Categories
2023_mar anubad

থিক নাত হানের কবিতা

অ নু বা দ

ভাষান্তর: শী র্ষা

sirsha

থিক নাত হানের কবিতা

থিক নাত হানের জন্ম ১৯২৬ সালের ১১ই অক্টোবর। সমগ্র বিশ্বে এই বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর পরিচয় একজন জেন সন্ন্যাসী হিসেবেই। বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধ মতবাদের প্রচারকার্যে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বৌদ্ধধর্মের শিক্ষকতাও করেছেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় (১৯৬৩-১৯৬৬) তাঁর শান্তিবার্তার প্রচার সর্বজনবিদিত। কিন্তু এসবের বাইরেও তাঁর আরেকটি পরিচয় আছে – তিনি একজন কবি। তাঁর কবিতায় শান্তি, প্রেম এবং অহিংসা একমাত্র সত্য হয়ে ফুটে ওঠে। তাঁর লেখা ‘কল মি বাই মাই ট্রু নেমস’ (Call Me by My True Names) বইটির পাতায় পাতায় তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন অহিংসার গন্ধ। দীর্ঘ রোগভোগের পর গত ২২ জানুয়ারী, ২০২২ তিনি এই পৃথিবী ছেড়ে পাড়ি দিয়েছেন তথাগতের দেশে। রেখে গিয়েছেন তাঁর চিরন্তন অস্তিত্ব। তাঁর বিপুল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে।

আমরা আবার ফিরে আসব

এক থেকে তিন হবে।

এক থেকে চার হবে।

এক থেকে এক হাজার হবে।

আমরা আবার ফিরে আসব।

আবার আমরা ফিরে আসব।

 

এখানে বৃষ্টির ছুটোছুটি,

আর মনের সুবিশাল সমুদ্র।

আমি চমৎকারভাবে এই সুউচ্চ ঢেউয়ের

ওপর দিয়ে এগোচ্ছি –

পাহাড় ও পর্বতমালা, পাহাড় এবং পর্বতমালা,

সমুদ্র ও নদী, সমুদ্র এবং নদী –

আলবাট্রসের ডানা খেলা করছে

প্রভাতী সূর্যোদয়ের সঙ্গে

 

তুষার এবং আলো কি একই জিনিস?

শিশুর ঠোঁটে গানটি এভাবেই চলতে থাকুক!

 

তুমিই আমার বাগান

আমার বাগানে একটি গাছ মৃত্যুমুখী।

তুমি দেখছ সেটা,

পাশাপাশি তুমি অন্যান্য গাছগুলিকেও দেখতে পাচ্ছ

যারা এখনও প্রাণোচ্ছ্বল এবং আনন্দময়।

 

এবং আমি কৃতজ্ঞ।

 

আমি জানি আমার বাগানে একটি গাছ মৃত্যুমুখী,

কিন্তু এটিকেই

আমি আমার সম্পূর্ণ বাগান হিসেবে

দেখি না

 

আর আমাকে একথা মনে করানোর জন্য

আমার তোমাকে প্রয়োজন।

 

আমাকে বলা হয়েছিল

পূর্বপুরুষের রেখে যাওয়া এই বাগানের যত্ন নিতে।

একটি বাগান জুড়ে সর্বদাই অনেক সুন্দর  

এবং কিছু অপুষ্ট গাছও থাকে

যে কারণেই আমাদের

বাগানের যত্ন নেওয়া উচিত।

 

তুমিই আমার বাগান,

আর আমি জানি আমার একজন

মালী হয়ে ওঠাটুকু অভ্যাস করা উচিত

 

আমি একটি পুরোনো ও যত্নহীন বাগান দেখেছি

যেখানে চেরি আর পিচ গাছগুলো

আজও বিস্ময়করভাবে ফুলে ভরে ওঠে

সঠিক সময়মতো 

আরও পড়ুন...

Categories
2023_jan anubad

থিক নাত হানের কবিতা

অ নু বা দ

ভাষান্তর: শী র্ষা

sirsha

থিক নাত হানের কবিতা

ভিয়েতনামের কবি থিক নাত হানকে পড়তে শুরু করি ২০১৫ থেকে। জীবনের এক অনিবার্য খাণ্ডবদাহনকে নিভিয়ে দেয় তাঁর শব্দ। ঠিক করেছিলাম কখনো ভাষান্তরের চেষ্টা করব। সেই ভাবনা থেকেই হানের কবিতাগুলির ভাষান্তর শুরু করি ২০২১-এর শেষের দিকে। আর বিশেষত এই কবিতাগুলি অনুবাদ করেছিলাম ২০২২-এর মার্চে। হয়তো কোনো বিশেষ কারণবশত এগুলোকে প্রকাশ করা যায়নি। যাই হোক, তখন যে ভূমিকাটা দিয়েছিলাম সেটাই এখনও রাখলাম। আমি বুদ্ধকে দেখিনি ঠিকই। কিন্তু হানের শব্দের হাত ধরে যে চিরসমাহিত বুদ্ধের ছায়া পর্যন্ত পৌঁছনো যায় তা অনুভব করেছি। তাই আমার সমস্ত অনুভবকে জড়ো করা এক ভগ্নস্তুপের যাবতীয় প্রণতি এই মহাপুরুষের পায়েই রাখা থাকুক।

“যুদ্ধ চলছে ইউক্রেনে। যেমনটা চলেছিল ১৯৬০ সালে। ভিয়েতনামে। শুধু স্থানবিশেষে ফারাক। আর বছরবিশেষের। এছাড়া তো আর কোনো ফারাক নেই। তখনও যুদ্ধ শূন্যতা এনে দিয়েছে। আজও তাই করে চলেছে। এটাই যে যুদ্ধের কাজ। একমাত্র কাজ। সেসময় এক মহামানবের আপ্রাণ প্রচেষ্টায় যুদ্ধনিনাদ স্তব্ধ হয়েছিল। আজ তেমন কেউ আছেন কিনা আমি জানি না। হয়তো আমরা কেউই এখনও তাঁকে জানতে পারিনি। সাধারণ আপামর মানুষগুলির যন্ত্রণাবিদ্ধ এই কঠিন সময়ে তাই স্মরণ করা যাক সেই মহামানবকেই। তিনি থিক নাত হান। জন্ম ১৯২৬ সালের ১১ই অক্টোবর। সমগ্র বিশ্বে এই বৌদ্ধ সন্ন্যাসীর পরিচয় একজন জেন সন্ন্যাসী হিসেবেই। বিশ্বব্যাপী বৌদ্ধ মতবাদের প্রচারকার্যে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে বৌদ্ধধর্মের শিক্ষকতাও করেছেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধের সময় (১৯৬৩-১৯৬৬) তাঁরই শান্তিবার্তার প্রচার সর্বজনবিদিত। কিন্তু এসবের বাইরেও তাঁর আরেকটি পরিচয় আছে – তিনি একজন কবি। তাঁর কবিতায় শান্তি, প্রেম এবং অহিংসা একমাত্র সত্য হয়ে ফুটে ওঠে। তাঁর লেখা ‘কল মি বাই মাই ট্রু নেমস’ (Call Me by My True Names) বইটির পাতায় পাতায় তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন অহিংসার গন্ধ। দীর্ঘ রোগভোগের পর কয়েকদিন আগেই (২২ জানুয়ারী, ২০২২) এই পৃথিবী ছেড়ে তিনি পাড়ি দিয়েছেন তথাগতের দেশে। রেখে গিয়েছেন তাঁর চিরন্তন অস্তিত্ব। তাঁর বিপুল কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তাঁর কিছু কবিতার (১৯৬৪ সালে লেখা) ভাষান্তর আজ এই দুঃসহ সময়ের চিতায় অর্পণ করলাম।”

সংকল্প 

তোমরা আমাদের সঙ্গে লড়াই করো,

আমরা ঘৃণার সঙ্গে লড়ি বলে,

কারণ তোমরা হিংসা ও ঘৃণার আশ্রয় নাও 

নিজেদের শক্তি প্রদর্শনের জন্য। 

 

তোমরা আমাদের অভিশাপ দাও,

কারণ আমরা কোনো মানুষকে চিহ্নিত করে 

তার দিকে বন্দুক তাক করি না।

 

তোমরা আমাদের ধিক্কার জানাও

কারণ আমাদের রক্ত ব্যবহার করে

তোমরা নিজেদের লালসার ঋণ পরিশোধ করতে পারো না;

কারণ তোমরা আমাদের সরাতে পারো না 

মানুষের পাশ থেকে,

যেহেতু আমরা সকল জীবনকে রক্ষা করে থাকি। 

 

এবং তোমরা আমাদের হত্যা করো

কারণ আমরা মাথা নত করি 

শুধুমাত্র মানুষের ভালোবাসা ও যুক্তির কাছে;

কারণ

আমরা কখনোই মানুষকে 

নেকড়ের সঙ্গে 

গুলিয়ে ফেলি না।

 

মাতৃভূমি

আমার মাতৃভূমি ঠিক এখানেই

কলাবাগান, বাঁশবন, নদী আর জইক্ষেত নিয়ে।

পায়ের নীচের মাটি ধুলোয় ঢাকা। 

কিন্তু যখনই আমি মুখ তুলে চাই, 

সর্বদাই দেখতে পাই সুন্দর তারাগুলিকে।

 

মুদ্রা 

কবির কথা শুনো না। 

তার সকালের কফিতে, এক ফোঁটা চোখের জল

মিশে আছে। 

 

আমার কথা শুনো না। 

কিছুতেই না। 

আমার সকালের কফিতে, এক ফোঁটা রক্ত

মিশে আছে। 

আমাকে বোকো না, ভাই,

কারণ আমি তরল গিলতে পারি না। 

আমার ফুসফুসে বাতাস জমাট বেঁধে গেছে।

 

