Hello Testing

4th Year | 2nd Issue

৩১শে বৈশাখ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | 15th May, 2023

প্রচ্ছদ কাহিনী, ধারাবাহিক গদ্য, ছোটোগল্প, গুচ্ছ কবিতা, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, স্বাস্থ্য, ফ্যাশান ও আরও অনেক কিছু...

ধা রা বা হি ক । পর্ব ৯

স ব্য সা চী   স র কা র

নিষিদ্ধ সব সোনার খনি

sabyasachi

মায়ের প্যাক করা দুধ-সাদা দুটো প্লাস্টিকের প্যাকেট

পইপই করে জেনে নিয়েছি, কীভাবে ইমিগ্রেশন করাব, কেন পাসপোর্ট সব সময় খুব সাবধানে রাখতে হবে, কেন অচেনা কেউ ব্যাগ রাখতে দিলে না বলতে হয়, বাকী কী সর্বনাশ হতে পারে, ইত্যাদি ইত্যাদি। তবু বুকের ভেতর ধুকপুকুনিটা চলছেই।

জীবনের প্রথম বিদেশ সফর। সালটা ১৯৯৫। মাস ফেব্রুয়ারি। গন্তব্য নিউ জিল্যান্ড। বয়স সবে চব্বিশ পেরিয়েছে, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ওয়ান ডে বা টেস্ট কভার করা হয়ে গিয়েছে, কিন্তু দেশের বাইরে পা পড়েনি। টেনশন তো হচ্ছেই, সঙ্গে উত্তেজনা। একটা চারদেশীয় ওয়ান ডে টুর্নামেন্ট। আজহারউদ্দিনের ভারত, অস্ট্রেলিয়া, নিউ জিল্যান্ড আর দক্ষিণ আফ্রিকা। দিন পনেরোর ট্যুর, নিউ জিল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে ম্যাচ, ফাইনাল অকল্যান্ডে।

কলকাতা থেকে প্রথমে ব্যাঙ্কক। সেখানে পাঁচ ঘণ্টা গ্যাপের পরে ইন্দোনেশিয়ার ডেনপাসার। সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন। আবার মেলবোর্ন থেকে অকল্যান্ড। এই পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার কোয়ান্টাস এয়ারলাইন্স। তার পরে অকল্যান্ডে নেমে এয়ার নিউ জিল্যান্ডের প্লেনে নেপিয়ার। প্রায় দেড় দিনের যাত্রা। পৃথিবীর একেবারে দক্ষিণে প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে ছবির মতো একটা শহর। সে যুগে গুগল সার্চ ছিল না যে সার্চ ইঞ্জিনে নাম টাইপ করলেই সব ছবির মতো ভেসে উঠবে আর যেখানে যাচ্ছেন, সেই শহরের বিষয়ে নিমেষে বিদ্যেবোঝাই বাবুমশাই হয়ে ওঠা যাবে।

প্রথমবার দেশের বাইরে যাচ্ছি বলে কথা, মা লেক কালীবাড়িতে গিয়ে পুজো দিয়েছে, প্রসাদী ফুল এনে দিয়েছে। অনেক যত্ন করে গুছিয়ে দিয়েছে ব্যাগ। কোথাও কোনও ভুল নেই। নিদির্ষ্ট দিনে দুগ্গা দুগ্গা বলে এয়াপোর্টে, সব কিছুই ঠিকঠাক চলছিল। লম্বা স্টপওভারের ক্লান্তি একেবারেই গ্রাস করতে পারেনি, নতুন দেশ ও শহর দেখার উত্তেজনায় ভিতরে চোরাস্রোত বইছে। মেলবোর্নে লম্বা গ্যাপের পরে উঠলাম অকল্যান্ডের ফ্লাইটে। সাড়ে তিন ঘণ্টা থেকে পৌনে চার ঘণ্টার ফ্লাইট। অকল্যান্ডের টাইম অনুযায়ী ভোরবেলা পৌঁছবে। তার পরে ইমিগ্রেশন সেরে আমাকে নেপিয়ারের ফ্লাইট ধরতে হবে।

