ফেব্রুয়ারি ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার মাস, আবার এই মাস বসন্তের মাসও, ভালোবাসাবাসির মাস, সঙ্গে থাকার মাস কিংবা হয়তো ছেড়ে চলে যাবারও! বাংলা ভাষা অনেক ক্ষেত্রেই আজ অবহেলিত, অনেকে বাংলা বলতে লজ্জা পান। সন্তান বাংলার চেয়ে ইংরেজিতে বেশি স্বচ্ছন্দ, সেটা জানাতেই আজকের পিতামাতা-রা গর্ব বোধ করেন। রফিক, জব্বার, শফিউল, বরকত-সহ সেদিনের সহযোদ্ধারা আজকের দিনের এই চিত্র দেখলে সম্ভবত আবারও অন্য এক আন্দোলন শুরু করতেন। এই সময়ে দাঁড়িয়ে এমন সব মানুষের খুব অভাব টের পাওয়া যায় চারিদিকে তাকালে। তবু ভরসার কথা, বাংলা ভাষাকেই অবলম্বন করে এখনো লেখা হয় সাহিত্য। এই ভাষাকেই কেন্দ্র করে চলে নানা মেলা, সম্মেলন, পাঠ। এই ভাষার যত্নে আরো অঙ্গীকারবদ্ধ হতে হবে আমাদের, এ আমাদের আদরের ভাষা, গর্বের ভাষা, আমাদের প্রেমের ভাষা।
এই মাসের হাওয়ায় অন্য গন্ধ আছে, মন এলোমেলো করা দিন ভেসে আসে রোজ। ঘন রোদের দুপুরে আচমকা পৃথিবীটা শূন্য মনে হয়, ভিড় করে আসে অজস্র মুহূর্তের বাহার। বাড়ি ফিরে কেউ কলম টেনে নেয়, অথবা কেউ ঘুমের ওষুধ… এই মাস দূরে ঠেলে দেয়, কিংবা কাউকে আশ্রয় দেয় কাছে।
দশজন বিশিষ্ট কবির প্রেমের কবিতার পুনর্মুদ্রণে সাজানো আমাদের এবারের ‘হ্যালো টেস্টিং বাংলা কবিতা’র আয়োজন। সঙ্গে রয়েছে বাকি নিয়মিত বিভাগগুলিও। নতুনভাবে শুরু হচ্ছে কিছু বিভাগ। সব মিলিয়ে ভালোবাসা জমে উঠুক কবিতা, গল্প, গদ্য নিয়ে। ভাষা তৈরি হোক বেঁচে থাকার, অধিকার বজায় রাখার।
কবি জয়দেব বসু’র একটি কবিতা এই ভালোবাসার মাসে, এই ভাষার মাসে পড়ে ফেলা যাক-
২১ শে ফেব্রুয়ারি বা ১৯শে মার্চ : তোমাকে
তুমি দেবী চৌধুরানী, আমি ব্রজেশ্বর
আমি তোমার আশকারাতে চণ্ডাল, বর্বর
তুমি আমার গোসল-পানি, আমি কানের দুল
তুমি আমার বেগুন দিয়া ইলশা মাছের ঝুল
তুমি আমার নারায়ণগঞ্জ, আমি রমনার মাঠ
আমি সারেং, অপেক্ষাতে তুমি স্টিমার-ঘাট
তুমি আমার কুণ্ডলিনী, আমি তোমার পীর
তুমি হইলে জয়নাব আর আমি যুধিষ্ঠির
ভালোবাসবো সুফি মতে, বিয়ে করবো কন্ঠী
বদল করে, যদি আমায় পুরুষ ভাবো অন্তিম
কে ঈশ্বর? পাত্তা দিই না, অন্ন আজো ভূমা
ফজর কালে সোহাগ করি, আহ্নিকে দিই চুমা
তোমায় দেখে অন্ধ ভোলা, উন্মাদ অ্যান্টনি
ঈশ্বরেরও অধিক তুমি, ঈশ্বরী পাটনী