প্র চ্ছ দ কা হি নী
সং হি তা ব ন্দ্যো পা ধ্যা য়

একটি অভিমানী প্রাসাদের গল্প







কতক্ষণ দাঁড়িয়েছিলাম কে জানে !
ডিসেম্বরের এক অমোঘ সন্ধ্যায় , আমাদের প্রথম দেখা । অন্ধকার তখন সবে দানা বাঁধতে শুরু করেছে আমাদের চারদিকে । দূরে গাঢ় নীল পাহাড়ের সিল্যুটে জ্বলে উঠছে একটি দুটি মায়াবী স্মৃতির মতো আলো ! আমি পায়ে পায়ে, প্রায় হারিয়ে যাওয়া পথ বেয়ে , নেমে এসে দাঁড়ালাম তার সামনে ! , কি এক অব্যক্ত ইশারায় সে আমায় কাছে ডাকলো ! আধো অন্ধকারে , তার ছ্যাতলা পরা জীর্ণ দেয়ালের ভাঙাচোরা ক্রমবিবর্তনের ছায়া অহংকার থেকে অভিমানের ! আমাকে মুহূর্তে গ্রাস করলো সুদূর অতীতের প্রবল সংক্রমণ । অনায়াসে আমাদের মাঝখানের দীর্ঘ সময়ের ব্যবধান মুছে দিয়ে , সে , পরিত্যক্ত অবহেলিত শ্লাঘায় , মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আমার সামনে ! রঙীন কাঁচের জানালায় , তখন শেষ বিকেলের শীর্ণ আলোর আর্তি লেগে আছে । আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম , দোতলার ভাঙ্গা বারান্দায় ধীর দৃঢ় পদক্ষেপে এক দীর্ঘ আর্ষ অবয়ব , হেঁটে চলেছেন বাঁদিকের উত্তরমুখী ঘর টির দিকে।
“বাবামশায় আজকাল বিকেলের চায়ের পর , গৌরিপুর ভবনের লম্বা বারান্ডায় , আমার হাত ধরে বেড়ান , বলেন “ বৌমা , আমার একটু বেড়ানো দরকার , বসে থেকে থেকে আমার পা গুলো কেমন অসাড় হয়ে এসেছে !” প্রতিমা দেবীর “ নির্বাণ” পড়ছিলাম । সেই মহান সান্নিধ্যে ও স্নেহ বন্ধনে যাঁর আহৃদয় অস্তিত্ব সমৃদ্ধ হয়েছিল । শেষবেলায় তিনিই ছিলেন কবির পরম নির্ভরতার কেন্দ্রস্হল! আর গৌরিপুর ভবন!
চাকরিসূত্রে কালিম্পং এ পোস্টিং , হঠাৎ , দীর্ঘ নগরজীবনের কোলাহল থেকে আমার শিকড় বাকড় ধরে হেঁচকা টান দিল । আমার ড্রাইভার সঞ্জয় রাজ গুরুং শিক্ষিত ও বুদ্ধিমান । বাঙালীর আত্ম অভিমানের টলটলে দীঘিটার নাম যে রবীন্দ্রনাথ তা সে জানে । প্রসঙ্গত মংপু , সুরেল বাংলো আর চিত্রভানুর স্মৃতিকথায় মশগুল আমাকে থামিয়ে দিয়ে সে বলে উঠলো ,” there is one house of Tagore in kalimpong too madam ! Have seen Gouripur bunglow ? “ সেই প্রথম , তার নাম শুনি । একটু খটকা ছিল মনে । সিটং , রেলিখোলা , মংপং ইত্যাদি ধন্বাত্মক নামের মাঝখানে শব্দটা কেমন বেসুরো বাজছিল । এখানে এমন নাম ! অতঃপর কাজ ফেরত এক সন্ধ্যেবেলা সেই অবিস্মরনীয় অভিযান । ফেরার পথে প্রায় আচ্ছন্ন আমি তখনো ভাবছিলাম “গৌরিপুর “ নাম আর অনস্তিত্বের প্রান্তে দাঁড়ানো সেই প্রাসাদের গায়ে ফলকটির নীরব ঘোষণার কথা ! “ এই ভবনে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাস করিতেন , এবং পঁচিশে’ বৈশাখ 1343 সনে ,জন্মদিন কবিতা , আকাশবাণীর মাধ্যমে আবৃত্তি করিয়াছিলেন ।