তা, ঠিক টাইমেই ফ্লাইট পৌঁছে গেল অকল্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে। ইমিগ্রেশন সেরে লাগেজ নিতে কনভেয়ার বেল্টে দাঁড়িয়েছি। হাঁ করে বিস্ময়বালকের মতো সব দেখছি আর বোঝার চেষ্টা করছি। প্রায় মিনিট পনেরো অপেক্ষার পরে লাগেজ এসেছে। কাঁধে একটা হ্যান্ডব্যাগ, হাতে একটা সুটকেস। চারদিকে তাকাতে তাকাতে এগোচ্ছি। গ্রিন চ্যানেল দিয়ে বেরোব। তার আগে একবার লাগেজ স্ক্যানিং হবে। সেই লাইনে দাঁড়িয়ে। বেশ লম্বা লাইন। সময় লাগছে। ঝাঁ চকচকে এয়ারপোর্ট, একেবারে পিকচার পোস্টকার্ডের মতো সাজানো-গোছানো। তারই মধ্যে হঠাৎ কোত্থেকে আকাশ ফুঁড়ে হাজির দুই শ্বেতাঙ্গ তরুণী। দু’জনেরই পরনে আকাশি-নীল শার্ট আর নেভি ব্লু ট্রাউজার্স। মাথায় সরকারি টুপি। বুকে ব্যাজ। দু’জনেরই কোমরে গোঁজা পিস্তল, পাশে বিশাল লাইজের দু’টি লোমশ ল্যাব্রাডর। একজন একটু ভারী চেহারা, অন্যজন দীর্ঘাঙ্গী, নীলনয়না। সেই নীলনয়নাই আমার কাছে এসে মিষ্টি গলায় বলল, ‘হাই স্যার, উড ইউ প্লিজ মাইন্ড টু কাম আউট অফ দ্য লাইন প্লিজ?’

ততক্ষণে দুই সারমেয় আমার সুটকেস শুঁকে চলেছে। এমনিতেই আমি কুকুর দেখলেই ভীষণ ভয় পাই। রাস্তার নেড়ি হোক বা ছোট্ট স্পিৎজ, বরাবর এড়িয়ে চলতে পছন্দ করি। কুকুর দেখলেই ফুটপাথ বদলের অভ্যেস।। আর এ দুটো তো সেই তুলনায় সিংহ। কী বিশাল সাইজ। একটার গায়ের রঙ কুচকুচে কালো, অন্যটা খয়েরি।

আমাকে কেন লাইন থেকে বেরোতে বলছে এই নীলনয়না? যাঁর কাঁধের কাছে ব্যাজে ‘ক্যাথি’ লেখা আছে। আমার জিজ্ঞাসু চাহনি দেখে নীলনয়না আবার বলে, ‘জাস্ট আ ফর্ম্যালিটি। উই জাস্ট নিড টু চেক ইয়োর ব্যাগ ওয়ান্স!’

তা হলে এই ব্যাপার? আমি যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী গলায় বলি, ‘ওহ, শিওর।’ কিন্তু মাথায় ঢোকে না, বাকিরা যখন লাইনে দাঁড়িয়ে স্ক্যানিং মেশিনে জিনিস ঢোকাচ্ছে, আমাকেই এরা লাইন থেকে বের করে আনছে কেন? কুকুর দুটোই বা আমার পায়ের কাছে কেন?

লাইন থেকে তো বেরোলাম, কিন্তু তার পরে এরা আমাকে নিয়ে হেঁটেই চলছে। আমি একবার বলার চেষ্টা করলাম, আমার হাতে আর মাত্র ঘণ্টা দেড়েক সময়। আমাকে অকল্যান্ড থেকে নেপিয়ারের ফ্লাইট ধরতে হবে। যতবার বলার চেষ্টা করছি, ততবারই ভারী চেহারার মহিলা বলছেন, ‘জাস্ট ফিউ মিনিটস স্যার!’

