ধা রা বা হি ক । পর্ব ১০
কখন যে কী ঘটে যায়, কিছুই বলা যায় না! তখন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘হাতে রইল পেন্সিল’ কেস হয়ে যায়।
এই যেমন আমাদের হয়েছিল। গত অক্টোবর-নভেম্বরে অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কভার করতে গিয়ে। আমাদের বলতে আমি আর অরিন্দম বন্দ্যোপাধ্যায়। উত্তরবঙ্গ সংবাদের অভিজ্ঞ ক্রিকেট করেসপন্ডেন্ট। প্রায় এক দশক হতে চলল, লম্বা বিদেশ সফরে আমরা রুমমেট। অরিন্দমের সঙ্গে আমার একটা আশ্চর্য বোঝাপড়া আছে। আমি ওর দিকে তাকালে বুঝতে পারি ও কী চাইছে, আবার ও আমাকে দেখলে বুঝতে পারে, তখনই কোন বিষয়টা নিয়ে ভাবা দরকার। বেশ কয়েকবার ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়ায় এক সঙ্গে থেকেছি, বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতাও হয়েছে। কিন্তু গত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার পারথ বিভীষিকার অভিজ্ঞতার দিক থেকে এক নম্বরে উঠে আসতেই পারে।
এমনিতেই ক্রিকেট বিশ্বকাপ কভার করা মানে এক থেকে দেড় মাস উইদআউট ব্রেক টানা রিপোর্টিং করার ঝক্কিটা থাকে। তার উপরে দ্রুত একটা বিরাট দেশে এক শহর থেকে অন্য শহরে ট্র্যাভেলিং। সঙ্গে যোগ করতে হবে বিভিন্ন দেশের টাইম-জোন। সেই টাইম-জোন মেনে ডেডলাইন মাথায় রেখে সব সময় কপি, মানে প্রতিবেদন পাঠাতে হয়। এর জন্য শৃঙ্খলা যদি প্রাথমিক শর্ত হয়, দ্বিতীয় শর্তটা ফিটনেস এবং দিনে ১৬-১৭ ঘণ্টা অমানুষিক পরিশ্রম করার ধকল। মাথায় রাখতে হবে, কোথাও কেউ লাল কার্পেট বিছিয়ে আপনাকে অর্ভ্যথনা জানাবে না। বরং কোথাও পান থেকে চুন খসলে অন্য কাগজের প্রতিপক্ষ আপনার তিনটে স্টাম্প নাড়িয়ে দিতে পারে। প্রেস বক্সে বসে বা শহরের ইতিউতি স্টোরির খুঁজে ঘুরে বেড়ানোটা এক জিনিস, কিন্তু সময় ও পরিমাপ মেনে খবরের কাগজে লেখা পাঠানোর মধ্যে আরও একটা চ্যালেঞ্জ আছে। কোথাও কোনও একটা স্টোরির জন্য গুরুত্ব অনুযায়ী ৬০০ শব্দ বরাদ্দ থাকতে পারে, আবার অন্য একটা স্টোরির জন্য হয়তো ৩০০ বা ৪০০ শব্দ। সারা দিন মাঠে থেকে প্রতিদিন ১৮০০ থেকে ২০০০ শব্দ লিখে পরের দিন ভোর রাতে চেক আউট করে পরের শহরের ফ্লাইট ধরার যন্ত্রণা তো আছেই। এসব প্রফেশনাল হ্যাজার্ড, এগুলো নিয়ে খুব বেশি বলার কিছু নেই। এই পেশায় এলে করতেই হবে, কোনও শর্টকাট নেই।
কিন্তু বিদেশ বিভুঁইয়ে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত এমন কিছু ঘটে যেতেই পারে, যেটার জন্য আপনি ঠিক প্রস্তুত নয়। বা ভাবেননি। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ‘হায় রে’ বলে পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়াটা সমাধান, কিন্তু সেটাও যদি হাতের বাইরে চলে যায়?