সে বলেছিল, “আমাকে তোমার চোখ দিয়ে 

কাঁদতে দাও

কারণ আমার আর চোখ নেই। 

আমাকে তোমার পায়ে হাঁটতে দাও,

কারণ আমার আর পা নেই।”

আমার হাতদুটো দিয়ে 

আমি তোমার দুঃস্বপ্নকে স্পর্শ করছি। 

সে বলেছিল, “আমি রক্ষা পেয়েছি।

আমার আর কোনো নির্বাণের প্রয়োজন নেই।”

নির্বাণ শুধু আমাদের জন্য।

 

আমার হাতটি টেবিলের ওপরে,

বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নীরব হয়ে আছে। 

বিশাল সমুদ্র এযাবৎ তার ফোঁপানি থামায়নি। 

পাঁচটি পর্বত সর্বদা আকাশ এবং পৃথিবীর 

প্রকৃত অবস্থানকে ধরে রেখেছে।  

 

আকাশগঙ্গার বহু ঊর্ধ্বে,

ব্রহ্মাণ্ডের গোপন রহস্যগুলি নিজেদের উন্মোচিত করে। 

তবুও আমার ডান হাতটা টেবিলের ওপরে–

মনুষ্যত্বের জাগরণের অপেক্ষায়। 

 

না, আমার হাতটা কখনোই এই টেবিলের ওপরে 

উল্টে যাবে না 

সমুদ্রসৈকতে পড়ে থাকা 

আধখোলা ঝিনুকের মতো,

বুলেটের আঘাতে নেতিয়ে পড়া 

একটি মৃতদেহের মতো। 

পর্বত ও নদীর উচ্ছেদ হয়।

মহাজাগতিক কণাগুলি ভারসাম্য হারায়, 

এবং মহাসমুদ্রের চিরন্তন ফিসফিসানি স্তব্ধ হয়।

 

আমার হাতটি এখনও টেবিলের ওপরে,

এবং পাঁচটি পর্বত 

এখনও বিদ্যমান। 

গোপন রহস্যগুলি উন্মোচিত হয়নি। 

মহাজাগতিক কণাগুলি একে অপরের সঙ্গে 

ক্রমাগত কথা বলে চলেছে। 

আমার হাতটি এখনও টেবিলের ওপরেই, 

আকাশ ও পৃথিবীর সাম্যাবস্থার পরিবর্তনের 

মুহূর্তটির অপেক্ষায়– 

আমার হাত,

এই ছোট হাতটি,

যেন একখানি পর্বত।

 

শান্তির সকাল

চাঁদের দিকে যাওয়ার পথে, 

আমি পিছু ফিরে তাকাই এবং

অবাক হই। 

মহাশূন্যের সুগভীর সমুদ্রে আমি একটি

বুদ্বুদ দেখি। 

এটিই আমাদের পৃথিবী, আমাদের সবুজ গ্রহ,

তার অতুলনীয় সৌন্দর্য একাধারে ঝলমলে, গর্বে ভরা

যদিও ক্ষণিকের। 

তার মধ্যে, আমি নিজেকে আবিষ্কার করি।

 

একমনে পৃথিবীর ওপরে হেঁটে চলেছি আমি,

একটি ঘাসেঢাকা পথে,

আমার পা-দুটি যেন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ 

প্রভাতমুহূর্তটিকে আলিঙ্গন করতে এবং

সেই মুহূর্তে শান্তির ছোঁয়া পেতে। 

 

বসন্ত ঝরে পড়ে, ঢেকে দেয় রাস্তাকে,

যেন গালিচা বিছিয়ে দেয় চলার পথে 

ধ্যানের জন্য। 

একটি লাজুক কাঠবেড়ালি, ওক গাছটির পিছন থেকে,

আমার দিকে চেয়ে থাকে, বিস্ময়ে,

তারপর দ্রুতবেগে গাছের চূড়ায় উঠে হারিয়ে যায়

একগুচ্ছ পাতার আড়ালে। 

 

আমি দেখি একটি স্বচ্ছতোয়া নদীর 

বয়ে চলা – পাথরের ফাটলের মধ্যে দিয়ে,

জলের খলখল হাস্যধ্বনি,

আর গাছেদের কলরব,

আমরা সবাই একটি শান্তির সকাল 

উদযাপন করি।

 

ঠিক তখনই,

আমি দেখতে পাই চরম দুর্দশাকেও 

যখন মানুষ মানুষকে বন্দি করে,

অন্যকে কষ্ট দেয় –

বিভাজন, ঘৃণা এবং লোভের ঢেউগুলি,

দুর্যোগের অপ্রতিরোধ্য কারণগুলি,

আছড়ে পড়ে পৃথিবীর বুকে। 

একই মুরগির শাবকেরা 

একে অপরের সঙ্গে লড়াই করার জন্য 

পৃথক রং নেয়। 

মর্মভেদী কান্না ঘোষণা করে 

যুদ্ধের সন্ত্রাসকে।

 

ভাই এবং বোনেরা,

এই সুন্দর পৃথিবীটা আমাদেরই। 

আমি একে আলিঙ্গন করি,

আলতোভাবে আঁকড়ে ধরি আমার বুকে। 

একই ছন্দে একত্রে শ্বাস নিয়ে

আমরা আমাদের শান্তভাবকে, শান্তিকে খুঁজে পাই। 

এসো আমরা নিজেদেরকে গ্রহণ করি

যাতে আমরা একে অপরকে 

গ্রহণ করতে পারি। 

এসো আমরা নিজস্ব দর্শনের বিনিময় করি,

যাতে অসীম ভালোবাসার জন্ম হয়।

আরও পড়ুন...

Categories
2022_april anubad

সুমিত নাগ

অ নু বা দ  ক বি তা

সু মি ত   না গ

নেওমি শিহাব নাই

নেওমি শিহাব নাই (১৯৫২–) আধুনিক কালে আমেরিকার প্রধান কবিদের অন্যতম। প্যালেস্টাইন থেকে উদ্বাস্তু হিসেবে আগত পিতা এবং জার্মান-সুইস মায়ের সন্তান হওয়ায় শিহাব নাই শৈশব থেকেই বৈচিত্রময় সাংস্কৃতিক পরিবেশে বড় হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর মননে এবং কবিতায় সেই ছাপ সুস্পষ্ট ভাবে পাওয়া যায়। এই কবিতাটি মধ্যপ্রাচ্যের উদ্বাস্তু সমস্যার প্রেক্ষিতে লেখা। তাঁর বাবার উদ্বাস্তু পরিচয়ের ছায়া, তাঁর জীবনে কতটা প্রভাবশালী তা এখানে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ভূমধ্যসাগরীয় নীল

তুমি যদি এক উদ্বাস্তুর সন্তান হও,যখন তারা ছোট্ট ভেলাতে

সাগর পেরোয়, তুমি সহজে ঘুমোবে না। তুমি জানো,

তারা সাঁতার জানে না।

আমার বাবাও সাঁতার জানতেন না। অথচ সাঁতরে তিনি

দুঃখ-সাগর পেরিয়েছিলেন, আর জাহাজে চড়ে ওপারে পৌঁছেই,

মাটিতে নেমে পুরনো পোশাক ছুঁড়ে ফেলেন,

চেষ্টা করেন সুখী হতে, নতুন জীবন বানাতে।

কিন্তু, তাঁর মধ্যে কিছু একটা ছিল যা তাঁকে ভিটের দিকে টানত,

আঁকড়ে রাখত ভাসমান কোনও গল্প, কোনও খাবারের পদ, বা কোনও মুখের সঙ্গে।

এই মুহূর্তে ওরা পৃথিবীর সবথেকে সাহসী লোক,

ওদের নিচু নজরে দেখার স্পর্ধা দেখিও না। তোমার মতোই,প্রত্যেক মনে

এক মহাবিশ্ব পাক খায় তার অনুপুঙ্খ বিবরণ নিয়ে,

থাকে একঅখ্যাত ভিটের প্রতি ভালোবাসা। এখন জামাটা ছেঁড়া,

বিস্তীর্ণ সাগর অস্বস্তি দেয়, তাছাড়া একটা চিঠি আসার মতো

ঠিকানাটুকুরও অভাব আজ বহুদিন৷

 

আমরা যদি সত্যিই হাত বাড়িয়ে দিতে পারি, বাড়ানো যাক।

জেনি জোসেফ

জেনি জোসেপের (১৯৩২–২০১৮) জন্ম ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে। এই কবিতাটি, তাঁর আঠাশ বছর বয়সে লিখিত, যা তাঁকে প্রবল খ্যাতি দেয়। সহজ এবং সুস্পষ্ট উচ্চারণে লেখা কবিতাটি ১৯৯৬ সালে, বিবিসির সমীক্ষায় যুক্তরাজ্যের জনপ্রিয়তম পোস্ট-ওয়ার কবিতা রূপে স্থান পায়। দ্বিতীয় কবিতাটি ছিল ডিলান টমাসের বিখ্যাততম কবিতা ’do not go gentle into that good night’।

সাবধানবাণী

যখন বুড়ি হব, পরব ময়ূরপঙ্খী পোশাকের সঙ্গে

মানানসই নয় এমন একটা লাল রঙের টুপি,

যা আমাকেও মানায় না।

আমার পেনশনটুকু উড়িয়ে দেব ব্র্যান্ডি ওদস্তানা কিনে

সঙ্গে সাটিনের স্যান্ডেল, আমাদের আর মাখন

কেনার মতো পয়সা বাঁচবে না।

ফুটপাথে বসে পড়ব ক্লান্ত হলে,

দোকানে ফ্রি-খাবার দিলে গপগপ করে গিলব,

অ্যালার্ম বেল টিপে পালাব

লাঠিটা ঠুকতে ঠুকতে যাব রেলিঙে—

এগুলো আমার যৌবনের সংযমের ক্ষতিপূরণ।

আর চটি পায়ে বৃষ্টি ভিজতে বেরব,

ফুল চুরি করব অন্যের বাগান থেকে,

শিখব থুতু ছোঁড়া।

 

তুমি বিচ্ছিরি শার্টগুলো পরতে পারো

পারো আরও মোটা হয়ে যেতে।

একসঙ্গে তিন পাউন্ডের সসেজ খাবে

কিংবা গোটা সপ্তাহ জুড়ে শুধু রুটি আর আচার।

পেন, পেন্সিল, বিয়ার-বোর্ড, হাবিজাবি সব

জমিয়ে রাখতে পারো বাক্সে। 

 

কিন্তু, আপাতত আমাদের পোশাকের ব্যাপারে

সচেতন থাকা চাই

ভাড়া মেটাতে হবে, রাস্তাঘাটে গালাগালি করা চলবে না

আর বাচ্চাদের সামনে ভালো আদর্শ স্থাপন করতে হবে।

বন্ধুদের ডাকতে হবে ডিনারে আর

পড়তেই হবে খবরের কাগজ।

 

তবে, আমার কি উচিত নয় এখনই অল্পস্বল্প করে

এসবের অভ্যেস শুরু করা?

