Categories
kobita_may path_protikriya

পাঠ প্রতিক্রিয়া

পা ঠ প্র তি ক্রি য়া

শ তা নী ক  রা য়

‘লোচনদাস কারিগর’: এক অনন্ত অর্থহীনতার প্রতীক

আজকাল আর নিছক আনন্দ বা তাৎক্ষণিক সুখ উদ্রেকের জন্য কবিতা পড়ি না। আমি এমন কবিতা পড়তে চাই যার সামনে দীর্ঘদিন দীর্ঘ বছর আমি বিস্মিত হয়ে বসে থাকতে পারব। কোনো অর্থপূর্ণ প্রতিক্রিয়া নয়, শুধু কবিতার রেশটুকু থাকুক। গভীর নিদ্রা ভেঙে যাওয়ার পরও যেমন ঘুম থেকে যায়। ঘুমের জন্য শুধু নয়, সেই গভীরতার রেশটুকু থাকুক এটাই চাই। উৎপলকুমার বসুর ‘লোচনদাস কারিগর’ কাব্যগ্রন্থটি পড়ছিলাম বেশ কিছুদিন হল। ওই বইয়ের ‘সপ্তর্ষি’ কবিতাটি আমার খুব প্রিয় কবিতা। উৎপলকুমার বসুর কবিতা আমার কাছে বড়ো একটা উদ্যানের মতো। এখানে সবরকম আশ্চর্যের বস্তু আছে, লোভের বস্তু আছে, প্রলোভন আছে, আবার এই সবকিছু থেকে দূরে একটা ফাঁকা নির্জন কোণ আছে যেখানে গিয়ে পাঠক একবারটি বসলে অনন্তের অনুভূতি পায়। যেন কোনো কিছুর ভেতর প্রবেশ করছি আমি, যে-জগৎটাকে বিশেষ জানি না আমি। যে-কবিতাটি উল্লেখ করেছি সেটার মধ্যে ‘সুষুপ্তি’ বলে একটি শব্দ ব্যবহার করেছিলেন তিনি। এই শব্দটা আমি প্রথম জানতে পারি প্রশ্ন উপনিষদ পড়ার সময়। তখন শুধু জানতাম তার অন্তর্গত উদ্দেশ্য সাধনা। একটা মানসিক নিবৃত্তির স্তর। 

‘সপ্তর্ষি’ কবিতায় ‘ভয়াবহ’ আর ‘সুষুপ্তি’ পাশাপাশি অবস্থানরত। হ্যাঁ, ওখানেই আবার ‘সাতখানি ঘুম’-এর উল্লেখ আমরা পাই। ‘উদ্বেগ’ শব্দটা কবিতাটিকে দিশা দেওয়া শুরু করে। আর আবিষ্কার করি তিনটি অদ্ভুত শব্দ ‘শূকরবাহিতা’, ‘খগবিলাসিনী’ আর ‘ডিগবাজিপ্রিয়’। পুরো কবিতাটি শ্লেষ এবং ব্যঙ্গ প্রবণতায় সিক্ত। অবক্ষয়ের কবিতা হতে গিয়েও কবিতাটি নিজ মহিমায় এই সবকিছু থেকে সুষুপ্তির দিকে ভয়াবহ হয়ে উঠল। এই জন্য শুধু নয় তার মধ্যেকার উত্তরণ প্রবণতা বাক্য গঠিত করল এমনভাবে যে, এখানে সুষুপ্তির হয়তো নতুন বিভঙ্গ তৈরি হল। অর্থহীন করে দিল সব। কবিতাটি উদ্ধৃত করছি: 

“গভীর উদ্বেগ নিয়ে শুয়ে পড়ি বিছানায়

                 সাতখানি ঘুম

                 আমাকে রয়েছে ঘিরে—

কেউ শূকরবাহিতা, কেউ খগবিলাসিনী, কেউ 

                   ডিগবাজিপ্রিয়

বয়স্য ক্লাউন, তার কুষ্ঠের সঙ যেন, ঐ পেটায় ঢোলক

                                    মাথায় কাগজটুপি

                                      পরনে ইজের

টানে শিল্কী ধরে সাধের ছাগলে—

                                      ওরা 

                         সাতখানি ঘুম আমাকে রয়েছে ঘিরে, বলে

                এখনি সঙ্গে চলো,

বলে—আয়

                গভীর উদ্বেগ থেকে

                          ভয়াবহ সুষুপ্তির দিকে।”

