সা ক্ষা ৎ কা র
প লা শ   দে
কবি ও চিত্রপরিচালক

তৃপ্তি তিনি পান, যিনি ঈশ্বর হয়ে যান...

১। অভিনেতা – পরিচালক – মানুষ… আপনার এই তিন দিক নিয়ে কিছু বলতে গেলে কী মনে হয়?
আমি যখন অভিনেতা তখন আমি একজন পদাতিক সৈন্যের মতো । আমাকে নির্দেশক কিছু দায়িত্ব দেবেন আমি সেই দায়িত্বগুলো ফুলফিল করার চেষ্টা করব, তাঁর মনের মতো করে করার চেষ্টা করব।কিন্তু দায়িত্ব অভিনেতাকে দিলেও নির্দেশক একটা স্তর পর্যন্ত দেখেন আর প্লে রাইটার বা স্ক্রিপ্ট রাইটার আর একটা স্তর পর্যন্ত দেখেন। এই দুজনের মাঝখানের গ্যাপটাকে ফিল আপ করতে হয় অভিনেতাকে। ফলত অভিনেতা হিসেবে আমি যখন থাকি তখন একেবারেই কোন অবস্থাতেই নির্দেশকের কোনও চেহারার সঙ্গেই আমার কোন যোগাযোগ থাকে না। কারণ অভিনেতা শুধুমাত্র তার বিষয়টা নিয়ে মাথা ঘামায়। মানে একটা খন্ড বিষয় নিয়ে মাথা ঘামায়। অভিনেতা কখনই গোটাটা নিয়ে মাথা ঘামায় না। ঘামানোর কথাও নয় তার।ফলত অভিনেতা…. সে তার মতো করে চেষ্টা করবে…. ওই চরিত্র ও চরিত্র সংলগ্ন যাঁরা আছেন তাঁদের সঙ্গে কি দেওয়া-নেওয়া হচ্ছে….তার মাধ্যমে এই চরিত্রটার যে জার্নি আছে…যে যাত্রা আছে… একটা নাটক বলুন বা সিনেমা বলুন বা ওটিটির কোনও একটা… কি যেন বলে ওরা… সিরিজ বলুন… সেই জার্নিটাকে সে শুধু দেখতে পায় এবং সেটাকে ফুল ফিল করার চেষ্টা করে একর্ডিং টু দ্যা ডিরেক্টর… ডিরেক্টর যেভাবে চাইছেন সেইভাবে।এবার যখন সে নির্দেশকের ভূমিকায় চলে গেলো তখন সে সমগ্রটা দেখতে শুরু করল। সামগ্রিকভাবে।নাট্য নির্মাণের ক্ষেত্রে নাটক যিনি লেখেন তিনি নাটককার আর যিনি গোটা নাটকটা তৈরি করেন তিনি নাট্যকার। গোটা নাট্যটা ….তার মঞ্চসজ্জা , তার স্ক্রিপ্ট ,তার অভিনেতা অভিনেত্রী ….তারা কি অভিনয় করবেন…কোন অভিনয়টা এই মুহূর্তটার জন্য ঠিক হবে,তার সঙ্গে সঙ্গে খেয়াল রাখতে হয় যিনি আলোক নির্দেশক তাঁর দিকে এবং ওই মুহূর্তের যে আবেগ সেই আবেগটা… প্রত্যেকটি নাটকের তো একটা সংলাপ থেকে ইংরিজিতে যাকে আমরা বলি জিস্ট… জিস্ট অফ দ্যা স্টোরি… গোটা নাটক বা গোটা সিনেমা বা ওটিটি প্ল্যাটফর্ম এর কোনো গোটা সিরিজ…যাই হোক না কেন তার একটা সংলাপ থাকে… রাম ভালো ছেলে ছিল কিন্তু শহরে এসে রাম মাফিয়া তৈরি হলো… এরম একটাই সংলাপ থাকে আর সেটা বিস্তার পেতে থাকে…এবার যতগুলো অংশ জুড়ে এই নাট্যটা তৈরি হচ্ছে বা সিরিজটা তৈরি হচ্ছে তার প্রত্যেকটি অংশকে সে দেখতে পায় এবং জোড়ে… একটা একটা করে সে জোড়ে ।সুতরাং নির্দেশকের ভূমিকাটা সম্পূর্ন আলাদা।অভিনেতার মতো সে শুধু খন্ড মাত্র দেখছে না ,সামগ্রিকভাবে দেখছেন।
