Hello Testing

4th Year | 3rd Issue | June-July

৩০শে আষাঢ়, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 16th July, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

বি শে ষ  র চ না । পর্ব ৯

নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় থেকে তার পরবর্তী পঞ্চাশ বছরের ফরাসী ও মার্কিনি বিশিষ্ট মহিলা কবিদের এক গুচ্ছ জানা অজানা কবিতা নিয়ে হাজির হয়েছেন বর্তমানে কর্মসূত্রে ফ্রান্স নিবাসী ম্যাডিকেল আল্ট্রাসাউণ্ডের তরুণ বিজ্ঞানী…

রূ প ক   ব র্ধ ন   রা য়

rupak

নারী শহরের সম্পদ

মোনিক উইটিগ (Monique Wittig) ও লে গেহ্রিয়ের (Les Guérillères)

ফ্রান্সের নারীবাদি আন্দোলনের (দ্বিতীয় তরঙ্গ) ইতিহাসে সিমোন দ্য বাভোয়ার  সঙ্গে যে কয়েকজন বিপ্লবী তথা তাত্ত্বিক তথা অ্যাক্টিভিস্ট তথা আভাঁ গার্দ সাহিত্যিকের নাম একই গুরুত্বে উচ্চারিত হয়ে থাকে, মোনিক উইটিগ তাঁদের মধ্যে অন্যতম। মোনিকের জন্ম ফ্রান্সের আলসেস অঞ্চলের Haut Khin কমিউনে। ১৯৫০ সালে মোনিক পড়াশোনার জন্য প্যারিস শহরে চলে আসেন। ১৯৬৪ সালে তাঁর প্রথম উপন্যাস “L’Opoponax” প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গেই “Prix Medicis” পুরস্কার পাওয়ায় দেশজুড়ে তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ১৯৬৮ সালের ছাত্র আন্দোলন ও নারীবাদি আন্দোলনে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েন মোনিক। এমনই উথাল পাতাল রাজনৈতিক সময়ে, ১৯৬৯ সালে, প্রকাশিত হয় তাঁর দ্বিতীয় উপন্যাস “Les Guérillères”।

১৯৭০ সালের মে মাসে মোনিক অন্যান্য তাত্ত্বিকদের সঙ্গে প্রায় আনুষ্ঠানিকভাবেই ফরাসী নারীবাদি আন্দোলনের ম্যানিফেস্টো প্রকাশ করেন। সত্তরের দশকের প্রথম দিকের বেশ কয়েকটি বছর ফরাসী লেসবিয়ান ও নারীবাদি আন্দোলনের মধ্যমণি হিসাবে কাজ করেছেন উইটিগ, নিজের হাতে তৈরি করেছেন Petites Marguerites, Gouignes rouges ও Feministes revolutionnaires -এর মতো সংগঠন। এরপর একই দশকে পর পর প্রকাশিত হয়ঃ

1973 – Le Corps lesbien 

1976 – Brouillon pour un dictionnaire des amantes  (Sande Zeig এর সঙ্গে).  

১৯৭৬ সালে উইটিগ ও জাইগ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। এরপর প্রায় ১০ বছর মোনিক মূলত তাত্ত্বিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে লেখালেখি করেন, যার ফল লেসবিয়ান নারীবাদ নিয়ে তাঁর প্রবন্ধের বই- The Straight Mind এবং Les Tchiches et les Tchouches। এছাড়াও ফরাসী ও মার্কিন নারীবাদি পত্রিকা Questions féministes, ও Feminist Issues এর সম্পাদনা করেছেন একাধিক বছর। মোনিকের যাবতীয় কাজের লিস্ট এই লিংকে দেখা যেতে পারে। 