ওলোট-পালোট করে দেওয়া ভূখণ্ড মনে হয়। মনে হয় বহু বছর কোনো মানুষ এমন বোধের কাছে ঋণী হয়ে থাকতে পারে। সে পাঠক হতে পারে কিংবা স্বয়ং কবি। স্রষ্টাকেও অপেক্ষা করতে হয় জীবন তাঁকে কবিতা কীভাবে ফিরিয়ে দেবে। উৎপলকুমার বসুর শেষ কাব্যগ্রন্থ ‘হাঁস চলার পথ’ যেটা জয় গোস্বামী ও প্রশান্ত মাজীর উদ্যোগে তাঁর মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়। সেখানে প্রথম কবিতাটি ‘হাঁস চলার পথ’ শিরোনামে কবি জীবিতকালে অনেকগুলো পত্রিকায় প্রকাশ করেছিলেন। আর প্রতিটি নতুন প্রকাশকালে কবিতাটি বদলে গিয়েছিল নানাভাবে। প্রতিটি কবিতাই একই শিরোনামে প্রকাশিত হলেও সেগুলো আলাদা আলাদা অস্তিত্বের মর্যাদা দাবি করে বলে আমার মনে হয়। সেই কবিতায় ‘হাঁস চলার পথ’ বোঝাতে গিয়ে যেভাবে আস্তে আস্তে মন্থর পদে স্মৃতিকে রোমন্থন করা আর তা নিয়ে আবিষ্কার আছে সেটা বড়ো আশ্চর্যের। সেখানে কবি বাড়ির ঠিকানা ভুলে যাওয়ার প্রসঙ্গ এনেছেন। যদি যুক্তি-বুদ্ধি সহকারে ভাবি তাহলে কবি তাঁর বাড়ির ঠিকানা ভুলে যেতে পারেন না। যতক্ষণ না তিনি ভোলার আপ্রাণ অভিপ্রায় নিয়ে নতুন কোনো ঠিকানার আশ্রয় চাইছেন। অতীত হাতড়ে হাতড়ে একটি হাঁস পরাবর্ত ক্রিয়া যেন। যেখান দিয়ে এসেছিলেন তারই অলিগলি, বিপুল টান আর মিশে যাওয়া— এটাকে গভীরভাবে চাইছেন। তারপর একটা ঘুম। তাঁর বহু কবিতায় ঘুমের প্রসঙ্গ বারবার ফিরে আসে। একে কোনো সংজ্ঞায় বাঁধার চেষ্টা আমি করব না। বরং কোনো অভিপ্রায়হীন মিলিত হওয়া মনে করি। নিজের সঙ্গে নিজেরই মিলিত হওয়া। সেরকই ওই ‘সাতখানি ঘুম’-এর প্রসঙ্গ। ঘুরে ফিরে আসে। যেখানে সময়ের যোগাযোগ কিংবা যোগসূত্র কেবল সময়হীনতার অন্ধকারে। ‘সপ্তর্ষি’ কবিতাটি অনেকবার পড়ে আমি দেখেছি সেখান থেকে সরাসরি কোনো অর্থ কেউ খুঁজে পাবে না। কবি সেখানে ঘুমের তারে বেঁধেছেন জীবনকে। সাতখানি ঘুম আর ভয়াবহ সুষুপ্তির এই অখণ্ড যোগাযোগ যেন চিরকালের বিচ্ছেদ আর সংযোগের কথা বলে। ছিঁড়ে যেতে যেতে ক্রমাগত যে-মানুষ চরম নেয় বিরতির পর আরও একবার ছিঁড়ে যেতে হবে তাকে। অদ্ভুত এই পৃথিবীর নিয়ম। অদ্ভুত যোগসূত্র আমাদের। সবকিছুর সঙ্গে এক বিপুল টান।                                      

