Hello Testing

4th Year | 2nd Issue

৩১শে বৈশাখ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 15th May, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

বি শে ষ  র চ না । পর্ব ৬

নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় থেকে তার পরবর্তী পঞ্চাশ বছরের ফরাসী ও মার্কিনি বিশিষ্ট মহিলা কবিদের এক গুচ্ছ জানা অজানা কবিতা নিয়ে হাজির হয়েছেন বর্তমানে কর্মসূত্রে ফ্রান্স নিবাসী ম্যাডিকেল আল্ট্রাসাউণ্ডের তরুণ বিজ্ঞানী…

রূ প ক   ব র্ধ ন   রা য়

rupak

নারী শহরের সম্পদ

হেলেন কাদো ( Helene Cadou)

জন্ম | ৪ঠা জুন, ১৯২২, মেসকের (লোয়ার-আতলান্তিক)

মৃত্যু | ২০শে জুন ২০১৬, নানতেস।

111313411

বিখ্যাত ফরাসী কবি ‘রেনে গুই কাদো’-র স্ত্রী হেলেন কাদো তাঁর জীবনের মূল সময় রেনে’র উপর কাজের মাঝেই কাটিয়েছেন।  কিন্তু তাঁর কাজকে শুধুমাত্র সেই পরিসরটুকুর মধ্যে থেকে মূল্যায়ন করলে ভুল হবে। 

দর্শনতত্ত্বে পড়াশোনা শুরু করলেও ১৯৩৮ সালে টিউবারকুলসিসে রোগগ্রস্ত হওয়ার কারণে উচ্চশিক্ষায় বাধা পড়ে। সুস্থ হওয়ার পরে হেলেন কবিতায় নিজেকে নিমজ্জিত করেন, এবং সেই সময়েই রেনের কবিতার সঙ্গে পরিচয় ঘটে যুবতী হেলেনের। ১৯৪৩ সালে কিছু বন্ধুদের সঙ্গে করা “Sillages” নামক একটি কবিতা সংকলনে প্রথম নিজের কাজ প্রকাশ করেন। লেখা প্রকাশিত হয় ‘ক্লেয়ার জরদান্ন’ এই ছদ্মনামে। এই কাজ ও বন্ধুদের হাত ধরেই প্রথম রেনের সঙ্গে পরিচয় ও ধীরে ধীরে প্রণয়। ১৯৪৩-১৯৪৪ এই একটি বছর হেলেন নিজের বোনের কাছে বোরদুতে কাটান। রেনের বিভিন্ন কাজে – মূলত ‘লরমঁ’ ও ‘রু দু সাং’ লেখাদু’টিতে বোরদুতে চলা সেই তরঙ্গায়িত প্রেমের ছোঁওয়া মেলে। এরপর ১৯৪৬ সালের ২৩ এপ্রিল দু’জনে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। এই সময় থেকে ১৯৪৯ পর্যন্ত খুব অল্পই লেখালেখি করেছিলেন হেলেন। ১৯৫১ সালে রেনের মৃত্যুর পর ওরলিয়ঁন-তে লাইব্রেরিয়ান হিসাবে কাজ শুরু করেন। রেনের বহু গুরুত্বপূর্ণ বন্ধুদের সাহায্যে ওরলিয়ঁন শহরে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন হেলেন। 

১৯৫৬ ও ১৯৫৮ সালে হেলেনের প্রথম দু’টি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশিত হয়। তারও প্রায় দুই দশক পরে কবি হেলেন কাদো আমাদের সামনে সম্পূর্নভাবে প্রস্ফুটিত হন। ১৯৭৭ থেকে ২০০৩ সালের মধ্যে প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ২৩। এই একই সময়কালে দর্শনশাস্ত্রে পড়াশোনা শেষ করেন। মাস্টার ডিগ্রির থিসিসের কাজও রেনের কবিতায় মৃত্যু চেতনার উপর। ১৯৮৭ সালে রিটায়ারমেন্টের পর নিজের কাব্য সাধনা ছাড়াও রেনের কবিতা আরও বহুল পরিমাণে মানুষের মাঝে নিয়ে আসার চেষ্টা করে গেছেন। ১৯৯৩ সালে নানতেস শহরে ফিরে আসার পর সরকারের সাহায্যে মিডিয়া লাইব্রেরির বাড়িটিতেই ‘Center René-Guy-Cadou’ তৈরি করেন। ২০০৮ সাল অবধি নানতেস ও রেনের স্মৃতি-সমৃদ্ধ লুইফার্ট শহরের মধ্যে ভাগাভাগি করে জীবন কাটিয়েছেন। আরও কিছু বছর পর লুইফার্ট স্কুল  “La Demeure René-Guy-Cadou”, a writer’s house museum-এ রূপান্তরিত হয়। ২০১৯ সালে সেই স্থাপত্যের নামকরণ হয় “Demeure René Guy et Hélène Cadou”, museum and place of residence of artists and writers। 

হেলেন তাঁর নিজের এবং রেনের সমস্ত কাজের পুথি নানতেস শহরকে দান করে যান। সেই সমস্ত কাজ নানতেস মিউনিসিপাল লাইব্রেরিতে বহু যত্নে রাখা রয়েছে। জীবনের শেষের দিকে তাঁর ও রেনের একসঙ্গে কাটানো জীবন নিয়ে একটি স্মরণিকাও প্রকাশ করেন।

প্রধান কাজ

  • HAPPINESSOF THE DAY, ১৯৫৬
  • Cantata of the interior nights,  ১৯৫৮
  • The pilgrims seeking clover, ১৯৭৭
  • Long rains from the West , ১৯৮৩
  • Poems of Time Rediscovered , ১৯৮৫
  • The memory of water, ১৯৯৩
  • A whole life: René Guy Cadou, death, poetry, ২০০৩

