Categories
2022_dec bangladesher_kobita

নূরে জান্নাত

বাং লা দে শে র  ক বি তা

নূ রে   জা ন্না ত

নৌকার চোখ

স্যাঁতস্যাঁতে নৌকার চোখ লেগে আছে

বক্ষবন্ধনিহীন খোলা ১৩ বছরী পিরামিডে!

শিউলি তার কোমলতা বাড়িয়ে চলছে

ঘৃতকুমারীর আবরন ছাড়ানো ভেষজী কায়দায়।

লাগামহীন ঠোঁট ছুটছে আলোর গতির থেকেও দ্রুত

নৌকার চোখ-পিরামিড-শিউলির কোমলতা

ঘৃতকুমারীর থলথলে আবরন ভেদ করে, নিস্তেজ উপসনায়…

 

কোন দিকে যাব

তুমি যে আমাকে সরে থাকতে বলো

আমি কোন দিকে সরে থাকবো?

সুগন্ধী বাম পাজর থেকে ডান দিকে?

ঠোঁট থেকে কপালের দিকে?

নাকি তোমার শক্ত হাত পার করে একটু দূরে থাকা

মাথা ভর্তি কোঁকড়া কালো চুল ছেড়ে

চোখ পার করে ভ্রু-র দিকে।

পুরো তুমি জুড়েই তো আমার প্রিয়

                       বকুলের বিছানা পেতে রাখো…

 

আমি কোন দিকে যাবো—

                     বলে দেবে আমায়?

আরও পড়ুন...

Categories
2022_dec bangladesher_kobita

শিশির আজম

বাং লা দে শে র  ক বি তা

শি শি র  আ জ ম

টিকিট কাউন্টার

লিখুন ময়নামতি, হ্যা আমরা ময়নামতি যাবো। আচ্ছা জায়গাটা

ঠিক কোথায়, এই গ্রহের ভিতরেই তো, মানে বিভূতিভূষণ

যেখানে থাকতেন? কোনটা পথ কোনটা প্রান্তর, এই ধোঁয়াসায় পড়ে

এতোবার গাড়ি বদলেছি, স্টপেজ চিয়ারগার্লস হেরিটেজ ছাড়িয়ে এসেছি,

জরুরী কাজে ঠাসা জীবন – ভুলে যাবার কথা তবু জানতে চাই

কোথা থেকে এসেছি আমরা, মানে সেটা ময়নামতি নয় তো?

 

যে কলমে কালি ফুরিয়েছে

ওকে ছুড়ে ফেলো না। একটু আগে ও শ্বাস নিয়েছে,

কথা বলেছে।

 

বরাবর দেখেছি বুদ্ধিজীবীদের এড়িয়ে চলতো।

ওর বলা কথাগুলো আমাদের হাসিয়েছে

রাগ বাড়িয়েছে

আমাদের জন্য অশান্তি ডেকে এনেছে।

 

তবু আজ আমরা ওকে ক্ষমা করে দেবো

ওর অক্ষমতাকে।

কেননা

আসল কথাটা ও বলেইনি

বলতে পারেনি

যেটা ও বলতে চেয়েছে।

 

দাসের বিছানা

প্রতিটা প্রাণী যারা কথা বলে

হাঁচি দেয়

কেউ চলে গেলে তার দিকে তাকিয়ে থাকে

সে

যখন ঘুমোতে যায়

কেবল যখন সে ঘুমোতে যায়

তোমারই মতো

সে নগ্ন হবে

সে নিজেকে দেখবে

সে সুযোগ পাবে নিজেকে দেখার

আরও পড়ুন...

Categories
2022-nov bangladesher_kobita

রফিকুল নাজিম

বাং লা দে শে র  ক বি তা

র ফি কু ল   না জি ম

প্রিয়তম সেই মুখের মত মানুষ একা

মানুষ স্বভাবতই একা
মায়ের গর্ভে, কবরে কিংবা চিতায়
মানুষ একা- বড্ড একা
কবি যেমন থাকে তাঁর অপ্রকাশিত কবিতায়।

 

কাম ও ঘামের প্রবল তাণ্ডবলীলা শেষে
পাশ ফিরে শুয়ে থাকা প্রিয়তম সেই মুখের মতো- মানুষ একা
তুমুল ঝড় শেষে বিধ্বস্ত ঠোঁটের মতো- মানুষ একা!
এবং আমার মতো মানুষগুলো ভীষণ একা।