যেহেতু বর্তমান কাজটিতে Les Guérillères উপন্যাস থেকে অংশবিশেষ অনুবাদ করা হয়েছে, তাই এই নির্দিষ্ট কাব্য উপন্যাস সম্পর্কে কিছু কথা এখানে বলা আবশ্যক। ফরাসী তথা আন্তর্জাতিক নারীবাদি সাহিত্যের ইতিহাসে এই নির্দিষ্ট উপন্যাসটি যে একটি মাইল ফলক সে কথা বললে অত্যুক্তি করা হবে না। Les Guérillères প্রথমবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইংরেজিতে অনুবাদ হওয়ার পর ১০ই অক্টোবর ১৯৭১ সালে নিউ ইয়র্ক টাইমস কাগজে Sally Beauman একটি পাঠ পত্রিকা লেখেন, যেখানে বলা হয়ঃ

 “… With “Les Guérillères,” Monique Wittig achieves another revolution in our understanding this time, of women rather than of childhood. What she has almost miraculously achieved, at one throw, is the first novel (or hymn, for this book is close to epic poetry) of Women’s Liberation. … Her women are les guérillères, a strange, fierce warrior tribe. They live in fortified camps; they fight with knives, rifles, machine guns, rocket launchers. They worship the sun‐goddess, the circle, the vulva. … In short, we are pretty much in the (traditionally masculine) world of the Epic, the world of “The Iliad,” “The Odyssey” and “The Aeneid.””

এই জাদু বাস্তবতা ও বাস্তবিক লিঙ্গ রাজনীতির মিলন এই বইয়ের নিজস্বতা। বইটি জুড়ে একটি কাল্পনিক নারী সমাজের ইতিহাস, পৌরাণিক কাহিনী, এবং রাজনৈতিক লড়াই গদ্য-কবিতার আকারে অনুচ্ছেদ হিসাবে উপস্থাপিত হয়েছে। উপন্যাসে পুরুষদের পরিচয় এবং তাদের সঙ্গে নায়িকাদের লড়াই ও যুদ্ধপরবর্তী বন্ধুত্বের কথা এসেছে একেবারে শেষের দিকে।

উপন্যাসের কাঠামোটিও অত্যন্ত আকর্ষনীয়। কয়েকটি পৃষ্ঠার পর একটি নির্দিষ্ট পৃষ্ঠায় ক্যাপিটাল হরফে লেখা হয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নায়িকার নাম।  অনুবাদের শুরুতে এই ভাঙনকে অনুসরণ করে আমরা বইটিকে অধ্যায় হিসাবে ভাগ করে দেখবো। তাই বেশ কিছু অধ্যায়ের থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পরিচ্ছেদকে সম্পূর্ণ অথবা অংশ হিসাবে অনুবাদ করার চেষ্টা করা হয়েছে যাতে বইটি সম্পর্কে পাঠকের অল্প হলেও আগ্রহ তৈরি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে লেখার কন্টিনিউটি নষ্ট না হয়।  
আমরা দেখতে পাই বইটির একটি প্রধান বিষয়বস্তু “O” অথবা শূন্য বা ভালভাল রিং, যা থেকেই এই কাল্পনিক মিথলজিক নারী রাষ্ট্রের সুত্রপাত বলেই ধরে নেওয়া যেতে পারে- অবশ্য তা এক-এক মানুষের কল্পনায় অন্যভাবেও ধরা দিতে পারে।

এছাড়াও চোখে পড়ে “ফেমিনারিজ” নামক এক ধরণের বই, যার সঙ্গে পাঠক পুরুষতান্ত্রিক সমাজের নানান ধর্ম গ্রন্থের মিল পেলেও পেতে পারেন। মজার ব্যাপার হল বইটিতে লেখিকা ফেমিনারিজের গঠন যেনভাবে উল্লেখ করেছেন, মূল উপন্যাসের গঠনটিও অনেকটা তারই মত। বইটির শেষ পরিচ্ছেদে দেখা যায় বর্তমান সময়ে কিছু নারী যুদ্ধ ও যুদ্ধে প্রাণ হারানো  মিথিকাল নারীদের স্মরণ করছে।