এবার আসি… আপনার কথায়… মানুষ… মানুষ তো…কি বলা উচিত… এক্ষেত্রে আমি বলব যে এই অভিনেতা সত্তা এবং নির্দেশক সত্তার সঙ্গে সঙ্গে যেখানে জন্মেছি বড় হয়েছি… গোটা বিশ্ব… সবটা মিলিয়ে একটা মানুষ তৈরি হয়।আবার অভিনেতা যদি সমাজ সচেতন না হয় ইতিহাস সচেতন না হয় তাহলে তার পক্ষে অভিনেতা হয়ে ওঠা খুব মুশকিল। একই কথা আরো বেশি করে খাটে নির্দেশকের ক্ষেত্রে। এই দুটোর সংমিশ্রনে একটা গোটা মানুষ বেড়ে ওঠে। আরো একটা কথা আছে। সেটা হচ্ছে অভিনেতার কিছু কিছু অনুভব তৈরি হয়… চরিত্রায়ন করতে গিয়েই অনুভব তৈরি হয়। সেটা মানুষকে কখনো ভীত করে তোলে… বাবা এত ক্ষমতা এত আত্মত্যাগ আমার পক্ষে সম্ভব নয়।আবার কখনো কখনো চেতনার একটা স্তরে উন্নীত হতে পারে… আমি এভাবে কখনো জিনিসটা দেখিনি বা আমি জানতামই না, এখন জানছি। একই কথা ডিরেক্টরের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সুতরাং সবটা মিলে একটা মানুষ তৈরি হয়।
২। শিল্প শিল্পী এবং বর্তমান পৃথিবী বর্তমান পৃথিবী…কী কী মিলছে না? মেলাতে চাইলে কিভাবে তা সম্ভব?
না না না … মেলে… যদি ইতিহাস সম্পর্কে ধ্যান ধারণা স্পষ্ট থাকে সমাজ বিজ্ঞান সম্পর্কে ধ্যান ধারণা স্পষ্ট থাকে তাহলে অনিবার্য যা যা, অমোঘ যা যা সেগুলো আপনার জানা থাকবে। সেখানে না মেলার বিষয় খুব কম থাকে । অর্থাৎ আপনি যদি ধরে নেন যে ভারতবর্ষে একই সঙ্গে সঙ্গে …. মানে প্রত্যেকটা দেশেই সেটা আছে, একটা দেশের মধ্যে আর একটা দেশ… আমাদের বিখ্যাত কবির বিখ্যাত লাইন… তো যাই হোক… কিন্তু ভারতবর্ষ বা দক্ষিণ এশিয়া… এখানে এক অনন্য অবস্থান সৃষ্টি হয়ে রয়েছে। তার কারণ হচ্ছে এখানকার গ্রামগুলোতে সামন্ততন্ত্র এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে দাসপ্রথা পর্যন্ত চালু আছে অথচ এর শহরগুলো এর রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভয়ংকর রকম ভাবে বাজার সভ্যতার সর্বোচ্চ স্তরে গিয়ে পৌঁছেছে।তো এর যে স্বাভাবিক দ্বন্দ্ব হওয়া উচিত সেই দ্বন্দ্বগুলো ঘটছে এবং ভবিষ্যতে আরও ঘটবে।এমন একটা দিন আসতে চলেছে যখন আপনি আর নিজেকে কোন গণতান্ত্রিক দেশের নাগরিক বলতে পারবেন না। খুব শিগগিরই সেরকমই একটা দিন আসতে চলেছে… তো যাই হোক, এইটা সম্পর্কে যদি জ্ঞান থাকে তাহলে সেই অবস্থার মধ্যে অর্থাৎ একদিকে চূড়ান্ত সামন্ততান্ত্রিক অবস্থান,কিছু কিছু ক্ষেত্রে দাসপ্রথাও রয়েছে আবার উল্টো দিকে আধুনিক সভ্যতা এবং বাজার সভ্যতার চূড়ান্ত চেহারা,পুঁজি যেখান থেকে সব কিছু কিনে খেতে চায়… সেই দেশের সংস্কৃতি, সেই দেশের সভ্যতার অবশিষ্টাংশগুলো ইত্যাদি ইত্যাদি… কেননা পুঁজি সবসময়ই চাইবে…আপনার যদি জানা থাকে… এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত বলে এই উচ্চারণ করছি… পুঁজি সব সময় চাইবে মানুষের মানবিক গুণগুলো থেকে সে যেন বিচ্যুত হয়, সে যেন কেবলই প্রবৃত্তির দাস হয়ে থাকে।