 

মানুষে গিজগিজ করা শহরে চাকরিপ্রার্থী সেই তরুণের মতো
প্রেমিকের হাতে হাত গুঁজে বসে থাকা সেই প্রেমিকার মতো
আহা! মানুষগুলো ভেতরে ভেতরে কত্তো একা।
মিছিলে ঢেউ তোলা সেই স্লোগানের মতো;
সমাজতন্ত্রের জন্য মুখিয়ে থাকা সেই বিপ্লবীর মতো— মানুষ একা।
মেট্রোরেল, সিটি বাস, লক্কর ঝক্কর লেগুনা ও গণপরিবহনে
শত-শত যাত্রীকে টেনে নেয়ে সেই চালকের মতো মানুষ একা।
শহুরে রাজপথ, এভিনিউ, রমনা পার্ক, শিখা চিরন্তনী কিংবা
সড়কে দাঁড়ানো রাজু ভাস্কর্যের মতো মানুষ একা; বড্ড একা।

 

অভাবের ভেতর ফুটন্ত ফুলের মতো আমাদের সংসদ ভবন
মানিক মিঁয়া এভিনিউ, ভাসানী হকি স্টেডিয়াম, স্মৃতিসৌধের মতো
মানুষ একা; প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে— মানুষ বড্ড একা।
প্রেমের ও অপ্রেমের মতো কিংবা মায়া ও ঘৃণার মতো
মানুষ বড্ড একা, একা এবং একা।

 

বিধ্বংসী ঠোঁট ও একটি খুন

আমাকে খুন করার জন্য আগ্নেয়াস্ত্রের প্রয়োজন নেই
এমন কী প্রয়োজন নেই ধারালো ছোরা
কিংবা নীল বিষের পেয়ালা…
এমন কালো মেঘের বুক ঠেলে বের হয়ে আসা চাঁদ
রূপোলী আলোর বিচ্ছুরণ
এবং হাতের তালুতে হাত রেখে
আচমকা আমার বাম গালের ওপর
তোমার হন্তারক ঠোঁটের সশস্ত্র হামলা…
ব্যস- হয়ে গেল…
জন্মান্তরীণ গলে যাওয়া এই আমার ইতিহাস!

 

অমীমাংসিত বেদনার ভাগ

তুমি চলে যাওয়ার পর
আমি আলোর জন্য কখনো প্রার্থনায় বসিনি
নিগূঢ় অন্ধকারে বেদনাগুলো কেবলই নেড়েচেড়ে দেখেছি
এইসব বেদনায় আমার কোনো মালিকানা নেই
আমার কোনো অস্তিত্বও নেই।
একদিন এক টিকটিকি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল,
তাহলে এই গৃহপালিত দুঃখ ও হৃষ্টপুষ্ট বেদনাগুলো কার?

 

তখন আমারও টনক নড়েছিল
তাহলে আমি কার চুলে বেদনার নীল ফিতা বাঁধি
কার চুলে মিহি দাঁতের চিরুনি চালাই;
সুসৌম্য কষ্টের কর্ষিত জমিন ভেবে?
দুঃখের শীতল তেলে ভিজিয়ে দেই কার অমন ঘন কেশ?
আহা! আমার রাতগুলো কেবলই দীর্ঘতর হয়ে যায়।

 

এইসব অমীমাংসিত বেদনার মালিকানা বুঝে নিতে
আসে না আর কেউ!

আরও পড়ুন...

Categories
2022-nov bangladesher_kobita

সায়্যিদ লুমরান

বাং লা দে শে র  ক বি তা

সা য়্যি দ   লু ম রা ন

কৃষ্ণের ক্রিয়া বা পরকীয়া

রাধিকা/ সাব্রিনা,

তোমার আঁচলে গিঁট বেঁধে রেখেছিলাম গোপন প্রেম,

যখন প্রথম রজঃস্বলা রক্তাভ কুমারী তুমি।

 

এর পর শুধু

অষ্টাদশী দোল পূর্ণিমাতে জোয়ার এলে নদের জলে

নৌকা ডুবলো একটি দু’টি কয়েকটিবার!

