ধা রা বা হি ক । পর্ব ৮
১
একা একটা ঘরে শুয়ে আছি। একা থাকতেই ভালো লাগে আজকাল। পাহাড় থেকে দীর্ঘ বাতাস আমার জন্য মায়ের স্নেহ ভালোবাসা বয়ে নিয়ে আসছে।
কারোর জন্য কিছু বয়ে নিয়ে যাওয়া খুব আনন্দের। আমার এক ছাত্রের বাবা, মাঝবয়সী দেখেছিলাম। সেদিন আমিও সাইকেলে বাজার করে ফিরছি, দেখি উনি কবে কীভাবে যেন বৃদ্ধ হয়ে গেছেন। বাজার আর টানতে পারছেন না, আমাকে বললেন, ‘এগুলো বাড়ি পৌঁছে দেবে?’ আমি দিলাম। বয়ে দিলাম। এর মধ্যে কোনো কৃতিত্ব নেই, কিন্তু একটা অল্প স্রোতের মতো আনন্দ আমি পাচ্ছিলাম।
আনন্দ সংগ্রহ করতে হয়। আমি আনন্দ সংগ্রহে সাইকেলে ঘুরি। ট্রেনেও। এই আনন্দ সংগ্রহে এসেছি, এখানে। এই পান্থশালায়।
আনন্দ কাছেই আছে। আমার দ্বিতীয় আমির নাম আনন্দ।
২
পুরো যৌবনকাল কেটে যাওয়ার পর, জিনেদিন জিদান রিটায়ার করার পর,
শেষমেশ আমার একটা নরম তুলতুলে পাশবালিশ জোটে,
ধীরে ক্রমে আস্তে আস্তে
লক্ষ্য করি সেটি গাছের গুঁড়িতে পরিণত হয়েছে
কবি তো! তাই এতো ঘ্যাম।
আমি দূর হতে দেখি তারে।
দূর হতে
হঠাৎ খেয়াল হয়
আমার প্যান্টের চেন খোলা!
দুটো পা, হাত, কান, চোখ (টিউবলাইটের মতো) কুড়িটি আঙুল, একটি টানটান গোপন কঞ্চি এতো জিনিসপত্র কেন দিলেন ভগবান!
অবাক লাগে!
আমি ধনী।
আমার ধ্বনি বাজে ভিতরের ঘর
৩
আমি সাইকেলে বেল খুব দরকার ছাড়া দিই না। কাউকে বিরক্ত না করে এগোতে চাই, মৃদু।
বেল না বাজিয়ে, ঠিক কাটিয়ে কাটিয়ে, কাউকে বিন্দুমাত্র ধাক্কা বা টাচ না করে বেরিয়ে যাই।
তবু থামব না, সাইকেল চালাবোই, এগোবোই। এখন অবশ্য স্পিড কমে গেছে। তবু টুকটুক করে যাচ্ছি, কোথায় যাচ্ছি জানিনা, কিন্তু যাচ্ছি।
যতদিন রাস্তা থাকবে আমি যাবো। সাইকেল চালাবো, বিনা বেলে, বিনা ক্রিংক্রিঙে, নিঃশব্দে।
ভাবি, যদি কোনোদিন রাস্তাই না থাকে, তবে?
আমি তো মুণিঋষি নই যে জলের ওপর সাইকেল চালিয়ে ওপারে চলে যাবো?
আমার বিশ্বাস রাস্তা থাকবে। গলি রাজপথ থাকবে। ভাঙাচোরা হলেও থাকবে, আর আমি বা আমরা চুপে সাইকেলে, হেঁটে, টোটোতে, অটোতে ঠিক একটু একটু করে এগোতে পারবো
৪
ডায়রি আমার দ্বারা লেখা হল না। লিখতে ইচ্ছে করে, আবার ভাবি সেখানে মিথ্যে তো লিখতে পারবো না! সত্যিটাই লিখবো। আর সে সত্যি হয়তো অন্যকে দোষারোপই হবে শুধু। নিজের দোষ অন্যায় নিজের ভুল ত্রুটি, নিজের ক্রুরতা কি লিখবো সেখানে? সেটা লিখতে পারলে ভালো হতো। কিন্তু সবক্ষেত্রে তো আমি দোষী নাও হতে পারি। বুঝতে পারি না। জীবনের যা যা শিক্ষা পেলাম তা আমার অন্তরেই থাক, আবার ডায়রিতে লেখালেখি, সে এক ঝামেলার। যা কিছু গোপন দুঃখ যন্ত্রণা আশা লোভ অবৈধ প্রেমের ইচ্ছা ডুব সাঁতার চিৎ সাঁতারের ইচ্ছা সব একদিন আগুনকে দিয়ে যাবো। আগুনকে দেওয়ার ইচ্ছা আমার ছিল না, যেহেতু দাহ হবো, সেহেতু আগুনকে। কিন্তু জলকে আগুনের চে বেশি ভালো লাগে আমার। মনে হয় আমার সব সফলতা ব্যর্থতাকে জল গিলে নিক। জল তার পিপাসা মেটাক আমাকে দিয়ে।
ক্রমশ