যাতে হঠাৎই আমি বুড়ি হয়ে

ময়ূরপঙ্খী পরতে শুরু করলে

যারা আমাকে চেনে তারা ঘাবড়ে-টাবড়ে না যায়?

আরও পড়ুন...

Categories
2020_pujo anubad

কুবলয় বসু

অ নু বা দ

কু ব ল য়   ব সু

আফ্রিকার কবিতা

বেলা সনি দীপোকো
(Mbella Sonne Dipoko)

ক্যামেরুনের কবি, ঔপন্যাসিক ও চিত্রকর বেলা সনি দীপোকো ১৯৩৬ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬০ সালে তিনি প্যারিস চলে যান। সেখানে তিনি বেশ কিছু বছর নাইজেরিয়ান ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশনের ফ্রান্সের প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। পরবর্তীতে ফ্রান্সে পড়াশোনা শুরু করেও তা অসমাপ্ত রেখেই সাহিত্য চর্চায় জড়িয়ে পড়েন। তাঁর যাবতীয় লেখালেখি ইংরাজিতেই। তাঁর মৃত্যু ২০০৯ সালে। অনুবাদ করা কবিতা দু’টি যথাক্রমে ‘Transition’ (Vol. 4) এবং ‘Black and White in Love’ থেকে নেওয়া।

আমাদের জীবন

যন্ত্রণাকাতর পাখিটি মরুভূমিতে আরো কাতর হয়ে পড়ছিল

বাতাসে উড়িয়ে দেওয়া একটি গান তার

মরূদ্যান যেমন

পানিবাহকেরা বলাবলি করছিল

পাখিটি ক্রমশ নিচে নেমে আসছে উড়তে উড়তে

আহা কী হৃদয়বিদারক তার এই গান

 

তার ডানায় ভর করা আশা শেষ অবধি স্বপ্নই

(আমাদের নিয়তি যেন কালো মুখোশে ঢাকা)

 

আগামীকাল বা পরবর্তী সময়ে যে সব দেশগুলি গড়ে উঠবে

সেই সমস্ত শহরে আমরা একই প্রার্থনা করেছিলাম

গ্রামে গ্রামে আমাদের পূর্বপুরুষের মিথগুলোকে উপস্থাপন করেছি

আমাদের হতাশা আমাদের জীবন আমাদের মৃত্যু প্রেরণ করেছি

কোনো এক রক্তদাতার ভালোবাসার দাক্ষিণ্যে আমরা আত্মতৃপ্ত হয়েছি

 

আমার প্যারিসের ডায়েরি থেকে

আমার কাছে শুধুমাত্র তিরিশ সেন্ট পড়ে আছে

কেন জানি না দুনিয়ার সব কিছুতেই আমার হাসি পায় বা

পঁয়তিরিশ বছরের শিশু আমি নিজেকে নিয়েও হাসি কিন্তু আমি আশাবাদী।

জীবন তখন থেকেই কঠিন হয়ে উঠেছে যখন আমি সব নিন্দার থেকে পালিয়ে এসেছি

পৃথিবীর যে কোনো সংবাদপত্রের থেকেই কমিশন পাবার মতো বিক্রিবাটা বন্ধ করে দিয়েছি

বামপন্থী পুস্তিকাগুলির বিষয়ে বিশেষভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে

আমি কিস্তিতে কিস্তিতে মৃত্যু গুণছি

অনাহারের খাদ্যতালিকা জেনে

এবং দীর্ঘদিনের ভাড়া বাকি রেখেছি।

নিশ্চিতভাবেই এটা জীবনধারণের কোনো উপায় নয়

নির্দয় দিনগুলিকে সামলানোর জন্য প্রস্তুত সেনাবাহিনির কাছে

আরো উন্নত যাপনের জন্য স্লোগান ফেরি করি

কিন্তু সংগ্রাম চলবেই

এবং আমরা স্বপ্নেও অজস্র নতুন রণাঙ্গন উন্মুক্ত করব

 

কোফি ওয়ানর (Kofi Awoonor)

ঘানার কবি-অধ্যাপক কোফি ওয়ানর ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। ঘানা ছাড়াও তিনি তাঁর উচ্চশিক্ষা সমাপ্ত করেন লন্ডন ও আমেরিকাতে। লন্ডনে থাকাকালীন বিবিসি-র জন্য নাটক লেখার সময় তাঁর দীর্ঘ নামটিকে তিনি ছোট করে ব্যবহার করা শুরু করেন, এই নামেই তিনি খ্যাত। ঘানায় ফিরে এসে কেপ কোস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি ইংরাজি ভাষার অধ্যাপক হিসেবেও পড়িয়েছেন অনেকদিন। ঘানার রাজনৈতিক টানাপোড়েন চলার সময় তাঁকে বছরখানেক জেলে কাটাতে হয়। পরবর্তী সময়ে তিনি ঘানার রাষ্ট্রদূত হিসেবে ব্রাজিল এবং কিউবাতেও বেশ কিছুদিন নিযুক্ত ছিলেন। ২০১৩ সালে নাইরোবিতে একটি শপিং মলে সাহিত্য উৎসবে যোগদান করতে গিয়ে এক হামলায় তাঁর মৃত্যু হয়। অনুবাদ করা কবিতাগুলি তাঁর ‘The House by the Sea’ বইটি থেকে নেওয়া।

প্রথম বৃত্ত

১।

 

দুঃখ এখানে এসে শেষ হয়েছে

নতুন বছরের পার্টি শেষে পড়ে থাকা উচ্ছিষ্ট নিয়ে লড়ে যাচ্ছে দুটো কাক

আমার কুঠুরি থেকে আমি দেখতে পাচ্ছি

এক শীতল কঠিন পৃথিবীকে।

 

২।

 

এই তবে সেই স্ফোটক যা গোটা জাতির যন্ত্রণা-

বন্দিশালা, অত্যাচার, রক্ত আর ক্ষুধা।

একদিন বিস্ফোরণ হবেই;

হতেই হবে।

 

৩।

 

যখন আমি শুনলাম তোমাকে ওরা নিয়ে গেছে

আমরা অনেকেই অনুমান করতে চাইছিলাম

তুমি কোথায় থাকতে পারো

কোন দুঃস্বপ্নের মধ্যে থাকতে পারো?

সেই রাতে আমি চাপা গোঙানি শুনেছি

নিপীড়নের ঘেরাটোপে তুমি হারিয়ে গেছ

ভেবে অবাক হচ্ছিলাম

তারপর তুমি এলে, অসামান্য, রক্তাভ চোখে

 

সেই প্রথমবার আমি কেঁদেছিলাম

ক্রিস্টোফার ওকিবো
(Christopher Okigbo)

নাইজেরিয়ার কবি ক্রিস্টোফার ওকিবো জন্মগ্রহণ করেন ১৯২২ সালে। কর্মজীবনে তিনি অসংখ্য পেশার সঙ্গে যুক্ত থেকেছেন। প্রশাসনিক কাজ, শিক্ষকতা, প্রকাশনা, নাইজেরিয়া ইউনিভার্সিটিতে লাইব্রেরিয়ান ইত্যাদি বিভিন্ন ভূমিকায় নিযুক্ত ছিলেন। তিনি চিনুয়া আচেবের সঙ্গে ‘সিটাডেল প্রেস’ নামে একটি প্রকাশনা সংস্থা শুরু করেছিলেন। ১৯৬৭ সালে বিয়াফ্রার যুদ্ধে যোগদান করে তিনি নিহত হন। অনুবাদ করা কবিতাগুলি ১৯৬২ সালে প্রকাশিত তাঁর কাব্যগ্রন্থ ‘Heavensgate’ থেকে নেওয়া।

জলকন্যা

উজ্জ্বল

সিংহীর বাহুর মতো ঝলমলে,

সে সাড়া দিচ্ছিল,

সাদা আলোর পোশাকে

এবং ঢেউ তাকে আগলে রাখছিল

চন্দ্রালোকের মুকুটে জড়ানো আমার মৃগেন্দ্রাণী।

 

নিমেষের মতো তার উপস্থিতি-

বাতাসের শ্বাসে আগুন ঝলকানি-

যেন আয়নার মতো চারিদিকে তাকে দেখি।

 

আরো নিচে…

ঢেউগুলি তাকে পরিশুদ্ধ করে তুলছে:

যেন সোনার ফসল

নিমজ্জিত হয়ে যাচ্ছে অনাহরিত

 

লবণের শূন্যতা-মাখা জলকন্যা,

গোপন শ্রবণে বেড়ে ওঠে।

 

সেতু

তোমাকে এবং জোয়ার ছাপিয়ে আমি দাঁড়িয়ে আছি

দ্বিপ্রাহরিক জোয়ারেরও ঊর্ধে

জলস্রোতের হাস্যরোল শুনছি

কেন যে জানি না:

 

সেই উদ্দামতাকে শুনছি…

 

আমি দুপুরের জোয়ার ছাপিয়ে দাঁড়িয়ে আছি

মাথা উঁচু করে,

আমার পায়ের নিচে তরঙ্গ বয়ে যাচ্ছে:

জোয়ার এসে ধাক্কা দিচ্ছে তারও তলদেশে।

আরও পড়ুন...