 

আর এখন আঁচলে দেখি সেই প্রেম কামরূপে বাঁধা,

আমি এখনো কুমার তুমি বিবাহিতা রাধা।।

 

মেঘদূত

হে ষোড়শী,

বিষণ্ণ বর্ষায় পা ডুবিয়ে তুমি, মুখ দ্যাখো জলে

আসমান চুঁয়ে চুঁয়ে পড়ে এই আষাঢ়ে-শ্রাবণে,

এর ফলে যুবতী হয় নদী।

 

আমারও নাভির নিচে মেঘ জড়ো হয়ে আছে,

আষাঢ় বার কয়েক কথা দিয়েও আসলো না

শ্রাবণও যদি না আসে— তবু তুমি এলেই তুমুল

বৃষ্টি হবে

 

আমিও চুঁয়ে চুঁয়ে গলে তোমার দেহেই ডাকবো বান।

আরও পড়ুন...

Categories
2022-sep bangladesher_kobita

শোয়াইব শাহরিয়ার

বাং লা দে শে র  ক বি তা

শো য়া ই ব  শা হ রি য়া র

দরদ

তোমাকে ফেলে এসেছি

ফরয সালাতের সর্বশেষ রাকাতের মতো;

 

অথচ ভাবি, এ-ই শেষ…

 

তবুও বারবার

ডালিম ফুলের মতো

মুখ লাল করে

ফিরে ফিরে আসো;

 

তখন তাহাজ্জুদে নিমগ্ন 

ভিজে ওঠে দু’চোখ

ফোঁটায় ফোঁটায়—

 

আহা—!

ডালিম ফুলের প্রতি উথলাতে থাকে দরদ।

 

অবদমনের সৌন্দর্যপাঠ

রাত্রি ভীষণ উর্বর 

বর্ষাদিন, টলমল যৌনদ্বীপ—

 

ভিজে ওঠে নিঃসঙ্গ সাম্পান;

হাতে বইঠা—

জোরে মারে ঝটকা;

আহা—!

 

রাত্রি ভীষণ ভেজা 

বেরিয়ে আসে মরণ

সংসার থেকে সংসদে

টলমল যৌনদ্বীপে…

 

উপহার

তোমার দেওয়া উপহারটি বুকের মধ্যে লুকিয়ে ফেলেছি

এখন কেউ প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াতে পারে না সামনে

কোথাও পাড় ভাঙার শব্দ শুনতে পেলে যত্নশীল হই

মধু আহরণকারী ও মৌমাছির মধ্যে 

যুদ্ধ লাগলে 

প্রজাপতির ভাষা ব্যবহার করি;

 

এই বর্ষায় তুমুল উন্নতি হচ্ছে

এখনো মাত্র একটি পর্ব পার করেছে

আরো কতোশত পর্ব, আরো কতোশত জন্ম

পার করতে হবে ভিন্নরূপে, ভিন্নসময়ে

 

তোমার দেওয়া উপহারটি যৌবনে পা দিয়েছে

সাড়ে তিনহাত কুঠিরের মধ্যে, তাঁর ঘ্রাণ পাচ্ছি।

আরও পড়ুন...

Categories
2022_aug bangladesher_kobita

হাসিবুল আলম

গু চ্ছ  ক বি তা

হা সি বু ল  আ ল ম

hasibul

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব

ধরো,

কোথাও একটা দিয়ে তোমার শোবার ঘরে ঢুকে 

পড়েছে— অস্বস্তি। তোমার বালিশের পাশে চোখ

বড়ো বড়ো করে খেমটা নাচ নাচছে— মহাপৃথিবী।

কিংবা মিমস।

হয়তো ভাবছো— আফ্রিকার কোনো খেতে না

পেয়ে শুকিয়ে যাওয়া প্রেমিকার কথা। কিংবা

লাস ভেগাসও ভাবা যায়।

প্রলুব্ধ ডলারের ভেতর থেকে একটা চিরকালীন 

সাদা-কালো’র 

জর্জ ওয়াশিংটন হয়ে তুমি বন্দি— ছটফট করছো।

ছটফট করছো। 

তোমার কাছ থেকে প্রতিদিন একটু একটু করে

ঘুম হারিয়ে হেঁটে হেঁটে চলে যাচ্ছে অন্য কোনো

প্যারালাল ইউনিভার্সে— যেখানে যাবার বাহন

বিলুপ্ত হবার পরেই মানুষেরা আবিষ্কার করেছে

স্পেসশিপ।

তুমি ভাবছো— একবিংশ শতাব্দীতে কেউ ঘুমায় না।

কারও বন্ধুও হয় না।

তোমার জীবনের সমস্ত অর্জন অ্যান্টি-ডিপ্রেসেন্টের

কৌটোবন্দি হয়ে টাইম লাইনে ঘুরছে।

তুমি স্ক্রল করে করে তোমার গ্রামের বাড়িটা খুঁজছো।

খুঁজে চলেছো— একটা নিরালা নদী। 

অক্রূর ভাঁটফুল।

 