“ ভগ্নহৃদয় প্রাসাদের তুলনায় তরুণতর ফলকটির সময়কাল বা প্রতিষ্ঠাতার কথা আজও জানিনা , তবে যখন বাড়িটির রক্ষণাবেক্ষণ আশু প্রয়োজন বিষয়ে সঞ্জয় গুরুং এর সঙ্গে সম্পূর্ণ সহমত হয়ে অপরাধী মনে ঘরে ফিরলাম , তখনো গৌরিপুর আমাকে ভাবাচ্ছে । জানা গেল , গৌরিপুর , তৎকালীন অবিভক্ত বাংলায় ময়মনসিংহ জেলার একটি তালুকের নাম । উক্ত তালুক বা এস্টেটের জমিদার ছিলেন ব্রজেন্দ্রকিশোর চৌধুরি । রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর 1926 সালে ময়মনসিংহের মহারাজা শশীকান্ত আচার্য চৌধুরির আতিথ্য গ্রহণ করেন । এই সময় রায়চৌধুরি পরিবারের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় ।প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য , জমিদার ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরি ছিলেন শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের বিশেষ পৃষ্ঠপোষক এঁর পুত্র বীরেন্দ্রকিশোর চৌধুরি, ছিলেন প্রবাদপ্রতিম সেতার বাদক । রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা।
এই সাংষ্কৃতিক পরিমন্ডলের কারণেই হয়তো , রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে এই জমিদার পরিবারের বিশেষ হৃদ্যতা গড়ে ওঠে। কালিম্পং এর গৌরিপুর হাউস নামক এই বাড়িটি ছিল তাঁদের গ্রীষ্মকালীন শৈলাবাস । বীরেন্দ্র কিশোরের উল্লেখ পাওয়া যায় , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মৈত্রেয়ী দেবীকে লেখা একটি চিঠিতে । উনিশশো আটত্রিশ সালের চৌঠা এপ্রিল , রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন ,
কল্যাণীয়াসু ,
বীরেন্দ্রকিশোরের কাছ থেকে তাদের কালিম্পংএর বাড়ি চাবা মাত্র , তারা উৎসাহপূর্বক দিয়েছে , এমনকি , একজন মাতব্বর লোককে দিয়েছে সরিয়ে । মৈত্রেয়ী দেবী এই সময় তাঁর স্বামী ডঃ মনমোহন সেনের চাকরি সূত্রে থাকতেন মংপুতে । এই জায়গাটিও অধুনা কালিম্পং জেলার অন্তর্গত। পাহাড়ে অতিবাহিত সময় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জীবনে সামগ্রিকভাবে নেহাত কম ছিলনা । বিভিন্ন প্রেক্ষিতে তিনি শুধু ভারতবর্ষেই থেকেছেন শিলং , আলমোড়া , তিনধারিয়া , দার্জিলিং , কালিম্পং প্রভৃতি জায়গায় । অথচ , প্রতিমা দেবী“নির্বাণ” এ লিখেছেন , “বাবামশায় পাহাড় পছন্দ করতেননা । বলতেন , পাহাড় আবধ্য সীমার মধ্যে মনকে সংকীর্ণ করে রাখে , তাই পাহাড়ে বেশীদিন ভালো লাগেনা । “ একই চিন্তার অনুরণন দেখি মৈত্রেয়ী দেবীকে লেখা চিঠিতে , “ মাথা উঁচু পাহাড়ের নজরবন্দী আমার বেশীদিন সয় না ,তা ছাড়া সারাদিন শীতবস্ত্রের আবেষ্টনকে আমি দৌরাত্ম্য বলেই মনে করি । জীবন সায়ান্নে কবি পাহাড়েই আশ্রয় খুঁজেছেন। সেই সময় কালিম্পং এর গৌরিপুর হাউস ছিল তাঁর বাসস্হান।
কালিম্পং এ এই নিভৃতচারি, প্রকৃতি উন্মুখ, কবি মন, প্রথম আশ্রয় খুঁজতে আসে 1938 সনের পঁচিশে এপ্রিল। শান্তিনিকেতন থেকে যাত্রার আগে, সে সময়ে কন্যা মীরাকে লিখেছেন “ মীরু আমরা দু চার দিনের মধ্যে কালিম্পং যাচ্ছি । শুনেছি জায়গাটি ভালো। বাড়িটি খুবই ভালো। “শিলিগুড়ি থেকে পঞ্চাশ মাইল পথ , কবির বয়স তখন আটাত্তর বছর।