Categories
2020_pujo anubad

রূপক বর্ধন রায়

অ নু বা দ

রূ প ক   ব র্ধ ন   রা য়

Marie-Claire Bancquart

Marie-Claire Bancquart (জন্ম- ২১শে জুলাই,১৯৩২, মৃত্যু- ১৯শে ফেব্রুয়ারি,২০১৯) একজন কবি, প্রাবন্ধিক, অধ্যাপক এবং সাহিত্য সমালোচক ছিলেন। ফরাসি ভাষা এবং সংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ পুরষ্কার Grand prix de la Critique littéraire of the Académie Française পেয়েছিলেন। মারীর কাজ প্রধানত "ভিসেরাল", যা মানুষের শারীরিক ও মননশীল অভ্যন্তরীন দিকগুলি আবিষ্কার করে। তিনি ফ্রেঞ্চ আর্ট কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। তাঁর কবিতাকে চার্লস বোদলেয়ারের সমতুল্য বলা হয়ে থাকে । তিনি French arts council La Maison de la Poésie-এর প্রেসিডেন্টও ছিলেন। এ ছাড়াও ছিলেন Université Paris-Sorbonne এর এমিরেটাস প্রফেসার। অসংখ্য কাব্য সংকলন ছাড়াও প্রকাশ করেছেন একাধিক উপন্যাস, সুররিয়ালিজম ও ফরাসি কবি আনাতোল ফ্রান্সের উপর নানা প্রবন্ধের বই।

বইয়ের একাকিত্বে আমার চলাফেরা

আমি বইয়ের নির্জনতায় হাঁটাচলা করি; জমাট বাঁধা স্মৃতির সাথেই আমার মন জমাট বেঁধে যায়,

 

জানলার পাল্লায় ছিটকে পড়ে হাওয়া

 

নভেম্বর

 

একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যাশা তৈরির জন্য কাঠে প্রয়োজনীয় ফাটল ধরাতে

একটা গোটা জীবন লেগে গেছে।

 

বাগান পেরিয়ে সময় পেরিয়ে আমাদের সামনে খসে পড়া চেস্টনাটের খোলস 

পাতার আগুন কুয়াশায় সেই বেগুনি জানলা।

 

ঠিক নভেম্বর।

 

সবই যে যার নিজের জায়গায়।

 

তবু একটা উদ্বিগ্ন পাখির মতো কেউ একজন আশেপাশে রয়েছে।


আমার জন্য, আমি এক বৃদ্ধকে ভালবাসি

আমার জন্য, আমি এক বৃদ্ধকে ভালবাসি

শাস্ত্র সম্পূর্ণ না করে

যে এক ছুতোরই রয়ে যেত।

 

একটা কাঠের টুকরো থেকে

সাদা চুলের যিশু

তার ভারী হাতে

একাধিক বাহুর ক্রুশ

খোদাই করা।

 

যে ভেড়া কখনই গসপেলের হবে না

জন্মদিনের ভোজের জন্য, মহিলারা

তাকে জলপাইয়ে ম্যারিনেট করছে।

 

তার বয়স ছেষট্টি বছর, সে হজরত নয়

কিন্তু সে তার নাতির হাত ধরেছে,

তার মৃত্যুর থেকেও দ্বিগুণ বয়সী,

ফিসফিস করে বলে,

এই বন থেকেই সে পায়রাদের জন্য বাসা বেঁধে দেবে।

 

প্রতিদিন ভোরে আমরা আবার বেরিয়ে পড়ি

প্রতিদিন ভোরে বহিষ্কৃত দেবতাদের মাঝে আমরা আবার বেরিয়ে পড়ি।

 

এ্যাঞ্জেলাস অথবা একজন নরম রুটির দেবতাকে

আমরা, সাজিয়ে গুছিয়ে নিই।

 

যে তুমি, তোমার রিফু করা জোব্বাকোট পরে আমাদের আমোদ দাও, তোমায় অভিনন্দন!

 

কাফন-আবৃত লাজারাসের যা আকাঙ্ক্ষিত তুমি তার দেখাশোনা কর;

একটা গৃহমধ্যস্থ পাম গাছ,

পরিপাটি ভাঁজ করা চাদরের অন্তঃস্থলে যেন ডিম,

রমণীদের গেয়ে চলা গান।

আরও পড়ুন...

Categories
2020_pujo anubad

অরিন্দম রায়

অ নু বা দ

অ রি ন্দ ম   রা য়

রবার্ট ক্রিলি

বিশ শতকের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ কবি রবার্ট ক্রিলির জন্ম ১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে, আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস-এ। অল্প বয়সে তিনি তাঁর বাবাকে হারান। মায়ের কাছেই মানুষ। মাত্র চার বছর বয়সে এক দুর্ঘটনায় তাঁর একটি চোখ সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে যায়। লেখালেখির শুরুর দিকে ‘Black Mountain Poets’ নামে একটি কবিগোষ্ঠীর সঙ্গে ক্রিলির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইতিহাস এবং ঐতিহ্যকে কাব্যের উৎস হিসেবে ব্যবহার করার প্রচলিত ধারা থেকে সরে এসে ক্রিলি জোর দিয়েছিলেন ব্যক্তিমানুষের জীবনযাপনকে নিজের কবিতায় তুলে আনার দিকে। যে কারণে তাঁর কবিতায় বারবার ছায়া ফেলে তাঁর নিজের জীবন। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল ___ ‘Hello: A Journal, February 29-May 3,1976’, Later, Mirrors, Memory Gardens, Windows, Echoes, Life & Death, ইত্যাদি। অ্যালেন গিন্সবার্গ রবার্ট ক্রিলিকে এজরা পাউন্ড, উইলিয়াম কার্লোস উইলিয়ামস এর সার্থক উত্তরসূরি বলেছেন। ২০০৫ সালে,৭৮ বছর বয়সে আমেরিকার টেক্সাস শহরে ক্রিলি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। নিজের লেখা প্রসঙ্গে ক্রিলি বলেছিলেন --- “ I write to realize the world as one has come to live in it, thus to give testament. I write to move in worlds, a human delight. I write when no other act is possible.” ‘হ্যালো টেস্টিং বাংলা কবিতা’র পাঠকদের জন্য রইল রবার্ট ক্রিলির কয়েকটি কবিতার বাংলা অনুবাদ।

মহাকাব্য

কিছুটা জায়গা রেখো

আমার মহাকাব্যের জন্য

 

অনুপস্থিতি একটা

গর্ত তৈরি করে

 

যে কোনও গল্পই

কোথাও না কোথাও শুরু হয়

 

আর অন্য যে কোনও গল্প

শুরু হয় অন্য কোথাও

 

এখানে

যেহেতু আমি 

কাউকেই খুন করতে পারব না,

চুপচাপ বসে থাকাই ভালো

 

স্মৃতি

 

একঝলক 

টাটকা

সমুদ্রের বাতাস

 

রাত্রিকালীন 

যখন আলো চলে যায়

আর আকাশের রঙ কালো

তাকিয়ে দেখার জন্য 

কিছুই থাকে না

 

দিন শেষ

এটুকুই।

 

চড়াই 

ছোট্ট পাখিরা উড়ে এসে 

সিঁড়ির ধাপে বসে,

 

বসে, কিচিরমিচির করে

যখন সূর্য একেবারে মাঝ আকাশে।

 

শেষবারের মতো আমরা তাদের দেখব,

শেষবারের মতো আমরা শুনব 

 

দিনের প্রথম আলোর প্রতি

আসন্ন প্রত্যেক রাত্রির প্রতি

তাদের উচ্ছল সম্ভাষণ   

 

ইয়েটসকে ভেবে

ভাঙো 

‘সরলতা’

যা সত্যি তা-ই বলো

 

ছোট হও 

পৃথিবীর বিশাল মরুপ্রান্তরে  

 

প্রেম  

তুমি কি ধুলো হবে, 

এই কবিতা পড়ে?

 

তুমি কি বিষণ্ণ হবে

আমি আর থাকব না যখন।

 

ব্লু স্কাইজ মোটেল 

তাকিয়ে দ্যাখো

ওই মাদারচোদ চিমনির দিকে 

 

সোজা  

উপরের দিকে নির্দেশ করছে

 

দ্যাখো ওই মেঘগুলো,

পুরনো ফুলো বালিশ,

 

যেমনটা তারা বলে, সাদা আর ধূসর,

ভেসে যায়।

 

রাস্তায় তাদের গাড়িগুলো 

সামনের দিকে একটা সুইমিং পুল–

 

আর গাছেদের পাতাগুলো

ক্রমে হলুদ হয়ে যাচ্ছে

 

এখন 

শীতকাল 

 

সমুদ্র

কখনই ঘুমোয় না 

ফিরিয়ে দেয় জল।

খাড়াই পাহাড় 

চিন্তামগ্ন। 

 

একটি ছেলে আর একটি কুকুর

ধার ঘেঁষে হেঁটে চলেছে।

 

‘ফিরে এসো’, প্রথম ঢেউটিকে

আমি এইমাত্র দেখলাম।

 

জলের কিনারে একজন বয়স্ক মানুষ, বাদামি

প্যান্টটিকে গুটিয়ে রেখেছেন,

সাদা পা, সাদা পায়ের লোম।

 

পাতলা হালকা মেঘেরা 

সূর্যের পাশ দিয়ে সরে সরে যাচ্ছে 

চোখেই পড়ে না।

 