ধরো, তুমি বেঁচে আছো। ধরো, তুমি মরে গেছো—

তিনশ’ বছর আগে…

 

সংসারের গান

পৃথিবীর এই পাশে— এই বাঁকে— জ্যোতির্বিজ্ঞানের এক

ঘুপচিতে বসে তোমার সাথে দেখা।

কিছুদূর

এগিয়ে গেলেই নিঃসঙ্গতার দোকান হাতের

ডানে রেখে, একটা গলি ছিল— আশ্চর্যের।

মিস করে গেছি।

ধাক্কা খেতে খেতে দেখেছি শোরুম— আনন্দের।

ফুটপাতের দু’পারে

ছড়িয়ে ছিল— বিস্তীর্ণ হুল্লোড়, হৈচৈ, রকমারি বিজ্ঞাপন—

মানবিক সংকট। হাহাকার।

বিভিন্ন রঙে ঝলমল করতো— হাসি বিপণন কেন্দ্র।

বাহারি দাঁত। দাঁতের মাজন।

গরম গরম পরিবেশন করা হতো— প্রত্যাশা,

প্রত্যাখ্যান আর যুদ্ধ।

মানুষেরা হুমড়ি খেয়ে পড়তো— মূল্যহ্রাসের কৌতুকে।

দু’পয়সায় বিক্রি হতো এক লাঠি সুখ-লজেন্স। কিস্তিতে কেনা

যেতো— ঘুম।

অল্প কিছু সুদে এখানে সব কিছু ভাড়া দেওয়া হতো—

এই পৃথিবীতেই।

 

সব কিছু ফেলে পৃথিবীর এই পাশে— এই বাঁকে— আমি তোমার

কাছে এলাম। মহাজাগতিক দিনপঞ্জিতে অল্প কয়েকটা দিন

তোমার সাথে সঙ সাজবো বলে;

অথচ রাজনৈতিক বক্তব্যের মতোই

কোটি কোটি বছরের এই চক্রে— তুমিও সামান্য এক ‘সময়-নষ্ট’।

 

তুলনামূলক বিজ্ঞান 

ঘাস। সবুজ ঘাস। 

ঘাসের ওপর বসলেই মানুষেরা 

ঘাস ছেঁড়ে দু’হাতে। 

আচ্ছা,

ঘাসেদেরও কি কখনো

ইচ্ছে হয় না দু-একটা মানুষ ছিঁড়ে দেখতে? 

মানুষের ভেতরে মানুষ কতটুকু ঘাস?

কতখানি বদমাশ?  

 

শান্তি কাকা এবং ভোগবাদ বিষয়ক

শান্তি কাকা। আমাদের শান্তি কাকা।

সেই কোন ছোটবেলায় তাঁকে দেখেছিলাম—

মনে নেই ঠিকঠাক।

পিঠে একটা কালো দাগ ছিল— ডানপাশে।

কিংবা বামপাশেও হতে পারে।

কাকা বলতেন, এ হচ্ছে জন্মদাগ;

পৃথিবীতে নাকি আসতে চাননি তিনি।

জোর করে পাঠানো হয়েছিল তাঁকে।

শাস্তিস্বরূপ সেই দাগ বয়ে বেড়াচ্ছেন এই জন্মে।

 

সারারাত সমুদ্রে মাছ ধরে সকালে 

ডাঙায় ফিরতেন তিনি।

ডাঙায় তাঁর ভাড়া করা ঘর। সমুদ্রে ছিল বাড়ি।

আমাদের সাথে গল্প করতেন, তাঁর বাড়ির গল্প।

বাড়িতে অন্ধকার। রাক্ষুসে বাতাস। 

সেখানে ‘সুদিন’ দুইদিন থাকতো, তো দশদিন 

থাকতো না। 

তথাপি তিনি সুখী ছিলেন।

এমনকি রূপচাঁদার সাথে পিরানহার বিয়েতে

আমাদেরও নিয়ে যাবেন বলে কথা দিয়েছিলেন!