প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, এই যাত্রার আগের বছর কবি ভয়ংকর এরিসিপেলাস নামক এক জীবানু সংক্রমণে আক্রান্ত হন। তাঁর শরীর তখনো দুর্বল। এসে পৌঁছলেন কালিম্পং। সেই সময় বৈকন্ঠপুর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ছিল তিস্তা ভ্যালি এক্সটেনশান রেলওয়ে, যার স্টেশানের নাম কালিম্পং রোড বা গেলেখোলা। এই গেলেখোলা থেকে পর্যটকদের গরুর গাড়ি বা পদব্রজে কালিম্পং যেতে হতো। শিলিগুড়ি থেকে কালিম্পংএর সড়ক যোগাযোগ তখনো ছিল। কবি অবশ্য প্রথমবার শিলিগুড়ি থেকে মোটরে এসেছিলেন ।
২৬ শে এপ্রিল ১৯৩৮ সাল । বেলা সাড়ে এগারোটা নাগাদ তিনি শহরে পৌঁছান । সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত সচিব অনিলকুমার চন্দ , এটর্নি হীরেন দত্ত । রবীন্দ্রনাথ আসার খবরে কালিম্পং এর স্হানীয় মানুষ তাঁকে অভ্যর্থনা করতে কালিম্পং থানার সামনে পাইন আর ওক গাছের পাতা ও ফুলে সজ্জিত একটি তোরণ নির্মাণ করেন। কবির গাড়ি এখানে পৌঁছলে, তাঁকে স্হানীয় মানুষ মালা দেন । তিনি নির্ধারিত সময়ের কিছু আগে পৌঁছে যান । ফলে অপেক্ষারত জনসাধারণ অনেকেই ফিরে যান ।
অবশেষে গৌরিপুর হাউস । পাথরের ধাপ কেটে চৌষট্টিটি সিঁড়ি , ফুলের বাগান , বড় বড় গাছ পরিবৃত প্রাসাদোপম বাড়িটির রঙীন কাঁচের লম্বা জানালা , অনেকগুলি ঘর , ঝুল বারান্দা , ঘর থেকে পাহাড়, কাঞ্চনজঙ্ঘা আর আকাশ দেখে যায় ! সে তখন অপেক্ষমাণ সেই বিশাল ব্যক্তিত্বের সান্নিধ্যে পুণ্যভূমি হয়ে ওঠার জন্য ! রবীন্দ্রনাথের মন কেড়েছিল নিশ্চই ।তাইতো বারবার এসেছেন এই নিভৃত ছায়ায় নিজস্ব সময় অতিবাহিত করতে । কালিম্পং এসে কবি ভেবেছিলেন আসন্ন পঁচিশে বৈশাখ তিনি নিরিবিলিতে কাটাবেন , কিন্তু তা হয়নি প্রথম দিনের বিফল মনোরথ জনতাকে নিরাশ না করার উদ্দেশ্যে গৌরিপুর ভবনে আসার অনুমতি দেওয়া হয় । ফলতঃ প্রায় তিনশ লোক সমাগম ঘটে তাঁকে দেখার জন্য । সে সময়কার বাঙালী পর্যটকরাও সেই সমাবেশে সামিল হন । কালিম্পং এ থাকাকালীন কবিও শহরের কিছু অনুষ্ঠানে যোগ দেন । এখানে সাধারণ মানুষ তাঁর সঙ্গে দেখা করতে আসতো । তিনি তাঁদের হোমিওপ্যাথি ওষুধ দিতেন । তাঁরা তাঁকে ডাক্তার বলেও জানত। পয়লা মে, গৌরিপুর চত্তরে, প্রাকৃতিক মুক্তাঙ্গনে এক সুন্দর সভা আয়োজিত হয় । বিভিন্ন ভাষা ও বর্গের মানুষ তাতে সামিল ছিলেন । কবিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় ।
এর কয়েকদিন পর , কবির সঙ্গে কালিম্পং নিবাসী লব্ধ প্রতিষ্ঠ ডঃ গোপাল দাশগুপ্ত সপরিবারে দেখা করতে আসেন গৌরিপুরে । কবি বসেছিলেন লম্বা বারান্দার মতো কাঁচ ঢাকা সুন্দর ঘরে ইজি চেয়ারে । বাইরে অপেক্ষমাণ কয়েকজন ব্যক্তির জন্য কবি কবিতা পাঠ করেন , সুধাকান্ত চৌধুরি যার হিন্দী তর্জমা করে মূলতঃ অবাঙালী সেই অভ্যাগতদের বুঝিয়ে দেন ।
কবি কালিম্পংএ আসার অল্পদিনের মধ্যেই তাঁর সঙ্গে ঘোড়ায় চড়ে দেখা করতে আসেন , ডঃ জন গ্রাহাম । কালিম্পং এর প্রবাদপ্রতীম পুরুষটির জন্ম হয়েছিল সুদূর স্কটল্যান্ডে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের বছরেই । একদা ক্রিশ্চান ধর্ম প্রচারক ডঃ গ্রাহাম ততদিনে শিক্ষাবিদ , বিখ্যাত গ্রাহামস হোমস স্কুলের প্রণেতা ও প্রাণপুরুষ । গৌরিপুরের বাড়িতে , কবি ও ডঃ গ্রাহাম , দুই ব্যক্তিত্বের নিভৃত আদান প্রদান ঘটে । স্কটিশ জন ছিলেন ভারতে বৃটিশ উপনিবেশ নীতির বিরোধী । রবীন্দ্রনাথকেও তিনি গাড়ি পাঠিয়ে নিয়ে যান তাঁর স্কুলে ।