আরেকটি গুরুত্বিপূর্ণ তথ্য- মোনিক সর্বত্র-  Elles- ব্যাবহার করেছেন  Elle নয়। ইংরেজি অনুবাদটির ক্ষেত্রে “”The women” ব্যবহার সে কারণেই আন্তর্জাতিক মহলে বেশ খানিকটা বিতর্কের সুচনা করেছিল। আমরা এই ক্ষেত্রে বেশিরভাগ জায়গাতেই খুব দরকার না পড়লে নারী বা মহিলা কথাটি ইচ্ছাকৃতভাবে ব্যবহার না করার চেষ্টা করেছি।
সবশেষে বলা যেতে পারে, Les Guérillères একটি জেনেসিসের কাহিনী, সমাজ ও সভ্যতার মৌলিক পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে নারী-ঐক্যের পুনঃকল্পনা, একটি বিভাজন ও যাতনামুক্ত সমাজের স্বপ্ন- যেখানে মোনিক বলেনঃ
“…ওরা বলে যে এই সমস্ত গঠন এক সেকেলে ভাষাকে চিহ্নিত করে। ওরা বলে সমস্ত কিছুকেই আবার শুরু হতে হবে। ওরা বলে যে এক প্রচন্ড বাতাস পৃথিবী জুড়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওরা বলে যে সূর্যের অভ্যুত্থান আসন্ন।”

 

কবিতা

অধ্যায় ১ – পরিচ্ছেদ ১

বৃষ্টি হলে ওরা সামারহাউজে বাসা বাঁধে। ছাদের টালির উপর জলের স্পন্দন আর ঢাল বেয়ে নেমে আসা প্লাবনের শব্দ শোনে ওরা। সামারহাউজ ঘিরে রাখে বৃষ্টির আঁচল, বাড়ির কোণগুলো দিয়ে বেশি জোরে জল ঝরে, ঠিক যেমন লাফিয়ে পড়া স্প্রিং যেখানে মাটি ছোঁয় সেখানকার নুড়ি সরিয়ে কিছুটা জায়গা ফাঁকা করে দেয় তেমন। শেষমেশ একজন বলে শব্দটা পেচ্ছাপ করার মতো, যে ও আর অপেক্ষা করতে পারে না, আর উবু হয়ে বসে পড়ে। এরপর ল্যাবিয়া থেকে পেচ্ছাপের নিষ্কাশন দেখবে বলে কয়েকজন ওর চারধারে একটা বৃত্ত তৈরি করে।

অধ্যায় ২ – পরিচ্ছেদ ১

কোথাও একটা সাইরেন বাজচ্ছে। ওর সবুজ শরীর আঁশে আবৃত। ওর মুখ অনাবৃত। হাত দুটোর নীচের অংশগুলোর গোলাপী রঙ। মাঝেমধ্যে ও গান শুরু করে। ওরা বলে ওর গানে শোনার মত কিছু নেই তবে একটা অবিচ্ছিন্ন O। সে কারণেই, এই গানের আবির্ভাব তাঁর থেকেই, অন্য সমস্ত কিছু্র মত যা Oকে, শূন্যকে অথবা বৃত্তকে, ভালভার কঙ্কনকে স্মরণ করায়। 

অধ্যায় ২ – পরিচ্ছেদ ৩

ওদের ছোট ছোট বই হাতে দেখা যায় যাকে ওরা বলে ফেমিনারিজ। ওগুলো হয় মূলটির একাধিক অনুকরণ অথবা নানানরকম আছে। তেমনই একটায় একজন এমন লিপি লিখেছে যা ওরা একে অপরের কানে বিড়বিড় করে আর যা ওদের অট্টহাস্যে প্ররোচিত করে। পাতাভর্তি অবস্থা হলে ফেমিনারি একাধিক খালি পৃষ্ঠা উপহার দেয় যাতে ওরা কখনও সখনও লেখালেখি করে। মূলত, বিভিন্ন সংখ্যার বড় হাতের অক্ষরে ছাপা শব্দে ঠাসা পাতা দিয়ে ওটা তৈরি। মাত্র একটাও থাকতে পারে বা পাতাগুলো তা দিয়ে ভরাট হতে পারে। সাধারণত ওগুলো পৃষ্ঠার মাঝামাঝি বিচ্ছিন্ন থাকে, ভালো ব্যবধানে সাদা পটভূমিতে কালো অথবা কালোর প্রেক্ষাপটে সাদা।