এর আগের কবিতাটিই হল ‘তীর্থ’। যেন কবি তীর্থই করছেন। যাত্রা করছেন আবার কোনো সূক্ষ্ম জগতে। আলোহীনতার উদ্দেশে। এখানে কোনো নির্ণায়ক নেই। যে-কোনো পাঠক যেভাবে ইচ্ছে কবিতার অলিগলিতে ঘুরে বেড়াতে পারেন। মানুষের সবার আগে মানস ভ্রমণ। বিচরণ করতে করতে সে শেখে। উৎপলকুমার বসুর কবিতায় বারবার নিত্যদিনের স্মৃতির টুকরো টুকরো মানচিত্র জুড়ে কবিতা হয়ে ওঠে। সেখানে যে-বৃহৎ চিত্রটির খোঁজ আমরা রাখি তার খানিকটাই আমরা পাই। কবি নিজেই ভালোবাসেন তীর্থ করতে। নানা অভিজ্ঞতার মিলিত ফসল তাঁর কবিতা। সেখান থেকে অভিজ্ঞতা সরাসরি লুপ্ত হয়ে কোনো নিরাময় হয়ে আসে নয়তো নির্ণায়ক হয়ে দেখা দেয়। আর বাক্যের ভেতর শাব্দিক গঠনের সূক্ষ্মতা সেই তীব্র বাসনারই প্রতীক। কবি যেভাবে তীব্রভাবে যুক্ত এবং বিযুক্ত হতে চাইছেন। ‘তীর্থ’ কবিতাটির দুই নম্বর কবিতাটি পড়া যাক: 

“যাই সুখের ভিতরে নেমে, সিঁড়ি আছে, আলোও জ্বলছে, অনেক

অনেক বছর পর এই পথে কুয়াশায় দৌড়ে নামছি, বৃষ্টি পড়ছিল,

মহাবীর মন্দির-গুহায় রুপোর টুকরো, ভুল নয় নামার মুহূর্তে

ঠিক এ-ভাবেই দৌড়ে থাকি, সোনার ভিতরে নামি ধাতু ও তামার

উজ্জ্বল দণ্ড কাঁধে, সুখের ভিতরে নামি, হয়ত এমন

জটিল নামার জন্য মনগড়া শর্ত আছে, কেন বা পুরুষ

সুখের সন্ধানে যায় একা একা তারো কানুন রয়েছে, আমরা জানি না,

দৌড়তে ব্যস্ত থাকি, পাথরে পিছলে পড়ি, যাই গাছের শিকড়ে বেঁধে, 

                                             সেখানে ভোরের

আলোর ভিতরে জ্বলছে রাস্তার বাতিগুলি। আজো আমরাই প্রথম এসেছি।”             

‘লোচনদাস কারিগর’ বইয়ের প্রথম কবিতাটি ‘প্রকৃতি’ পড়তে গিয়েই লক্ষ করি একটা সুপ্ত তেজ সুপ্ত কারণ। কেন বেঁচে আছি তারই সুপ্ত কারণ লুকিয়ে আছে। ‘আগুন’ শব্দটি কবিতায় অনেকবার এসেছে। নিজেকে গোপন করে রাখার কবিতা এটি। নিজের গোপন থেকে বেরিয়ে আসার কবিতাও এটি। শূন্যে ভাসমান থাকার প্রসঙ্গ থেকে বহু জটিল আবর্তে কবি ফিরে এসেছেন ভ্রূণরূপী হয়ে। সেখানে নানা চিত্র বারবার ফিরে আসে। নানা আবর্ত নানা অবস্থানের কথা। সহাবস্থানের কথাও আসে। শ্বেত মেষরেখা আর শ্বেত শকুনের ডানা আসে। বুনো হাঁস। ভুলের কথা আসে। এটাই তো চিরন্তন বিভ্রম আমাদের। জড়িয়ে থেকেও কোথায় আবার লুপ্ত হয়ে যাই। শেষে পথের ফাটলের উল্লেখ তো এই আত্মগোপনকেই নির্দেশ করে। আর এই সবকিছুর কোনো যুক্তি কোনোদিন হয় না।                      

‘শীতকাতর ঘুমের ভিতর গভীরতর শীতের ঘুম আছে’ কবিতায় ‘অবরোহিতেশ্বর’-কে সম্বোধন করা হয়েছে। এই কবিতাকে কোন মাপকাঠিতে মাপব? এর কোনো সুরাহা করতে পারব না। ক্রমশ নানা ধরনের ইঙ্গিত কবিতাকে লক্ষ্যের দিকে ঠেলে দেওয়ার গতি করেও কোথাও কোনো অন্ধকার বিজনে পাঠককে নিয়ে যায়। নিশ্চয় আর অনিশ্চয়তার যাত্রা। অনেক কিছু। অবরোহন। সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে বারবার ভাবতে থাকা। পুনরায় সবকিছু হারানোর আশ্বাস আর ধ্বনি। একটু পরই লুপ্ত হওয়া। আর ঘুমের প্রসঙ্গে আবার বলতে ইচ্ছে হয় সেই পুরোনোকে আদিমকে আটপৌরে করে বেঁধে রাখা আরকী। এখান থেকে ভ্রমের উৎপাদন। ভ্রমনাশও এখানেই। 

