Hello Testing

4th Year | 3rd Issue | June-July

৩০শে আষাঢ়, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 16th July, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

ধা রা বা হি ক । পর্ব ৫

রা ণা   রা য় চৌ ধু রী

আবার রাণার কথা

rana2

পুরাতন

এটা সেই পুরনো রাস্তা, যে পথে তুমি শ্মশানের পথে গিয়েছিলে, অন্য নতুন এক জীবনের সন্ধানে, আমরা পিছন পিছন শোকের জামা গায়ে হাঁটছিলাম, নীরবে। এই শোক ব্যাপারটাও অনেক পুরনো এক কুয়াশা, শোকের ভিতর দিয়ে পুরাতনী গান ভেসে আসে, আসে পুরনো বকুল গন্ধ। পুরনো শোককে নতুন করে গায়ে চাপিয়ে আমরা হাঁটছিলাম। নতুন শোককে কাঁধে করে, নতুন শোককে আপনজন মনে করে আমরা হেঁটে যাচ্ছিলাম তোমার সঙ্গে। শোক যায় শোক আসে। নতুন শোকের কুয়াশার ভিতর দিয়ে চলেছ তুমি। গুনগুণ গান গাইতে গাইতে, নতুন কোনো আস্তানার সন্ধানে, পিছনে আমরা পুরাতন যুবকের দল, তোমাকে নতুন পথে এগিয়ে দিতে যাচ্ছি।

    পুরনো রাস্তার পাশে পুরনো সজনে গাছ তোমার চলে যাওয়া দেখছে, তুমি নূতনের দিকে চলেছ, সেখানেও তুমি একদিন পুরাতন হবে আবার। পুরাতন নূতনের দিকে হেঁটে চলেছে যেন –  পুরাতন গান পুরাতন অশ্রু পুরাতন বিরহ ও বেদনা চলেছে তোমার সঙ্গে – আমরা পিছন থেকে দেখতে পাচ্ছি তাদের। উহারাও তোমার যাত্রা পথের সঙ্গী। 

    সেই কবে নতুন হয়ে এসেছিলে পৃথিবীতে, নতুন চাঁদ দেখে অবাক হতে, নতুন বৃষ্টি দেখে আনন্দে লাফাতে, নতুন মা ও বাবা তোমার – নতুন দাদা দিদি বোন বন্ধুরা তোমায় এই নতুনের পথে পথ দেখিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। তুমি অবাক হয়ে দেখছিলে সব, প্রশ্ন করছিলে। নতুন চলেছিল অনেকদিন তোমার সঙ্গে, ধীরে ধীরে তুমি পুরনো হলে এই জগতে। তোমার মা বাবা পরিজনেরাও পুরনো হতে লাগল, তুমি সবাইকে চিনে ফেলেছ এতদিনে। সকলেই খুব ভাল, সকলেই পুরাতনের মতো সুন্দর ও গীতিময়। সবাইকেই তোমার পুরনো লিরিক মনে হতে লাগল। তুমি নতুনের সন্ধানে একদিন কবিতার কাছে এলে, নতুন কবিতা তোমাকে এক নতুন রেল স্টেশনে নিয়ে গেল, সেখানে নতুনে ছন্দেরা যাতায়াত করে চিরকাল। 

