বি শে ষ র চ না । পর্ব ২
নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় থেকে তার পরবর্তী পঞ্চাশ বছরের ফরাসী ও মার্কিনি বিশিষ্ট মহিলা কবিদের এক গুচ্ছ জানা অজানা কবিতা নিয়ে হাজির হয়েছেন বর্তমানে কর্মসূত্রে ফ্রান্স নিবাসী ম্যাডিকেল আল্ট্রাসাউণ্ডের তরুণ গবেষক…
পনেরোশো শতকে ক্রিস্টিন দে পিজান, সতেরোশো শতাব্দীর আনে ব্র্যাডস্ট্রীট অথবা ১৭৯২ সালে মারি ওলস্টোক্রাফট বিরচিত “আ ভিণ্ডিকেশান অফ দি রাইটস অফ ওম্যান” এর অনুপ্রেরণায় অঙ্কুরিত নারীবাদের প্রথম তরঙ্গ ১৯২০ সালে, তৎকালীন মার্কিন নারীকে এনে দিয়েছিল গণতান্ত্রিক ভোটাধিকার।
কিন্তু তার ৩ দশক পরেও আন্তর্জাতিক কীর্তিবাস নারীর পক্ষ্যে সাহিত্যে, এবং মূলত পুরুষ শাসিত কবিতার জগতে স্বাধীন যাপন ছিল প্রায় অসাধ্য। ১৯৪৯ সালে সিমন দি বাভোয়া রচিত “দি সেকণ্ড সেক্স” সেই বাঁধে চিড় ধরায়, এবং ফ্রান্সে শুরু হয় নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গের উদযাপন। ১৯৫৩ সালে “দি সেকণ্ড সেক্স” মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ইংরেজিতে ভাষান্তরিত হয়। ১৯৬৩ সালে বেট্টি ফ্রিডান লেখেন “দা ফেমিনিন মিসটিক”। এরপর অবশ্য আতর্জাতিক কবিতার আঙিনায় মহিলা কবিদের আরে পিছনের সারিতে বদ্ধ থেকে যেতে হয়নি। কেবল নারীবাদি রাজনীতির বিভিন্ন আঙ্গিক, আবেগ বা ধারাই নয় সে সমস্ত কবিদের কলমে উঠে এসেছে এক সম্পূর্ণ আধুনিক মানবিক যাপন, যেখানে প্রেম, ভালবাসা, অভিমান বা রাগের মত অনুভুতির সাথে সাথেই ধরা পড়ে সুররিয়ালিজম, টাওইজম, অথবা মার্ক্সবাদের দার্শনিক তত্ত্ব। সিমন যেমন বলেছেন “জেণ্ডার ইজ সোশাল”।
নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় থেকে তার পরবর্তী পঞ্চাশ বছরের ফরাসী ও মার্কিনি বিশিষ্ট মহিলা কবিদের এক গুচ্ছ জানা অজানা কবিতাকে বাঙালী পাঠক মননে পৌঁছে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই বর্তমান কাজটির(সিরিজটির) প্রয়াস।
একে একে যেমন উঠে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের ডেনিস লেভেরটোভ, এলিজাবেথ বিশপ, সিলভিয়া প্লাথ, এ্যানে সেক্সটন, ম্যারিয়ান মোর অথবা ফ্রান্সের সিলভিয়া ব্যারোন সুপারভিএলে, মারি ক্লেয়ার ব্যানকার্ট, মার্টিনে ব্রোডা, আন্নে মারি এ্যালবিয়াক ইত্যাদির নাম আবার তেমনই ভাষান্তরিত হয়েছে দ্বিতীয় তরঙ্গের নাম না জানা রাজনৈতিক কিছু কবির কবিতা।
এই অনুসঙ্গেই এই নামটি ” নারী শহরের সম্পদ”। নামটি ক্রিস্টিন ডে পিজানের বই “The Treasure of the City of Ladies”-এরই অনুপ্রেরণার অনুদান।
এই সংখ্যায় আন্দ্রেই শেডিড (Andree Chedid)। নিজের প্রজন্মের এক গুরুত্বপূর্ণ নাম, কাব্যিক চিত্রকল্পের কুশলী এবং একজন বিরামহীন দক্ষ গদ্যকার আন্দ্রেই শেডিড প্রায় ৬০ বছরের অধিক সময় ধরে ফরাসী ও মধ্যপ্রাচ্যের সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন করে এসেছেন। শেডিডের জন্ম ১৯২০ সালে মিশরের কায়রোয় হলেও, তাঁর জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই ফ্রান্সে কেটেছে। ১৯৪২ সালে কায়রোর আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতায় স্নাতক হয়েছেন। ১৯৪৬ সালে স্বেচ্ছায় প্যারিসে এসে ফরাসী নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন এবং ২০১১ সালে প্রয়াণ অবধি সেখানেই ছিলেন।