অধ্যায় ৩ – পরিচ্ছেদ ৩ (অংশ)

ওরা বলে যে যাতে আয়নার মত সূর্য তাঁর মধ্যে প্রতিফলিত হতে পারে তাই ওরা ওদের যৌনাঙ্গ উন্মুক্ত রাখে। ওরা বলে যে ওরা তাঁর প্রভা বজায় রাখে। ওরা বলে যে গুপ্তলোম একটা মাকড়সার জালের মত যা সূর্যালোক গ্রহণ করে। ওদের লম্বা লম্বা পদক্ষেপে ছুটোছুটি করতে দেখা যায়। …

অধ্যায় ৪ – পরিচ্ছেদ ৫

ওরা বলে যে দেবী এরিস্টিকোসের একটা পিনের মতো মাথা আর হলুদ চোখ আছে। ওরা বলে যে দেবী এরিস্টিকোস আতর ভালবাসেন। ওঁর সম্মানে এরপর ওরা সুগন্ধী গাছড়া দিয়ে তৈরি গাত্র পোশাক পরিধান করে। রাত্রি এলে প্রত্যেকটা পাতায় শিখা ছুঁইয়ে ওরা ওগুলোয় আগুন ধরায়। ওরা বৃত্তাকারে দলবদ্ধ, ওদের পোশাক অন্ধকারে দ্যুতিময়। ওদের শরীর থেকে হাত দুটো দুই দিকে প্রসারিত করে, ওরা নিশ্চল হয়ে দাঁড়ায়। জ্বলন্ত গাছড়া চড়চড় আওয়াজ করে আর একরকমের গন্ধ ছড়ায়। ধোঁয়ার মেঘ বিচ্ছুরিত হয়। তাপ চামড়া অবধি পৌঁছলে ওরা নির্মমভাবে টিউনিকগুলো ছিঁড়ে ফেলে ও ঢিবির মত জড়ো করে। সে কারণেই ওদের ক্রমাগত নতুন নির্মান চালিয়ে যেতে হবে।

অধ্যায় ১১ – পরিচ্ছেদ ২

ওরা বলে যে ফেমিনারিজ ছাড়াও ওরা সেই সময়ের কথা মনে করতে পারে যখন, সাধারণত ওদের যেমন হয়, ওরা যুদ্ধ করেছিল। ওরা বলে যে ওদের যা করতে হবে তা হল গাছগাছড়া বা জন্তুজানোয়ার নিয়ে তৈরি কথামালার প্রচলিত তথ্যসূত্র ছাড়াই নিজেদের বর্ণনা করার শর্তাবলী আবিষ্কার করতে হবে। ওরা বলে এটা ভণ্ডামি ছাড়াই করা যায়। ওরা বলে যে ওদের যে জিনিসের উপর সর্বোচ্চ জোর দিতে হবে তা হল ওদের শক্তি আর ওদের সাহস।

অধ্যায় ১২ – পরিচ্ছেদ ৩

ওরা বলে যে ওরা নিজেদের শরীরকে তাঁর সম্পূর্ণতায় উপলব্ধি করতে পারে। ওরা বলে যে দেহের কোনো অংশ নীচু যে তা আগে অবৈধ সামগ্রী ছিল ওরা তাঁর পক্ষপাতী নয়। ওরা বলে যে ওরা নিজস্ব আদর্শের কয়েদি হতে চায় না। ওরা বলে যে পূর্ব সময়ে তাদের শক্তি প্রদর্শন করার জন্য প্রয়োজনীয় সঙ্কেত ওরা সংগ্রহ বা তৈরি করেনি। উদাহরণস্বরূপ ওরা ভালভাদের সূর্য চাঁদ তারার সঙ্গে তুলনা করে না। ভালভাদের দীপ্ত রাতের মাঝে কালো সূর্যের মত বলে না ওরা।

অধ্যায় ১৪ – পরিচ্ছেদ ৫ (অংশ)

