Hello Testing

4th Year | 3rd Issue | June-July

৩০শে আষাঢ়, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 16th July, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

ধা রা বা হি ক । পর্ব ৭

রা ণা   রা য় চৌ ধু রী

আবার রাণার কথা

rana2

আমাদের আশ্রয়টি

এই বাড়িটা আমার, এখান থেকে আমাকে কেউ চলে যেতে বলবে না, বা এই আশ্রয় ছেড়ে আমায় রাস্তায় রাত্রিবাস করতে হবে না, এটা ভাবলে আমার নিজেকে ভাগ্যবান মনে হয়। মাঝে মাঝে মনে হয় কাউকে বঞ্চিত করে কী আমি এই বাসস্থানটি আদায় করেছি। পরে মনে হয়, না এতো আমার বাবার কেনা সামান্য জায়গা। যেখানে আমি আছি পিতার উত্তরসূরি হিসেবে।

এই বিশাল পৃথিবীতে কত জমি! সেখান থেকে সামান্য এই স্থান আমার বাবা পেয়েছিলেন আশ্রয় হিসেবে। এই আশ্রয়টুকু আমি বা আমরা পেয়েছিলাম বলে, প্রবল ঝড়ের রাতে বা তীব্র দাবদাহের দিনে আমাদের পথে বা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে বা ফুটপাথে থাকতে হয় না। আমরা নিশ্চিন্তে প্রবল ঝড়ের সময় টিভি ফ্রিজের প্লাগ খুলে দরজা জানলা বন্ধ করে বাইরের তীব্র ঝড়ের শব্দকে  উপভোগ করি। এই উপভোগ থেকেই আমার ভিতরে কবিতা আসে! নিশ্চিত ও নিরাপদ আশ্রয়ে বসে ঝড় ও ব্জ্রপাতের থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে আমরা রবীন্দ্রনাথের কীর্তনাঙ্গের গান শুনি অধিক রাত অবধি!

নিশ্চিত ঘুমের মধ্যে, মনে হয় হাজার হাজার আশ্রয়হীন মানুষ আমার ঘরে হেঁটে বেরাচ্ছে, তারা মজা করছে আমাকে নিয়ে, আমাকে নিয়ে বিদ্রুপের গান গাইছে, আমি আধো ঘুমের ভিতর টের পাচ্ছি, আমিও আসলে একজন নিরাশ্রিত মানুষ।

আশ্রয় মানে তো শুধু বাড়ি নয়, ঘর নয় — আশ্রয় মানে একজনের স্নেহ হতে পারে, বিশেষ একজনের ভালোবাসা হতে পারে। আশ্রয় মানে একজন মাঝির ভালোবাসায় এক জীবন থেকে আরেক জীবনে বয়ে যাওয়া হতে পারে।

এই যে শেষ খেয়া, আমি এপার থেকে ওই পারে যাবো। আজ এতো রাতে এই শেষ খেয়াই আমার শেষ আশ্রয়। এই শেষ খেয়া আমি আজ না পেলে, এই রাতে আমার আশ্রয় হবে ওই খোলা আকাশ। এই খোলা আকাশের আশ্রয়ে আমায় থাকতে হবে আজ সারারাত। এই আকাশের নিচে থাকাটাই আসল আশ্রয়। এই আশ্রয় কাউকে ঠকিয়ে নিইনি আমি। এই ‘আশ্রয়’ আজ রাতের জন্য আমাকে উপহার দিল প্রকৃতি। তবু নদীর ওই পারে আমার নশ্বর-আশ্রয় আমাকে টানছে। তাই দৌড়ে আমি শেষে খেয়ার পাটাতনে উঠে খোলা আকাশের দিকে তাকালাম। ওইপারে আমার চিরকালের নীল আশ্রয় আছে।

একটি সামান্য বিষহীন সাপ এক মেঘলা দুপুরে এঁকেবেঁকে যাচ্ছে এই ধানা জমি থেকে আরেক ধানা জমির দিকে। সাপটির নিজস্ব আশ্রয় বা নিজস্ব জমি বলতে– ওই যাওয়াটুকুর মধ্যে যে লম্বা জমি– ওইটুকুই তার জীবন পথের জমি বা আশ্রয়। চলমান আশ্রয় তার।

আমি ভাবি এই যে পা ফেলে ফেলে চলেছি স্থান থেকে স্থানান্তরে – পায়ের নিচে যেটুকু জমি পরছে ওইটুকুই হয়তো আমার এ-জীবনের সামান্য আশ্রয়। আশ্রয় স্থানান্তরিত হচ্ছে। এ রাজ্য থেকে ওই রাজ্য, এই সম্পর্ক থেকে ওই সম্পর্কে। সম্পর্কও এক বড় আশ্রয়।

একটি মাছ জলের যেটুকু স্থানে ঘুরে বেড়ায় সেটুকুই তার আশ্রয়। সেইটুকু জল-ই মাছটির মা বাবা ভাই বোন সন্তান ইত্যাদি। নদীতে যে মাছ থাকে তার আশ্রয়টা ঈষৎ বড়। সামুদ্রিক মাছের আশ্রয়টা হয়তো আরো বড়। বেশি বড় জায়গা নিয়ে যার আশ্রয়, তার আসলে কোনো নিজস্ব আশ্রয়ই নেই। তার পুরো জগতটাই এক বিরাট আশ্রয়। তাই সামুদ্রিক মাছ বা প্রাণীদের আশ্রয় অনেক বড় ও ব্যাপক। তাদের মধ্যে কোনো সংকীর্ণতা নেই। ব্যাপক আশ্রয়। বা আশ্রয়হীন তাই এক আন্তরিক আশ্রয়।

মাঝরাতে এক দুই তিন করে অনেক পাখি ডেকে ওঠে, আমার ঘুম ভেঙে যায়, ভাবি এতো পাখির ডাক যেখান থেকে আসছে তা কি একটি গাছের আশ্রয় থেকে আসছে? নাকি ভিন্ন ভিন্ন গাছের আশ্রয় থেকে পাখিদের ডাক আসছে? আসলে পাখিদের ওই রাতটুকুর জন্যই আশ্রয়ের প্রয়োজন। বাকি সময় হাওয়ার ডালে ডালে সে ঘোরে। বাকি সময় পাখি আনন্দের ডালে ডালে থাকে, আনন্দের ডালপালাই পাখির নশ্বর আশ্রয়।

মানুষের আশ্রয়ের মধ্যে আড়াল থাকে, শুধুমাত্র যৌনতার জন্য। কিম্বা বলা যায় স্বার্থপরতার জন্যেও মানুষ তার আশ্রয়ের মধ্যে আড়াল তৈরি করে। মানুষ ছাড়া আর কোনো প্রাণীর আশ্রয়ের মধ্যে আড়াল নেই…

ক্রমশ

আরও পড়ুন...