তাহলেই পুঁজির বাজার তৈরি করতে সুবিধা হয়। এখনমানবিক গুণ মানুষের কি কি আছে… মানুষ যেহেতু সমাজবদ্ধ জীব সব সময়ই পাশের মানুষটা বা তার গোষ্টির প্রতি তার একটা দায়বদ্ধতা থাকে,তার একটা যোগাযোগ থাকে।হাতে হাত ধরে গায়ে গায়ে ঘষে সে বেঁচে থাকে। এটা হচ্ছে তার মানবিক গুণ। সে জানে আমার গোষ্ঠীর আমার পাড়ার আমার পরিবারের যদি কেউ খারাপ থাকে তাহলে আমিও খারাপ থাকবো। এটা হচ্ছে গোষ্ঠীগত ব্যাপার। এর থেকে যদি আপনি জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ভাবনার মধ্যে যান তাহলেও একই বৃত্ত রচিত হবে। অর্থাৎ আমি ভালো আছি কিন্তু পাকিস্তান খারাপ আছে বা বাংলাদেশ খারাপ আছে… আমি ভালো আছি কিন্তু বিহার খারাপ অবস্থায় আছে বীরভূম খারাপ অবস্থায় আছে হলে আমি ভালো থাকতে পারবো না। বিহার পাকিস্তান বাংলাদেশ যদি খারাপ থাকে তাহলে তার ভালো থাকার জন্য সচেষ্ট হতে হবে। এটা হচ্ছে মানবিক গুণ। সেই ঘুম থেকে মানুষ সরে যাক এটাই পুঁজি চায়।বদলে সে কেবল মাত্র নিজের নাভির দিকে তাকিয়ে বাঁচুক…সে এক মগজহীন একটা…কি বলা উচিত …সে এক ব্যবহারিক জন্তুতে পরিণত হোক, তার শিরা-উপশিরায় বোধ থাকবে না। বদলে সে কেবলই গা ঘেঁষাঘেঁষি করে সে টিকে থাকবে। এইটা পুঁজি চায় আর চায় প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে একটা পরিমণ্ডল তৈরি করবে যে জিপরিমণ্ডলে প্রত্যেকে চাইবে প্রত্যেককে সরিয়ে একা দাঁড়াতে ।আজ পর্যন্ত .. আজ ২১ শে ফেব্রুয়ারি ২০২৩ পর্যন্ত যাবতীয় যা যা ব্যাখ্যা হয়েছে তাতে এইটা হচ্ছে পুঁজির ধারণা।এবার এটা যদি আপনার জানা থাকে তাহলে ভাবুন সেখানে শিল্প কি হতে পারে….যেমন ধরুন আমাদের থিয়েটারটা থিয়েটার টা তৈরি হয়েছিল প্রতিস্পর্ধিতার থেকে। এখন সে প্রতিষ্পর্ধী থাকবে নাকি সে
বশংবদ হবে? প্রতিষ্পর্ধী বা বশংবদ হব না,আমি আমার নিজের মতো বাঁচব …এটা ইতিহাস গ্রহণ করে না এটা বিজ্ঞানও গ্রহণ করে না । সুতরাং এই সত্যিটা জানলে শিল্প শিল্পী বর্তমান অবস্থা এই পুরোটা সম্পর্কেই আপনার ধারণা থাকবে এবং তার সঙ্গে সঙ্গে আর একটা ধারণা থাকার দরকার।সেটা হচ্ছে আপনার নিজস্ব শিকড়ের ঐতিহ্যের পরিচয়। আন্তর্জাতিকতার ধারণা যেমন থাকা দরকার তেমনি নিজস্ব ঐতিহ্যের ধ্যান ধারণা থাকা দরকার। এটা যদি না থাকে তাহলে আপনি মানুষ নন।কেননা মানুষ মানেই মগজ হচ্ছে তার একমাত্র পরিচয় …অসাধারণ একটা সংলাপ আমাদের নাটকে বলা হয়…বাংলা করত গিয়ে আমার খুবই ভালো লেগেছিলো…আমাদের বুদ্ধি ছাড়া কি আছে..হাতির একটা বিশাল শরীর আছে,ঘোড়া অত্যন্ত জোরে দৌড়তে পারে,প্রজাপতি আমাদের থেকে অনেক বেশি সুন্দর,একটা মশা অনেক বেশি সন্তানের জন্ম দিতে পারে…আমাদের কি আছে ….