Hello Testing

3rd Year | 10th Issue

৩০শে ফাল্গুন, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ | 15th March, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

বি শে ষ  র চ না । পর্ব ৩

ডঃ রূপক বর্ধন রায়

rupak2

কারাবাসের কবিতা: বাংলা অনুবাদে ব্রায়টেন ব্রায়টেনবাখ

( গত সংখ্যার পর )

[‘কারাবাসের কবিতা’ ধারাবাহিকের বর্তমান পর্বটি আজকের অন্ধকার দিনে দাঁড়িয়ে লেখা রণজিৎ অধিকারীর সূর্যের মতো কবিতাগুলোকে উৎসর্গ করলাম]

ব্রায়টেনবাখ-এর “The True Confessions of an Albino Terrorist” বইটায় মোট তেরোটি কবিতার ইংরেজি অনুবাদ রয়েছে। প্রায় প্রত্যেকটা কবিতারই অনুবাদক Denis Hirson। এই সংখ্যায় সেই বই থেকেই তিনখানা কবিতার বাংলা অনুবাদ করা হল।

লেখাচুরি

১৬/৯-এ তার জন্মদিনে

একটা লোক নিজের জন্য একটা কবিতা বানালো-

ও, ঘর আর ছড়া আর ছন্দ আর ইয়াম্ব 

আর জিনিসপত্র, বা একটা নিস্তব্ধ কোলাহল বা একটা খোঁচানোর হাড়

অথবা অন্যান্য কাব্যিক টুকিটাকি দিয়ে এক অভিনব ব্যাপার নয়-

বর্তমান সময়ের মত সামান্য পরিস্থিতিতে 

নয়, পাহাড়-শোষা-চোখ, স্থির প্রহরগুলো, তারা-সহ-গাছ,

স্ত্রী ও সমুদ্র গত- দুঃখজনকভাবে

সমস্ত উপাদান অনুপস্থিত;

তবুও; চতুর্পাশে অদরকারী এটা-সেটা অবশ্যই ছিল-

চেঁছে ও ঝেড়ে নিয়েছিল ও, যা খুঁজে পায় তা নকল করে

আর নিজের নিঃশ্বাস দিয়ে পড়ে থাকা উচ্ছিষ্ট

কিছু একটায় পরিণত করতে চেষ্টা করেছিল-

এমনকি মরুভূমিতেও জিভটার নিজের ছায়া থাকে;

এরপর প্রথমে লোকটা নিজে, তার কাঁধের উপর কুঁজ-

কুঁজখুলি বুড়ো, দাম্ভিক বেবুন,

(তবে সর্বনাশ ইতিমধ্যেই তার শুক্রাণুতে জীবিত – ওটা মৃত্যুর শিল্পের অংশ)

আর এরপর তার হাতের উপরের সাদা চুলগুলো, আর মাছিটা

(আমার নামাঙ্কিত স্তালিন) কারণ একটা খুপরির সর্বস্বে

ওটা সত্যিই এক মেঘ, আর মাসুল-হীন ছুঁড়ে দেওয়া আরো কিছু শব্দ-

১৬/৯ তাকে শক্তি ও আশিসে 

নিয়ে আসে, একের বিরুদ্ধে দশ, অভিন্ন- 

আর ছুটে বেরোনোর সময় তাকে তার প্যান্টকেও

কবিতায় এনে ফেলতে হয়- অনেকের পরা

বেঁটে খাকি হাফপ্যান্টগুলো, এই এখানে কোমরের অংশগুলোয়

অ্যাপেন্ডিক্সের ক্ষতচিহ্নের মত বেগুনি কাপড় সেলাই করা

চামড়ার উপর আংশিক গজিয়ে ওঠা কলঙ্ক, আর তাকে 

বাক্যের শেষে পৌঁছনোর সাহায্যে, নিষ্কলঙ্ক স্টীলে 

তৈরি হাতলে ‘সর্বোচ্চ’ দাগানো (চিবোনো?) চামচটা

(‘আমি অপবিত্র! অপবিত্র!’) (এক মৃত্যুশীল বাহুল্যে ও ভাবনাটাকে গেঁথে বের 

করে)

আর এরপর ছিল এক-পা-ভাঙা-শরীর টেনে আনা পিঁপড়েটা

যেটা কে-জানে-কোথা থেকে ভুলপথে এসেছিল

আর যতিচিহ্নের মত অনুভূতিহীনতার সময়ে

প্রেমের-স্মৃতি

 

হাতের কাছে সমস্ত কিছু ব্যবহারের শেষে

পরে সেই সন্ধেয় ওটাকে স্পষ্ট ভাবে লিখে ফেলার উদ্দেশ্যে

ও সেটাকে পরিষ্কার কাগজে সাবধানে মুড়ে ফেলে

কিন্তু রাত্রি নাগাদ যখন সে উপহারের মোড়ক খোলে

অভিশপ্ত কাগজখানা ততক্ষণে কবিতাটাকে গিলে ফেলেছেঃ

আর লোকটা নিজের কুঁজ আকড়ে ধরে এবং অবিশ্বাসে গুঙিয়ে ওঠেঃ

‘আমার কবিতা, আমার কবিতা – এবার আমার ১৬/৯-এর জন্মদিনে

দেখানোর মতো কি থাকবে!’ 


