Categories
2021_feb

সিনেমা যখন কবিতা । পর্ব ৪

এ সেপারেশন | সিমিন আর নাদের আর একসঙ্গে থাকবে না ! সিমিনের মতে, তাদের এগারো বছরের কন্যাকে…

সিনেমা যখন কবিতা । পর্ব ৪

অ দি তি   ব সু রা য়

যাওয়ার গল্প

ছবির নাম । এ সেপারেশন

পরিচালক ।  আসগর ফারহিদি

দেশ  ।  ইরান

অভিনয় । নাওমি ওয়াটস, আন্ড্রু লিঙ্কন, রেচেল হাউস

সিমিন আর নাদের আর একসঙ্গে থাকবে না ! সিমিনের মতে, তাদের এগারো বছরের কন্যাকে  ভালো ভাবে বড় করে তোলার উপযুক্ত অনুকূল পরিবেশ ইরানে নেই। ওদিকে নাদের, দেশ ছেড়ে যাবে না। তার অশীতিপর বাবাকে কার কাছে সে রেখে যাবে? সিমিন সে সব মানে না। মেয়ের ভবিষ্যতের জন্য সে এতটাই চিন্তিত যে অন্য কোনও দায়-দায়িত্ব সে মনে রাখতে চায় না। নাদেরের বিরোধীতা স্বত্বেওবাড়ি ছেড়ে চলে যায় সে। ওদিকে তাদের  মেয়ে, বাবাকে ছাড়বে না। নাদের, কিশোরী কন্যা এবং পিতাকে দেখাশোনার জন্য ব্যতিব্যস্ত – শেষ পর্যন্ত, এক সহায়িকা্র সন্ধান পেতে সে হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। স্ত্রীর জন্য তার ব্যাকুলতা কেবল গৃহকাজের ঝামেলা সামলানোর জন্য। তাছাড়া সেও নিজের জেদে অনড়। নানা কাজে ব্যস্ত থাকায় এবং বোরখার কারনে,  ওদিকে বাড়িতে আগত, সহায়িকা মেয়েটি যে অন্ত্বঃস্বত্বা তা সে জানতে পারে নি। এক দুপুরে, অসময়ে বাড়ি ফিরে সে দেখে, বাবা পড়ে মেঝেতে। সহায়িকা উধাও। রাগে- দুঃখে সে মেজাজ হারায়। চরম বাগ-বিতণ্ডার মধ্যে, তাড়িয়ে দেয় মেয়েটিকে। মিসক্যারেজ হয় মেয়েটির। এবার শুরু হয় এক আশ্চর্য কাহিনী – কোর্ট, বিচার, পুলিস, টাকা, দারিদ্র, ইরানের তৎকালীন পরিস্থিতি– সব মিলিয়ে ছবিটি এমন এক উত্তেজনা তৈরি করে দেয়, যে সহায়িকার শিশুকন্যাটির ভীরু এবং করুণ উপস্থিতি প্রায়ই চোখ এড়িয়ে যায়। সে মায়ের কাজের বাড়িতে বই –খাতা বোঝাই ব্যাগ নিয়ে আসে। মাকে হেনস্থা হতে দেখে, চোখ নামিয়ে নেয়। একই কাজ করে হেনস্থাকারীর কন্যাও। বাবার ব্যবহারে লজ্জিত সে।  এক শিশু এবং এক কিশোরীর মধ্যে এক অন্য রকম ভালবাসার সেতু  রচিত হয়ে যায়। রাজিয়া ( গৃহসহায়িকা)-র বাড়িতে অশান্তি শুরু হয় আসল সত্য সামনে আসতেই। 

অভিমান সরিয়ে রেখে,  সিমিন ফিরে আসে, নাদেরকে সাহায্য করতে। অসুস্থ, বিস্মৃতিপ্রাপ্ত বৃদ্ধটি– এইসব টানাপোড়েনের কিছুই বুঝতে পারেন না। অসহায় নাদের, তাঁকেও সঙ্গে নিয়ে বাইরে যেতে বাধ্য হয়! কিন্তু অসুস্থ বাবা বা নাবালিকা কন্যার দায়িত্ব নিয়ে আদালতের মাথা ব্যথা থাকার কোনও কারণ নেই। ফলে, পুলিশ কাস্টডিতে থাকার কারণে, স্ত্রীর সাহায্য তাকে অনেকখানিই আশ্বস্ত করে। এ সেপারেশন, আসলে একটা টাইম ফ্রেমের গল্প– যে গল্প নাদেরের বাবা জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন, রিজিয়া স্বামীর সঙ্গে থেকেও নেই, সিমিন দেশ ও পরিবেশ, পরিস্থিতি থেকে বিচ্ছিন্ন, নাদের আলাদা তার স্ত্রীর থেকে– এই গল্পে আরো একটা ব্যাপার স্পষ্ট।  তা হল, আদতে আমরা সবাই-ই এক, অন্যের থেকে বিচ্ছিন্ন। আলাদা। ফলে কেউই অন্যের জীবনবোধকে অনুভব করতে পারে না– কেউই দাঁড়াতে পারেনা অন্যের যন্ত্রণার জায়গায়। সেখান থেকে শুরু হয় আর এক স্বতন্ত্র যাপনের। সেও বড় ব্যথার– সেখানেও একে অপরকে স্পর্শ করা সম্ভব হয় না। জেদ, আত্ম-কেন্দ্রিকতা এই আধুনিক জীবনের এক অভিশাপ যাকে আমরা মাঝে মাঝে ‘স্পেস’ দেওয়া নাম দিয়ে মর্যাদা দিয়ে থাকি। এ সেপারেশন ছবিতে বারবার এই বিষয়টাতে ফিরে এসেছেন পরিচালক। আমাদের জন্যও।

আরও পড়ুন...