মানুষ হিসেবে যে ক্ষমতাটা আছে সেটা হচ্ছে যে আমরা রূপান্তর ঘটাতে পারি।আমরা একটা পাথর কেটে মূর্তি বানাতে পারি।এই রূপান্তর ঘটাতে পারি।একটা মুহূর্তকে স্থির করে দিতে পারে মাইকেল এঞ্জেলো একটা মাত্র পাথর কেটে।সুতরাং এই রূপান্তর ঘটাতে পারি বলেই আমরা পৃথিবীর এরকম একটা অবস্থায় এসেছি।আবার একই সঙ্গে সঙ্গে কিছু মানুষের লোভ বাড়ছে।তারা মনে করছে তারা গিয়ে মঙ্গলে ব্যাস করবে,পৃথিবী জাহান্নামে যাক।এবং তাদের বশংবদ কিছু লোক.. আশ্চর্য ব্যাপার..৬৪০ কোটি মানুষের মধ্যে তাদের সংখ্যা মাত্র ২২ কোটি সারা বিশ্ব জুড়ে …তাদের বশংবদ দালাল ইত্যাদি মিলিয়ে ২২ কোটি…তাদের সঙ্গে এঁটে উঠতে পারছে না এই ৬২০ কোটি লোক বা ৬১৮ কোটি লোক এটা আশ্চর্যের জায়গা।এই বোধটাও থাকা দরকার বলে মনে করি ।আপনি যদি বলেন বিশ্ববীক্ষা তবে তাই।
৩। থিয়েটার আর সিনেমা এই দুই মাধ্যমের দ্বন্দ্ব ভালোবাসা রাগ অভিমান… আপনার কাছে কীভাবে আসে।
দেখুন থিয়েটারের সঙ্গে কেউই পাল্লা দিতে পারবে না ।কারণ থিয়েটার জন্মেছিল প্রায় দেড় লক্ষ বছর আগে। যখন গুহাবাসী মানুষ শিকারে যেতেন এবং শিকার থেকে ফিরে কি করে শিকারটা ঘটলো সেটা অভিনয় করে দেখাতেন। দেড় লক্ষ বছরের সঙ্গে মাত্র এক দেড়শো বছরের একটা শিশু… এখনও দুধের দাঁত পড়েনি এমন শিশু… তার কোনো তুলনা হতে পারে নাকি! কিন্তু সে শিশু প্রতিদিন বাড়ছে… বাড়বে। কিন্তু একটা কথা আপনি ভাল করে ভেবে দেখুন যে আপনি দুপুর বারোটার সময় একদম খোলা একটা রাস্তায় দাঁড়িয়ে… ধরে নিলাম ডালহৌসিতে আপনি দাঁড়িয়ে রয়েছেন দুপুর ১২ টার সময়। আপনার সামনে পঞ্চাশটা লোক বসে রয়েছে। আপনি বলছেন উফ কি ঘুটঘুটে অন্ধকার রে বাবা, এর মাঝখানে কি করে যে ওই বাগানটাকে খুঁজে পাবো… আমি জানি পিছনে বাগানটা রয়েছে কিন্তু আমি দেখতে পাচ্ছিনা ,আপনারা কেউ দেখতে পাচ্ছেন? এটা সঙ্গে সঙ্গে মানুষ ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে পৌঁছে যায়। কিন্তু আলাদা আলাদা করে ৫০ জন পৌঁছয়। পঞ্চাশ জনকে একই জিনিস দেখতে হয় না। আলাদা আলাদা করে কল্পনা করে নিতে পারেন সঙ্গে সঙ্গে। যে ক্ষমতা ছবির নেই যে ক্ষমতা সিনেমার নেই এমনকি স্কাল্পচারেরও নেই । এই একটা ক্ষমতা উৎপল দত্তের ভাষায়… চার দেওয়ালের মাঝে আমি এমন এক দৃশ্য গড়েছি ব্রহ্মা যা তোমার চার মাথার এক মাথাতেও কুলোবেনা । নাটক এমনই।সুতরাং এর সঙ্গে সিনেমার তুলনা হয়না ।
৪। কোন কোন বিষয়, ভাবনা নিয়ে আপনার কাজ করতে ইচ্ছে করে?
তিনটে বিষয়ে। এক হচ্ছে ফ্যাসিবাদ। ফ্যাসিবাদের সূত্র ধরেই পরিবেশের ধ্বংস এবং এই ফ্যাসিবাদ থেকে উত্তরণ পেতে গেলে পরিবেশকে বাঁচাতে গেলে বিপ্লব।
৫। ইন্ডিপেন্ডেন্ট শিল্পীর বর্তমান ও পরবর্তী পরিস্থিতি সম্পর্কে আপনার কী মনে হয়?