…ওরা বলে যে এই সমস্ত গঠন এক সেকেলে ভাষাকে চিহ্নিত করে। ওরা বলে সমস্ত কিছুকেই আবার শুরু হতেই হবে। ওরা বলে যে এক প্রচন্ড বাতাস পৃথিবী জুড়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ওরা বলে যে সূর্যের অভ্যুত্থান আসন্ন।

অধ্যায় ১৭ – পরিচ্ছেদ ৩ 

যারা বিরোধী সৈন্যবাহিনীর কাছে প্রতিনিধি হিসাবে গেছে কোনো একজন তাদের কথা বলে। এরা যুবতী যারা সিদ্ধান্তমূলকভাবে আলোচনায় বসে। যারা শান্তির পক্ষে দাঁড়ায় তারা সাদা পোশাক পরে। মুহুর্তের বিশ্রাম ছাড়াই ওরা ওদের বরাদ্দ গন্তব্যের পথে যায়। যাত্রার ধুলোয় ওদের জিভের লালা থকথকে। সেনাবাহিনীরা অদৃশ্য। এক পথের সিদ্ধান্ত হলে অভিযান কতদিন নেবে তাঁর উপর কোনো মনোযোগ দেওয়া হয় না। ওরা মার্চ করে। সূর্য দৃশ্যমান হলে ওরা তার উপর নিজের দৃষ্টি স্থির রাখে। অথবা ওরা চাঁদ বা তারাদের দিকে তাকায়। ওরা জানে না কবে ওরা ওদের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে বিশ্রাম দিতে পারবে আর চোখ বন্ধ করে আলোর থেকে আত্মরক্ষা করে, পারবে ঘুমোতে।

অধ্যায় ১৯ – পরিচ্ছেদ ৩ 

ওরা বলে যে ওরা নিজেদের নিজস্ব শক্তির উপর নির্ভর করতে শিখে গেছে। ওরা বলে যে ওরা নিজেদের ঐক্য-শক্তির ব্যাপারে ওয়াকিবহাল। ওরা বলে, যারা এক নতুন ভাষা আবহবান করে প্রথমে হিংস্রতা শিখুক। ওরা বলে, যারা দুনিয়া পালটাতে চায় প্রথমে সমস্ত রাইফেল কেড়ে নিক। ওরা বলে যে ওরা শূন্য থেকে শুরু করছে। ওরা বলে যে এক নতুন পৃথিবীর প্রারম্ভ হচ্ছে।

অধ্যায় ২১ – পরিচ্ছেদ ৪

ওরা বলে যে ওরা বিশৃঙ্খলাকে তাঁর সমস্ত আকারে ধারণ করে। ধন্দ, ঝামেলা, হিংসা, বিতর্ক, বিশৃঙ্খলা, মন-খারাপ, ব্যাঘাত, অসঙ্গতি, অনিয়ম, ভিন্নতা, জটিলতা, মতভেদ, বিরোধ, সংঘর্ষ, তর্কযুদ্ধ, আলোচনা, বিবাদ, ঝগড়া, বিসংবাদ, দ্বন্দ্ব, হল্লাবাজি, বিপর্যয়, প্রলয়, ব্যাঘাত,  কলহ, আন্দোলন, হাঙ্গামা, উদ্দীপনা, নৈরাজ্য, অরাজকতা।

অধ্যায় ২২ – পরিচ্ছেদ ২

ওরা বলে যে ওরা খরগোশ, বাছুর বা মুরগী খেতে পারে না, ওরা বলে যে ওরা পশু খেতে পারে না, তবে পুরুষ, হ্যাঁ, ওরা পারে। গর্বে মাথাটা পিছনের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে পুরুষ ওদের বলে, দরিদ্র হতভাগা নারী, তুমি যদি পুরুষের মতো খাও তবে মাঠেময়দানে কে খাটতে যাবে, কে উৎপাদন করবে খাবার ভোগ্যপণ্য, উড়োজাহাজ বানাবে কে, তাদের ওড়াবে কে, কে সরবরাহ করবে শুক্রাণু, বইগুলো লিখবে কে, প্রকৃতপক্ষে শাসন করবে কে? এরপর ওরা সম্পূর্ণভাবে দাঁত বের করে, মেয়েরা হাসে।