 

শান্তি কাকা কখনো মাছ খেতেন না।

বলতেন, মাছেরা তাঁর সন্তান;

সন্তানদের বিক্রি করে খাওয়ার অপরাধবোধে

কাকা আমৃত্যু মৎস্য পূজারী ছিলেন;

আর প্রাণপণ ঘৃণা করে গিয়েছেন— নিজের জিভকে। 

 

পাগল বিষয়ক কর্মশালা

মাঝে মাঝে রাতে পাগল হয়ে যেতাম আমরা।

হয়তো সেদিন শুক্লা দ্বাদশীর রাত কিংবা মাথার ওপরে একা পঞ্চমীর চাঁদ।

আমরা স্রেফ পাগল হয়ে যেতাম। আমরা মানে, আমি আর আমার বন্ধুরা।

এ-ওর দিকে তাকাতাম। এ-ওকে দেখতো।

আর প্রচণ্ড হাসাহাসি করতাম আমরা নিজেদেরকে নিয়ে। 

 

কে কতোটা চোখে কম দেখে আজকাল? 

কারা কারা উচ্চতায় সবচেয়ে সবুজ? 

কার মাথার চুল নিয়মিত উড়ে যাচ্ছে আকাশে?

কাকে দেখতে কতোটা শুকনো লঙ্কা দেখায়? 

কে সবচেয়ে বেশি হাসে আমাদের মধ্যে? 

গতরাতে ঘুমোতে গিয়েও সারারাত ঘুমায়নি কে? 

 

নিজেরা নিজেদের দিকে আঙুল তুলে তুলে এসব বলতাম আর 

হাসাহাসি করতাম আমরা— আমাদেরকে নিয়ে মাঝেমাঝেই। 

এবং

চেয়ে চেয়ে দেখতাম— অসুখ ভর্তি মাথা নিয়ে এক-একজন 

উঠে যাচ্ছি ওপরে।  

 

পাগল হওয়া দরকার। আসলেই দরকার। 

মাঝেমাঝে পাগল হওয়া— জীবনের জন্য বেশ চমৎকার।

 

অক্রূর ভাঁটফুল 

তোমার ঠোঁটে বাতাস, জীবন জোগাচ্ছে— সামান্য অক্সিজেন, 

বেঁচে থাকা এরকমই, যেরকমভাবে থার্মোমিটারে, পারদে; 

মানুষ— রেখা টানা জ্বরে, জিনতাত্ত্বিক চিত্রে, 

সম্পাদ্যে-উপপাদ্যে, কেমন অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছে, পিথাগোরাস, 

মেন্ডেল, কোপার্নিকাস, পাতাল কিংবা মহাকাশ,

এক পাতা অ্যাসপিরিন খেয়ে, ঝিম মেরে থাকে; 

জোড়ে-বিজোড়ে-সজোরে, কাকে কতোটুকু, সকালে-আকালে, 

কাছে পাওয়া যাবে? মৃত্যু তোমার, দুই কাঁধে থাকে, আমাকে 

ছোঁবে না, টাঙানো সাইনবোর্ড, মানুষের চোখ— ওদিকেই 

বেশি টানে; ধূমপানই স্বাস্থ্যকর, কেউ কি জানে? ধোঁয়ারা 

কতোটা— যত্নসহকারে, দুঃখগুলোকে, নির্মাণাধীন মানুষের 

ভেতরে, ধামা চাপা দিয়ে, হেঁটে যেতে বলে; হাঁটতে-হাঁটতে, 

কাঁদতে-কাঁদতে, সন্ধ্যা ৭টায়, ভূগোল বইয়ের ৫৭ পাতায়, 

ইথিওপিয়ায় তুমি; গৃহযুদ্ধ দেখবে, প্রেতরা সেখানে—

যুদ্ধ করে, যুদ্ধ করে, যুদ্ধ করে; হাতির দাঁতের অলংকার, 

অবগোলাপ, সাবমেরিন, ইথিওপিয়া কিংবা ঢাকায় তুমি,

সন্ধ্যা ৭ টায়— মানুষ মরে, মানুষ মরে, মানুষ মরে; গাড়িচাপা, 

ছুরিকাঘাত, আত্মহত্যা; তোমার ঠোঁটে বাতাস, 

মানুষ হাঁপাচ্ছে, এখন দরকার— অক্সিজেন, কিংবা ভাঁটফুল, 

সামান্য ভাঁটফুল, অক্রূর ভাঁটফুল।

আরও পড়ুন...