অনেকদিন আগে ‘ওয়াগ দ্য ডগ’ …ছবিটার নাম হচ্ছে ‘ওয়াগ দ্য ডগ’ বলে একটা সিনেমা করেছিলেন রবার্ট ডি নিরো । সেইখানে একটা দৃশ্য ছিল ভবিষ্যতে …আপনারা নিশ্চই এখন জানেন যে আপনার ওভাম…আপনি মহিলা হিসেবে বলছি …আপনি তুলে রাখতে পারেন এবং আজ থেকে তিরিশ বছর বাদে আর একটা স্পার্মের সঙ্গে মিশিয়ে একটা সন্তানের জন্ম দিতে পারেন… ফ্রোজেন ওভাম… আপনি জানেন যে কিছুদিন আগে মায়ের আলট্রা সাউন্ড টেস্ট এর সময় দেখা যায় গর্ভস্থ বাচ্চার পিঠে একটা টিউমার আছে।সঙ্গে সঙ্গে ডাক্তাররা সিদ্ধান্ত নেন পেট কেটে টিউমার বার করে রেখে আবার পেট জুড়ে দেবেন এবং বাচ্চাটা ভূমিষ্ঠ হবে এবং তাই হয়েছে।তো… এই…. হারারির ‘হোমো দেউজ’ বইটি এইটারই ইঙ্গিত দিয়েছে। ইউভাল নোয়াহ হারারি …ইজরায়েলি ঐতিহাসিক…সবাই জানেন …সেপিয়েন্স এখন সবাই পড়ছে… হোমো দেউজ সেটারই একটা ইঙ্গিত। যাই হোক আগামী দিনে আমাকে দরকার নাই পড়তে পারে… সেই ছবিতে কিন্তু ছিল… মনে রাখবেন সেই ছবিটা নব্বই সালের ছবি… আর যদি আপনারা নেটফ্লিক্সে ‘দ্য ব্রোকেন মিরর ‘ দেখেন তাহলে আরও স্পষ্ট হয়ে যায় যে আগামী দিনে কি হতে চলেছে। আগামী দিনে আমাকে অভিনেতা হিসেবে আর দরকার নেই। আমাকে একদিন স্টুডিওতে নিয়ে গিয়ে সম্পূর্ন উলঙ্গ করে আমার শরীরের থেকে প্রতিটি রোমকূপ পর্যন্ত তুলে নেবে। নিয়ে আমাকে বলবে… একটা ক্রোমা তে লাফাও ঝাপাও… যেভাবে পারো কুঁচকে লম্বা হয়ে যা যা পারো করো। এইটা একদিন হবে আর পরের দিন আমাকে নিয়ে গিয়ে বলবে…তুমি যে কটা ভাষা জানো সে কটা ভাষায় কথা বলো এবং যত রকমের বিকৃত স্বর করতে পারো সে কটা বিকৃত স্বর উচ্চারণ করো, যদি গান জানো তাহলে গান গাও ইত্যাদি ইত্যাদি করবে। তারপর আমার হাতে হয়তো… হয়তো… চার কোটি টাকা দেবে। দিয়ে বলবে তুমি তো এখন থেকে আর দু’বছর মাত্র বাঁচবে, দু বছরে তোমার রোজগার চার কোটি টাকার বেশি হতে পারবে না।এর পর থেকে আমায় কিন্তু কেউ আর কোনো রকম ….কি বলা উচিত… ভি এফ এক্স যা যা আছে অর্থাৎ সিনেমা ও টি টি প্ল্যাটফর্ম থেকে শুরু করে ইউটিউব… কোথাও আমাকে আর দরকার পড়বে না। আমাকে যেমন খুশি সাজিয়ে নেওয়া যাবে। আমাকে যেকোনো চরিত্রে পৌঁছে দেওয়া যাবে ভি এফ এক্স এর মাধ্যমে আমার কুড়ি বছর বয়স কমিয়ে দেওয়া যাবে। এটাই হচ্ছে ভবিষ্যৎ। আর উল্টো দিকে আমি দেখি… মানুষ যেহেতু খুব প্রত্যক্ষের পিয়াসী অর্থাৎ ছুঁয়ে দেখতে চায় সে আগুন দূর থেকে দেখে না, আগুন ছুঁয়ে দেখে কারণে থিয়েটারে ক্রমশ লোক বাড়তে থাকবে। মানুষ মানুষের গা ঘেঁষে থাকতে পছন্দ করে, মানুষ মানুষের নিঃশ্বাস বোধ করতে চায় বা প্রশ্বাস বোধ করতে চায়। আজকে সব থেকে আধুনিক যে দেশগুলো আছে তারা ফুটবল ম্যাচ থ্রিডি এমন কি নাইনথডিতে দেখতে পারে বাড়িতে বসে কিন্তু তারা দেখে না । তারা গ্যালারিতে যায় এবং সঙ্গী-সমর্থকদের সঙ্গে বসে গলা মেলায় নাচে কাঁদে হাসে চিৎকার করে রেগে যায়… কারণ মানুষ প্রত্যক্ষের পিয়াসী। অতএব আমি মনে করি এ আই বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স যত বাড়তে থাকবে মানুষ তত বেশি করে মানুষের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করবে। সে আরো বেশি করে ফুটবল ম্যাচ দেখবে থিয়েটার দেখবে নাচ দেখবে গান শুনবে একে অন্যের পাশে বসে। এটা আমার বিশ্বাস।
৬। নিজের সঙ্গে যখন বিড়বিড় করেন কোন কোন বিষয়-ভাবনা বেশী জ্বালাতন করে?