বালিতে আটকে আছে জুতো,

সোয়েটার, সিগারেট।

 

যাওয়ার মতো আর কোনো 

বাড়ি নেই।

 

কিন্তু সেই রেখা 

যেখানে আকাশ এসে সমুদ্রে মেশে

যেন অন্য কোনও কিছু।

 

বিদায়, জলরাশি–

দেখা হবে অন্য কোনোদিন ।

 

ভোর

বাঁধ ভেঙে গ্যাছে

মাথা একটি

জলপ্রপাত।

 

আত্মপ্রতিকৃতি  

তিনি একজন নৃশংস বুড়ো হতে চান,

একজন আক্রমণাত্মক বুড়ো হতে চান,

তাঁর চারপাশের শূন্যতার মতো 

নিষ্প্রভ, নৃশংস 

তিনি যেমন সমঝোতা চান না

তেমনই চান না কখনও কারো সঙ্গে ভালো ব্যবহার করতে।

সমস্ত কিছুকে– চূড়ান্ত, সার্বিক-সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাখ্যান করার সময় 

তিনি কেবল ‘নিচ’ হতে চান।

 

তিনি চেষ্টা করেছিলেন মিষ্টি,

নরম গলায় বলার, ‘আহা,

এসো দু’জনে দু’জনার হাত ধরে থাকি’

আর সেটা ছিল ভয়াবহ,

বিবর্ণ, নৃশংসরকমের অবান্তর।

 

এখন তিনি তাঁর দুর্বল পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াবেন।

তাঁর হাতদু’টি, তাঁর গায়ের চামড়া রোজ কুঁচকে যায়।

এবং, তিনি ভালোবাসেন আর ঘৃণা করেন সমানভাবে।

 

বাচ্চারা  

অবিশ্বাস্য বাচ্চাদের রাস্তা পার হতে দেখি, ট্রাফিকের ভিড় ঠেলে,

সাইকেল নিয়ে–

 

একটি ছোট মেয়ে নেতৃত্ব দিচ্ছে,

তার হাত সাইকেলের হ্যান্ডেলে–

পরিতৃপ্ত হৃদয়ে 

 

খুশি হওয়া,

আনন্দ পাওয়া,

যেমনটা তারা বলে,

 

খুবই সহজ হতে পারে

 

গল্প বলো 

সহজভাবে

গল্প বলো 

যেমনটি তুমি জানো 

কীভাবে বলতে হয়।

 

এই পথের সমাপ্তি,

হাত রেখে 

হাতে।

 

গিন্সবার্গের ‘কাদিশ’এর পঙক্তি নিয়ে লেখা 

“মেয়েরা সবাই বুড়ি হয়ে গেছে…”

ভগ্ন, ফুরিয়ে যাওয়া

 

পুরুষেরা, মৃত

বাড়িগুলি নেই, নৌকোগুলো ডুবে গেছে

 

কাজ চলে গেছে, অবসরপ্রাপ্ত 

পুরনো বন্ধুর বাড়িতে।

 

খানাপিনা করো,

আনন্দে থাকো, ওহে বিরক্তিকর লোক।

 

মার্কিনী প্রেম

এক গুরুনিতম্বিনী 

সুন্দরী! 


মহামারী  

পৃথিবী যখন এক মহামারীতে পরিণত হয়

এক অন্ধকারাচ্ছন্ন, অবর্ণনীয় সংক্রমণে,

 

যখন পুরুষ, নারী, শিশুরা

কিছু বুঝতে না বুঝতেই মারা যায়,

 

চোখের নিমেষে, শরীরের ভিতরে ঠেলা মারে

একটা যন্ত্রণাদায়ক স্রোত, বিচ্ছিন্ন–

 

আমার শৈশবে দ্যাখা 

নিঃসঙ্গ, একঘরে করে রাখা কুষ্ঠরোগীদের মতো–

 

রাস্তা থেকে কিছুটা দূরে,

বন্ধ জানালা, বন্ধ জানালার পিছনে–

 

কেউ তাদের সঙ্গে কথা বলত না, কেউ না

কেউ আর তাদের ছুঁয়ে দেখত না, কেউ আর অপেক্ষা করত না

 

পরবর্তী ঘটনা ঘটার জন্য– যেমনটা

আমরা এখন ভাবি , দিন শুরু হয়

 

আবার, আমরা ম্লান সূর্যকে খুঁজি,

যেন তারা এখনও সেখানে আছে , আমরা আশা করি 

আর আমরা আসছি

 

সালেহ-র সঙ্গে সফর

(সালেহ-র জন্য)     

 

ভি ডব্লিউ মোটরের গর্জন

পেরিয়ে যাচ্ছে মানুষ, গাড়িদের–

 

কুয়ালালামপুর শহরের কেন্দ্রস্থলে  

একটা গরম দিন, আর

 

চাইনিজ খাবার সহযোগে লাঞ্চ করার সময় হওয়া

কথাবার্তাগুলো এখনও মনে রয়ে গেছে,

 

“আমেরিকানরা কি এশীয়দের ঘৃণা করে?” পৃথিবীটা

গোল নাকি চ্যাপ্টা, পৃথিবী কি একটাই, নাকি দু’টো, নাকি তারও বেশি–

 

আর তোমার মতো একজন মুসলমান

এখানে কী করছে? 

 

যাইহোক, হাওয়া দিচ্ছে,

আকাশের কিনারে সূর্য ঝলমল করছে

 

গাছগুলো নুয়ে পড়েছে

হোটেলের উঁচু পাঁচিলের তলায়।

 

আফগানিস্তানে চলে যাও আর

সুফিদের মতো হও–

একসঙ্গে, মিলেমিশে, ভাই,

সর্বোপরি  

সেই প্রাচীন শিকড়ের মতো গভীরে প্রোথিত 

প্রজ্ঞার তালে তালে নাচো 

 

কুকুরেরা

আমি ওদের প্রশিক্ষণ দিয়েছি 

আসতে,

 

আবার চলে যেতে,

বসতে, দাঁড়াতে,

 

অপেক্ষা করতে

আমার আদেশে,

 

অথবা আমি হতে চেয়েছি

সেই প্রভু 

 

যিনি

ওদের সেই কাজগুলোই করতে বলেন

যেগুলো তারা করতেই পারবে না।

 

ফ্লবেয়ারের প্রথমদিকের গদ্য 

“অবশেষে তিনি মারা গেলেন

বেঁচে থাকার ইচ্ছা চলে যাওয়ার কারণে,

নিছক ক্লান্তি আর বিষণ্ণতার কারণে…”

 

আর তারপর কাজ থেকে বাড়ি ফেরার সময়

একটা লরি ধাক্কা মারল তাকে,

অথবা আজীবনের পারিবারিক বন্ধুরা 

একটা পাথরের গায়ে যন্ত্রণার ‘অবসান’ লিখে

গড়িয়ে দিল তাঁর দিকে–

 

অথবা তিনি কলেজ গেলেন,

বিয়ে করলেন,

এবং তারপর মারা গেলেন!

 

অথবা তিনি মারাই গেলেন না,

স্রেফ বেঁচে থাকলেন,

দিনের পর দিন, একইরকমভাবে… 

 

তিনি একজন খুবই চিত্তাকর্ষক মানুষ, 

প্রখর অনুভূতিসম্পন্ন এক ব্যক্তি,

কিন্তু তাঁকে তো মরতেই হত কোনও না কোনওভাবে–

 

তাই তিনি একা একা চলে যান সমুদ্রতটে

জলের দিকে তাকিয়ে 

বসে থাকেন আর ভাবেন,

 

“কেন আমি জন্মেছিলাম?

কেন আমি বেঁচে আছি?”

–পুরনো একটা গানের মতো 

আর তারপর তিনি মারা যান।   

 

পঞ্চভূত 

আকাশ কান্নায় ভেঙে পড়ে

আর জল মুখ তুলে তাকায়।

 

বাতাস সর্বত্র অনুভব করে

হঠাৎ ধাক্কা আর অস্পষ্ট শূন্যতা।

 

আগুন জ্বলে, আবর্জনার মতো 

ফেলে রাখা মাটি, অমানবিক।   

আরও পড়ুন...

Categories
2020_pujo anubad

রাজীব চক্রবর্তী

অ নু বা দ

রা জী ব   চ ক্র ব র্তী

টমাস ট্রান্সট্রোমার

[ কবি পরিচিতি: (1931- 2015) ব্যক্তি পরিচয়ে কবি ও অনুবাদক এবং অন্য আধারে মনস্তাত্ত্বিক এই সুইডিশ কবির দৌলতে আমরা যেমন পাই বিদগ্ধ অনুবাদ, তেমনই পেয়েছি প্রখর অনুভূতিময় কবিতার ডালি। তাঁর ঝর্নাকলমে প্রকৃতি ও ঋতুরঙ্গ যেন প্রাণ পেয়ে পাঠককে ছুঁয়ে গেছে, প্রকৃতির নির্ঝরের পাশে পাশেই এসেছে এক চিত্রল গূঢ়তা ও প্রাত্যহিক জীবনবোধের গুপ্ত বিস্ময়-- তাই অনেকেই তাঁকে খ্রিস্টান কবি বলে চিনতে চেয়েছেন; কিন্তু কবির কি আদপেও কবিতা ভিন্ন কোনো ধর্ম থাকে! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকালপর্ব থেকেই তিনি এক শক্তিশালী স্ক্যান্ডিনেভীয় কবিতাকার বলে খ্যাতিলাভ করেন। তাঁর কবিতা সহজগম্য হলেও আলো-আঁধারিতে মাখা, এমনকি তাঁর অনুবাদও। সারা পৃথিবীতে প্রায় ষাটটি ভাষায় তাঁর সৃষ্টি অনুদিত হয়েছে। বহুবিধ পুরস্কারের সঙ্গে সঙ্গেই ২০১১ সালে তিনি সম্মানিত হয়েছেন নোবেল পুরস্কারে, মৃত্যুর মাত্র চারবছর আগে। ]

এলিজি

প্রথম দরজাটা খুলতেই আমার সামনে

ডানা মেলে দিলো রোদ্দুরে ঢাকা একটি ঘর।

হঠাৎ বাইরে বিকট চিৎকারে একটা গাড়ি ছুটে গেলো,

আর আমি মুহূর্তেই কেঁপে উঠলাম।

                           

দ্বিতীয় দরজা খুলে দেখি

বন্ধুরা! অক্লেশে গলায় ঢালছে সামান্য আঁধার,

এবং ক্রমশই ওদের শরীরগুলো ফুটে উঠতে লাগলো ওই অন্ধকারে।

                         

এবার পালা তৃতীয়টির। দরজার পাল্লা সরাতেই বেরিয়ে এলো হোটেলের একটি ছোট্ট ঘর ও আজানুবিস্তৃত সুঁড়িপথ।

শুধু পিচের ওপরে ওই চকচকে ল্যাম্পপোস্টটি একা একাই জেল্লা দিচ্ছে আর ওর শরীরের গাদ থেকে নেমে আসছে এক অনন্ত সুন্দর।

কালো পোস্টকার্ড

ক.