‘সুখের কথা আর বোলো না’ কবিতাটি টানা গদ্যে লেখা। এখানেও জীবন আছে। গল্প আছে। কোনো বোধের কথা নেই। ইঙ্গিত নেই। শুধুই গল্প। এই বইয়ের অন্য কবিতাগুলো যেমন ‘বিজলীবালা’, ‘তদন্ত’, ‘রক্ষাকবচ’, ‘রণনিমিত্ত হৃদয় আমার’ সবেতেই এই ডায়ালেক্ট লক্ষ করি না। এই নিপাট গল্পের মধ্যে ভীন ভাষার উচ্চারণ প্রবণতাও লক্ষ করি। আরেকটি খুবই উল্লেখযোগ্য দিক হল এই কবিতারই দুই নম্বর কবিতাটি কিন্তু প্রথমটা থেকে অনেকটাই আলাদা। এই হল জীবন যা কবিতায় প্রতিবার খোঁজ করি। এই খোঁজের তীব্র অনন্য প্রয়াস কিন্তু লুকিয়ে থাকে কবি কীরকম ভ্রমের উৎপাদন করেন কিংবা কবিতাকেই জীবনের উপায় বলে বেছে নেন কিনা এর মধ্যে। চলতে চলতে যার ভেতর অসংখ্য অনুপুঙ্খ স্মৃতি উপার্জন করে কবিতা হয়ে ওঠে স্মৃতির দলিল। ইতিহাসচেতনা আমি একেই বলব তাই নয় কি!

      এই কাব্যগ্রন্থের ‘রাক্ষস’ কবিতাটি খুব আলোচিত কবিতা। এর মধ্যে একটা সহজ ইঙ্গিত আর ভাষার আবহে আস্তিত্বিক কথা বলার প্রবণতা লক্ষ করি। কবিতাটি একটু পড়া যাক:

“যেদিন সুরেন ব্যানার্জি রোডে নির্জনতার সঙ্গে দেখা হল।

তাকে বলি : এই তো তোমারই ঠিকানালেখা চিঠি, ডাকে দেব,

তুমি মনপড়া জানো নাকি? এলে কোন্‌ ট্রেনে?

আসলে ও নির্জনতা নয়। ফুটপাথে কেনা শান্ত, নতুন চিরুনি।

দাঁতে এক স্ত্রীলোকের দীর্ঘ, কালো চুল লেগে আছে।”

একেই কি আমি অন্ধকারের কবিতা বলব? চিরুনির দাঁতে লেগে থাকা দীর্ঘ কালো চুল আসলে কিসের প্রতীক হিসেবে ধরব? এখানে কোন উত্তরই পর্যাপ্ত নয়। তাই উত্তরের অপর্যাপ্ত রেশ কাটিয়ে উঠে এই বিভ্রমে মজে থাকার কথাই বারবার মনে হয়। পুনরায় আবার ‘সংসার’ নামক কবিতায় ফিরে আসে ঘুম। এই অবচেতন বারবার মুগ্ধ করে। আর এই মুগ্ধ করার থেকে বেশি বিভ্রম সৃষ্টি করে। এরকম একটি মহৎ বই সম্পর্কে খুব বেশি বলতে ইচ্ছে হয় না। আর এই বইয়ের শেষ কবিতাও সেই পূর্বাপর অনন্তের ইঙ্গিত রাখে।

 

প্রকাশ কাল । ১৯৮২, প্রকাশক । প্রতিবিম্ব

আরও পড়ুন...