প্রথম বিষয় হল আমার অপারগতাগুলো…. আমি জানি না আপনার কত বয়স… আরো যত বাড়বে… আপনার যদি জানার ইচ্ছে থাকে তাহলে বুঝতে পারবেন যে এতদিন পৃথিবীর বিষয়ে যা যা জানতাম বলে আপনি গর্ব করেছেন , সেগুলো কত কম জানেন।আমি যখন বিড়বিড় করি আমার এই অজানা জিনিসগুলো নিয়ে বিড়বিড় করি। আমি এই মুহূর্তে যে নাটকটা করতে চাইছি সেটা করতে না পারার জন্য যে যন্ত্রণা তার জন্য বিড়বিড় করি। মাঝে মধ্যে… সব সময় নয়… মাঝে মধ্যে… যে সমস্ত প্রেম নষ্ট হয়ে গেছে সেই প্রেমগুলো যদি এখন করতাম তাহলে কি কি ভালোভাবে করতে পারতাম সেগুলো নিয়ে বিড়বিড় করি। আমি প্রতি মুহূর্তে বিড়বিড় করি আমার নিষ্ক্রিয়তায় এমন একজন শাসককে বসিয়েছি … বিশেষ করে আজকে একুশে ফেব্রুয়ারির তারিখে যখন কথা হচ্ছে তখন আরও মনে হচ্ছে… এমন একজন শাসককে এনে বসিয়েছি যে শাসক বাংলা ভাষায় যে র ফলা এবং ঋ ফলা সেটারই তার ধারণা নেই… একটা চূড়ান্ত অশিক্ষিত শাসক। কিন্তু এর দায় আমি চাপাব বামফ্রন্টের ওপরেও। কারণ তারা যেন তেন প্রকারেণ ক্ষমতায় থাকার জন্য পঁচানব্বই এর পর থেকে কেবল ক্ষমতার দিকেই নজর দিয়েছে…. একটা সমাজে সাংস্কৃতিক আধিপত্যের খুব দরকার হয় যেটা আরএসএস খুব ভালো করে জানে আর জানে বলেই তারা সরস্বতী স্কুল থেকে সেটা শুরু করে । সংস্কৃতিক আধিপত্য…. সেই সংস্কৃতিক আধিপত্যকে গা ছাড়া ভাব দেখানো, সাধারণ মানুষের মধ্যে সাংস্কৃতিক আধিপত্য আছে কি নেই সেটা সম্পর্কে কোন ধ্যান-ধারণা না থাকা…এই সবকিছুই ঘটেছে বামফ্রন্টের সময়ে। শুধুমাত্র ক্ষমতার দম্ভে এবং যেন তেন প্রকারেণ ক্ষমতায় টিকে থাকার লিপ্সায় থেকেছে।আমি সব সময় একটা কথা মনে করি প্রত্যেক ক্রিয়ার সমান ও বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে। এই কথাটা আমি বামফ্রন্টের নেতাদের বলতাম… সবসময় বলতাম… পঁচানব্বই সাল থেকেই বলতাম । তাদের মিটিং এ গিয়ে বলতাম তাদের কনভেনশনে গিয়ে বলতাম… আজকেও বলি। এগুলোই আমি বিড়বিড় করি। আমার আর একটা বড় বিড়বিড় করার জায়গা হল আমি আমার মাকে যত্ন করতে পারিনি। আমার মায়ের যতটা যত্ন আমার কাছ থেকে প্রাপ্য ছিল , যতটা আদর প্রাপ্য ছিল আমার কাছ থেকে আমি সেই প্রাপ্য মেটাতে পারিনি। যতদিন না আমি মরব এই যন্ত্রণা উত্তরোত্তর বাড়তেই থাকবে।
৭। বাংলা, বাংলাদেশ, দক্ষিণ ভারত, তথা ভারতীয় সিনেমা আপনার কাছে আশা এবং হতাশার জায়গাগুলো কী?