প্রায় মিনিট পাঁচেক টানা হাঁটার পরে আমাকে একটা অফিসে ঢোকানো হল। হোর্ডিং দেখে বুঝলাম, এটা কাস্টমস অফিস। ভিতরে ঢুকতে না ঢুকতে পড়লাম এক জাঁদরেল পুরুষ অফিসারের পাল্লায়। লালমুখো সাহেব সোজাসুজি বললেন, ‘ওপেন ইয়োর ব্যাগ প্লিজ!’

ব্যাগ খুলতেই শুরু হল হাতড়ানো। অবাক হয়ে দেখলাম, ব্যাগ থেকে বেরোল চিঁড়ে ভাজা, চানাচুরের প্যাকেট আর গোটা দুই প্লাস্টিকের প্যাকেট। যাতে সাদা গুঁড়ো। আর সেটাতেই নজর লালমুখো সাহেবের। কী আছে ওই প্যাকেটে? বুঝতে অসুবিধে হল না, বিদেশে ছেলের এনার্জি বাড়বে ধরে নিয়ে মা ব্যাগে গুঁজে দিয়েছে শুকনো খাবার আর গ্লুকন ডি’র দুটো প্যাকেট। যার সবুজ রঙের প্যাকিং বাক্সটা ব্যাগে জায়গা কমানোর জন্য খুলে নেওয়া হয়েছে। ওই দুটো প্যাকেট হাতে তুলে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখে জাঁদরেল সাহেব আমার দিকে তাকালেন। ‘হোয়াটস ইন দিস প্যাকেটস? ক্যান ইউ এক্সপ্লেন?’

‘এনার্জি ড্রিঙ্ক!’ কোনওরকমে বললাম। ততক্ষণে আমার গলা শুকিয়ে গিয়েছে। মায়ের উপর ভয়ঙ্কর রাগ হচ্ছে, নিজের উপরেও। মা না হয় না জেনে শুকনো খাবার আর গ্লুকন ডি’র প্যাকেট ঢুকিয়েছিল। কিন্তু কেন আমি একবার দেখে নিইনি!

জাঁদরেল সাহেব এর পরে আমাকে যা বললেন, তার মমার্থ এইরকম: ওঁরা প্যাকেট দুটো নিজেদের ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখবেন। তার মধ্যে কোনও নিষিদ্ধ মাদক আছে কি না। যদি কিছু না পাওয়া যায়, আমি ছাড় পাব। কিন্তু যদি নিষিদ্ধ কিছু থাকে, আমাকে আপাতত আটক করা হবে এবং তার পরে চাইলে আমাকে একজন আইনজীবী দেওয়া হবে। যত সহজে ব্যাপারটা কয়েক লাইনে লিখে ফেললাম, ব্যাপারটা মোটেই ঠিক সেরকম ছিল না। তখন সেলফোনের যুগ নয়, বিদেশ থেকে ফোন করতে হলে কোনও হোটেল বা কোনও পাবলিক বুথ থেকে করতে হতো। লাইন পাওয়াও মাঝে মাঝে দুঃসাধ্য হতো। তা ছাড়া কাকেই বা ফোন করব? বিদেশে প্রথম এসেছি। নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড আর হোটেল ছাড়া একটাও নম্বর নেই আমার। সব গুলিয়ে যাচ্ছে। অসম্ভব অসহায় লাগছে। কী করব বা এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত, তা নিয়ে কোনও ধারণা নেই। ভয়ে হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে সাহেব প্যাকেট দুটো নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। আমাকে অফিস ঘরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। রোবটের মতো গম্ভীর মুখে কয়েকজন সাহেব আর মেম হাতে মোটা মোটা ফাইল নিয়ে ঘোরাঘুরি করছে। তাদেরই মধ্যে কোনও একজনের আমাকে দেখে মায়া হয়ে থাকবে। বললেন, ‘ডু ইউ নিড সাম ওয়াটার?’