 

ক্যালেন্ডারের পাতা জুড়ে আছে এক অজানা ভবিষ্যৎ,

অসীমে ধ্বনিত তারের গুচ্ছে গুঞ্জিত লোকগান।

সীসা-নির্মিত সাগরে চলেছে কেবলই তুষারপাত,

বন্দর জুড়ে ছায়ারা শুধুই মুখোমুখি যুযুধান।

 

খ.

 

মধ্যজীবনে মৃত্যু মাপবে তোমায়,

তবুও জীবন বহুদূর ভেসে যায়।

গাঢ় কোনো এক অভিজ্ঞানের ঘোরে

পোশাকখানি নীরবেই বোনা হয়।

সীমান্তের ওপারের বন্ধুদের জন্য লেখা

যথেষ্ট সতর্ক হয়ে আমি তোমাদের কথা লিখি।

কিন্তু যা কিছু আমি বলতে পারিনা

তা গরম-বাতাস ভরা বেলুনের মতোই

আমার ভিতরে ফুলে ওঠে,

আর অবশেষে

ভেসে যায়

 

                  রাত্রির নির্মল আকাশে।

ছায়া বাক্সের গুচ্ছকবিতা

ক.

 

আমরা প্রস্তুত হয়ে আমাদের ঘর- গেরস্থালি তাকে দেখিয়েছি।

আর তাতেই আগন্তুকের মনে হলো,

এ জীবনে আমরা বেশ সুখেই আছি।

তাহলে বোধহয় জগদ্দল বস্তিটা আমাদের ভেতরেই রয়ে গেছে।

 

খ.

 

চার্চের ভিতরের দাম্ভিক খিলান আর ধনুকপারা ছাদের পলেস্তারা, ঠিক যেন ডানাভাঙা প্রতিশ্রুতির গায়ে

লেগে থাকা

একটি ছাঁচ।

 

গ.

 

চার্চের মধ্যে একটি ভিক্ষাপাত্র

ক্রমশই ওজন হারিয়ে ঊর্দ্ধগতি পেয়ে সুদৃশ্য আসনের সঙ্গে শূন্যে ঝুলে আছে,

দেখো…

 

ঘ.

 

কিন্তু, গির্জার ঘন্টাগুলি পাতালে আশ্রিত,

নর্দমার নালিতে এখন  ঝুলে আছে তারা।

আর আমরা পা বাড়ালেই, শুনছি ওদের

নাচের ঝংকার।

 

ঙ.

 

স্বপ্নচর  নিকোডিমাস তার ঠিকানার সন্ধানে এখন রাস্তা হাতড়ায়।

কে তবে ঠিকানার খোঁজ পেয়েছে এ জগতে আর? জানা নেই।

 

আমরা সবাই কিন্তু সেই নিরুদ্দেশেরই  পথযাত্রী।

আরও পড়ুন...

Categories
2020_pujo anubad

পার্থজিৎ চন্দ

অ নু বা দ

পা র্থ জি ৎ   চ ন্দ

ইলিয়া কামিন্সকি

যুদ্ধের সময়ে আমরা সুখেই বেঁচে ছিলাম

আর তারপর তারা যখন অন্যদের ঘরবাড়ির ওপর বোমা ফেলছিল, আমরা

 

প্রতিবাদ করেছিলাম, প্রতিরোধ করেছিলাম

যদিও তা যথেষ্ট ছিল না

 

আমার বিছানার চারপাশে

ঝরে পড়ছিল আমেরিকাঃ অদৃশ্য বাড়িঘর আর অদৃশ্য বাড়িঘর আর অদৃশ্য বাড়িঘর

 

একটা চেয়ার নিয়ে বারান্দায় এসে বসেছিলাম আর তাকিয়ে ছিলাম সূর্যের দিকে

 

              যুদ্ধের ষষ্ঠ মাসে

রাশি রাশি টাকা দিয়ে বানানো একটা বাড়ির মধ্যে

 

টাকার পথঘাট টাকার শহর টাকা দিয়ে তৈরি এক মহান রাষ্ট্রে

আমরা (আমাদের ক্ষমা করবেন বন্ধুগণ)

 

যুদ্ধের দিনগুলিতে আমরা সুখ আর শান্তিতেই কাটিয়ে ছিলাম

[ইলিয়া কামিন্সকি- ১৯৭৭ সালে ইউক্রেনে জন্ম, বর্তমানে সান দিয়াগো’ত বসবাস। তাঁর কাব্যগ্রন্থের মধ্যে Dancing in Odessa, Deaf Republic ইত্যাদি উল্লেখ্য]

জ্যাসন স্নাইডারম্যান

ভক্সেল

ঠোঁটে উঠে এস, নতুন শব্দ

তোমাকে স্বাগত

 

এখনও তুমি অভিধানে 

প্রবেশ করোনি। কিন্তু তাতে কোনও দোষ নেই

 

কারণ জলের মতো স্বচ্ছ তোমার সংজ্ঞা –

তুমি আসলে এমন পিক্সেল যার আয়তন আছে

 

তুমি থ্রি-ডি প্রযুক্তির 

প্রিন্টিং-এর গোড়ার বিষয়। এখন

 

আমরা তোমাকে পেয়ে গেছি।

এবার প্লেটো আমাদের

 

তাঁর রিপাবলিকে ফেরৎ পাঠাতে বাধ্য

কারণ এখন আমরা 

 

বিছানাপত্তর থেকে শুরু করে 

বন্দুক, বাসনকোসন… সব প্রিন্ট করতে পারি

 

এতদিন পর্যন্ত আমরা ভেবে এসেছি

আমাদের কল্পনা ছাড়া কোনও কিছুই

 

কল্পনা করা সম্ভব নয়। আর এখন

সেই গল্পের মুনিদের মতো

 

যারা একদিন সবকিছুতেই 

ঈশ্বরের উপস্থিতি দেখতে পেয়েছিল

 

আমরাও আজ সেসব জিনিসও দেখতে পাচ্ছি

যাদের ফটো তোলা সম্ভব হয়নি কোনও দিন

 

যারা দৃষ্টির বাইরেই থেকে গিয়েছিল,

আজ পিক্সেলের দৌলতে

 

অ্যালগরিদমের সাহায্যে 

অসংখ্য বিন্যাস তৈরি করে

 

অসীম… অসীম সংখ্যার দৃষ্টিগ্রাহ্য বিষয়

সৃষ্টি করা সম্ভব

 

আমরা নশ্বর প্রাণী।

অ্যালগরিদম আর পিক্সেলের সাহায্যে আমরা

 

দৃষ্টিগ্রাহ্য বস্তুর থেকেও বেশি

সম্ভাব্যতা তৈরি করতে পারি।

 

যদিও এই সব কিছুই আমাদের 

ইন্দ্রিয়ের মধ্যেই লুকিয়ে ছিল

 

কারণ, পিক্সেল

কৃত্রিম রড ও কোন-কোষ ছাড়া আর কিছুই নয়

 

এবং অ্যালগরিদমে প্রতিটি সম্ভাবনা

বা, সম্ভাবনার ধারণা লুকিয়ে রয়েছে

 

ভক্সেল, এক্ষেত্রে তুমি

মান্ধাতা আমলের ভিডিও-গেমের মতো প্রাচীন

 

কিন্তু মানুষই তো প্রযুক্তির উন্নতি ঘটাতে পারে

সাহিত্য প্রেম শান্তির বার্তা থেকে আমরা প্রায় কিছুই শিখিনি

 

যতটা শিখেছি প্রযুক্তির থেকে। ভক্সেল,

তোমার ভেতর অনন্ত সম্ভাবনা লুকিয়ে রয়েছে

 

হয়তো তোমার ভেতর আগুন নেই, কিন্তু আমাদের

আগুনের মডেল প্রস্তুত

 

হয়তো ভালোবাসাও নেই, কিন্তু

আমাদের ভালোবাসার মডেল প্রস্তুত

 

প্রিয় ভক্সেল, তুমি যত ছোট হবে

তত তোমার ক্ষমতা বাড়বে

 

প্রিয় ভক্সেল, ইতিমধ্যেই আমি

তোমার আদলে ভাবতে শুরু করে দিয়েছি

 

এমন একটা দিন আসবে

যখন আমি তোমাকে দিয়ে বানানো

 

ছোট্ট ডিওরমের মতো আমার থ্রি-ডি সেলফি 

প্রিন্ট করে নিতে পারব

 

মানুষের যা কিছু আছে

এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু রয়েছে

 

তোমার ভেতর সবকিছুই আছে

অনন্ত সম্ভাবনার পরিণতি আছে…

 

