সিনেমা যখন কবিতা । পর্ব ৭
ছবির নাম । ওয়ান্স এগেইন
পরিচালক । কানোয়াল শেঠি
দেশ । ভারত
অভিনয় । শেফালি শাহ, নীরজ কবির, বিদিতা বাগ প্রমুখ
বর্ষায় মুম্বাই ধুয়ে যাচ্ছে – জলে জলে ফুঁসে উঠছে আরব সাগর। নারীটি রান্নাঘরের আঁচে – মশলার ঘ্রাণে – উনুনের উত্তাপে ক্লান্ত মুখ থেকে সরিয়ে দিচ্ছে এক পলক চুলের গোছা। তার খাদির শাড়িতে জীবনের রং। তার কাজল চোখে অভিজ্ঞতার ছায়া। দুনিয়ার চোখে সে এগিয়ে যাচ্ছে বিকেল পেরিয়ে। পুরুষটিও ক্লান্ত। কাজ – জীবন – ভালবাসা ইত্যাদির পথে সেও দেখেছে অনেক। নারীটির রান্না তার ঘরে যায় নিয়মিত। রান্নাঘর থেকে প্লেটের দুরত্ব কম নয়। কম নয় দেখা হওয়ার রাস্তা। তবু দেখা হয়। কথা হয়। আঁচল থেকে অন্ন ও মশলার গন্ধ মুছে গিয়ে অনেক রাতে, এসরাজের মতো বেজে ওঠে বিগত যৌবন দু’টি হ্রদয়। ভালবাসার বয়েস বাড়ে – বয়েস বাড়ে নশ্বর শরীরের। সেই সঙ্গে প্রেমের ইঙ্গিত পেতেই পরিবারের সমবেত ছিছিক্কারে উঠোন ফাটতে থাকে নারীর ঘরে। এবার কী হবে? সন্তানের রোষের মুখে কী করে সেই মা? কী করে সে এড়িয়ে যাবে দীর্ঘদিন অপেক্ষার পরের অবধারিত ধারাজল ? এককালে, এ দেশে নিয়ম ছিল সরে যাওয়া। বাবা-মা হতে হলে ছেড়ে দিতে হয় সমস্ত নিজস্ব উৎসব এবং উদযাপন। বয়েস বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনবিমুখ হতে হবে – নিয়ম করেছিল সমাজ। ছেড়ে দিতে হবে সব – এমনকী নিজেকেও। কারণ, অভিভাবকদের সমাজ অনুমতি দেয় না আনন্দের। অনুমতি দেয় না, ভালো থাকার পাসওয়ার্ড এন্ট্রি করার। এই ছবি, ‘ওয়ান্স এগেইন’ খুব নীচু স্বরে তাকে অস্বীকার করে। অস্বীকার করে ভারতবর্ষের ত্যাগ-তিতীক্ষার অবিচল ধারাকে। উচ্চকিত নিনাদের বাইরে দাঁড়িয়ে তীব্র দৃড়তার সঙ্গে মৃদু গলায় প্রত্যাখান করে এই আত্নপ্রবঞ্চনাকে।
এইখানেই ছবিটি ভিন্ন কণ্ঠে গল্প বলে। আয়ুর আশীর্বাদকে হেলায় হারিয়ে যেতে দেন না পরিচালক কানওয়াল শেঠি। আচম্বিতে মিলে যাওয়া ফোন কলকে পারস্পরিক সাক্ষাত থেকে আরও নিকটে এনে দেয় যে দু’টি মানুষকে, তাঁরা সামাজিক ও পারিবারিক প্রেক্ষিতে একে-অপরের থেকে বহুদূরের অবস্থানকারী। কেবল প্রেমই পারে মেলাতে। মিলিয়েও দেয়। সেতার বাজে – দূর দিগন্তে আলো জ্বলে নেভে – পথে বিক্রি হয় ফুল – পুরুষটি সে সব সংগ্রহে রাখে। উপহার দেয়। রাতের চাঁদোয়ার আড়ালে তারা দেখা করে। মাঝে মাঝেই।
শেফালি শাহ এবং নীরজ কবিরের জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ এই ‘ওয়ান্স এগেইন’ ছবিটি। নেটফ্লিক্সে দেখা যাবে। ২০১৯ সালে জার্মানিতে রিলিজ করেছিল এই ছবি।
সৌজন্য – বর্ষা চক্রবর্তী।