবো? উত্তর এলো : সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে। বিশাল সমুদ্রের সামনে বসে দোষ আর গুন যখন পাশাপাশি বসে শুধু তাকিয়ে আছে আদিগন্ত সমুদ্রের দিকে, গাইছে তারা একসঙ্গে, তখন তার ব্যাপ্তি আরো ব্যাপক-বিশাল। দূরে এদেশ ওদেশ, দূরে এই আমি ওই আমির জাহাজ চলেছে কালকে ভেঙে, মহাকালের দিকে।
ক্রমশ