বি শে ষ র চ না । পর্ব ৩
নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় থেকে তার পরবর্তী পঞ্চাশ বছরের ফরাসী ও মার্কিনি বিশিষ্ট মহিলা কবিদের এক গুচ্ছ জানা অজানা কবিতা নিয়ে হাজির হয়েছেন বর্তমানে কর্মসূত্রে ফ্রান্স নিবাসী ম্যাডিকেল আল্ট্রাসাউণ্ডের তরুণ গবেষক…
ক্লেয়ার মালরুর জন্ম ১৯২৫ সালে, দক্ষিণ-পশ্চিম ফ্রান্সের আলবি শহরে, দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে। মালরুর বাবা নাজিদের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা ‘ফ্রেঞ্চ রিজিসস্ট্যান্স’-এর সদস্য ছিলেন। কাজেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে বাবার মৃত্যু এবং যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে পরিবারের অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই তাঁর শুরুর দিকের লেখার একটি বিরাট অংশ জুড়ে রয়েছে। ১৯৩৬ সালে বাবার হাত ধরে দক্ষিণ ফ্রান্স ছেড়ে প্যারিসে চলে যান মালরু। সেখানেই বিখ্যাত École Normale Supérieure-এ পড়াশোনা শেষ করেন। তার পর অবশ্য জীবনের বেশিরভাগ সময়টাই কাটিয়েছেন প্যারিসে।
যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে অবশ্য অল্প কিছু সময় ইংল্যাণ্ডে ছিলেন। সেখানেই ইংরেজি ভাষার প্রেমে পড়েন এবং পরবর্তী সময়ে একটানা বহু সমসাময়িক ইংরেজি ভাষার কবিকে ফরাসী ভাষায় অনুবাদ করেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন এলিজাবেথ বিশপ, ডেরেক ওয়ালকট, সি কে উইলিয়ামস, অ্যান কারসন, ওয়ালেস স্টেভেন্স, চার্লস সিমিক প্রমুখ। এছাড়া এমিলি ডিকিনসনের অনুবাদ মালরুকে এনে দিয়েছে Grand Prix National de la Traduction পুরস্কার এবং ১৯৯৯ সালে Chevalier de la Légion d’honneur খেতাব।
গদ্য ও কবিতা মিলিয়ে মালরুর নিজস্ব বইয়ের সংখ্যা মোট ১১। তার মধ্যে সাতটিই প্রকাশিত হয়েছে ২০০০ সালের পর। তাঁর লেখার তিনটি দ্বিভাষী এ্যান্থলজি-ও প্রকাশিত হয়েছে মার্কিন-যুক্তরাষ্ট্রে।
মালরুর লেখার ভাব, ভাষা এবং গঠন মূলত ফরাসীতে হলেও ডিকিনসন সহ ইংরেজি ভাষার বহু কবি লেখকের প্রভাব তাঁর কাজে স্পষ্ট। মালরু এমন একজন অপ্রথাসিদ্ধ সাহিত্যিক, যাঁর লেখায় ইংরেজি ও ফরাসী এই দুই ভাষার বুননের প্রভাবই সমান। ফরাসী কবিদের মধ্যে জঁ ফোলাঁ, ইভস বোনেফয়, এবং মালার্মের প্রতি মালরু অগাধ সম্ভ্রম প্রকাশ করে থাকেন। তাছাড়া ডিকিনসনের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ব্যাপারে নিজেই একাধিকবার বলেছেনঃ
“an encounter with the uncanny,” এবং “the awakening of a “personal affinity.”
শব্দ মর্মভেদী
বৃষ্টি
যা প্রবাহিনী ও
আলসে গুঞ্জনকে গর্ভাধান করে
ওরা ওড়ে
ঈগলের থেকে উঁচুতে
এবং ওরা ফেরেশতা
ওরা খসে পড়ে
এবং ওরা নুড়ি
স্মৃতিতে লালাভ বৃত্তের
পদাঙ্ক অনুসরণকারী
বীর্য
দিনের চাদরগুলোর ফাঁকে
মৃত্যুহীনতার অক্ষিবিভ্রম
উপভোগ করে
অট্টহাস্য, একটা ভারী দীর্ঘশ্বাস, দিগন্তে আঘাত হানে
কিছু একটা অভিমুখে ছুটে যায়, পাতলা হওয়া রামধনু
ছিটিয়ে দেওয়া ধুলো, উলের জড়ানো
সুতো পুরনো বাসার রঙ
কিংবা ইউইয়ের দল যা কারো চোখে পড়তো
রাজধানীর মিনারগুলোর অদূরেই, তড়পানো
একটা দ্বীপে উঁচু পীচ গাছটার ছায়ায়
যেখানে জংলী আপেল গাছগুলো ওদের হাত মুচড়ে দেয়
কিন্তু মানুষের কাছে এমন এক বাগিচার আর চাহিদা ছিল না