    তুমি যখন নতুন থেকে পুরাতন হয়ে উঠছিলে ধীরে ধীরে, সে এক কবির হয়ে ওঠা যেন। গায়কের হয়ে ওঠা যেন। তুমি হয়ে উঠছিলে। পুরাতনের কোনো অস্তিত্বের সঙ্কট নেই। সে তো আছেই নিরিবিলিতে, নিজের মতো, চুপিসারে। সে তো এই মহাজগতের এক অস্তিত্ব। কেউ হয়তো তোমায় নেমন্তন্ন করেছে মেয়ের বিয়েতে, কেউ হয়তো তোমায় অধিক গুরুত্ব দিয়ে ফেলেছে, তুমি তোমার পুরাতন বল্কল-গায়ে নিয়ে তখন প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছ। তুমি ‘হে পুরাতন’ হয়ে ঘরের কোণে চুপে থাকতে চেয়েছিলে। কথা তোমার নিভৃতে বয়ে যেত স্তব্ধতার মতো। তোমার মন পুরনো হতে হতে বিরক্তি-শূন্য ক্ষোভহীন দোষারোপহীন হয়ে পড়ে রইল জগতের এধার ওধারে। সবুজ ঘাসের আড়ালে, শ্যাওলার ঝোপে। উড়ানহীন এক পাখির মতো তুমি আকাশ দেখেছিলে একদিন ঘন বর্ষার দুপুরে। 

    বৃষ্টি কোথা থেকে আসে? সেও কি পুরাতন নয়? তুমি ভাবছিলে নিজের মনে। এই ভাবনা সুর হয়ে বাজছিল তোমার ভিতরে। সুরও কী পুরাতন নয়। হে সুর তুমি কোথা হইতে আসিয়াছ? সুর উত্তর করিল – বেদনা হইতে আসিয়াছি, ব্যথা হইতে, অভিমান হইতে – প্রাচীন অভিমান থেকে সুরের জন্ম। তুমি বৃষ্টি ধারার দিকে চেয়েছিলে অপলক। তোমার এই চেয়ে থাকা আরো পুরনো হয়ে যাবে এই বৃষ্টি ধারার ভিতর দিয়ে একদিন। 

    এটা সেই পুরনো শ্মশান। যেখানে তোমাকে আমরা নিয়ে এলাম, নূতন যুবকের দল। এই শ্মশানে প্রথম দাহ করা হয় এক প্রাচীন বট বৃক্ষকে। বট বৃক্ষকে দাহ করার সময় অনেক পাখি দাহের আগুনে পুড়ে যায়। অনেক পাখি ছিল সেই বটবৃক্ষের আশ্রয়ে। তোমার আশ্রয়েও আমরা ছিলাম এতদিন, তুমি পুরাতন থেকে নূতনের দিকে যাত্রা করছ। আমাদের শোক আমাদের বিয়োগ ব্যথাও পুড়ছে তোমার দাহতে। 

    অন্ত্যেষ্টির পর এক নতুনের জন্ম হয় যেন। চারিদিকে নতুনের আহ্বান। যে ঝড় উঠেছে আমাদের ভিতর, তাও যেন নতুন ঝড়। সবে জন্ম নেওয়া ঝড় সে তো তরুণ কবির মতোই নতুন ছন্দে লিখবে তার কবিতা। নতুন চিত্রকল্প নিয়ে হাজির আমাদের নতুন ঝড়, সে এক প্রশান্তির মধ্যেও নতুন বিপ্লবের মতো বয়ে যাচ্ছে আমাদের চিরস্থায়ী ব্যবস্থার ভিতর।

    নতুন ঝড়ে ভেঙে পড়ল আমাদের পুরনো স্তম্ভটি। বহু পুরনো এই স্তম্ভ যা আমাদের অনেক ভ্রমণের সাক্ষী। এই স্তম্ভে হেলান দিয়ে আমরা কত স্বপ্ন দেখেছিলাম একদিন, এই স্তম্ভের পাশে দাঁড়িয়ে আমরা ভালোবেসেছিলাম তোমাকে, সবাইকে। সেই স্তম্ভ আজ ভেজে গেল নতুন ঝড়ের দাপটে। 

    স্তম্ভের নিচে চাপা পড়ে রইল আমাদের না লেখা চিঠি, না লেখা কবিতা, না জানানো প্রেমের কথা। পুরাতন ভেঙে যাওয়া স্তম্ভের ওপরে বইছে তখনো নতুন বেশে আসা ঝড় আমাদের।

ক্রমশ

আরও পড়ুন...