Categories
kobita kobita_may

অরিন্দম বারিক

ক বি তা

অ রি ন্দ ম  বা রি ক

সংসার

কথা হয়েছিল প্রথম যে ফুল সূর্যের দিকে তাকাবে

তাতে আমার নাম লেখা হবে,

অথচ সে গাছে কোনোদিন ফুলই ফুটলো না

যে প্রজাপতি প্রথম  সাক্ষাতে  আমাকে

তার মনের কথা বলেছিল

সেও দেখলাম উড়তে উড়তে মেঘের দেশে হারিয়ে গেল

চোখ খুলে যে গ্রামে লালিত হয়েছি

তাকেই নিজের ঘর ভেবেছিলাম

কিন্তু সেটাও  শ্মশান হয়ে গেল মহামারীতে

এখন গঙ্গার পাড়ে বসে ছড় টানি দোতারায়

একটা আধটা  আধুলিতে  রচিত হয় দারিদ্র্য সংসার।

 

কৃষ্ণনাম

তোমার আঙ্গুল জুড়ে লাল চন্দন

বর্ষার ঘন মেঘ, মেঘ ভাঙ্গা বৃষ্টি

শুনেছিলাম ব্রতকথা গুরু পূর্ণিমাতে

ঘাসের ওপর রাখা হাত, স্পর্শকাতর

দিনদিন রাতদিন  টিমটিমে আলো,

উড়ে আসে লোম ওঠা বুড়ো শালিকের পালক…

কতদিন, কতদিন আসনি তুমি

শুনিনি কৃষ্ণকথা, কৃষ্ণচূড়ার বদনাম

ধীরে ধীরে পুড়ে যায় জন্মের  ঋণ

তোমার খাতায় লেখা হয় কৃষ্ণের শতনাম!

আরও পড়ুন...

Categories
kobita kobita_may

সৈকত ঘোষ

ক বি তা

সৈ ক ত  ঘো ষ

অহংকারী সাক্ষাৎকার শেষে

অতিবেগুনি স্বপ্নেরা ক্রমশ একা হয়ে যাচ্ছে। আসলে একটা সময় পর আমাদেরকে একা হয়ে যেতে হয়। রঙের চালাকি শেষে নিভে যায় রংমশাল। এরপর চেনা রাত্রি শব্দ সাজিয়ে দেবে অন্ধকার প্লেটে। গোধূলি ভুলে যাবে ভূমিকা। আমরা সম্পর্ক দিয়ে রচনা করবো অন্ধকার। অন্ধকার দিয়ে ভালো থাকার জ্যামিতিবক্স। ক্ষমতা আর অস্তিত্ব শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানে নিজেকে নির্মাণ করবে অবলীলায়। আরব্যরজনী থেকে বেরিয়ে আসবে শান্ত সিংহ। তার পায়ের তলায় জ্যোৎস্না, কপালে চৈত্রমাস। আমরা একে অন্যের দিকে ভয়ঙ্কর ভাবে তাকিয়ে থাকবো। ক্রাচে ভর দিয়ে হেঁটে আসবে প্রিয় শহর। হে মাহেন্দ্রক্ষণ, অতীতের ধুলো ঝেড়ে উঠে দাঁড়াও আর কিছুক্ষণের মধ্যেই শুরু হবে ট্রাপিজের খেলা।

আবহাওয়া দপ্তর বলছে আজ রাত থেকেই বজ্র বিদ্যুৎ সহ ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা…

অ্যাসাইলাম

তুমি জীবনমুখী হয়ে ওঠার বাহানায় নরকগামী হয়ে গেলে যেদিন

সেদিন প্রথম শর্টসার্কিট হয়েছিল মস্তিষ্কে।

তারপর থেকে আমি নষ্ট দুধে স্নান করি

প্রতিদিন।

ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে কুকুরের মতো ছিঁড়ে নিতে চাই জিভ।

শহরের নিকোটিনে জ্বলে ওঠে তোমার স্বচ্ছতোয়া চোখ।

আমি অন্ধকারকে এপিঠ ওপিঠ করে স্থাপন করি প্রেমের কবিতায়।

তারপর সূর্য নিভে যায়,

সমস্ত অপরাধবোধ ধুয়ে আমি আচমন করি অনিবার্য মৃত্যুকে…

আরও পড়ুন...

Categories
bangladesher_kobita kobita_may

মাসুদার রহমান

ক বি তা

মা সু দা র  র হ মা ন

মহামারির পরে 

সে ঘর ছেড়ে যাবার পর আবারও বিবাহের প্রস্তাব আসে।

এক মহামারির পর এক দুর্ভিক্ষ

 

দ্বিতীয় পক্ষকে বলি, ঘরে খবার কী আছে!

 

সীমানা ছড়ানো প্রান্তরে ছাউনিহীন এক পাকশালা। ঠা ঠা দুপুর।

জলভর্তি হাঁড়ি চাপানো রয়েছে উনুনে।

উকিঁ দিয়ে দেখি, হাড়িতে আস্ত এক সূর্য!