ঠিক তেমনই হয়েছিল পারথে। সিডনি থেকে পারথের ফ্লাইট প্রায় আট ঘন্টা লেট, সেই ফ্লাইটও সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার। ফ্লাইট ছিল দুপুর বারোটায়, ছাড়ল রাত রাত আটটায়। পারথে গিয়ে নামলাম রাত দেড়টায়। লাগেজ-টাগেজ নিয়ে আগে থেকে বুক করা এয়ারবিএনবি-র অ্যাপে বুক করা আস্তানায় যখন পৌঁছলাম, রাত সোয়া দুটো। ফ্লাইটে ডিনার দেওয়া হয়নি, কেন ভগবানই জানেন। ফলে পেটের মধ্যে দু’হাজার ছুঁচো ডন-বৈঠক শুরু করেছে। অতো রাতে কোনও দোকান খোলা নেই, একটা গ্যাস স্টেশন থেকে শুধু পাউরুটি আর মাখন তোলা হয়েছে। তাই সেঁকে খেয়ে নেওয়া যাবে।
প্রায় জনমানবশূন্য একটা আস্তানায় তো পৌঁছলাম, তার পরেও আছে মালকিন মেলিন্দার নির্দেশ অনুযায়ী এই গেট খোলো, তার পরে অমুক করিডর পেরোও এবং সবশেষে গুপ্তধন। মানে চার সংখ্যার কোড দেওয়া চাবির বাক্স! যেটা খুলে ঢুকতে হবে। কাঠের দরজা, নুড়ি বিছোনো রাস্তা পেরিয়ে লাগেজ টানতে টানতে পেরোলাম একটা কাঠের করিডর। তার পরে আমাদের জন্য নির্দিষ্ট ছয় নম্বর রুম। রুমের ভিতরে বাথরুমটা আবিষ্কার করা গেল, কিন্তু কিচেন? সেটা কোথায়? অরিন্দম আর আমি সর্বত্র কিচেন-সহ রুম বুক করে থাকি, সেটাই করে আসছি। অরিন্দম নেটে বুকিং চেক করে কাঁচুমাচু মুখে বলল, ‘কিচেনটা কমন, এটা মিস করে গেছি!’
ওকে দুটো চার অক্ষর তো দিলাম, কিন্তু কিচেনটা কোথায়? চারদিকে নিঝুম অন্ধকার, পাশাপাশি কয়েকটা ঘর। করিডরে পা দিতেই সেন্সরে আলো জ্বলে উঠল। বাঁ দিকে একটা দরজা দেখা যাচ্ছে। মনে হচ্ছে খোলা। হাল্কা করে ঠেলতে একটা ক্যাঁচ করে শব্দ। তার পরে সুসজ্জিত একটা ড্রইংরুম, নিশ্চয়ই কমন প্লেস হবে। তার পরে একেবারে শেষে আবিষ্কার করা গেল, বেশ বড়োসড়ো কিচেন। এ বার নিজেদের রুম থেকে পাউরুঁটি আর মাখনটা বের করতে হবে। সামনেই টোস্টার দেখতে পাচ্ছি, ছুরিও ড্রয়ারে আছে চোখে পড়ল। শব্দ না করে পা টিপে টিপে গিয়ে দু’জনে পাঁউরুটি মাখন নিয়ে গেলাম কিচেনে। কোনওরকমে দুটো টোস্ট গলাধঃকরণ করে মাখনটা ফ্রিজে রাখতে যেতেই বিস্ময়!
ফ্রিজ ভর্তি নানারকম আধখাওয়া খাবারের প্লাস্টিকের প্যাকেট আর কয়েকটা পলিথিনের বাক্স। প্রত্যেকটায় সাদা কাগজ দিয়ে লেবেল করে ইংরেজি অক্ষরে লেখা ‘ডোন্ট টাচ!’ তার পরে নাম লেখা ওয়াং চুন। এ আবার কী? আমি আর অরিন্দম অতো রাতে মুখ চাওয়াচাওয়ি করি। তার পরে ফ্রিজের নীচে সব্জির জন্য সেট করা ট্রে টানতে গিয়েও আলু-পেঁয়াজ, ব্রকোলি, বিনস, গাজরের নানা প্যাকেট। সব প্যাকেটেই লেখা ‘ডোন্ট টাচ!’ তার পরে ওয়াং চুন! সত্যজিৎ রায়ের ‘জন অরণ্য’ ছবির সংলাপ অতো রাতে মাথায় খেলে যায়, ‘পদে পদে বিস্ময়!’
ফেলুদা সুলভ মুখ করে বিজ্ঞের মতো মুখ করে অরিন্দম বলল, ‘বুঝলে সব্যদা, কোনও চাইনিজ হবে!’
