Hello Testing

4th Year | 3rd Issue | June-July

৩০শে আষাঢ়, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 16th July, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

সম্পাদকীয়

৩০শে ফাল্গুন, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ | 15th March, 2023

ভরা বসন্ত। ভোর না হতেই কোকিলে কুহু ডাকে মুখরিত হয়ে উঠছে চারদিক। মুখরিত? না কি সেই ডাক আরও বেশি ভরাক্রান্ত করে তুলছে আমাদের… প্রিয় কবি, প্রিয় মানুষ, আমাদের আত্মজন অমিতাভ মৈত্র, অমিতাভদা চলে গেলেন। সদ্য হারালাম সন্দীপদাকে… লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরীর প্রাণ পুরুষ প্রবাদপ্রতিম সন্দীপ দত্ত মহাশয়কে। ভাবতে গর্ব হয়, ভেবে তৃপ্তি লাগে… এই দুটি মানুষকে আমরা পেয়েছিলাম খুব কাছ থেকে।

হ্যালো টেস্টিং-এর প্রথম সংখ্যা থেকে অমিতাভদার বিশ্বকবিতার ধারাবাহিক অনুবাদ আমাদের সাথে সাথে ঋদ্ধ করেছিল আপামর বাংলা কবিতার পাঠককে। ক্লান্তিহীন ভাবে প্রায় এক বছরেরও বেশি সময় ধরে আমরা কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম তাঁর সাথে। নিয়মিত চলত তাঁর সাথে ফোনালাপ। কি অগাধ পান্ডিত্য আর কি অনাবিল সারল্য… তাঁর জ্ঞানের ঔজ্জ্বল্য কখনো কোনো তরুণ চোখে ধাঁ ধাঁ লাগিয়েছে বলে জানা নেই বরং তাঁর পান্ডিত্যের ঝর্ণা ধারায় আমারা সবাই স্নাত হয়েছি দেদার। বাংলা ভাষা আজন্ম ঋণী থাকবে তাঁর এই কৃতি সন্তানের কাছে আর আমরা আজীবন তাঁকে পুরে রাখব হৃদয়ের গোপন কুঠুরিতে। না তিনি তো মাথায় চড়ে থাকতে চান নি কখনো। চান নি স্পট লাইটের চড়া আলো অথবা সর্বভারতীয় বা আন্তর্জাতিক কোনো মঞ্চ। অমলকান্তির রোদ্দুর হওয়ার সাধ ছিল… আর কবি অমিতাভ মৈত্র সেই রোদ্দুর হতে পেরেছিলেন। সকালের নরম লাজুক রোদ্দুর…

আর সন্দীপদা, সন্দীপ দত্ত মহাশয়, লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরীর সূত্র ধরে তাঁকে কে না চেনেন। আমরাও চিনি। কবিতার অনুষ্ঠানে যাতায়াতের সুবাদে আমাদের মুখও চেনা তাঁর। না এর আগে কোনো ঘনিষ্ঠতা ছিল না তাঁর সাথে।  গতবার পুজোর পর পর আমাদের প্রথম মুদ্রিত পুজো সংখ্যাটি সঙ্গে নিয়ে হাজির হলাম তাঁর কাছে। ব্যাগ থেকে বের করছি… উনি এক ঝলক দেখেই বললেন, ‘আমি কিনেছি। আমি সব পত্রিকা কিনি না। বিশেষত বাণিজ্যিক কাগজগুলিকে তো এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করি। আর কোনো কাগজ কেনার আগে আমি সবসময় তার কনটেন্ট দেখি… বাকিটা বুঝে নাও। কিছুটা বাণিজ্যিক ধাচ তোমাদের। ভালো। মন দিয়ে কাজ কর।’ মাথার ভেতরটা গুম গুম করে উঠল। জল এসে গেল চোখে। তাঁর মতো ঋদ্ধ, সোজাসাপটা কথা বলা মানুষ…  এমন কথা বলছেন! না কোনো প্রতিষ্ঠিত মিডিয়া হাউসে কোথাও কেউ এক লাইনও লেখেনি আমাদের পত্রিকা নিয়ে বা লেখার প্রয়োজন বোধ করেনি। কিছুটা ভারি হয়ে ছিল মন কিন্তু পলকে তা পেঁজা তুলোর মতো হাল্কা হয়ে গেল।  সেদিন  আরও কিছুক্ষণ এটাসেটা কথা বলে দ্বিগুণ উদ্যম নিয়ে  ফিরে এলাম বাড়ি। তারপর আরও কয়েকবার গিয়েছিলাম তাঁর কাছে। চোখের সামনে তাঁর অসুস্থতার ক্রমাগত বাড়বড়ন্ত দেখেছি। ইচ্ছে ছিল তাঁকে সঙ্গে কিছু কাজ করার। কিন্তু সময় যে এতটাই কমে এসেছিল তা ভাবতে পারিনি সত্যি।

এখনও যেমন ভাবতে পারি না সৌভিক বন্দোপাধ্যায়, প্রিয় সৌভিকদা আমাদের সাথে আর নেই। এই বসন্ত… কেমন যেন লাগছে এই বসন্ত… কোকিল ডাকছে… তা কেমন যেন তারস্বরে মনে হচ্ছে না? দু’ হাতে কান চেপে ধরতে ইচ্ছে করছে বারবার। পুরুলিয়া থেকে এক বন্ধু জানালেন এইবার পলাশ ফুটেছিল বিগত কয়েক বছরের তুলনায় সাংঘাতিক রকমের বেশি। এসবই কি আমাদের আরও কাঁদানোরই গুপ্ত কোনো চক্রান্ত?

প্রিয়জনদের সাথে বিচ্ছেদ বেদনা বুকে নিয়েই মার্চ সংখ্যা প্রকাশ হল। নানা কারণে দু’দিন বিলম্ব হল। তাঁদের স্মৃতি বহন করে নিয়ে যাওয়ার গুরুভার যে তাঁরা আমাদের উপরেই ন্যস্ত করে দিয়ে গেছেন তাঁদের ভালোবাসার মধ্যে দিয়ে। ভালো থাকবেন সবাই। এই তো কদিনের জীবন। জীবন খুব সুন্দর আর খুব মূল্যবানও বটে…