ঝলসিয়ে তাকেই এবার খাব

 

গেরিলা

বৃষ্টির পর ভেজে মাটির উপর পা ফেলবার চিহ্ন রেখে

একটি খরগোস জঙ্গলের গভীরে চলে গেল

 

তার যাওয়ার পথে দিকে মুগ্ধ তাকিয়ে আছি

 

রাত এলো

 

অগনন তারা ফুটেছে আকাশে। ওই যে মিল্কওয়ে গ্ল্যাক্সি, সেখানেও এক গেরিলা

আকাশের এ-প্রান্ত থেকে ও-প্রান্ত পর্যন্ত পা ফেলে হেঁটে গেছে

 

দূর দিগন্তের জঙ্গলের ওদের গোপন আস্তানা

 

প্রিয় নিম গাছ

নিমগাছটির ছায়া বিকেলে বারান্দা পর্যন্ত চলে আসে

 

চা-মুড়ি খেতে খেতে দেখি—

 

আদুরে বিড়াল ছানার মতো নিমগাছটি ছায়া হয়ে উঠে বসেছে

আমার কোলের উপর

আরও পড়ুন...

Categories
kobita kobita_may

অরিনিন্দম মুখোপাধ্যায়

ক বি তা

অ রি নি ন্দ ম  মু খো পা ধ্যা য়

অক্ষম কবিতা

কিছুই পারিনা ঠিকমত

কষ্ট ফেলি

কষ্ট তুলে রাখি

হয়না এভাবে জানি

 

হয়তো ভালো রঙের আকাশ এসে যাবে

অগোছালো এমন বাঁশি নয়

 

দুয়েক পশলা কান্না চেপে রেখে

চলে যাবে রোদ

 

যত্ন ফেলি

যত্ন তুলে রাখি

মনে মনে দূর থেকে বুঝি

পারিনা কিছুই ঠিকমত

 

একটি জীবনমুখী কবিতা

আমি লড়তে পারিনি সহজে

ভাঙা জীবনের দাঁড় বাইছি

মনখারাপিয়া এই মগজে

মৃত শ্রমিকের গান গাইছি

 

যত ফসলের দাম বাড়ছে

চোর অবাধে লুটেছে খাদ্য

ঘাম রাতের আরাম কাড়ছে

ক্ষুধা নয় আর প্রতিপাদ্য

 

দিন বদলে এসেছে রাত্রি

রোজ মুষ্টি ছুড়েছি উর্ধে

লোভ হয় যদি সুখদাত্রী

চোখে আগুন জ্বেলেছি পুড়তে

 

এস চিৎকার করি চরমে

রাগি স্লোগান বুলাই বক্ষে

যারা এখনো মরেনি মরমে

কে করবে তাদের রক্ষে

 

মন নিপুন জাগছে দিনরাত

ভূমিকম্পের শোনো শব্দ

যদি একবার ছোঁও এই হাত

সব শ্বাপদেরা হবে জব্দ

আরও পড়ুন...

Categories
kobita kobita_may

রাজীব চক্রবর্তী

ক বি তা

রা জী ব  চ ক্র ব র্তী

কবি তব মনোভূমি 

তুমি তবে কতটুকু 

ফিরে তাকিয়েছো কোনোদিন 

নিজস্ব অঙ্গনে কতটুকু তোমার ক্ষমতা, 

প্রসারিত হৃদয়ে তুমি 

হাওয়া ভরে একদিন মেঘের ভিতরে 

ফিরে যাবে, ভেবেছিলে

হা ঈশ্বর ! হে করুনাঘন কৃপাময় !

নেহাতই কথার ফাঁকে  

কথা দিয়েছিলে কোনো আপাত 

শান্ত পৃথিবীকে 

ঝড় নেমে আসার বিকেলে…

বিদেশী ভাষার মতো 

অচেনা চিহ্ন কিছু

সাজিয়েছ বুকের পাঁজরে সদাশয়, 

দুই ঠোঁট কেঁপে কেঁপে ওঠে 

               অবিরাম স্থবিরতা 

             কিছুই ঘোচাতে পারোনি 

কিছুতেই মেলেনি উপায়

দশ – কুড়ি বড়োজোর সত্তর বছর 

পার করে একবার চেয়ে দেখো 

নিজস্ব শরীরে 

অতএব, ঠিক কতটুকু 

              তবে তুমি… চেয়ে দেখো 

                                   একবার !