Categories
2022_aug bangladesher_kobita

মোহাম্মদ হোসাইন

বাং লা দে শে র  ক বি তা

মো হা ম্ম দ  হো সা ই ন

বিষণ্ণ দেয়াল

একটা বিষণ্ন দেয়াল এসে দাঁড়িয়ে থাকে।

মানুষের মতো। 

আমার ভুল ভাঙে না।

 

চশমা হেঁটে যায়

চশমার সক্ষমতা মানুষের চে’ বেশি

দূরবর্তী কোনো নদী হয়তো মানুষ চেনে

পা চেনে। দেয়াল বোঝে না। 

 

চিরদিন মানুষ সঙ্গীহীন ছিল

চিরদিন মানুষ বিষণ্ণই থেকেছে… 

 

কামফুল

অজস্র কামফুল ফুটে আছে।

অজস্র কাম ফল 

গূঢ়ার্থ জানে বৃক্ষ, জানে পাখিদল

সমুদ্রও ঢেলে দেয় তীব্র কামের ফেনা 

শামুক ও ঝিনুকের লালায়

বজ্রের কাম লুকনো মেঘে মেঘে

নাদে ও নিনাদে…

 

মৃত যে সেই কামহীন

সেই উগরে দেয় ক্রোধ, লোভ ও মাৎসর্য

শ্রীহীন এ সংসার তাই! 

আরও পড়ুন...

Categories
2022_aug bangladesher_kobita

নাদরাতুন নাঈম

বাং লা দে শে র  ক বি তা

না দ রা তু ন  না ঈ ম

হলুদ শরীর 

রেণুর মতো উড়ে যাওয়া বয়স 

হলুদ থাকে বিস্তর 

সবুজের মতো প্রাচীন ঘ্রাণ ছুঁয়ে ঝরনা

ঝরে মাটির শরীরে–

মোমের মতো 

পালকের মতো 

পাপড়ির মতো 

ঝরে পড়ে ঝিলমিল

পানির প্রাচীরে আঙুল ছুঁয়ে বসন্ত বলে,

আজ আর অভিমান করবো না 

আজ আর কাঁদবো না 

আজ আর মরতে চাই না 

একদিন হলেও–

আমার মৌমাছির মতো বাঁচা উচিত।

 

দুঃখ

মুখ বুজে থাকা বিড়ালের মতো দুঃখ

অসীম হতে থাকে,

পাথরের প্রস্রবন চিরকাল অলীক কল্পনা

তবুও ভাবি– একটা কুলকুল জলপ্রপাত 

তেষ্টা ফুরাবে।

ক্রসরোডে পড়ে থাকা স্মৃতির ছাই

কখনো নড়বে না 

থমকে থাকে–

যেভাবে থমকে থাকে অন্ধকারের ক্রিয়ালাপ।

আরও পড়ুন...

Categories
2022_june bangladesher_kobita

মুসা আল হাফিজ

বাং লা দে শে র  ক বি তা

মু সা  আ ল  হা ফি জ

গণিত

আমি তো গণিতের সমাধান বের করি
কিন্তু গণিতবিদরা আমাকেই একটি সমস্যা মনে করেন।

কারণ যখন খাতা হাজির করা হয়, আমি হাজির করি জীবন!
 
বলা হয়, যোগ করো! আমি যোগ করি আত্মশক্তিকে।
বলা হয়, বিয়োগ করো! আমি বিয়োগ করি পরাজয়কে।
বলা হয় গুণ করো! আমি গুণ করি ভালোবাসাকে।
বলা হয়, ভাগ করো! আমি ভাগ করি দুঃখকে।
বলা হয় সমীকরণ দাও! আমি দিই নিজের মধ্যে সবাইকে।
বলা হয় মান প্রকাশ করো! আমি প্রকাশ করি সফলতাকে।

তারা বলে, এটি আদৌ কোনো গণিত হয়নি,
তুমি অঙ্কের ব্যাকরণ জানো না!

আমি বলি, এটিই মহোত্তম অঙ্ক এবং
এ জন্য ব্যাকরণ লঙ্ঘণ করে আমিই হয়ে উঠি নতুন ব্যাকরণ!

 

আল মাহমুদের চোখ!