পঁচিশে বৈশাখের উপলক্ষ্যে মৈত্রেয়ী সপরিবারে কালিম্পংএ এলেন । এলেন , পরিব্রাজক ও সাহিত্যিক প্রবোধ কুমার সান্যাল । আর এলেন শশাঙ্ক চৌধুরি । শ্রী অমল হোম কোলকাতা থেকে তাঁদের হাতে পাঠিয়েছিলেন এক ঝাড় রজনীগন্ধা আর একটি কলম , কবির জন্য” নৈবেদ্য” স্বরূপ ! যে দুর্যোগের উল্লেখ আছে প্রবোধ সান্যালের লেখায় , তার ফলেই রাস্তায় কয়েকদিন আগে পোঁতা টেলিফোনের খুঁটি উপড়ে গিয়েছিল । সেই খুঁটি পুনস্হাপন করে , সেই বিশেষ দিনে কার্শিয়াং দূরভাষ কেন্দ্রের উদ্বোধনের পরিকল্পনা করে , অল ইন্ডিয়া রেডিও । ট্রাঙ্ক টেলিফোন যোগে জুড়ে দেওয়া হবে কোলকাতা ও কালিম্পংকে । এই উপলক্ষ্যে অল ইন্ডিয়া রেডিও কোলকাতা শাখার অধ্যক্ষ , সম্ভবতঃ সি সি ওয়ালিক , এবং বেতার বিশেষজ্ঞ নৃপেন্দ্র মজুমদার , তৎকালীন অল ইন্ডিয়া রেডিওর ভারতীয় অনুষ্ঠানগুলির প্রযোজক , উপস্হিত ছিলেন গৌরিপুরের বাড়িতে । প্রবোধ সান্যাল লিখেছেন , “ মহা কবি মাঝে মাঝে একবার ভীষণ শব্দে গলা ঝাড়া দেন , একথা সকলেরই মনে আছে । কিন্তু আজ কাব্য পাঠকালে , সেই আওয়াজটির দাপটে সূক্ষ্ম যন্ত্রটা বিদীর্ণ হয়ে যাবে কিনা , এই আশঙ্কা ছিল রথীন্দ্রনাথ প্রমুখের মনে । কবি তার অল্পদিন আগে “জন্মদিন “ কবিতাটি লিখেছেন । সেই কবিতাই পাঠ করবেন বেতারে , এই পরিকল্পনা । মৈত্রেয়ী দেবীর ভাষায়, “এইসময় ডাক এল । সে এক প্রকান্ড বোঝা , সবাই পাঠিয়েছে, জন্মদিন সংখ্যার পত্রিকা , জন্মদিনের প্রণামের চিঠি , কবিতা , কাগজ ইত্যাদি। “তুমি একটা কবিতা লিখলে না যে ? কিছুদিন থেকে লক্ষ্য করছি তোমার ভক্তি অসম্ভব দ্রুত কমে যাচ্ছে। ওইতো, কাগজ কলম রয়েছে, চট্ করে “হে রবীন্দ্র কবীন্দ্র বলে একটা লিখে ফেলনা। আমার নামটা ভারি সুবিধের , কবিদের খুব সুবিধে হয়ে গেছে । মিলের জন্য হাহাকার করে বেড়াতে হয়না। রবীন্দ্রের পর কবীন্দ্র লাগিয়ে দিলেই হলো। “ কবির বক্তব্য মৈত্রেয়ী দেবীর উদ্দেশ্যে ! সেদিন অজস্র ফুল এসেছিল। কালিম্পংএর অধিবাসীরা মালা পরিয়ে গেল। চিত্রিতা আর নন্দিনী, (প্রতিমা দেবীর পালিতা কন্যা , কবির স্নেহের বুড়ি বা পুপে) তাঁর শোবার খাট ফুল দিয়ে সাজিয়েছিল – “দাদামশায় , দেখবে এস তোমার ঘর কি করেছি। এই দ্যাখ কান্ড ! এসব দেখলে যে মন খারাপ হয়ে যায় , সঙ্গিনীহীন ফুলশয্যা !” আটাত্তর বছরের রবীন্দ্রনাথ সবাইকে মাতিয়ে রেখেছিলেন হাস্য পরিহাসে !
অতঃপর এলো , সেই ঐতিহাসিক ক্ষণ । সূর্যাস্তের পর রাত প্রায় সাতটা বা আটটা নাগাদ , বেল বাজলো ।কবি আসনে বসলেন । সকলে বেরিয়ে গিয়ে ঘরটির সমস্ত দরজা জানালা বন্ধ করে দেওয়া হল , অবাঞ্ছিত শব্দ দূর করতে । রেডিও সেট বাইরে রাখা । স্হানীয়দের মধ্যে জন গ্রাহামও ছিলেন সেদিন । বাড়ির বাইরে চারিদিকে টেলিফোনের তার । “আজ মম জন্মদিন –“ তাঁর কন্ঠ ধ্বনিত হলো । “ সদ্যই প্রাণের প্রান্তপথে ডুব দিয়ে উঠেছে সে , বিলুপ্তির অন্ধকার হতে / মরণের ছারপত্র নিয়ে” পনেরো মিনিট । পাঠ ছড়িয়ে পড়লো স্বকন্ঠে কোলকাতা , দিল্লী , মুম্বাই , লখনৌ , পেশোয়ার , লাহোর !