‘হুম, নেক্সট চার দিন ইনি আমাদের প্রতিবেশী হতে যাচ্ছেন!’ বললাম, ‘এবং এক্সপিরিয়েন্সটা খুব প্লেজেন্ট হবে বলে মনে হচ্ছে না।’
রাত তিনটেয় বিছানায় পড়া মাত্র ফ্ল্যাট, পরদিন ইন্ডিয়া টিমের প্র্যাক্টিস শিডিউল বারোটায়। মানে দশটা অবধি টেনে ঘুমোনো যাবে। এই ভেবে দশটায় অ্যালার্ম দেওয়া আছে। পর্দা টেনে রুম ভিতর থেকে লক করে শুতে গেছি, কিন্তু হঠাৎ দুপ দুপ শব্দ। ঘরের বাইরে কোথাও একটা যেন কেউ হাতুড়ি পিটছে জোরে জোরে। পুরো বাড়িটাই কাঠের বলে আরও জোরে জোরে আওয়াজ হচ্ছে।
‘কী হল রে?’ কাঁচা ঘুম ভেঙে বলি অরিন্দমকে।
সে ঘুম চোখে বলে, ‘আমারও তো ঘুমটা ভেঙে গেছে! এটা কি ভূতের বাড়ি?’
কোনওরকমে বলি, ‘দ্যাখ ক’টা বাজে?’
‘সবে সাড়ে সাতটা। এখনও আড়াই ঘণ্টা ঘুমোনো যায়!’
‘যাবি বাইরে? চ’, গিয়ে দেখি।’
অরিন্দম এসব ব্যাপারে একটু গাঁইগুঁই করে। মানিয়ে নিতে চায়। টিপিক্যাল গুডবয়। আমি তা নই। বরাবর নিষিদ্ধ বিষয়ে প্রবল আকর্ষণ। আর যদি ভৌতিক কিছু যদি হয়েও থাকে, আজই সমাধান দরকার। পর্দা সরিয়ে দেখলাম, দিনের আলো ফুটে গিয়েছে। ভূত-ফূত থাকলেও এই আলোতে মুখ দেখাবে বলে মনে হয় না।
বাইরে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা। কোনওরকমে জ্যাকেটটা চাপিয়ে দু’জনে বেরোলাম বাইরে। ব্যাপারটা সরেজমিনে দেখা দরকার। ড্রইংরুমে কেউ কোথাও নেই। তার পরে কিচেন। কিন্তু সংলগ্ন দরজাটা খোলা। আর একটু এগোতেই আবার বিস্ময়। শুধু স্পোর্টস ব্রা আর বডি হাগিং সংক্ষিপ্ততম শর্টস পরে বছর তিরিশের এক দীর্ঘাঙ্গী তরুণী কাঠের মেঝেতে লাফিয়ে জাম্পিং জ্যাক আর নানা রকমের শারীরিক কসরতে ব্যস্ত। প্রায় পাঁচ ফুট আট হবেন লম্বায়, মুখ দেখে চিন দেশের বলে আন্দাজ করা যায়। ইনিই তা হলে ওয়াং চুন! নিশ্চিন্ত হওয়া গেলো।
নাহ, ভুল। একেবারেই নিশ্চিন্ত হওয়া গেলো না। বিদেশে সাত সকালে কারও সঙ্গে প্রথম দেখা হলে দাঁত বের করে ‘গুড মর্নিং’ বলাটা নিয়ম। কাজেই একেবারে চোখাচোখি হওয়াতে ওই দৃশ্য দেখে শুষ্ক হাসি হেসেই বললাম, ‘গুড মর্নিং!’
গম্ভীর গলায় ‘মর্নিং’ বলেই ওয়াং চুন এগিয়ে এলেন আমাদের দু’জনের দিকে। হ্যাঁ, ওই পোশাকেই। তার পরে কড়া গলায়, ‘ইউ মাস্ট হ্যাভ নোটিসড মাই লেবেলস ইন দ্য ফ্রিজার। ডোন্ট টাচ মাই থিংস। অ্যান্ড ইউ চেকড ইন আফটার মিডনাইট। আই কুড নট স্লিপ। ডোন্ট মেক এনি সাউন্ড আফটার টেন। ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড?’