জল খাব? গলা শুকিয়ে কাঠ, কিন্তু তা-ও অসহায়ের মতো মাথা নাড়লাম দু’দিকে। ততক্ষণে চোখে পড়ছে, দেওয়ালের পোস্টারগুলোয়। মাদক বা নিষিদ্ধ বস্তু নিয়ে নিউ জিল্যান্ডে ধরা পড়লে কী শাস্তি হতে পারে? দোষ প্রমাণিত হলে যাবজ্জীবন নিশ্চিত। আধা দোষী হলেও কমপক্ষে ১০ বছর হাজতবাস! একবার মনে হচ্ছে, এদের হাতে-পায়ে ধরে বলব, আমি দোষী নই? তার পরেই আবার মনে হচ্ছে, এরা কেন বিশ্বাস করবে আমাকে? এ-ও মনে হচ্ছে, ল্যাবরেটরি থেকে বেরিয়ে এসে যদি ওই জাঁদরেল সাহেবটা বলে, হ্যাঁ, ওই দুটো প্যাকেটে হেরোইনই ছিল। তা হলে কী করব আমি? কী করার থাকতে পারে? সোজাসুজি দোষী সাব্যস্ত, কল্পনায় ভেসে এল জেলের অন্ধকার একটা কুঠুরি। শিরদাঁড়া বেয়ে ভয়ে একটা সাপ নেমে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, আর কোনওদিন মা তো নয়ই, কোনও প্রিয়জনকে দেখতে পাব না। আমার আর দেশে ফেরা হবে না। আমার অফিসও জানতেই পারবে না, আমার কী হয়েছে।

‘বিপদে মোরে রক্ষা করো, এ নহে মোর প্রার্থনা/বিপদে আমি না যেন করি ভয়’ ছেলেবেলায় বহুবার মায়ের মুখে শুনেছি। কিন্তু ওই অবস্থায়, ‘আমাকে বাঁচাও ঠাকুর’ ছাড়া কিছুই মনে এল না। জীবনে প্রথমবার বিদেশে পা রেখে এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে কেন পড়তে হবে আমাকে? কী দোষ করেছি আমি?

এক একটা মিনিট যেন একেক ঘণ্টা। একটা পরীক্ষা করতে এত সময় কী করে লাগছে? কেন লাগতে পারে? দু’একবার জিগ্যেস করার চেষ্টা করেও লাভ হয়নি। গম্ভীর গলায় উত্তর এসেছে, ‘ইউ নিড টু ওয়েট।’ ওয়েট তো বুঝলাম, কিন্তু কতক্ষণ ওয়েট? ধৈর্যের পরীক্ষা আর কতক্ষণ দিতে হবে? অফিসটার দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বারবার দেখছি, জাঁদরেল সাহেব ফিরছে কি না। কোনও দেখা নেই। প্রায় ঘণ্টা খানেক কেটে গিয়েছে। আমার নেপিয়ারের ফ্লাইট উড়ে গিয়েছে।

এরই মধ্যে দূরে চোখে পড়ে, ছোট একটা স্ট্যান্ডার্ড ব্যাঙ্কের কাউন্টার। এই ব্যাঙ্কটাই তো যে টুনার্মেন্টটা কভার করতে এসেছি, তার স্পনসর। এখান থেকে কাউন্টারটা ৫০ মিটার দূরে হলেও দেখা যাচ্ছে, লেখা আছে, ‘ওয়েলকাম টু স্ট্যান্ডার্ড ব্যাঙ্ক ফোর নেশন ক্রিকেট’।

আমি এ বার এক মহিলা অফিসারকে বলি, ‘আমি ওই টুর্নামেন্টটা কভার করতে এসেছি। প্লিজ আমাকে ওই কাউন্টারের কাছে একবার যেতে দিন!’

কী ভেবে দয়া হল ভদ্রমহিলার। ‘ওকে,’ বলে ওই নীলনয়না আর ভারী চেহারার মহিলাকে বললেন, ‘জাস্ট টেক হিম টু দ্যাট কাউন্টার আর ব্যাক হিয়ার এগেইন!’