প্রবোধকুমারের লেখনীতে সেই মুহূর্ত অবিনশ্বর “ আমাদের পায়ের নিচে কালিম্পং থর্ থর্ করতে লাগলো কিনা , সেকথা তখন আর কারো মনে রইলোনা । জ্যোৎস্না ছিল সেদিন বাইরে । একটা মায়াচ্ছন্ন স্বপ্নলোকের মধ্যে আমরা যেন হারিয়ে যাচ্ছিলুম । ভুলে গিয়েছিলুম পরস্পরের অস্তিত্ব।” প্রথম লাইভ ব্রডকাস্ট।
জন্মদিনের কয়েকদিন পর , ২১শে মে রবীন্দ্রনাথ মংপু চলে যান, আবার কুড়ি দিন পরে কালিম্পং-এ ফেরেন । দুই পর্যায়ে এ যাত্রা বাহান্ন দিন কালিম্পং এ ছিলেন । ৯ই জুন ১৯৩৮ কালিম্পং এ প্রত্যাবর্তন এই সময় “যক্ষ” কবিতাটি লেখা, গৌরিপুর হাউসে।
অবশেষে ফেরার পালা । এই সময় গৌরিপুর থেকে ব্রজেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরির পুত্র বীরেন্দ্রকিশোরকে একটি চিঠি লেখেন তিনি। চিঠিতে লিখেছিলেন –“এখানে শরীর অনেকটাই ভালো , মনও আছে আরামে , তার প্রধান কারণ এখানকার নির্জনতা । তোমাদের বাড়িটিরও গুণ আছে । দ্বিধা হচ্ছিল , দীর্ঘকাল থাকলে পাছে তোমাদের কিছুমাত্র অসুবিধা ঘটাই । তোমার চিঠিখানি পেয়ে আস্বস্ত হয়েছি ।আমাকে কিছু কারণে একবার যেতে হচ্ছে শান্তিনিকেতনে । বউমা এখানে রইলেন । আবার ফিরবো । তোমার সাদর আমন্ত্রন অনুসারে এইখানেই শরতকাল যাপন করবো । সকলেই বলছে , সেই সময়টা মনোরম এবং স্বাস্হ্যের পক্ষে বিশেষ অনুকুল । তোমরা আমার আশীর্বাদ গ্রহণ করো । ”
এক অপরাহ্ন বেলায় আবার দাঁড়ালাম তার মুখোমুখি । শ্বেত ফলকটি পড়তে পড়তে ভাবছিলাম দিনটির কথা । কোন ঘরে ঘটেছিল সেই বিপ্লব ? নিচের তলার কোন ঘর তেমন অবশিষ্ট নেই । ফাটল ধরা , ভূমিকম্পে ধ্বংস প্রায় বারান্দার থামে বটের শিকড় । মাঝখানের সিঁড়ি দিয়ে এখনো ওঠা যায় । সে বাধা দেয়না ।শুধু দীর্ঘশ্বাস শোনা যায় অনুভবের অতলে । ওপরে বাঁদিকের ঘরগুলিতে এলো মেলো মলিন সংসার একটি নেপালী পরিবারের । প্রাচীন মাটির উনুনে রান্না বসানো । শিশুদের দৌড়াত্ম । সংসারের কর্ত্রী , বেরিয়ে এসে আমাকে অবাক করে দিয়ে ভাঙ্গা বাংলায় আলাপ জমালেন । নাম সঞ্জিতা শর্মা । বললেন , রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের উপস্হিতি ধন্য এই তীর্থের ইতিহাস , তাঁর মতো করে । গৌরিপুরের জমিদার বংশের নামও তাঁর জানা । সিঁড়ির কোণায় থামের ওপর একটি মলিন খাতা আর কলম দিয়ে নাম ঠিকানাও লিখতে বললেন ।এ তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগ । বহু মানুষের সই আছে সেখানে । না । জবরদখল নয় । তাঁরা এখানে চার পুরুষের অধিবাসী । তাঁর মাতামহ ছিলেন এই বাড়ির চৌকিদার । তাঁর মা কৃষ্ণা তখন বালিকা ।রবীন্দ্রনাথ এসে তাঁকে কাছে ডাকতেন । বলতেন “বেটি মিঠাই লে জা “ কি একটা সবুজ লজেন্স দিতেন ! দীর্ঘদেহী শ্বেত শশ্রু গুম্ফ কেশ সমন্বিত জোব্বা পরিহিত কবিকে সে ভয় পেত । মাঝে মাঝে সামনের বাগানেও বসে লিখতেন তিনি । পরবর্তীকালে সঞ্জিতার বাবা পদমলাল চৌকিদার হন । দাদু বিষ্ণু শর্মার নাম রতন বিশ্বাসের লেখায় আছে । মা বাবা গত হলেও সঞ্জিতা স্বামী পুত্র নিয়ে এই পরিত্যক্ত প্রাসাদেই থাকেন এখনো । তালা খুলে ডান দিকের ঘর গুলিতে নিয়ে গেলেন । আসবাব কিছু নেই । জানালায় ভাঙ্গা রঙীন কাঁচ , আনমনা ঝুল বারান্দা , ফায়ার প্লেস এখনো বাঙ্ময় । বর্ণনা ও কল্পনা মিলে মিশে একাকার হয়ে গেল । তার মতে , এই ঘরে কবি থাকতেন ও বসে লিখতেন । সামনের বারান্দা অভিমুখী খোলা জানালা দিয়ে তখন কাঞ্চনজঙ্ঘা আর নাথু লা পাস পর্যন্ত দেখা যেত । বর্তমানে সামনে নবনির্মিত পলিটেকনিকের ছাদ । নিচতলা তালা এঁটে ঠোঁটে আঙুল চুপ । ঘরগুলি নাকি বিপজ্জনক ভগ্নপ্রায় । পিছনে খেলা করছিল ছোট ছেলেমেয়েরা ।