অরিন্দম সুবোধ বালক, কিছু না বলে বেরিয়ে আসছিল। কিন্তু যে টোনে কথাটা বলা হলো, সেটা আমার পছন্দ হলো না। মৃদু হেসে বললাম, ‘উই উইল সি!’
একটু পরেই দেখলাম, পাশের ঘরে চাবি বন্ধ করার শব্দ। জানালা ফাঁক করে দেখলাম, গাড়ি চালিয়ে ওয়াং চুন বেরিয়ে গেল। কোনওরকমে ব্রেকফাস্ট সেরে এগারোটার মধ্যে উবার ধরে ইন্ডিয়া টিমের প্র্যাক্টিসে পৌঁছেই মালকিন মেলিন্দাকে ফোন। মিষ্টি গলায় মেলিন্দা জানাল, ওয়াং চুন চিন থেকে আসা ছাত্রী, এখানে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়ছে। এই গেস্টহাউসে মাসিক চুক্তিতে থাকে। তার উপরে বাস্কেটবলও খেলে। তা অবশ্য চেহারা দেখলেই বোঝা যায়। মাসিক চুক্তিতে থাকে বলে দেমাক আর হম্বিতম্বি বেশি। আমরা মাত্র চার দিনের গেস্ট। কাজেই একটু অ্যাডজাস্ট করে নেওয়ার অনুরোধ। প্রয়োজনে ও ওয়াংয়ের সঙ্গে কথা বলবে। বললাম, ‘সবই অ্যাডজাস্ট করতে পারি। কিন্তু আমরা তো কাজ করতে এসেছি। রাত দশটায় আলো নেভানো সম্ভব নয়। তার আগে ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়াও সম্ভব নয়। আমাদের লেখা শেষ হবে, তার পরে রান্না হবে, তবেই সব হতে পারে।’
মেলিন্দা আশ্বাস দিল, ‘নো প্রবলেম!’
হায় আশ্বাস! সে দিন রাতেই ঘটনাটা ঘটলো। রাত একটা হবে। লেখা পাঠিয়ে, ডিনার শেষে অরিন্দম বিছানায় সবে এসে শুয়েছে। আমি একটা চাদর গায়ে চাপিয়ে বাইরে বেরোলাম। একটা জরুরি ফোন করা দরকার। তা, বাইরে বেরোলে কাঠে আওয়াজ হবেই। আমি করিডর পেরিয়ে গেটের বাইরে প্রায় পনেরো ফুট দূরে দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছি, হঠাৎ দেখি দরজা খুলে তিনি আবির্ভূতা। ওয়াং চুন। আমাকে ফোনে কথা বলতে দেখেই চিৎকার, ‘ইউ আর ডিস্টার্বিং মাই স্লিপ! ক্যান ইউ জাস্ট স্টপ টকিং?’
গম্ভীর ভাবে বললাম, ‘আই কান্ট। দিস ফোন ইজ ইম্পট্যার্ন্ট।’
এবার চুন গলা চড়াল, ‘ইউ নো, অল ইন্ডিয়ান্স আর মাদারফাকার্স!’
ফোন অন করা অবস্থাতেই আমি এগিয়ে এলাম ওর দিকে। শান্ত গলায় বললাম, ‘হোয়াট ডিড ইউ সে?’
ও আবার বলল, ‘আই সেড মাদার ফাকার!’
অত রাতে নিস্তব্ধ এই পাড়ায় চেঁচামেচি মানেই শান্তি লঙ্ঘিত হওয়া। পুলিশ চলে আসবে। অসম্ভব মনের জোরে নিজেকে দমিয়ে বললাম, ‘আই উইল ওয়াক অন দ্য করিডর হোল নাইট। ডু হোয়াট ইউ ওয়ান্ট!’
ও বলল, ‘আই উইল কল মেলিন্দা!’
‘ডু হোয়াটএভার!’