ওই কাউন্টারে গিয়ে আমার পরিচয় জানাতেই আর এক কোট-প্যান্টের সাহেব ফাইল খুলে নাম মেলালেন। তার পরেই বললেন, ‘আপনার তো নেপিয়ার যাওয়ার কথা! এখনও এখানে কেন?’ ল্যাব টেস্ট-সহ কোনওরকমে অসহায়তাটা বোঝাতেই বললেন, ‘ওয়েট। আই উইল কাম উইথ। ইউ আর আওয়ার গেস্ট।’

কাস্টমস কাউন্টারে গিয়েই মার্ক নামের সেই ভদ্রলোক সোজাসুজি জিগ্যেস করলেন, ‘ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট কখন আসবে?’ প্রায় ঘণ্টা দুই ততক্ষণে হয়ে গিয়েছে। মার্ক যোগ করলেন, ‘এ ভাবে আপনারা একজন জার্নালিস্টকে বসিয়ে রাখতে পারেন না। ল্যাব টেস্টের রিপোর্ট এতক্ষণে আসা উচিত ছিল। আমি জানি, দোষী না হলে কোনও কারণ ছাড়া এ দেশে দু’ঘণ্টার বেশি কাউকে ডিটেইন করা যায় না!’

এ বার কাউন্টারে বসা এক মহিলা কোথাও একটা ফোন করলেন। তার মিনিট তিনেকের মধ্যে হাজির সেই জাঁদরেল সাহেব। আমাকে দেখে বললেন, ‘সরি টু কিপ ইউ ওয়েটিং। ইউ আর ফ্রি টু গো!’ মার্ক ভদ্রলোক আমার টিকিটটা চেয়ে নিয়ে বললেন, ‘ওয়েট। নেপিয়ারের পরের ফ্লাইটে আমরা আপনাকে পাঠিয়ে দিচ্ছি! কাম উইথ মি!’

কাম উইথ মি! আমার কানে কিছু ঢুকছে না। কিচ্ছু না। মুখ দিয়ে কোনও শব্দ বেরোচ্ছে না। কোনওরকমে হ্যান্ডব্যাগ আর লাগেজটা টানতে টানতে বেরোলাম কাস্টমস অফিস থেকে। পাশেই মার্ক। কিন্তু আমি এক পা-ও হাঁটতে পারছি না। সামনে থাকা বেঞ্চটায় বসে পড়লাম। মার্ক আমাকে বলছে, ‘আর ইউ অলরাইট?’

নাহ, আমি অলরাইট নয়। একদমই ঠিক নয়। এ বার একটু জল চাইলাম। মাথা বনবন করে ঘুরছে। আমার বিশ্বাস হচ্ছে না, আমি মুক্ত। কতক্ষণ লেগেছিল ধাতস্থ হতে এখন আর মনে নেই। অনেকক্ষণ বোবা স্ট্যাচুর মতো বসেছিলাম। নেপিয়ারের ফ্লাইট টিকিট রিশিডিউল করার ব্যাপারে খুবই হেল্প করেছিল মার্ক।

আজ এতদিন পরে লিখতে গিয়েও সেই কাস্টমস অফিসটা মনে পড়ে। মনে পড়ে দুটো বিশালাকৃতি কুকুর আর আমার ব্যাগ থেকে বেরোনো গ্লুকন ডি’র দুটো দুধ-সাদা প্যাকেট। মনে পড়ে মায়ের মুখও।

ফিরে এসে খুব রেগেমেগে মা-কে ঘটনাটা বলতে বলেছিল, ‘ঠাকুর তো আছেন! না হলে ওরা তোকে ছেড়ে দিত?’

তার পরে গত তিন দশকে বিশ্বের বহু দেশে গিয়েছি। অজস্রবার। মা প্রায় ন’বছর হল নেই। এখন আর কেউ ব্যাগ গুছিয়ে দেয় না। ফ্লাইটে ওঠার ঘণ্টা পাঁচেক আগে কোনওরকমে ব্যাগ গোছাই।

পাব না জেনেও শুধু মাঝে মাঝে খুঁজি সাদা রঙের দুটো দুধ-সাদা প্লাস্টিকের প্যাকেট!

ক্রমশ

আরও পড়ুন...