ওরাও টেগোরকে জানে । তবে পড়েনি । পিছনে আউট হাউসের অবশেষে জলের কলে , কেউ কাপড় কাচছিল । সঞ্জিতা বললেন সামনের বকুল গাছ দুটি কবির লাগানো ।বারবার অনুরোধ করলেন , সরকারী আধিকারিক হিসেবে , বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ব্যবস্হা করার ।
১৯৪০সালে, কবি আবার কালিম্পংএ এসেছিলেন। ছিলেন 7ই মে থেকে ২৯ শে জুন। এবার কবির সঙ্গী ছিল , তাঁর অন্যতম ঘনিষ্ঠ সুহৃদ ও সহকর্মী চার্লস ফ্রেয়র এন্ড্রুজের মৃত্যুশোক। ঐ বছর ৫ ই এপ্রিল তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। কালিম্পং যাত্রার আগে শেষবার দেখতে যান সন্তানাধিক ভ্রাতুষ্পুত্র মৃত্যুপথযাত্রী সুরেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে । পরবর্তীকালে সুরেন্দ্রনাথের মৃত্যু হয় 5 ই মে । রথীন্দ্রনাথ ও প্রতিমা দেবী তখন কালিম্পং-এ। কবি গৌরিপুর হাউসে আসার পাঁচদিনের মাথায় এল কালী মোহন ঘোষের মৃত্যু সংবাদ । ইনি ছিলেন শ্রীনিকেতন ইনস্টিটিউট অফ রুরাল রিকন্স্ট্রাকশান এ এলামহার্স্ট সাহেবের ডান হাত । তাঁর পরবর্তীকালে স্বনামধন্য দুই পুত্র শান্তিদেব ঘোষ ও সাগরময় ঘোষ । শুধু মৃত্যু নয় , কালিম্পং এ এই বাড়িতে বসে , কবি তৎকালীন বিশ্ব রাজনীতির বেদনাদায়ক পরিস্হিতির খবর পেতেন । জার্মানি তখন অনেকটা দখল করেছে ফ্রান্স ।গৌরিপুর হাউসে মৈত্রেয়ী দেবীরাও এসেছেন । সবাই রেডিওতে যুদ্ধের খবর শুনছেন। মাদামোজেল বসনেক নামে এক ফরাসী মহিলা তাঁদের সঙ্গে থাকতেন । একদিন হঠাৎ তিনি “গুরুদেব “বলে বিশ্রামরত গুরুদেবের ঘরে ঢুকে তাঁর বিছানার কাছে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে জানালেন প্যারিসে ওরা তাঁর “ডাকঘর “ অভিনয় করছে তখন ! উনি উঠে বসে অনেকক্ষণ পর বলেছিলেন, “সেবারও রাশিয়াতে ওদের দুঃখের দিনে ওরা বার বার অভিনয় করেছে king of the dark chamber !” ১৪ই জুন নাৎসীদের হাতে প্যারিসের পতন হয় । ঠিক তার অব্যবহিত পূর্বে , আত্মসমর্পনের আগের রাতে , শেষ রেডিও ব্রডকাস্ট হলো the post office এর ফরাসী অনুবাদের নাট্যাভিনয় । অনুবাদক আন্দ্রে জিদ পরে ৪৭ এ সাহিত্যে নোবেল পান । এই সময় কবির অস্হির ব্যথিত অনুভূতির সাক্ষী ছিল গৌরিপুর ভবন। এখানে বসে ১৫ই জুন নাগাদ মৈত্রেয়ী দেবীকে লেখা চিঠিতে জানা যায় এইসময় তিনি “ছেলেবেলা “ লিখছিলেন।
প্যারিসের পতনের পরদিন গৌরিপুর বাড়ি থেকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুজভেল্টকে টেলিগ্রাফ করেন তিনি । আমেরিকা তখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সামিল হয়নি । কিন্তু রসদ ও সেনা যোগান দিচ্ছে মিত্র শক্তিকে । কবি লিখেছিলেন “all our individual problems of politics today have merged into one supreme world politics , which I believe is seeking the help.of united states of America as the last refuge of the