আমি জানি, তোমার ভেতর 

আমার নিউরনগুচ্ছ, আমার রক্তমাংসের মুখ রয়ে গেল

 

রয়ে গেল এই গ্রহ… আমার স্টেম-সেল

আমার প্রেমিক

 

আমার মহাকাশযান

আমার কফিন, আমার কবিতা

 

আমার দৃষ্টিশক্তি… আমার মৃতদেহ

[কবির জন্ম ১৯৭৬ সালে টেক্সাসের সান অ্যান্টোনিও’য়। কবির কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে উল্লেখ্য Primary Source, Striking Surface Sublimation Point। কবি ম্যানহাটন কম্যুনিটি কলেজের ইংরেজির অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর]

অ্যান্ড্রু বারটেইনা

এক অনুবাদকের নোট

স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, এই অনুবাদে বেশকিছু ভুলত্রুটি রয়ে গেল, যদিও কারণ হিসাবে ইতালিয়ান ভাষায় আমার দুর্বলতাকে দায়ী করা যেতে পারে। তারপরও আমি এই মহান লেখকের সৃষ্টির মধ্যে লুকিয়ে থাকা আত্মাকে খুঁজে বের করবার চেষ্টা করে গেছি। সবিনয়ে জানাতে চাই, কয়েকটি অনুচ্ছেদে আমার অনুবাদের মান আগের তিন অনুবাদকের মানকে ছাপিয়ে গেছে। ওই তিন-অনুবাদকের ইতালিয়ান ভাষায় কাজ চালানোর মতো জ্ঞান ছিল, এসব অনুবাদের জন্য তাদের সামান্য অর্থ দেওয়া হত। তারা ঘন্টার পর ঘন্টা আধো-অন্ধকার লাইব্রেরি-ঘরে বসে অজানা শব্দের অর্থ ও ব্যবহার খুঁজত। আমার বয়স ওই তিন অনুবাদকের থেকে সামান্য বেশি, কিছু বিষয় আমার দক্ষতা তাদের কল্পনারও বাইরে।

 

       একদিন ভেনিসের এক বইয়ের দোকানে আমি জীবনের উপান্তে দাঁড়িয়ে থাকা সেই মহান লেখককে দেখলাম। ছেঁড়া জামার মতো তাঁর মুখের চামড়া ঝুলে। চামড়ার মলাটে মোড়া মোটা মোটা বই আর এক গ্লোবের আড়ালে আমার আড়াআড়ি সে লেখক… গ্লোবে ইতালির মানচিত্রটি বড় করে আঁকা। পাকা দাড়ি আর কাঁধ-ছাপিয়ে নামা অবিন্যস্ত চুলের জন্য তাঁকে চোখে পড়তে বাধ্য। সেই স্বনামধন্য লেখক এক সুন্দরী মহিলার কথা শোনবার জন্য ঈষৎ ঝুঁকে পড়েছেন। ঝকঝক করছে তাঁর চোখ, মনের মধ্যে চলেছে উথালপাতাল। ঠিক সেই মুহূর্তে আমি আরেকবার চরম উৎসাহ পেয়ে যাই, ভাবি, বিষয় আঙ্গিক সহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে অনুবাদ মূলানুগ না-হলেও ক্ষতি নেই। হে পাঠক, আমি আপনাদের সবিনয়ে জানাতে চাইছি, ওই লেখকের লিখনবিশ্বটিকে আমিই যথাযথ চিনতে পেরেছি, ফলে আমার অনুবাদই একমাত্র ও চূড়ান্ত অনুবাদ।

[অ্যান্ড্রু বারটেইনা- ১৯৮০ সালে ক্যালিফোর্নিয়ার মারসিডে জন্ম। বর্তমানে তিনি অ্যমেরিকান ইউনিভার্সিটিতে কর্মরত]

ডি নর্ক্স

প্লুটোনিয়াম

রিচার্ড রোডস-এর কথা মনে রেখে

 

 

গেটের একপাশে দাঁড়িয়ে রয়েছে

একজন মানুষ

তার হাতের তালুতে ধরা

তারই নিজের চোখের মণি

 

আমার দিকে তাকিয়ে থাকা 

চোখের শূন্য কোটর থেকে 

গুঁড়ি মেরে বেরিয়ে আসছে আগুন-হলকা

অথবা এসবই আমার কল্পনা

 

মনে পড়ছে, আমি শুধু বলতে পেরেছিলাম, 

‘এই চোখের মণি আমি প্রতিস্থাপন করে দিতে পারি’

 

 

সিয়েরা অসকুরা থেকে কুড়ি-মাইল পূর্বে এক জায়গা থেকে

মোটা কাঁচ আর রঙিন-লেন্সের ভিতর দিয়ে

আমরা বিস্ফোরণটি দেখেছিলাম। আমরা আমাদের

সারা গায়ে মেখে নিয়েছিলাম সানক্রিম

সার্বার নামে আমাদের একজন 

বিস্ফোরণের দিকে খালি চোখে তাকিয়ে

নব্বই সেকেন্ডের জন্য দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিল

-দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়ে সে দেখেছিল 

শুধু কিছু কাঁটাঝোপ আর ন’টি পোড়া

ক্ষতবিক্ষত পাইনগাছ।

চাঁদের পেটে ধাক্কা খেয়ে ফিরে আসছিল 

এক প্রেতরঙা আলো।

 

 

নিলস বোর তাঁর শান্ত পেলব গলায় দ্রুত বলে চলেছিলেনঃ আমি আমার সত্তাকে দুই খণ্ডে বিভক্ত করি, দু’জনেই একে অপরকে বোকা বানাবার খেলায় মত্ত। তখন আরেক তৃতীয় সত্তার আগমন ঘটে, সেও দু’জনের মতো এই ধোঁকার খেলায় ডুবে যায়। ধীরে ধীরে গম্ভীর ও নাটকীয় রূপ নেয় পরিস্থিতি, জটিল অঙ্কগুলি নিজেদের মতো নিজের সঙ্গে খেলা খেলে যায়, আর এই পথ ধরে ক্রমশ কুশীলব হয়ে ওঠে মুগ্ধ দর্শক

 

 

স্তুপটিতে ছিলঃ ৭৭১০০২ পাউন্ড গ্রাফাইট। ৮০৫৯০ পাউন্ড ইউরেনিয়াম অক্সাইড, ১২৪১২ পাউন্ড ইউরেনিয়ামের ধাতব সংকর…এই স্তুপটিকে বানাতে সতেরো দিন সময়ে লেগেছিল। ৩:৪৯-এ ফার্মি নির্দেশ দিয়েছিলেন রডগুলি সরিয়ে নিতে। ৩:৫৩-এ তিনি শাট-ডাউন করে দেন বিক্রিয়া। এই বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয়েছিল মাত্র হাফ-ওয়াট বিদ্যুৎ, যা দিয়ে একটা বাল্বও জ্বালানো সম্ভব নয়… কিন্তু রক্তবীজের মতো প্রতি দু’মিনিটে দ্বিগুণ হয়ে উঠছিল নিউট্রন

 

 

একপাশে দাঁড়িয়ে ছিল প্রহরী, তার হাতে

শিউরে উঠেছিল উপড়ে ফেলা মণি

চোখ নিচু করে চৌকাঠ পেরোতে পেরোতে

আমি ফিরে গিয়েছিলাম শৈশবে, সেখানে দোলনা দুলছে

লাল একটা বল লাফিয়ে উঠছে, দড়ির উপর 

লাফিয়ে চলেছে বাচ্চারা, নামতা পড়ছে

আর চিৎকার করে উগরে দিচ্ছে

কিছু দুর্বোধ্য শব্দ

 

গানের ভেতর থেকে শৃঙ্খলের মতো বেরিয়ে আসছে

থোরিয়াম আর কিছু তেজস্ক্রিয় মৌল

 

দু’একবার তারা হাততালি দিয়ে উঠেছিল

 

তারপর রাত্রি নেমেছিল, আর আমি শুনতে পাচ্ছিলাম

আমার বাবা আমাকে ডাকছে

 

সে ডাকে কোনও শব্দ নেই, শুধু এক নিকষ কালো অন্ধকার

[নিউ ইয়র্ক সিটিতে কবি ১৯৪৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। দশটি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে তাঁর। কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে A Night in Brooklyn, The Border Kingdom, Burnt Island উল্লেখ্য। তিনি ব্রুকলিনের সারাহ লরেন্স কলেজে শিক্ষকতা করেন]

ক্যান্ডেস জি উইলি

প্রিয় কালো বার্বি-পুতুল

জানতাম তুমি পছন্দ করবে না

তবু আমি তোমাকে নষ্ট করেছিলাম ফর্সা-বার্বি

কোনও মর্ষকাম ছাড়া সে এক অন্য ধরণের কল্পনা বুনে দেওয়া।

আমার কাছে একটাও মাকাল-ফলের মতো পুতুল ছিল না

তবু আমি তোমাকে একটা পুরুষ বানিয়ে ছিলাম

আমি জানতামও না সে-পুরুষ কেমন দেখতে হয়

আমি শুধু তোমাদের গায়ে গা-ঘষবার সুযোগ দিয়েছি

সুযোগ দিয়েছি তোমাকে চুম্বন করবার

 

পঞ্চাশ বছর আগে তুমি ঠিক যেমন খালি পায়ে এসেছিল

আমি তোমাকে তেমনই রেখেছি

কিন্তু আমার জন্য অনন্ত স্বপ্ন সম্ভার ছিল

রোদে-পোড়া তামাটে চামড়া, লম্বা চুলের ঢাল,

প্রতিমার মতো নীল চোখ, ক্যাডিলাকের মতো গোলাপী ঠোঁট। শুধুমাত্র তখনই

তুমি সুন্দর পোশাক আর সুন্দর জুতো পরতে 

 

প্রিয় কালো-বার্বি, তোমার একজন ঠাকুমা থাকার প্রয়োজন ছিল

তিনি তোমাকে গল্প করে বলতে পারতেন

 

বার্বি, একটা সময় ছিল যখন তোমার অস্তিত্বই ছিল না

[সাউথ ক্যারোলিনার এক শহরে ১৯৮৫ সালে কবির জন্ম ও বেড়ে ওঠা। সমাজের নানা স্তরে খেলা করা বর্ণবিদ্বেষ তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন। কলম্বিয়ার গবেষণা সমাপ্ত করে তিনি আমেরিকায় ফিরে এসেছেন। সাউথ ক্যারোলিনায় তিনি শিক্ষকতা করেন]

আরও পড়ুন...