হেলেন কাদোর কবিতা

দৌড়ের মাঝে…

সময়ের কাল-ছুটে

একটাই মুখ থেকে যায়

ছবি নষ্টের কালে

বর্তমান প্রাসঙ্গিকতার খোঁজে

আমি যার কাছে যাই

 

সে তোমার চাহনি যা আমায় গভীর বনে

পথ দেখায়

তোমার কথা যা আমার দেয় আচ্ছাদন 

দেয় রঙ ও স্বচ্ছতা

তোমার কাছে কি আমি আমার মতো কথা বলি

স্বপ্ন ও যাদুর অগোছালো ভয়গুলোর ভিতর

তুমি গভীরে প্রবেশ করো

 

যে মুহুর্তে আমি তোমায় খুঁজে পাই

আমাদের জীবন আবারও মিলিত হয়

আমরা বাস করি একই আস্তানায়

পৃথিবীর গ্রীষ্মের উপর প্রস্ফুটিত হই

মরণশীল বিভাজনের ওপাশে

উষ্ণ নাভির পৃথিবী অন্তহীন আকাশ।

 

তারপর তুমি আমায় দাও গম

আর চিরজীবী কালঝর্ণার থেকে

এই এক মিনিট

শাশ্বত বসন্তের অশ্রুর মত

আমাদের লহু-মুক্তির সমন্বয়।

শরীরটা…

শরীরটা এলোমেলো জঙ্গল

যেখানে ব্যথা ও রক্ত মাংসের

দুর্ভেদ্য বয়নের ভিতর

কথার ঘনত্ব বাড়ে

কিন্তু চামড়ার অভ্যন্তরে সোহাগ

এক শব্দের খসড়া এঁকে দেয়।

প্রতীক ও খিঁচুনি প্রদান করে অর্থ।

 

উন্মুক্ত হৃদয়ে…

উন্মুক্ত হৃদয়ে

আমাদের জীবন

একটা বইয়ের মতো

 

এক বিস্মিত শিশুর

বিবর্ণ ভীতি নিয়ে

তুমি বলেছিলে

সে তো কালপূর্বে

নির্দিষ্ট ছিল

 

কিন্তু আমি উল্টোদিকে পালটে ফেলি পাতা

টুকরো করি সময়

 

কারণ বিশৃঙ্খল লাবণ্যের মাঝে

তোমার শব্দ-সীমা বিস্ফারিত হয়

 

যাতে ইতিহাসের আগ্রহ

তার রাজকীয় সীলমোহর

 

আজ

তুষার অগ্নি

ও তোমার শরীরের আঁকিবুকি

 

আজ সেদিন

উৎসহীন অপার মাটি থেকে

যেদিন তুমি আমার কাছে পৌঁছে যাও

 

প্রান্তসীমায়…

প্রান্তসীমায়

মৌমাছিদের সুদূর গুঞ্জন ছাড়া আর

কিছু নয়

 

ম্লান হতে থাকা এক পদক্ষেপ

 

একটা পাতা তার গাছ ছেড়ে গেছে

এক প্রতিবিম্ব তার উপকূলে টিকে থাকে

 

প্লাবনের মত আসে 

পবিত্র দিন

শূন্যতার প্রান্তে

আর অপেক্ষমানতা নেই

 

প্রথম চাহনি থেকেই সব

সেখানে বিদ্যমান

 

চিরন্তন নিস্তব্ধতার উপর

সম্পূর্ণ ফোকাস

 

সেই মহান স্বচ্ছতা…

সেই মহান স্বচ্ছতা

যা তোমার কাছে এসেছিল

 

এই স্থানে

 

রুগ্ন ঘরটায়

দাগানো সময়ের

এই দিনে

 

কয়েকশো বার

তুমি তাকে হারিয়েছ

পেয়েছ খুঁজে

 

হারিয়েছ

 

তা কখনও 

না বুঝে

শূন্য গভীরতার চেয়েও

স্বচ্ছতা

কত স্পষ্ট ভাবে প্রদত্ত

 

তোমার কবিতার ছাদে

সেই ধোঁয়াশা

সেই নোনতাভাব

সেই অনস্তিত্ব

 

তোমার জন্য এক সংরক্ষিত পৃথিবী

উন্মোচিত করে

* ক্রমশ  

লেখক পরিচিতি :  GE Heathcare-এ বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত, ফ্রান্স-এর নীস শহরে থাকেন। টার্কি-র সাবাঞ্চি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করেছেন। এছাড়াও মার্কিন যুক্ত্রাস্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভারসিটি ও পি এইচ ডির পর বছর খানেক জার্মানির ফ্রনহফার সোসাইটিতে সায়েনটিস্ট হিসেবেও কাজ করেছেন। লেখালেখির স্বভাব বহুদিনের। মূলত লেখেন বিজ্ঞান, ইতিহাস, ট্রাভেলগ, সাহিত্য মনন নিয়েই। কলেজজীবনে বন্ধুরা মিলে “দেওয়াল” নামক কবিতা পত্রিকা চালিয়েছেন কয়েক বছর। এছাড়াও কবিতা, গদ্য প্রকাশ পেয়েছে একাধিক বাঙলা অনলাইন পত্র পত্রিকায়। লেখা লেখি ছাড়াও গান বাজনা, নোটাফিলি, নিউমিসম্যাটিক্সের মত একাধিক বিষয়ে রূপকের সমান আগ্রহ রয়েছে।

আরও পড়ুন...