বলতেই ভিতরে ঢুকে দড়াম করে দরজা বন্ধ হওয়ার আওয়াজ।
রুমে এসেই অরিন্দমকে তুলে সব বললাম। ঠিক করলাম, আরও দু’দিন যখন থাকতেই হবে এখানে, কালই একটা এস্পার-ওস্পার হওয়া দরকার। বাকি সব মেনে নেওয়া যায়, কিন্তু ‘অল ইন্ডিয়ান্স আর মাদারফাকার্স’ বলার পরে আর চুপ করে থাকা কঠিন। আমি যে বিরাট বড় দেশপ্রেমিক, তা নয়। ২৬ জানুয়ারি বা ১৫ অগস্ট সাত সকালে ঘুম থেকে উঠে সরকারি অফিসারদের মতো পতাকা তুলতে হয় না, তখন ছুটির দিনে আরও দু’ঘণ্টা বেশি ঘুমিয়ে নিই। তবে বিশ্বকাপ কভার করার ব্যাপারটা আলাদা। ভারতের ম্যাচের আগে যখন মাঠে জনগণমন হয়, যখন স্টেডিয়ামের বিশাল স্ক্রিনে পরপর ফুটে ওঠে নীল জার্সির ছেলেদের মুখ, তখন তাদের সঙ্গে গলা মেলাতে ইচ্ছে করে। চোখে অজান্তেই জল আসে। ইচ্ছে করে বাংলাদেশের জাতীয়সঙ্গীত, ‘আমার সোনার বাংলা’-র সঙ্গেও গলা মেলাতে। মেলাইও। ওই আশ্চর্য সুর আর কোথায় পাওয়া যাবে?
তা ছাড়া দেশ তুলে অপমান করলে কিছু না কিছু তো একটা করা দরকার। যদি আদৌ শিরদাঁড়া বলে কিছু অবশিষ্ট থাকে। সকাল আটটার মধ্যে মেলিন্দাকে ফোন করে সব বললে যে খুব কাজ হবে না, জানতাম। অন্য ওষুধ দরকার ছিল। আইসিসি-র সরকারি টুনার্মেন্ট প্রেস কার্ড যে অস্ট্রেলিয়ায় ম্যাজিকের মতো কাজ করে, জানতাম। সব পাবলিক ভেহিকেল ফ্রি, এমনকী সিম কার্ডেও কোথাও কোথাও ডিসকাউন্ট মেলে। আমাদের দুটো কার্ড এবং অস্ট্রেলিয়া সরকার মারফত পাঠানো আমন্ত্রণপত্র মেলিন্দাকে পাঠিয়ে ফোনে বললাম, ‘আমরা আইসিসি-র কাছে সরকারি ভাবে কমপ্লেন করছি। সরকারি গেস্টদের উপরে একজন ফরেন স্টুডেন্ট এই আচরণ করেছে। পারথের দুটো কাগজেও আজ আমরা সাক্ষাৎকার দেবো। কথা হয়ে গিয়েছে। ওরা তোমাকে ফোন করতে পারে!’
উল্টোদিকে তিরিশ সেকেন্ড নীরবতা। তার পরে কাতর গলায়, ‘প্লিজ ডোন্ট গো টু দ্য প্রেস। প্লিজ। নেক্সট টু ডেজ নাথিং উইল হ্যাপেন। আই প্রমিস।’
বললাম, ‘এটাই হোয়াটসঅ্যাপে লিখে দিন। আর আমরা যতোদিন আছি, ফ্রিজে আমরাও খাবার রাখব। দ্যাট ফ্রিজ ইজ ফর অল গেস্টস, আই থিঙ্ক!’
‘অফকোর্স ইউ ক্যান!’
এসব ক্ষেত্রে আমি ‘কেমন দিলাম’ হাসি দিয়ে অরিন্দমের দিকে তাকাই। অরিন্দম কখনও বলে ‘ফাটাফাটি’, কখনও একটা অত্যাশ্চর্য হাসি দেয়। যে হাসি মন ভালো করে দেয়। তা সেই রাতে আমরা কাজ শেষে কেএফসি-র প্যাকেট আর এক বোতল জ্যাক ড্যানিয়েল নিয়ে ঢুকেছিলাম। করিডর দিয়ে মাঝরাতের পরে হাঁটাহাঁটিও কম হয়নি। শুধু দরজা খুলে কোনও দীর্ঘাঙ্গী বেরিয়ে আসেনি। মা সংক্রান্ত কিছুও শুনিনি।
পরের দুটো দিন বেশ নিশ্চিন্তেই কেটেছিল। এখন পারথের বিভীষিকা অতীত। শুধু ওই সংক্ষিপ্ত পোশাকে কাঠের মেঝেতে দাপিয়ে শরীরচর্চাটা মাঝে মাঝে মনে পড়ে।
ওয়াং চুন!
ক্রমশ