ইয়াম্ব- একটি ছন্দবিশেষ 

 

শুরু থেকে

কবিতাটার শুরু থেকে আমরা আরো একবার

আগের সমস্ত সময়ের মতো

সমস্ত সময়ের শেষ সীমায় রয়েছি

 

তাকাও

এক অসভ্য বিনষ্ট অঞ্চল থেকে বেরিয়ে

বিশ্বাসযোগ্য যা আছে তাই নিয়ে

এইখানে আমি আমার পথে আসি

জীবনের কাঠ-ছাইয়ে ফুঁ দিতে আসি আমি

আমার ফাঁসিকাঠের আনন্দ আর দিনটার 

জন্য ঝোলা ভর্তি শব্দ নিয়ে আমি আসি

যখন মুখটা ধুলোর মত বোবা

তলোয়ারগুলোর খাপ লালাভ হয়ে জঙ ধরে

মাটির ভিতর কিলবিল করা 

মাছটা বা পোকাটাকে টের পেতে

মাটি আর ইস্পাতের শব্দ স্তবক 

আয়নার শিকড়ে ভরা পিরামিডগুলো

একটা কালো আর তিতকুটে দেশ থেকে

যেখানে শব্দটা কন্ঠ-ফল ও জিভ-খাদ্য

 

আমার ধমনীগুলোয় তলোয়ারজল আর বুলেটরস নিয়ে

এক টিলায় সওয়ার

আমার শরীরের আর আমায়

প্রয়োজন নেই

হাতে স্বত্ব

পাছা থেকে নির্গত দীর্ঘশ্বাস

আত্মা আমায় চালনা করে

ধ্যানে নয় প্রতিফলনে

দৃষ্টিতে নয় স্বীকৃতিতে

ঘোমটা ছিঁড়ে গেছে

আর আমি এক কালো ও অসভ্য দেশ থেকে বেরিয়ে আসি

বা আমি কি সত্যিই এখানে থাকতে পারি?


কারণ আসা অথবা যাওয়া

দুই-ই স্থায়িত্ব বোঝায়

 

জীবন আছে

গাছেদের গায়ের কাঁটায় আবদ্ধ যিশুরা আছে

অযৌক্তিকতায় আক্রান্ত বন্যতার মাঝে নবীরা

পূজারী যাদের চোখ ফোটে সূর্যের নিচে

ফিগ-ফল হাতে একপাশে আলোচনারত বুদ্ধেরা

 

মেঘেদের মধ্যে আছে ক্রমশ সবুজায়িত প্রাণ

আর ডলফিন যারা ঢেউয়ের মাধ্যমে ঝরে যায়

সিগালদের বিচলিত সাহসী চিৎকার

পাহাড়পাঁজরের গায়ে খসখসে খালি পা

 

বাড়বাড়ন্ত হাওয়ার পিছনে খাদের আগুনবক্তৃতা

সরতে থাকা নিস্তব্ধতার মত বরফের ঢাল

স্বর্গে যখন একচুল ফাটল ধরে

আর কালো রূপকথারা সোয়ালো-পাখি ডাভ বেরিয়ে আসে

 

হাড়েরা আছে যারা পৃথিবীকে বেঁধে রাখে

আর আনন্দ যা নশ্বরতা ভেঙে নির্গত হয়

আমি এক ভ্রান্তিকারী এক দিবাস্বপ্নদর্শী হতে পারি

আমি তবু দিনের উজ্জ্বল আলোয় সমৃদ্ধি পাবো

 

রাত্রিজুড়ে আঁশেরা জ্বলেছে

আমিও হয়তো কোনো একদিন বন্দী ছিলাম

কিন্তু এখানে হৃদপিণ্ডের কম্পন চুক্তি স্পষ্ট করা

হয়েছে; এখন থেকে একশো বছর পরে আমরা সবাই উলঙ্গ থাকবো

ক্রমশ

লেখক পরিচিতি :  GE Heathcare-এ বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত, ফ্রান্স-এর নীস শহরে থাকেন। টার্কি-র সাবাঞ্চি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করেছেন। এছাড়াও মার্কিন যুক্ত্রাস্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভারসিটি ও পি এইচ ডির পর বছর খানেক জার্মানির ফ্রনহফার সোসাইটিতে সায়েনটিস্ট হিসেবেও কাজ করেছেন। লেখালেখির স্বভাব বহুদিনের। মূলত লেখেন বিজ্ঞান, ইতিহাস, ট্রাভেলগ, সাহিত্য মনন নিয়েই। কলেজজীবনে বন্ধুরা মিলে “দেওয়াল” নামক কবিতা পত্রিকা চালিয়েছেন কয়েক বছর। এছাড়াও কবিতা, গদ্য প্রকাশ পেয়েছে একাধিক বাঙলা অনলাইন পত্র পত্রিকায়। লেখা লেখি ছাড়াও গান বাজনা, নোটাফিলি, নিউমিসম্যাটিক্সের মত একাধিক বিষয়ে রূপকের সমান আগ্রহ রয়েছে।

আরও পড়ুন...