অধ্যায় ২৩ – পরিচ্ছেদ ১

ওরা ওদের পোষ্য ঘোড়ায় ক্রমাগত টগবগ করে চলেছে। শত্রু সেনার সঙ্গে সমরে শৃঙ্খলহীন হয়েই এগোয় ওরা। ওদের মুখে আর পায়ে উজ্জ্বল রঙ মেখেছে ওরা। ওদের উচ্চারিত চিৎকার এতই তীব্র যে বহু প্রতিপক্ষ কান চেপে সোজাসুজি ওদের দিকে ছুটতে ছুটতে, অস্ত্র ফেলে দেয়। যে কেদার থেকে গিরিপথ শাসন করা যায় ওরা তার উপর দাঁড়িয়ে। এই কৌশলগত অবস্থান থেকে যা ওদের জন্য সম্পূর্ণ সুবিধাজনক ওরা ধনুকে টান দেয় আর হাজারে হাজারে তীর ছোড়ে। এরপর সৈন্য তাদের ক্রম ভঙ্গ করে।

অধ্যায় ২৩ – পরিচ্ছেদ ২ (অংশ)

পুরুষরা মহা বিভ্রান্তিতে ছুটোছুটি শুরু করে, কেউ গিরিপথ থেকে বাইরের দিকে যায়, অন্যরা ওদের প্রত্যনুসরণ করে। পালাতে গিয়ে ওদের একে অপরের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি আর সংঘর্ষ বাঁধে, মৃত ও আহতদের শরীরের উপর ওরা হুমড়ি খেয়ে পড়ে। …

অধ্যায় ২৩ – পরিচ্ছেদ ৪ (অংশ)

ছোট্টো মেয়েরা ওদের রাইফেল নামিয়ে রেখেছে। ওরা সমুদ্রের দিকে যায় আর তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে, ওদের গ্রীবা থেকে নিম্নগামী, বাহুমূলের তলায়, ওদের পিঠ বরাবর ঘাম। অথবা, রোদে হাত পা ছড়িয়ে, ওরা তারস্বরে কথা বলে। কেউ কেউ, স্থির না থাকতে পেরে, বালিতে লাফালাফি করে আর একে অপরের সঙ্গে গুঁতোগুঁতি করে। … ওরা করতালি দেয়।

অধ্যায় ২৬ – পরিচ্ছেদ ৪ 

ওরা বলে যে ওরা এতোই চূড়ান্ত ক্ষোভের সঙ্গে গান গায় যে ওদের সম্মুখে বয়ে নিয়ে যাওয়া আন্দোলন অপ্রতিরোধ্য। ওরা বলে নির্যাতন ঘৃণার জন্ম দেয়। সব দিক থেকে ওদের ঘৃণা ঘৃণা বলে চিৎকার করতে শোনা যায়।

অধ্যায় ২৮ – পরিচ্ছেদ ৪ 

মৃতদের কবর দিয়ে যুবকরা ওদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। লাশগুলো একে একে পাশাপাশি সাজানো, কপালে একটা করে কালো কালির বৃত্ত ধারণ করছে। ওদের অনমনীয় হাতগুলো ওদের শরীরের সঙ্গে আবদ্ধ, ওদের পা দুটো বাঁধা। সমস্ত দেহগুলো মমিকৃত করা হয়েছে আর দীর্ঘকালীন সংরক্ষণের জন্য যত্ন নেওয়া হয়েছে। কবরগুলো মাটি দিয়ে ভর্তি নয়। যে কোনো সময়ে যাতে তুলে আনা যায় তেমন ব্যবস্থার উদ্দেশ্যে পাথরের ফলক দিয়ে বদ্ধ করা হয়েছে। ওরা কবরগুলোর পাশে দাঁড়ায়, ওদের মতই শান্তির পোশাক গায়ে যা গোড়া্লির কাছে ফ্লেয়ার দেওয়া কালো ট্রাউজার এবং বুক জাপটানো সাদা টিউনিক দিয়ে তৈরি, যে পুরুষরা ওদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে তাদের পাশে নিয়ে। একটা নির্দিষ্ট সময়ে ওরা ওদের পদ্ধতি বন্ধ করে এবং যুবকদের দিকে তাকিয়ে তাদের হাত ধরে। এরপর একে অপরের হাত ধরে, উন্মুক্ত কবরগুলোর দিকে সোজাসুজি সামনের দিকে তাকিয়ে, ওরা এভাবে নিঃশব্দে অবস্থান করে। 