আমি ওইভাবে দেখিনা… আশা বা হতাশা… আমি ওইভাবে দেখিনা। দেখুন আমি একটা সিনেমায় অভিনয় করেছিলাম… ‘মানিক বাবুর মেঘ’।সিনেমাটা যে ছেলেটি করেছিল তার বয়স তখন ছাব্বিশ। স্ক্রিপটা যখন সে পড়েছিল আমি মোহিত হয়ে গেছিলাম আবার একই সঙ্গে যখন ‘ আর্টিকেল ফিফটিন ‘ দেখি বা তৎসংলগ্ন বেশ কিছু ওটিটি প্লাটফর্মের কাজ দেখি…. যদিও সেগুলো বিভিন্ন জায়গা থেকে টোকা , তবুও ভারতীয় দর্শকের সামনে তো আনা গেছে সেইটা সবচাইতে জরুরি….তখন আবারও উজ্জীবিত হই। আমি তো দিনমজুর, দেহ ব্যবসায় আছি। যিনি আমায় বেশি ভাড়া দেন.. লীনা গাঙ্গুলি… তিনি এই গড্ডালিকা প্রবাহের মধ্যেও এমন এমন কিছু সাবজেক্ট বেছে নেন যে সাবজেক্টগুলো বেছে নেওয়া দরকার বা উচিত । সেই সময়গুলোতে আমি মনের জোর পাই। এছাড়া দক্ষিণ ভারতীয় বেশ কিছু সিনেমা সমাজ সচেতন হয়ে কাজ করার চেষ্টা করছে। যেমন ‘সত্যমেব জয়তে ‘ এমন একটা কাজ যে কাজটা ভারতবর্ষের কেবলমাত্র মিডিল ক্লাস ইন্টেলিজেন্স এর মধ্যে আটকে রইল। সেই কাজটা আরো প্রচুর মানুষের দেখা দরকার। দেখেছে। আমার বিশ্বাস দেখেছে। আরও দেখা দরকার। আমার ভারতীয় সিনেমার ক্ষেত্রে আগ্রহ যে আগামী দিনে এমন কিছু ছেলে মেয়ে আসবেন তাঁরা নিজেদের ভাষায় দুধ কা দুধ পানি কা পানি ব্যাখ্যা করবেন এবং সেটা করবেন তাদের জীবনের বাস্তবতার ওপর দাঁড়িয়ে।
৮। ‘ক্লাউড অফ ম্যান’ সিনেমা শ্রেষ্ঠ অভিনেতার বিদেশি সম্মান এনে দিল । বাংলা তথা ভারতীয় অভিনয় জগতে আপনাকে কি আরও অন্যভাবে ব্যবহার করা যেত?ব্যক্তিগতভাবে আপনার কি মনে হয়??
শুনুন আমি একজন অভিনেতা। অভিনেতাকে চরিত্রায়ন করতে দিয়ে… দেখি এটা পারবে তো…. একটা চ্যালেঞ্জ করার বিষয় থাকে। সেই চ্যালেঞ্জটা কিন্তু আমাকে অনেকেই দিয়েছেন, সে সুযোগও দিয়েছেন। সুযোগ দেন নি এটা বলবো না। আমি তাঁদের কাছে কৃতজ্ঞ। এই যেমন কিছুদিন আগেই ডাব্লিউ বি এফ জে এ বছরের সেরা দুষ্টু লোকের চরিত্র হিসেবে আমাকে সম্মানিত করেছেন। এ বছরের সিনেমায় নাকি আমি সেরা দুষ্টু লোক। ‘ তীরন্দাজ শবর ‘ ছবিতে। এই চরিত্রটায় রিহার্সালে আমি অভিনয় করে বললাম “ ঠিক আছে?” অরিন্দম শীল দেখে আমাকে বলল “ ঠিক আছে।“ ও আমায় এই চরিত্রটা নিজের মতো করে করতে দিয়েছে।সেই জন্য আমি চরিত্রটা ওইরকম ভাবে করেছি। অভিনেতার আসল কাজ হচ্ছে চরিত্র চিত্রায়ন। এই চরিত্র চিত্রায়নের যে চ্যালেঞ্জ, সেই চ্যালেঞ্জটা আমাকে বেশকিছু লোক দিয়েছেন বা বলা যায় আমাকে প্রশ্রয়টা দিয়েছেন কাজটা করতে পারি কিনা সেটা দেখানোর। ‘তীরন্দাজ শবর’এর চ্যালেঞ্জটা যেমন আমি নিজেই নিয়েছি।একটা হার্ট কিলার, কিন্তু সে একটু এফিমিনেট, যার সন্তান আছে স্ত্রী আছে পরিবার আছে কিন্তু এফিমিনেট।….দেখুন যে সাংস্কৃতিক চেতনায় ব্র্যান্ডিং শব্দটা সবচেয়ে বেশি জরুরি হয়ে দাঁড়ায় , যে সংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে একজনের ইন্সটাগ্রামে কতজন ফলোয়ার আছে সেটা দেখে কাউকে চরিত্র করতে দেওয়া হয় সেখানে এসব নিয়ে ভাবার কোনো মানে নেই।
৯। আগের প্রশ্নের রেশ ধরেই যদি জিজ্ঞেস করি যে কাজ করছেন তাতে আপনি তৃপ্ত?
