বি শে ষ র চ না । পর্ব ৭
নারীবাদের দ্বিতীয় তরঙ্গের সময় থেকে তার পরবর্তী পঞ্চাশ বছরের ফরাসী ও মার্কিনি বিশিষ্ট মহিলা কবিদের এক গুচ্ছ জানা অজানা কবিতা নিয়ে হাজির হয়েছেন বর্তমানে কর্মসূত্রে ফ্রান্স নিবাসী ম্যাডিকেল আল্ট্রাসাউণ্ডের তরুণ বিজ্ঞানী…
সিলভিয়ার জন্ম ১৯৩৪ সালে, আর্জেন্টিনায়। মাতৃভাষা আর্জেন্টিনিয়ান হওয়ার কারণে এই ভাষায় লেখার শুরু করেন। প্রথম দিকে কবিতা ও ছোটো গল্প লিখতেন। ১৯৬১ সালে প্রথম বার অল্প কিছু দিনের জন্য ফ্রান্সে আসেন, তার পরেই কয়েক দশক এখানেই কাটান। ফ্রান্স তখন ছাত্র আন্দোলন ও নারীবাদী আন্দোলনের দ্বিতীয় তরঙ্গে উত্তাল। এর কয়েক বছরের মধ্যেই ফরাসী ভাষায় লেখালেখি শুরু করেন সিলভিয়া।
১৯৭০ সালে Maurice Nadeau র হাত ধরে Les Lettres nouvelles পত্রিকায় এক গুচ্ছ কবিতার মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ ঘটে। এর পর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ১৯৭৫ সালের পর থেকেই সমস্ত বিখ্যাত ফরাসী পত্রপত্রিকা ও প্রকাশনা সংস্থায় জায়গা হতে শুরু করে তাঁর। ১৯৮৩ সালে “গ্রানিত এডিশান” থেকে তাঁর ফরাসী ভাষার প্রথম কাব্যগ্রন্থ La Distance de sable প্রকাশিত হয়।
ফরাসী ভাষায় লেখালেখি করা ছাড়াও বিভিন্ন আর্জেন্টিনীয় লেখক-কবি’র কাজকে ফরাসী ভাষায় অনুবাদ করেছেন সিলভিয়া। যেমন, Marguerite Yourcenar – এর নাটক ও কবিতার অনুবাদ সিলভিয়ার তরফে ফরাসী সাহিত্যে এক বিরাট অবদান।
তাঁর সার্বিক কাজের জন্য ২০১২ সালে Jean Arp Francophone Literature Prize দেওয়া হয় সিলভিয়াকে। এছাড়াও পেয়েছেন Special Roger Caillois Prize 2013 ও Prize for Outreach of French Language and Literature 2019 French Academy পুরস্কার।
প্রধান কাজ
গল্প, উপন্যাস
কবিতা
অনুবাদ
স্প্যানিশ ভাষায়
আমার চাহনি
ওদের মুছে দেওয়ার আগেই
বারান্দাটা গাছটা
নদীটাকে ফিরে দেখার
টেবিলটাকে এক ঝলক দেখে নেওয়ার
এটাই সঠিক সময়
সূর্য ও বৃষ্টির মাঝের পার্থক্য
আমায় ফিরিয়ে দাও
আমার বিপুল একাকিত্ব
যার মাঝে আমি ছুটে বেড়াতে পারি
আমায় আকাশটা ফিরিয়ে দাও
ঘন্টাগুলো বছরগুলো
একটা জানলা
নদীর সাথে পথ চলার উপায় আমার আর জানা নেই
জলপৃষ্ঠে ভেসে ওঠে বেগুনি কাদা
বালি আবৃত তটে ঘুরপাক খায় ফেনা
ছুটে যায় পাড়ে পাথর ছুঁয়ে বাঁধনহীন ফিরে আসে
তলদেশে বিস্মৃত সান্ধ্য শরীরী ধারাকে দিগন্তে আলিঙ্গন করে
অলস গ্রীষ্মের সাথে খয়েরি কাঁধে কাঁধ মেলানো ছুট
বেগ ও স্থিতি’র অবকাশে বহমান ডাগর সোনালী বাতাস
দেওয়াল ছুঁয়ে স্মৃতিশূন্য করে আমায়
কীভাবে এ শহরকে লিখতে হবে তা আমার আর জানা নেই
আকাশ থেকে এক পৃথিবীমুখি খড়্গ নেমে আসে
নগর পথের ধারে ঝুঁকে পড়ে অট্টালিকার মুখ
সন্ধ্যা আর হাতুড়ি ও পিপাসু জমি দিয়ে তৈরি রক্তে
ভেজা আমার হাতে আমি তাকে দেখতে পাই
এ মাটির দিকে কীভাবে চাইতে হবে তা আমার আর জানা নেই
যেখানে আমার পরিত্যক্ত মৃত্যুর শিকড়
তার ধুলোমাখা সীমান্তের আশেপাশে ঘুরপাক খাওয়ার জন্য আমায়
ছেড়ে আসে যেখানে ফেরার রাস্তা নেই
আমাকে আমার জন্য অপেক্ষমান দেখতে চাওয়া আমাকে চাওয়া
কীভাবে ভুলি তার দূরত্ব এই সৈকত
যা আমার অন্তরে হাল চালাচ্ছে
সে আমার জন্মস্থলের স্বপ্ন হরণ করবে কীভাবে বিস্মৃত হই
উনুনের ভিতর
এলোমেলো শব্দের উপর
কদাচিৎ
ফুঃ
পৃষ্ঠার উপর ছড়িয়ে থাকা
অদৃশ্য জলের ভিতর
মৃদু প্রবেশের চাহিদায়
নিরুদ্দিষ্ট মুখটা সেখানে খুঁজে
পাওয়ার স্বপ্নে
আকার না বুঝে
এক মাটির ছবি আঁকতে
আরো এক গভীর
নগ্ন আরপেজিও-র সাথে
এক কন্ঠের সুর মেলানোর তাগিদ
শূন্য ও
পৃথিবী
স্বর ও শূন্যতা
শব্দ ও অসমাপ্ত প্রতিধ্বনির
আবর্তের
মাঝে
* ক্রমশ
লেখক পরিচিতি : GE Heathcare-এ বিজ্ঞানী হিসেবে কর্মরত, ফ্রান্স-এর নীস শহরে থাকেন। টার্কি-র সাবাঞ্চি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করেছেন। এছাড়াও মার্কিন যুক্ত্রাস্ট্রের নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভারসিটি ও পি এইচ ডির পর বছর খানেক জার্মানির ফ্রনহফার সোসাইটিতে সায়েনটিস্ট হিসেবেও কাজ করেছেন। লেখালেখির স্বভাব বহুদিনের। মূলত লেখেন বিজ্ঞান, ইতিহাস, ট্রাভেলগ, সাহিত্য মনন নিয়েই। কলেজজীবনে বন্ধুরা মিলে “দেওয়াল” নামক কবিতা পত্রিকা চালিয়েছেন কয়েক বছর। এছাড়াও কবিতা, গদ্য প্রকাশ পেয়েছে একাধিক বাঙলা অনলাইন পত্র পত্রিকায়। লেখা লেখি ছাড়াও গান বাজনা, নোটাফিলি, নিউমিসম্যাটিক্সের মত একাধিক বিষয়ে রূপকের সমান আগ্রহ রয়েছে।