অধ্যায় ৩১ – পরিচ্ছেদ ১ (অংশ)

…ওরা বলে যে ওদের ধারণায় সমস্ত কিছু আবার মূল উৎস থেকে শুরু করতে হবে। …

অধ্যায় ৩১ – পরিচ্ছেদ ৬ 

ওরা যুবকদের সঙ্গে দেখা করতে যায়, ওদের গোষ্ঠীরা লম্বা শৃঙ্খল তৈরি করে মেলামেশা করে। ওরা ওদের হাত ধরে আর ওদের প্রশ্ন করে। ওরা ওদের পাহাড়ের উপর সরিয়ে নিয়ে যায়। ওদের সঙ্গে ওরা উঁচু সোপানের সিঁড়ি বেয়ে ওঠে। সোপানের উপর ওরা ওদের নিজের পাশে বসায়। দগ্ধ দুপুরগুলোয় পুরুষরা ওদের গান শেখে। প্রথমবার ওরা ওদের কর্ষিত ফলের স্বাদ নেয়।

অধ্যায় ৩১ – পরিচ্ছেদ ৯ 

যুবকরা ওদের দূর থেকে ইশারা করে। ওদের অভিন্ন নীল পোশাক। ওদের মুখগুলো মোলায়েম ও গোলচে। সান্নিধ্যে এলে ওদের মধ্যে কয়েকজন যুবকদের সম্মানে ওদের সঙ্গে একটা গান জুড়ে দেয়।

অধ্যায় ৩৩ (অংশ)

… যুদ্ধ শেষ, যুদ্ধ শেষ, বলে ওঠে আমার পাশে দাঁড়ানো এক কর্মঠ নারী। ওর মুখ চকচক করে। যখন সব থামে আর আমরা এক প্রকার লজ্জিত নৈঃশব্দে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকি, হলের শেষপ্রান্তে থাকা এক নারী চেঁচিয়ে ওঠে, কমরেডরা, আসুন মুক্তির জন্য যারা প্রাণ দিয়েছে তাদের আমরা স্মরণ করি। আর তারপর আমরা সকলে ফিউনারেল মার্চ গেয়ে উঠি, এক ধীর, বিষাদময়, এবং তবুও সফলকাম বাতাস।

সমাপ্ত

লেখক পরিচিতি :  GE Heathcare-এ বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত, ফ্রান্স-এর নীস শহরে থাকেন। টার্কি-র সাবাঞ্চি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করেছেন। এছাড়াও মার্কিন যুক্ত্রাস্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভারসিটি ও পি এইচ ডির পর বছর খানেক জার্মানির ফ্রনহফার সোসাইটিতে সায়েনটিস্ট হিসেবেও কাজ করেছেন। লেখালেখির স্বভাব বহুদিনের। মূলত লেখেন বিজ্ঞান, ইতিহাস, ট্রাভেলগ, সাহিত্য মনন নিয়েই। কলেজজীবনে বন্ধুরা মিলে “দেওয়াল” নামক কবিতা পত্রিকা চালিয়েছেন কয়েক বছর। এছাড়াও কবিতা, গদ্য প্রকাশ পেয়েছে একাধিক বাঙলা অনলাইন পত্র পত্রিকায়। লেখা লেখি ছাড়াও গান বাজনা, নোটাফিলি, নিউমিসম্যাটিক্সের মত একাধিক বিষয়ে রূপকের সমান আগ্রহ রয়েছে।

আরও পড়ুন...