সহবাস 

ভ্রান্তি গুপ্ত সহবাস করে যন্ত্রনার সাথে l

হাতের ভিতরে হাত, 

চোখের ভিতরে জ্বলে চোখ,  

জিভের ভিতরে জিভ খেলা করে…

তারা চুপচাপ সুন্দরবন যায়, 

ডিঙিনৌকো চাপে 

লালকাঁকড়া ধরে 

ভাজামাছ উল্টেপাল্টে খায় 

কড়মড় করে,  

হরিনের চোখ দিয়ে বাঘের থাবার 

                                  দাগ দেখে l

তারপর ডিনারের শেষে মার্কেট থেকে কেনা

গোপন রোগের ওষুধ শেয়ার করে l

আরও পড়ুন...

Categories
kobita kobita_may

অমৃতা ভট্টাচার্য

ক বি তা

অ মৃ তা  ভ ট্টা চা র্য

নিলাম

নিশ্চিত নয় এখনও
দেওয়ালে পিঠ লাগলে
ঈগল শরীর— হিংসে করে কাকে?

ছাদের দরজা খুলে
গড়িয়ে আসা তরল কাচও স্বাধীন।
ওপাশে উন্মুক্ত পিঠ
বিছিয়ে রাখে পুরনো স্কার্টের ঘের—
প্রতিবিম্বময়!

নিশ্চিত নয় এখনও—
ঠিক কতটা বিশ্বাস করা যায় কাচকে!
কতটা সত্যি প্রতিবিম্ব!
কতটা মিথ্যে দেওয়াল আর ছাদ— মধ্যে
বন্দি-মুক্তি খেলা— আর সব বিপণন!

 

ওরাও অপেক্ষায় থাকে
আগাছার পাশে পাশে
সবুজ ফাটল—

জলের বিস্তার পথ
সরীসৃপ লতার নিচে
ঝকমকে গুঁড়ি;
অন্য এক সূত্র ধরে জানলা বেয়ে
শোবার ঘরে, টেলিফোনের তার!

পুরনো রাস্তা —অবাধ চলন;
ছুঁয়ে-আছি বোধে ঠেসাঠেসি ভিড়—
নৈঃশব্দ প্রসূতি হবে মুহূর্ত পরেই!

অপেক্ষায় থাকে ওরা
নিলামে ওঠা কড়িকাঠ, খড়খড়ি—
বন্ধ রাখে চোখ;
ঘন নিঃশ্বাস
কখন আলতো কামড় দেবে মুঠির দিগন্তে!

আরও পড়ুন...

Categories
bangladesher_kobita kobita_may

হাসান রোবায়েত

ক বি তা

হা সা ন  রো বা য়ে ত

মরে গেলে

মরে গেলে—

কোথাও একটা সাইকেল 

থেমে যাবে

হঠাৎ বেলের আওয়াজ

দুপুরের আড়া-জঙ্গল পার হয়ে

ঘুমিয়ে পড়বে

আত্মা ফুলের মায়ায়

খাটিয়ায় শুয়ে শুয়ে মনে হবে

আমিকে ভুলিও না, সোনা 

যেতে হয় বলেই 

মানুষ সাঁকো বানায় নির্জন বিষণ্নতার উপর—

 

মরে গেলে—

সন্ধ্যার নাভিতে লাটিম ঘোরাতে ঘোরাতে 

বাড়ি ফিরবে কেউ

তার স্যান্ডেলে গোরের কাদামাটি 

নিমের সহজ ফুল—

যে ছিল বিস্রস্ত অপেক্ষায় 

দরজায় ঝুলিয়ে বিষাদ 

চলে যাবে ধানপূবালির হাওয়ায় 

অন্যমনষ্ক রোদে  

মনেও রাখিও না, সোনা 

সমস্ত গমখেত ঘুমিয়ে যাবে কুয়াশায় 

মানুষ ভুলে গেলে 

মরণও, ছোট এক পাখির উড়ে যাওয়ার মতন

 

মরে গেলে—

মুছিয়ো না 

আলতার রঙ

ঘরের গোপনে যে বিড়াল

ক্ষুধায় শুয়ে আছে 

পেয়ারা গাছের ছায়ায়

তাকে দিয়ো 

মাখা ভাতের কাড়া

গোরের নিরলে এসে 

ছুঁয়ে দেখো সন্ধ্যার হাওয়া 

দূরে, কোথাও জোসনা ঝরছে মমতায়—

আরও পড়ুন...