spiritual.man , and these few liines of mine merely convey my hope even if unnecessary that she will not fail her mission to stand against the universal disaster that appears imminent .” ভাবনা যাই থাক , আমেরিকা সম্পর্কে তাঁর তৎকালীন ধারণা ভ্রান্ত হলেও , তখনো পার্ল হারবার আক্রমণ ও আমেরিকার যুদ্ধ ঘোষণা ঘটেনি । তিনি যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য , হত্যালীলার ও মানবতার অবমাননার অবসান চেয়ে এই আবেদন করেছিলেন মরিয়া হয়ে । বলা বাহুল্য রাজনৈতিক দুনিয়া সে আবেদনে কর্ণপাত করেনি । গৌরিপুর ভবন সেই সব মুহূর্তের স্মৃতি বহন করে চলেছে ।
এ বছর অগাস্টে প্রতিমা দেবী অসুস্হ হয়ে গৌরিপুরে বসবাস করতে এলে, রবীন্দ্রনাথ তার তিন সপ্তাহ পর আবার কালিম্পং আসেন। রথীন্দ্রনাথ তখন পাতিসরে জমিদারীর কাজে ব্যস্ত ।
এ যাত্রা সম্পর্কে তাঁর নিজের অমঙ্গল আশঙ্কা প্রশান্ত মহলানবীশকে লেখা চিঠিতে পাওয়া যায় । কবির চিকিৎসক, ডঃ নীলরতন সরকার ও বিধানচন্দ্র রায় উভয়েই তাঁকে কোলকাতা ছাড়তে বারণ করেন । আশি বছরের রবীন্দ্রনাথ শোনেননি । ১৯ শে সেপ্টেম্বর শেষবার দার্জিলিং মেলে যাত্রা করেন তিনি । “নির্বাণে “ প্রতিমা দেবী লিখেছেন ২০ তারিখে প্রকান্ড মোটর থেকে নামার সময় কবিকে বেশ অসুস্হ লাগছিল । গাড়ি এসে গৌরিপুর ভবনের দরজায় দাঁড়াতে সুধাকান্তবাবু তাঁকে হাত ধরে নামান । প্রথম কদিন ভালো ছিলেন । কিন্তু গৌরিপুর ভবনের বৈশিষ্ট হলো , পাহাড়ি অঞ্চলের বাড়ির মতো নয় । তার নির্মাণে কাঠের বদলে কংক্রিট ব্যবহৃত ছিল । ফলে তাতে ঠান্ডা হতো বেশি। রবীন্দ্রনাথ জানালা খোলার জন্যও জেদ করতেন খুব । ২৬শে সেপ্টেম্বর থেকে তাঁর স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটলো । ঐ দিন দুপুরে , চেয়ার থেকে পড়ে যান তিনি । প্রতিমা ও মৈত্রেয়ী দেবী স্বভাবতই অচৈতন্য তাঁকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েন । সুধাকান্তবাবুকে তিনি আগেই তাঁর ছেলের অসুখের জন্য জোর করে কোলকাতা পাঠিয়ে দিয়েছিলেন । ২৬ তারিখে , কালিম্পংএর বাঙালী ডাক্তার গোপালচন্দ্র দাশগুপ্ত এই বাড়িতে এসে তাঁকে দেখেন ও স্কটিশ ডাক্তার ক্রেগকে নিয়ে আসেন । এই ক্রেগ ছিলেন তৎকালীন কালিম্পং চার্টারিস হাসপাতালের অধ্যক্ষ ।তিনি কুষ্ঠ রোগের চিকিৎসায় অভিজ্ঞ ছিলেন।
যাই হোক ত, উভয়েই, কবির এই অচৈতন্য অবস্হার কারণ স্বরূপ প্রস্ট্রেট গ্ল্যান্ডের বৃদ্ধি জনিত ইউরেমিয়া নামক জটিলতার কথা বলেন। ২৭ শে সেপ্টেম্বর অসুস্হতা র অবনতি হলে মৈত্রেয়ী দেবী গৌরিপুরের পাশের বাড়ির টেলিফোন থেকে কোলকাতা ও মংপুতে যোগাযোগ করেন। ডঃ দাশগুপ্ত দিশেহারা এবং ক্রেগ অস্ত্রোপোচারে আত্মবিশ্বাসী ছিলেননা ।অথচ অস্ত্রপোচারের প্রয়োজন ছিল। জানা যায়, ক্রেগ সম্পূর্ণ পেশাদারী কারণে রবীন্দ্রনাথকে দেখতেও আসতে চাননি। মৈত্রেয়ী দেবী লিখেছেন সব মানসম্মান বিসর্জন দিয়ে “সেই উদ্ধত বিমুখ বিজাতীয় পরপুরুষের পায়ের কাছে বসে অশ্রুপাত করতে লাগলাম “oh ! Beg you on my knees !” সাহেব উঠে পায়চারি করতে লাগল । “ অবশেষে ক্রেগ দার্জিলিংএর সিভিল সার্জেনকে খবর দিয়ে , আসতে বলেন । ইনি ঝড়বৃষ্টির মধ্যে রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ এসে রোগশয্যায় শায়িত কবিকে দেখে তিনি অপারেশান করতে চান এবং নচেৎ কবির প্রাণসংশয় হতে পারে জানান । কিন্তু দুই নারী এই সিদ্ধান্ত নিতে পিছিয়ে গেলেন । কোলকাতা থেকে ডাক্তারদের নিয়ে প্রশান্ত মহলানবীশ ততক্ষণে রওনা দিয়েছেন । পরদিন মীরাদেবী ডাক্তারদের নিয়ে পৌঁছলে কবি মেয়েকে দেখে আনন্দিত হন । সকলে অর্ধচেতন রোগীকে নিয়ে ধ্বস কবলিত রাস্তা দিয়ে ধীরে ধীরে রওনা দেন । একটি স্টেশান ওয়াগানের সিট খুলে তাঁকে শোয়ানো হয়েছিল । একশোজন শ্রমিক ডঃ মনমোহন সেনের নেতৃত্বে রাস্তা সারাই করে গাড়ি এগোচ্ছিলেন । ২৮ শে সেপ্টেম্বর ১৯৪০ কালিম্পংএর গৌরিপুর হাউস নীরবে বিদায় দিয়েছিল কবিকে । তার চৌষট্টিটা সিঁড়ির বর্ণনা এখন ততটাই বেমানান যতটা তার একটেরে বিষন্ন অস্তিত্ব এই সব ঘটনা বহুলতার প্রেক্ষিতে । খোঁজ নিতে গিয়ে, পি ডবলিউ ডির সিভিল কনস্ট্রাকশানের রিজিওনাল হেড জানালেন, হেরিটেজ কমিশন এই বাড়ি অধিগ্রহণ করার পর তার সংরক্ষণের ডি পি আর এখন কমিশনের প্রধানের এপ্রুভালের অপেক্ষায় আছে। হয়তো আবার সেজে উঠবে সেই অভিমানী প্রাসাদ । সেদিন কি গল্প বলবে সে সব দিনের আধো অন্ধকারে ? হৃদয়ের অন্তস্হলে তির তির করে কাঁপবে তার চোখের পাতা মুখোমুখি দাঁড়ালে ? ততদিন অপেক্ষায় থাকবে কি সে? গৌরিপুরের নিচে কবির ইচ্ছায় তাঁর মৃত্যুর পর তৈরি “চিত্রভানু” ছিল প্রতিমা দেবীর বাসস্হান। বর্তমানে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নারী শিক্ষা কেন্দ্র। রথীন্দ্রনাথ ও প্রতিমাদেবীর আঁকা ছবিতে ভরা। গৌরিপুর কি এমনি করেই বেঁচে উঠবে কখনো?
কৃতজ্ঞতা স্বীকার
মংপুতে রবীন্দ্রনাথ, স্বর্গের কাছাকাছি– মৈত্রেয়ী দেবী
নির্বাণ– প্রতিমা দেবী
পাহাড়ে রবীন্দ্রনাথ– রতন বিশ্বাস
রবির মংপবী– সোহম দাস
আরও পড়ুন...
প্রতাপ দাস
বাথরুমের মতো ছাপাখানার নজির খুবই কম দেখা যায়। স্কুলের বাথরুমের দেয়ালে বীজগণিতের ফর্মুলা... READ MOREপ্রচ্ছদ কাহিনী | ডিসেম্বর সংখ্যা
ফেরার পথে প্রায় আচ্ছন্ন আমি তখনো ভাবছিলাম “গৌরিপুর “ নাম আর অনস্তিত্বের প্রান্তে দাঁড়ানো... READ MOREঅরিজিৎ পাঠক
থাকা এক আশ্চর্য তন্ময় কখনো ধুলোপাড় নদীর মত প্রে ম হী ন বিষণ্ণ মুখের কোনও অলৌকিক.... READ MOREজব্বার আল নাঈম
আমাদের গ্রামে উত্তরপাড়া, দক্ষিণপাড়া, পূর্ব ও পশ্চিমপাড়া আছে। তেমনিভাবে পৃথিবীর আছে ফিলিস্তিনিপাড়া... READ MOREরাজ অধিকারী
ব্যাস শেষ হয়ে গেছে আলো এবার ক্লান্ত হও বিরাম লেখ বুকে জঞ্জাল খুলে রাখো হাতবাক্সে ড্রয়ারে তুলে রাখো ভেক ও... READ MOREআবার রাণার কথা । পর্ব ১
আমার এই বাল্যের স্মৃতি আমি একবার খাটের এইপাশে রাখি, একবার ওইপাশে। একবার বইয়ের তাকে, একবার... READ MOREজোহান উলফগ্যাং ফন গোয়েথের কবিতা
অনুবাদ করেছেন অনিন্দ্যসুন্দর পাল READ MOREবিদিশা সরকার
ভিজে যাচ্ছিল আকাশের গা...যে আততায়ীরা তিরগুলো বিঁধে দিয়েছিল রাত্রি বাড়লে তারা পতিতাপল্লীর... READ MOREফিরোজ শাহ
হেমন্তের মাঠ একটা পিতলের বাসন শালিকের ঠোঁটের মত পাকা ধান টোকা দিয়ে উড়ে যাচ্ছে ঘণ্টা বাজে... READ MOREঅমিত দে
আত্মহত্যাপ্রবণ লোকটি বুকের মাটি ফুঁড়ে জেগেছে প্রতিবার তার চোখ আরও দীর্ঘ, মুখের রেখাগুলিতে স্পষ্ট... READ MORE