ভিডিওটি দেখতে ক্লিক করুন ভিডিওর ওপর।
পিনাকী ঠাকুরের জন্ম ১৯৫৯ সালের ২২শে মার্চ হুগলি জেলার বাঁশবেড়িয়ার খামার পাড়ায়। পিতা স্বর্গীয় অমল কুমার ঠাকুর ও মাতা মীরা ঠাকুর। পিতা জড়িয়ে ছিলেন কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে। মাত্র ১১বছর বয়সে তিনি হারান তাঁর বাবাকে। সদ্য কিশোর পিনাকী ঠাকুরের চোখের সামনেই নকশাল নামধারী আদর্শহীন কিছু দুর্বৃত্ত খুন করে তাঁর বাবাকে। বাবার মৃত্যুর অভিঘাত কাটিয়ে এক দিদি ও বিধবা মাকে নিয়ে শুরু হয় কিশোর পিনাকীর জীবনযুদ্ধের লড়াই। কিন্তু সেই অভিঘাত কি আদৌ কাটিয়ে উঠতে পেরেছিলেন তিনি? পরবর্তী কালে তাঁর লেখায় বারে বারে এসে পড়েছে তা। লেখাপড়ায় বরাবরই মেধাবী এবং নিষ্ঠাবান ছিলেন তিনি। কিন্তু অল্প বয়সেই সংসারের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে হয় তাঁকে। তিনি ডানলপ কারখানায় যোগ দেন। কিন্তু পড়াশুনায় বিরতি ছিল না। বাংলায় অনার্স নিয়ে তাঁর পড়াশুনা চলতে থাকে বঙ্গবাসী সান্ধ্য কলেজে। সেই সঙ্গে লেখালিখি। ইঞ্জিনিয়ারিং-এও ভর্তি হন তিনি। যদিও চূড়ান্ত পর্বের পরীক্ষা তাঁর আর দেওয়া হয় নি।
মেতে ওঠেন লেখালেখি নিয়ে। ১৯৭৪ সালে ‘উশীনর’ পত্রিকায় প্রথম তাঁর কবিতা প্রকাশিত হয়। দেশ পত্রিকায় প্রথম কবিতা প্রকাশ হয় ১৯৭৯ সালে। প্রথম বই ‘একদিন অশরীরী’ প্রকাশের পর তিনি বাংলা কবিতার জগতে জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন। ‘চুম্বনের ক্ষত‘ বইয়ের জন্য আনন্দ পুরস্কার প্রাপ্ত হন ২০১২ সালে। এছাড়াও তিনি পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি পুরস্কার ও কৃত্তিবাস পুরস্কারে পুরস্কৃত হন। দীর্ঘ সময় তিনি যুক্ত ছিলেন ‘কৃত্তিবাস’ পত্রিকা সম্পাদনার কাজে। ক্রমশ তরুণ কবিদের কাছে হয়ে ওঠেন পরম ভরসার স্থল। সর্বমোট আঠাশটি কাব্যগ্রন্থ উপহার দিয়েছেন আমাদের। একদিন, অশরীরী, আমরা রইলাম, অঙ্কে যত শূন্য পেলে, হ্যাঁ রে, শাশ্বত, রূপ লাগি আঁখি ঝুরে, বিপজ্জনক, সাত মিনিট ঝড়, জীবন বেঁধেছি হাত বোমায়, কালো রঙের আগুন, বসন্ত মস্তান, মৌসম, শরীর কাচের টুকরো, চুম্বনের ক্ষত, নিষিদ্ধ এক গানের মতো থেকে সর্বশেষ কাব্যগ্রন্থ ন্যুড স্টাডি পর্যন্ত বাংলা কবিতার ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন কবি। রয়েছে একটি ছড়ার বই ‘অঙ্কে যত ১০০ পেলে’ ও অল্প কয়েকটি উপন্যাসও। তাঁর সমস্ত প্রাণ শক্তি দিয়ে সারাটা জীবন দিয়ে তিনি শুধু কবিতার কথাই ভেবেছেন। কবিতাই লিখে গেছেন। মাত্র ৫৯ বছর বয়সে সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ায় ভুগে ২০১৯ সালের ৩রা জানুয়ারি আমাদের ছেড়ে চলে যান বাংলা ভাষার অন্যতম শক্তিমান এই কবি।
এই সংখ্যার জন্য আমাদের বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ কবি সুদীপ চক্রবর্তী, ধীমান ব্রহ্মচারী এবং ‘দাঁড়াবার জায়গা’ পত্রিকাকে। ‘দাঁড়াবার জায়গা’ পত্রিকার পিনাকী ঠাকুর সংখ্যা থেকে তিনটি লেখা এখানে পুনঃপ্রকাশ করা হল। পিনাকীদাকে আমাদের বিনম্র প্রণাম।