Categories
kobita kobita_may

শূদ্রক উপাধ্যায়

ক বি তা

শূ দ্র ক  উ পা ধ্যা য়

দিনযাপন

উত্তরের হাওয়ায় দুলছে একটা চোখ, এখান থেকে

নদী নেমে যাওয়ার কথা বলেছিল কেউ।

বৃষ্টির উল্লাসে কথারা হঠাৎ চুপচাপ,

শুধু প্রেমিকের দৃশ্য বদলাতে থাকে একে একে … 

 

আমাদের দক্ষিণের ব্যালকনিতে

কাজের দিদি ভুল করে জামা কাপড়-এর বদলে

একটা চোখ শুকাতে দিয়েছে আজ…

 

ডাকপিয়নের সাইকেল ক্রমশ এগিয়ে আসছে

কচি কলাপাতা রঙের শাড়ি পড়া মেয়েটির দিকে।

হঠাৎই কেউ রোদ্দুর ঢেকে দিল…

 

লোকটা ক্রমশ পাগল হয়ে যাচ্ছে,

লোকটা ক্রমশ আরও আরও পশ্চিমে সরে যাচ্ছে;…

নদী গর্ভ থেকে গোগ্রাসে তুলে নিই সেই সব কথামালা ,

এতদিন লুকিয়ে রেখেছিলে কেন ?

 

প্রেমিকার ভেজা চুলের ভেতর বিষণ্ণতার ক্ষত জমাট বাঁধছে

 

নেশা হয়

মাঝে মাঝে নেশা হয় – ঘাম জমা হয়

উপত্যকার শরীর চুঁইয়ে মাদাগাস্কার অরণ্যে;

নেশা হয় কবিতার জন্য – প্রেমের জন্য

যেভাবে গাছেদের নেশা হয়…

 

চিৎ হয়ে শুয়ে থাকি ইকুস্ট্রিয়ান দৃশ্যে;

সাঁতরে পার হওয়া কালো কালো অন্ধকারে

অসম্ভবের বৃষ্টি ছিলনা কখনও!

প্রেম হতে হতে ভেসে গেছি শুধু

ওপাড়ার বারান্দায়…

 

সাঁকো; জোয়ারের শব্দেই

ভেসে যায় মাঝে মাঝে,

ভেসে যেতে চায় অকাল বন্ধুত্ব

আর গাঢ় থেকে গাঢ় হয়

কুয়াশা মদির মেয়ে বৈষ্ণবী…

 

তবুও মাঝে মাঝে নেশা হয় উপত্যকার গভীরে,

অরণ্যের ডাল ভেঙে চুঁইয়ে নেমে আসে কবিতারা,

চাঁদ ভাসে নোনাজলে; নেশা হয়ে ফিরে আসে

প্রেমিকার ফেলে যাওয়া বাইসাইকেল।

আরও পড়ুন...

Categories
kobita kobita_may

ঋপণ আর্য

ক বি তা

ঋ প ণ  আ র্য

কে থাকে এখানে

কে থাকে এখানে

আর কেই বা থাকে না

দোকানপাঠ থাকে কিছুকাল

খুচরো পয়সা গোনে রাত

যেহেতু ডানা নেই অন্ধ মানুষে

জানা নেই কান্না আসলে বালিয়াড়ি

শত্রুর চেয়েও যে অধিক মারমুখী 

সেই স্নেহ

হাঁটু গেড়ে  বসে আছে, উনুনমুখী

 

এহেন আগলে আছি

চারিদিকে একঘেয়ে গোঁয়ারে পাহাড়

 

এলোকেশী হাসাহাসি গমগম লাগে

 

ভীরু পোকা বাঁশরী বাজায়

 

গলগল করে চাঁদ

সব জল মহাকাশ

সব তারা দংশন গিলে নেওয়া মাছ

 

এহেন আগলে আছি মাঠের কুহক

 

তুমি তার ছানি কেটে সাড়া দাও

হও হাওয়ার অধিক অকপট

 

চারিদিকে একঘেয়ে গোঁয়ারে পাহাড়

 

এলোকেশী হাসাহাসি গমগম লাগে

 

ভীরু পোকা বাঁশরী বাজায়

 

আরও পড়ুন...