না আমি তৃপ্ত নই। তৃপ্তি তো তিনি পান, যিনি ঈশ্বর হয়ে যান। দিনে দিনে এত বেশি করে আমি জানতে পারছি যে আমি কত কিছু জানিনা আর আমার অক্ষমতা গুলো দিনকে দিন বাড়ছে …শারীরিক অক্ষমতা, আজকের তারিখে একটা ছেলে বা একটা মেয়ে কিভাবে ভাবছে সেটা বুঝতে না পারার অক্ষমতা… আমাদের থিয়েটারের দলে উনিশ কুড়ি থেকে পঁচিশ তিরিশ এর যে ছেলেমেয়েগুলো আসছে তারা কিভাবে ভাবছে এটা তো বুঝতে হবে। আমাকে যদি তাদের জন্য থিয়েটারটা করতে হয় তাহলে তারা কিভাবে ভাবে তারা কি দেখতে চায় এবং আমাকে কি দেখাতে হবে তাকে সেটা তো জানতে হবে। বেশিরভাগ সময়ে আমরা থিয়েটারের লোকেরা ভীষণভাবে ইম্পোজ করি। আমরা দর্শকের কথা না ভেবেই আমাদের ধ্যান-ধারণাগুলো তাদের কাছে প্রকাশ করার চেষ্টা করি। আর এটা করে ভীষণ রকম বাহবা নেওয়ার চেষ্টা করি। তবে এখন খুব সুবিধে হয়েছে… ফেসবুকে যদি কাউকে লিখতে বলেন যে আমাদের নাটক দেখে বা সিনেমাটা দেখে আপনার কেমন লাগল, তাহলে সে খোলা মনে লিখবে কারণ সে আপনাকে চেনেনা আপনার কাছ থেকে কোন সুবিধা পাওয়ার ব্যাপার থাকে না। অরূপ বিশ্বাস কিংবা মদন মিত্র কিংবা অরূপ বকশির কাছে নিয়ে গেলে আপনি একতলার গাঁথনিতে তিন তলা করে দেবেন এরকম কোন সুবিধা সে আপনার কাছ থেকে পাবে না আপনার প্রশংসা করে।তাই সে খোলা মনে এইতো আপনার প্রশংসা করবে বা নিন্দাও করবে।এইটা একটা বড় পাওনা।
বিশেষ ধন্যবাদ
অর্পিতা সরকার প্রামাণিক
আরও পড়ুন...
চরৈবেতি
পার্থ সাহা | ‘ছোটনাগপুরের রাণী’ নেতারহাট... পাইন আর ইউক্যালিপ্টাস-এর বাহার... READ MOREথিক নাত হানের কবিতা
ভাষান্তর: শীর্ষা । আমি চমৎকারভাবে এই সুউচ্চ ঢেউয়ের ওপর দিয়ে এগোচ্ছি –পাহাড় ও পর্বতমালা, পাহাড় এবং পর্বতমালা... READ MOREজিভে জল
তিনটি অনবদ্য কেক বানানোর রেসিপি নিয়ে শেফ রাগেশ্রী মিত্র সামন্ত READ MOREবর্ণময় বাড়ৈ
বই পড়ে জেনেছি পাতা গাছের রান্নাঘর যদিও আমাদের রান্নাঘরে মৃত পাতারা জন্ম দেয় নতুন আগুন আগুনের সাথে খিদের... READ MOREমোহনা মজুমদার
সূঁচ দিয়ে সুতো টানতে গেলে প্লাবন আসে, কান্না ভেঙে উপড়ে নিই স্নান। আয়নার সামনে খানিক দাঁড়ালে বুঝি অভিশাপ... READ MOREনিষিদ্ধ সব সোনার খনি । পর্ব ৭
সব্যসাচী সরকার । অরণ্যের জীবনে তখন তিনটে নেশা। নম্বর টেন ব্র্যান্ডের সিগারেট, বাংলা ও ইংরেজি বই এবং সুন্দরী মেয়ে... READ MOREপ্রচ্ছদ কাহিনী | মার্চ সংখ্যা
অরিজিৎ চক্রবর্তী ও অনুক্তা ঘোষাল । পাঁচ নারী হাতে তরবারি... বৈদিক যুগের ঘোষা, অপালা, লোপামুদ্রা ও বৈদিক পরবর্তী... READ MOREক্যানভাস
‘দ্য ফ্রেম’ তাদের ৩০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত চিত্র প্রদর্শনী ঘুরে এসে জানালেন শুভ চক্রবর্তী READ MOREঅন্তরা সরকার
মুহূর্তেরা হলদে, লাল, কপিশ ফোয়ারায় খেলা করে। একটি নরম, আর্দ্র পালক আলগোছে শূন্য বুকে শিহরণ জাগায়... READ MOREবর্ণালী দত্ত
কেউ কখনো জানতে পারবে না আমি রোজ রাতে কাকে ভালোবেসেছি, কাকে জড়িয়ে দিয়েছি আমার পোশাকের ওম... READ MORE