আমি যখন আল মাহমুদের দিকে তাকালাম, হোমারকে দেখতে পেলাম। অন্ধ। কিন্তু দেখেন দৃষ্টির অতিরিক্ত মহাকাশ।

চাঁদের চেহারা থেকে ছিনিয়ে আনা আয়শার মতো জ্যোৎস্না মুখে ছড়িয়ে আল মাহমুদ বললেন,আমি তো কানা মামুদ,  কানা…

বললাম, আমার চোখ নিয়ে নিন আপনি, আপনার কানা চোখের ভেতরে যে ইন্দ্রজাল, সেটা আমাকে দিয়ে দিন।

আল মাহমুদ খুব হিসেবি। তিতাসের কই মাছের ঝোলের স্বাদ উগরে দিয়ে তিনি হাসলেন।
বললেন, ‘কবিদের চোখের হাড়িতে আজকাল কর্ণফুলীর ব্যঙ! কিন্তু কানা মামুদের চোখের ভেতরে কী আছে এমন, যা তোমার চাই?’

বললাম, সেই জ্যোতি, যা দিয়ে তৈরী হয় ত্রিকালজ্ঞ চোখ! যা দৃশ্যের ভেতর- বাহিরকে দেখেই থামে না, শিকার করে নেয় ইতিহাসের নদীতে সময়ের জলপানের শব্দও!

আমার চোখ দিয়ে আল মাহমুদের কোনো কাজ নেই। কারণ আমি জানি, যখন সত্যটা দেখি, দৃশ্যমান চোখ দিয়ে দেখি না। প্রকৃত দর্শক আমি আসলে অন্ধ।

কারণ চোখ বন্ধ না করলে আমি দেখি না আকাশের সাথে আমার গোপন চুক্তিনামা, দেখি না মহাজাগতিক সংবাদ শিরোনাম! দেখি না মানুষের শরীরের ভেতরে   গর্তে মলত্যাগরত বুনো শুয়রের মুখ!

আমি কিছুক্ষণের জন্য চোখ বন্ধ করলাম আসল দৃষ্টির প্রয়োজনে।

তোমরা তখন বলতে থাকলে— এই দেখো আরেক অন্ধ। যেভাবে জ্বলন্ত তারার মতো দৃষ্টিবান আল মাহমুদকে বলা হতো অন্ধ। কেননা দৃশ্যের অতিরিক্ত দৃশ্যে ডুব দিতে তিনি একদা বন্ধ করেছিলেন দৃশ্যমান চোখ!

আরও পড়ুন...

Categories
2022_june bangladesher_kobita

সায়্যিদ লুমরান

বাং লা দে শে র  ক বি তা

সা য়্যি দ   লু ম রা ন

হৃদয়ের চেয়েও উজ্জ্বল হয়ে উঠছে প্রার্থনালয়

আমাদের হৃদয়ের চেয়েও উজ্বল হয়ে উঠছে পৃথিবীর প্রার্থনালয়গুলো।

 

লক্ষ্য করুন, সমস্ত হৃদয় সঙ্কুচিত হতে হতে পরিণত হচ্ছে 

একেকটি ব্লাকহোলে—

 

যা গ্রোগাসে গিলছে সভ্যতার সকল পবিত্র গ্রন্থের কোমল

ও সহিষ্ণু অক্ষর

এর দরুন বইগুলো বারুদ হয়ে উঠছে। 

 

এবং ক্রমশ ওই অন্ধকূপে অদৃশ্য হচ্ছে মানুষের প্রতি মানুষের 

দানের গোপন হাত

ফলে হাত পেতে আছে অসংখ্য হা-ভাত।

 

অন্যদিকে প্রার্থনালয়গুলো হতে সৌন্দর্য ফেটে পড়ছে, 

জায়গা করে নিচ্ছে পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যে

আর মানুষ হিসেবে আমরা ক্রমশ আমাদের জায়গা হারিয়ে ফেলছি।

 

মিরাকল

সকল চোখ ফুলের সৌন্দর্য দ্যাখে কিন্তু কতজন ভেদ করে সুগন্ধের রহস্য— 

 

জেগে থাকো যখন সবাই নিদ্রামগ্ন। ঠায় বসো অন্যদের হাঁটার সময়। 

চুপ করো অজস্র কথার বুদ্বুদে। অতঃপর উলঙ্গ হও সূর্যের মুখোমুখি- 

দ্যাখো আলোর সাতটি নদী।

পৃথিবীর পথে পথে’ই মিরাকল থাকে!  সময়ের ডায়ালে যারা পা উঠিয়ে রাখে- 

তারা এর পায়’না নাগাল।

আরও পড়ুন...