শেডিডের কাজ মানবিক অবস্থানকে প্রশ্ন করে, এবং মানুষের ঐকিক যাপনের সঙ্গে পার্থিব একান্নবর্তীতার যোগ সৃষ্টির প্রয়াস ঘটায়। তাঁর একাধিক লেখা কেবলমাত্র যুদ্ধবিরতির উদযাপন। লেখিকার প্রথম বই “On the Trails of my Fancy” ইংরেজি ভাষায় রচিত। নিজের কাজ সম্পর্কে আন্দ্রেই বলেছেন “it is an eternal quest for humanity”।
১৯৭৫-এ রয়াল এ্যাকাডেমি অফ বেলজিয়াম থেকে Grand Prize of French Literature, ১৯৯০-এর গুটেনবার্গ পুরস্কার অথবা ১৯৯৬ এর আলবেয়ার ক্যামু পুরস্কার ছাড়াও পেয়েছেন একাধিক পুরষ্কার। ২০০৯ সালে তাকে Grand Officer of the French Legion of Honour প্রদান করা হয়।
নারী যে নিজেকে বস্তু গর্ভের গভীরে নিবিষ্ট করে
নারী যে পৃষ্ট ভাঙে ও দ্রুত বিগত হয়
নারী যে প্রত্যেক বন্দরেই অঙ্কুরিত হয়
নারী যে এক-একটি প্রশ্নেই পাশ বদল করে
নারী যার শব্দ লাগামহীন
নারী যে সমস্ত আশ্রয়-গ্রাসী
নারী যে আয়নাদের ব্যতিব্যস্ত করে তোলে
নারী যার না আছে অন্ত না আছে নাম।
স্বাধীনতা ও সংবিধানে মাতাল
জীবন নিজের মাপে ছোটে
নিজের খেল দেখায়
কয়েকশো কোটি আকারে গ্রন্থিলতা খুঁজে পায়
উন্নত জন্মে প্রস্ফুটিত হতে
নিজের পথে চলে
সবুজ বিকাশের খোঁজে
নিজেকে খতম করে
কোনও পরিশেষ নেই
নেই কোনো নিষ্কলুষ বাগান
স্বত্বের দ্বন্দ্বযুদ্ধে
সময়ের মাংসে
দোরগোড়ায় না পৌছে
আমরা চলেছি আমাদের চলতে হবে
নিরন্তর পথচলাটায়
না আছে আবদ্ধতা
না আছে প্রতিবর্তন
অন্তরঙ্গ খাদের নিচে
যেখানে আমাদের তন্তু এবং আমাদের টিস্যুর কাছে অন্তর্বর্তী বহন স্তব্ধ
আমাদের যন্ত্রণায়
জর্জরিত আমরা ভুলি
যে দূরে কোথাও যে চতুর্পাশে
বিস্তৃতি কম্পমান
আমরা কীভাবে প্রবেশ করবো?
কীভাবে আমরা এই ধ্বংসস্তুপ থেকে উঠে দাঁড়াতে পারি?
আরোপিত ক্ষতির থেকে স্বত্বকে উপড়ে ফেলতে পারি?
কীভাবে আমরা সৌন্দর্যের মাঝে সৌন্দর্যের পুনরুদ্ধার করতে পারি?
একটা ভাঙা হৃদয় নিয়েও
আমরা কিভাবে টিকিয়ে রাখবো
সেই জীবনের অনিশ্চিত
আর অপব্যয়ী খেলা
সদা সচেতন?
গুরুত্বপূর্ণ কাজ-
Le sixième jour (The sixth day), 1960
The Other , 1969
Behind the Faces , 1984
La femme de Job , 1992
Beloved Earth , 2006
Le Sommeil délivré. 1952.
Le Grand Boulevard., 1996; ইত্যাদি।
রূপক বর্ধন রায়
অনুবাদক
GE Heathcare-এ বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত, ফ্রান্স-এর নীস শহরে থাকেন। টার্কি-র সাবাঞ্চি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করেছেন। এছাড়াও মার্কিন যুক্ত্রাস্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভারসিটি ও পি এইচ ডির পর বছর খানেক জার্মানির ফ্রনহফার সোসাইটিতে সায়েনটিস্ট হিসেবেও কাজ করেছেন। লেখালেখির স্বভাব বহুদিনের। মূলত লেখেন বিজ্ঞান, ইতিহাস, ট্রাভেলগ, সাহিত্য মনন নিয়েই। কলেজজীবনে বন্ধুরা মিলে “দেওয়াল” নামক কবিতা পত্রিকা চালিয়েছেন কয়েক বছর। এছাড়াও কবিতা, গদ্য প্রকাশ পেয়েছে একাধিক বাঙলা অনলাইন পত্র পত্রিকায়। লেখা লেখি ছাড়াও গান বাজনা, নোটাফিলি, নিউমিসম্যাটিক্সের মত একাধিক বিষয়ে রূপকের সমান আগ্রহ রয়েছে।