Categories
2020_june anubad

কাহলিল জিব্রানের কবিতা ২

অ নু বা দ

এই সংখ্যায় কাহলিল জিব্রানের ‘The Madman’ গ্রন্থের  ‘Night and the Madman’ কবিতাটি।

অ মি তা ভ মৈ ত্র

রাত্রি ও উন্মাদ

—“আমিও তোমার মতো মুক্ত আর অন্ধকার— রাত্রি তুমি জেনো।

স্বপ্নের ওপর দিয়ে

একা যে রাস্তা অগ্নিময় হয়ে ওঠে

সেখানেই হাঁটি।

পা যেখানে মাটি ছোঁয় সেখানেই মুহূর্তে জেগে ওঠে

সুবিশাল ওক গাছ।”

 

—“না উন্মাদ, আমার মতোন নও তুমি।

এখনও তোমার মুখ পিছনে তাকিয়ে খোঁজে বালিতে তোমার

ফেলে আসা পদচ্ছাপ কতো গর্বিত, কতো বড়।”

 

—“আমিও তোমার মতো স্তব্ধ ও গভীর, হে রাত্রি

আর, আমার এক দেবী শুয়ে আছে শিশুর শয্যায়।

সেই নারীর ভেতর থেকে জন্ম নিচ্ছে যে স্বর্গপ্রেরিত

নরকের স্পর্শে থাকে সেও।”

 

—“তবুও আমার মতো নও তুমি, হে উন্মাদ!

যন্ত্রণার ভয়ে তুমি কেঁপে ওঠো আজও

অতল শূন্যের গান কানে এলে হাতচাপা দাও।”

 

—“আমিও তোমার মতো বুনো আর ভয়ংকর— রাত্রি, শোনো তুমি।

কানে হাতচাপা দিয়ে শুধু ভুলে থাকি

মানুষের কান্না, হাহাকার আর চলে যাওয়া সময়ের শ্বাস।”

 

—“কীভাবে আমার মতো হবে তুমি?

তোমার মধ্যের সেই সহজ ছোট্ট ‘তুমি’ আজও

তোমার নিয়ন্ত্রক।

তোমার মধ্যেও আছে ঘুমন্ত দানব

যাকে তুমি কখনো সামনে আনো না।”

 

—“রাত্রি তুমি মনে রেখ আমিও তোমার মতো হিংস্র, ভয়ংকর।

মধ্য সমুদ্রে, রাতে, একা পুড়ে যাওয়া জাহাজেরা

আলো দেয় আমার হৃদয়ে।

মৃত নাবিকের রক্তে আমার তৃষ্ণার্ত ঠোঁট স্নান করে, ভেজে।”

 

—“তুমি নও! তুমি নও! আজও তুমি মনে মনে খোঁজো

কোনো সঙ্গী, কোনো নারী।

তোমার পৃথিবী একা নয়

সম্পূর্ণ নিজের মধ্যে নিজের নিয়মে তুমি বাঁচতে পারো না।”

 

—“আমিও তোমার মতো আত্মতৃপ্ত, সুখী— রাত্রি, বোঝো!

যাকে সঙ্গী বলো, আজ হয়তো সে প্রথম বার তুলে নিচ্ছে মদ

আর সেই নারী হয়তো ডুবে আছে রোমহর্ষে, পাপে।”

 

—“আমার সমান তবু নও তুমি, তোমার হৃদয় আজো

সাত স্তর চাদরের নিচে ঢাকা।

তোমার দুহাতে সে উন্মুক্ত হয়ে ধরা নেই”

 

—“হ্যাঁ, আমি তোমার মতো, রাত্রি!

তীব্র ভালবাসা আর প্রতীক্ষায় আমি বাঁচি।

মুছে যাওয়া চুম্বনের শবাচ্ছাদনে মৃতদের স্তূপ

শান্তিতে শুয়ে আছে আমার ভেতর।”

 

—“তুমি কি আমার মতো? সত্যিই আমার মতো?

ঝড়ের মাথায় তুমি অশ্বারোহী হয়ে

বিদ্যুতের তলোয়ার হাতে

আমার মতোই ছুটে যাও?”

 

—“তোমার মতোই আমি অফুরন্ত শক্তিমান এবং দুর্দম। রাত্রি, শোনো!

হেরে যাওয়া দেবতার হাড়ে তৈরি আমার আসন।

আমার সামনে দিয়ে চলে যায় দিনগুলো, আমার পোশাক ঠোঁট ছুঁয়ে

কিন্তু আমার মুখ আকর্ষণ করে না ওদের।”

 

—“তুমিও আমার মতো? তবে কি আমারই

অন্ধকার সহোদর তুমি? আমার বিপুল ভাষা, আমার অবাধ স্বপ্ন

তোমার মধ্যেও?”

 

—“তুমি মহাশূন্য তুমি সব আয়তন গ্রাস করো

আর, উন্মুক্ত এক আত্মা আমি।

হ্যাঁ রাত্রি, আমরা দুই ভাই!”

আরও পড়ুন...

Categories
anubad

কাহলিল জিব্রানের কবিতা

অ নু বা দ

প্রতি সংখ্যায় কবি অমিতাভ মৈত্র হাজির থাকবেন কিছু বিদেশী কবিতার বাংলা  অনুবাদ নিয়ে। এই সংখ্যায় কাহলিল জিব্রানের কবিতা।

উত্তর লেবাননের বিকারিতে ১৮৮৩সালে জিব্রানের জন্ম। বাবা ও মায়ের বিবাহবিচ্ছেদের পর বারো বছরের জিব্রান মায়ের সাথে আমেরিকায় চলে যান আর বস্টনের এক বস্তিতে থাকতে শুরু করেন। জিব্রানের অসাধারণ চিত্রাঙ্কণ দক্ষতা আর গুরুগম্ভীর বিষয়ে পড়াশোনার জন্য ঐ বয়সেই তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। ছয় বছর হাই স্কুলে পড়াশোনার জন্য লেবাননে ফিরে যান। তারপর বস্টনে ফিরে আরবি সংবাদপত্রে নিয়মিত গল্প ও কবিতা লিখতে শুরু করেন। ১৯০৪সালে বস্টনে তাঁর ছবির প্রথম প্রদর্শনী। এর ক বছর পরেই তাঁর প্রথম গ্রন্থ ‘অল মিউজিকা’ প্রকাশিত হয়।

অ মি তা ভ  মৈ ত্র

কাহলিল জিব্রানের কবিতা

গারদ হিসাবে জায়গাটা হয়ত খারাপ নয়, কিন্তু আমার আর পাশের বন্দীর মধ্যে এই দেয়াল আমার ভাল লাগেনি। তবে এটাও বলি যে, আমি কিন্তু কোনোভাবেই নিন্দে করছি না ওয়ার্ডারের। এই গারদ যে বানিয়েছে তারও নয়।

কাকতাড়ুয়াকে একদিন বলেছিলাম— “একা মাঠে সারাজীবন দাঁড়িয়ে থাকতে তোমার নিশ্চয়ই খারাপ লাগে, ক্লান্ত লাগে।” হেসে বলল সে— “অন্যকে ভয় দেখানোর আনন্দ তুমি হয়তো জানো না। আমি উপভোগ করি আমার অস্তিত্ব।” একটু ভেবে বললাম— “এই তৃপ্তি হয়তো মাঝে মাঝে পেয়েছি আমিও।” হাসল সে— “পাওনি। যারা শুধু খড়ে ঠাসা, এই তৃপ্তি কেবল তাদের।” আমাকে তাচ্ছিল্য না প্রশংসা করছে সে, স্পষ্ট হল না। সরে গেলাম।

এক বছর পর আবার যখন দেখলাম সেই কাকতাড়ুয়াকে, সে তখন দার্শনিক হয়ে গেছে। দুটো কাক তাঁর টুপির নিচে বাসা বানাচ্ছে।

মাঝে মাঝেই আমার সাথে দেখা করতে আসেন দেবদূত আর শয়তান। দেবদূত এলে পুরনো একঘেয়ে একটা প্রার্থনা সঙ্গীত গাই, যাতে তিনি বিরক্ত হয়ে চলে যান। আর যখন শয়তান আসে আমি খুব প্রচলিত আর পুরনো একটা অপরাধ করার চেষ্টা করি। বিরক্ত মুখে চলে যায় শয়তানও।

দুটো খাঁচা আছে বাগানে। একটায় থাকে নিনাভা থেকে আনা সিংহ। আর অন্যটায় গান ভুলে যাওয়া এক ময়না।

প্রতিদিন সকালে ময়না সিংহকে বলে, “সুপ্রভাত, আমার বন্দী ভাই!”

একজন প্রাচুর্যে থাকা মানুষ আর একজন সর্বস্বান্তের মধ্যে পার্থক্য শুধু একদিনের অনাহার বা কয়েক ঘন্টা তৃষ্ণার।

এমনকি জীবনের মুখোশও একই রকম গভীর রহস্যময়।

দয়া আসলে অর্ধেক বিচার।

মায়ের হৃদয়ে স্তব্ধ হয়ে থাকে যে গান, শিশুর ঠোঁটে সুর হয়ে আসে সে।

আরও পড়ুন...