মাটিতে নিজেদের মুকুট খুঁজতে খুঁজতে
পাখিরা হিরের মত ঝরে পড়েছিল
সমুদ্রের পোশাকের তলায় গুনগুন করেছিল বাতাস, পাতলা
উপড়ে নেওয়া, সাদাগুচ্ছ; চুল
এক থোকা কম্পমান পালক
একে একে ছিঁড়তে ছিঁড়তে, ও আমায় ভালবাসে, ও ভালবাসে না আমায়
এভাবেই সমস্ত কিছু তাকে ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় হাড় দীনতায়
চামড়া খসে নির্গত হয়, শ্লেষ্মা বা মেডুসা
বালির উপর কর্দমাক্ত জলের ছায়া
বিদ্যুৎ ও বাতাসের সঙ্গীত, তারাদের বিশৃঙ্খলা
ভাসমান অপেরাদের টুকিটাকি থেকে বহুদূরে
সমতলের গোলমাল ঘিরেই আমার চলাফেরা
বাকলের আঁশ, আঁকিবুঁকি কাটা কোটি কোটি পাতা
সাপের চেরা জিভ
যেন কালো আঙুরের রস দিয়ে এমন এক ক্ষার সম্পাদন করতে পারি
যা দিয়ে সমস্ত কিছুকে মুছে সাফ করে ফেলা যায়
প্রত্যেকটি পরমাণুতে এক কদাকার উজ্জ্বল দেবদূত উন্মুক্ত করতে পারি
যা মূর্তির সোনায় পেরেক মারা প্রজাপতি হবে না
অথবা হবে না কয়্যার দলের পিছনের ব্যারক চন্দ্রমল্লিকা
প্লাস্টার কাজের মাঝে হারিয়ে যাওয়া
কালো ভেড়ার পালকে পথ দেখান রাখালের চুল
আমার দেবদূত শ্বাশত নন, আমি তাঁর হাত ছুঁয়েছি
এবং কিছুটা চোখের জল ঝরিয়েছি তাঁর পায়ের উপর
রামধনুতে পুনর্জন্ম পাওয়া কালপুরুষ
ফুলেদের বরফ, বৃষ্টিধারার জন্মস্রোত
ভোরের মার্বেল পাথরের পাদদেশে উষ্ণ হওয়া
আলোকিত বনবীথির ছায়া
সমুদ্রের স্তন নীলাভ করা, দুই জলভূমির মাঝে
সাঁতরানো, দুই বাতাসের মাঝে বহমান
নিঃসাড়, দু’টি শব্দের মাঝে ভাসমান, আমার গলা,
আমার ঠোঁট ছুঁয়ে যাওয়া, অপ্রত্যাশিত কিছু করে ফেলা
নেকড়ের মত সন্ধ্যায় ঘনতর
নৈঃশব্দে সে নির্লিপ্ত হয়ে যায়
আমার আর কখনই ওর মুখ ওর পাখি-গ্রীবা জানা হবে না
দুটো খাদের মত ওর চোখ
সমুদ্র খেলাগুলো
এই নদীগুলোর ধার ঘেঁষে লেখার সর্পিলতা
সৈকতের ঢাল
ছাড়িয়ে যাবে না
প্রকৃত পাঠ্য সুদূরে নির্ঘোষিত
নিজের শরীরে চেপে ধরা
দুর্ভেদ্য
ঘূর্ণি
শব্দ চলাফেরা করে অগ্রসর-সূত্রে
জীবন-পদচিহ্নের সাথে
ছড়ানো ব্যথা ও
দূরগত অন্তঃসারের মাঝে
অজ্ঞানান্ধ
বাদাম শাঁসের হৃদয়
কখনও হাতটা যখন
শক্ত কিছু ছুঁয়ে ফেলে
বিচরণ নিজের আবরণ সরায়
আর তার উদ্ভাসকতায় ভাষা
ছলনাময়কে একত্রিত করে
গুরুত্বপূর্ণ কাজ-
Traces, furrows , José Corti, 2009
The Woman Without Words , The Astral Beaver, 2006
Neither so distant , the Astral Beaver, 2004
Suspense , the Astral Beaver, 2001
Reverdir , Rougerie, 2000
Old Sun , Astral Beaver, 1998
রূপক বর্ধন রায়
অনুবাদক
GE Heathcare-এ বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত, ফ্রান্স-এর নীস শহরে থাকেন। টার্কি-র সাবাঞ্চি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করেছেন। এছাড়াও মার্কিন যুক্ত্রাস্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভারসিটি ও পি এইচ ডির পর বছর খানেক জার্মানির ফ্রনহফার সোসাইটিতে সায়েনটিস্ট হিসেবেও কাজ করেছেন। লেখালেখির স্বভাব বহুদিনের। মূলত লেখেন বিজ্ঞান, ইতিহাস, ট্রাভেলগ, সাহিত্য মনন নিয়েই। কলেজজীবনে বন্ধুরা মিলে “দেওয়াল” নামক কবিতা পত্রিকা চালিয়েছেন কয়েক বছর। এছাড়াও কবিতা, গদ্য প্রকাশ পেয়েছে একাধিক বাঙলা অনলাইন পত্র পত্রিকায়। লেখা লেখি ছাড়াও গান বাজনা, নোটাফিলি, নিউমিসম্যাটিক্সের মত একাধিক বিষয়ে রূপকের সমান আগ্রহ রয়েছে।